ইতিহাসের উৎস বলতে কী বুঝ? উৎস কত প্রকার?

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস উৎসভিত্তিক। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনার কথা কল্পনাও করা যায় না। ঐতিহাসিকগণ যেখান থেকে বা যে উপকরণ হতে ইতিহাস রচনার উপকরণ পেয়ে থাকেন তা ইতিহাসের উৎস। অনেক ক্ষেত্রে উৎস, উপাদান ও তথ্যকে আমরা একই অর্থে ব্যবহার করে থাকি । প্রকৃতপক্ষে উৎস ও উপাদান বা তথ্যের কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান ।
↑ ইতিহাসের উৎস : ইতিহাসের উৎস বলতে উৎপত্তিস্থল, সূচনাস্থল, যেখানে বা যাতে ইতিহাসের তথ্য বা উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে বুঝায়। যেমন- রোটাসগড় গিরিগাত্র বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের একটি উৎস। এটা হলো প্রাচীন বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক শশাঙ্ক সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস। রোটাসগড় গিরিগাত্রে যে বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে তা হলো ঐতিহাসিকের তথ্য। ঐতিহাসিকগণ উৎস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বা তথ্য সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ।
ইতিহাসের উৎসসমূহের শ্রেণিবিভাগ : ইতিহাসের উৎসগুলোর কয়েকটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যথা : ক. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানসমূহ, খ. ধর্মশাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থসমূহ, গ. সাহিত্যিক উপাদান, ঘ. বৈদেশিক বিবরণ এবং ঙ. আর্থসামাজিক কিংবা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে এমন দলিলপত্র। তবে সামগ্রিকভাবে ইতিহাসের উৎসসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— i. অলিখিত উপাদান ও ii. লিখিত উপাদান ।
অলিখিত উপাদানসমূহ মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। সাধারণত জীবাশ্ম, যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র, সৌধমালা, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদি অলিখিত উপাদানের পর্যায়ভুক্ত। আর লিখিত উৎসের মধ্যে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে সব চুক্তিপত্র, সন্ধিপত্র, বিদেশিদের বর্ণনাভিত্তিক গ্রন্থ বা ডায়েরি, জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং খবরের কাগজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের উৎসসমূহকে ঐতিহাসিকগণ আবার প্রাথমিক উৎস এবং দ্বৈতয়িক উৎস এই দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। কোনো যুগের মুদ্রা, রাস্তাঘাট, দালানকোঠা বা সৌধ, সরকারি নির্দেশপত্র, বক্তৃতা, আইনকানুন বা শাসনতন্ত্রসংবলিত মূলগ্রন্থ, সরকারি চিঠিপত্র, সন্ধি, চুক্তি, কোনো ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীর সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা ইত্যাদি ইতিহাসের প্রাথমিক উৎস বা উপাদান । প্রাথমিক উৎসের ভিত্তিতে তৈরি বিবরণ বা প্রত্যক্ষদর্শী নন এমন কোনো লোকের দ্বারা ঘটনার বর্ণনা যা একজনের বিবরণের আলোকে ইতিহাসে ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি দ্বৈতয়িক উৎস বা উপাদান । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের উৎসসমূহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। উৎসসমূহের এরূপ প্রকারভেদ অর্থাৎ এরূপ বহুমুখী ঐতিহাসিক উৎস ইতিহাস জ্ঞানকে দিন দিন অনেক সমৃদ্ধ করে তুলছে। তবে ঐতিহাসিকগণকে অসংখ্য উৎস থেকে ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর এ ফলেই উৎসভিত্তিক পরিশুদ্ধ ইতিহাস রচনা সম্ভব হয় ।

ইতিহাসের লিখিত উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মধ্যে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে সব চুক্তিপত্র, সন্ধিপত্র, বিদেশিদের' বর্ণনাভিত্তিক গ্রন্থ বা ডায়েরি, জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং খবরের কাগজ উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের উপাদানসমূহের মধ্যে লিখিত উপাদনসমূহই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ ঐতিহাসিক তথ্য প্রদান করে থাকে। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের চেয়ে লিখিত উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস রচনা অনেকটা সহজতর উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
• ইতিহাসের লিখিত উপাদান : ইতিহাসের লিখিত উপাদানসমূহ মোটামুটিভাবে নিম্নরূপ— ১. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য, ২. বিদেশি পর্যটকদের বিবরণী ও ৩. সরকারি দলিলপত্র । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : ১. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য : ঐতিহাসিক সাহিত্য ও বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্যসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— পুরাণ, রামায়ণ, ‘মহাভারত', 'হর্ষচরিত', 'রামচরিত’, ‘রাজতরঙ্গিণী', ‘দানসাগর’, ‘অদ্ভুতসাগর', ‘তবকাত ই নাসিরি', 'রিয়াজুস সালাতিন', ‘তারিখ ই ফিরিস্তা', 'আকবরনামা' প্রভৃতি। এসব গ্রন্থ হতে ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্যের সন্ধান করে বর্তমান ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ ইতিহাস রচনার প্রয়াস পান। আর তাই ইতিহাস রচনায় ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ২. বিদেশি পর্যটকদের বিবরণী : বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পর্যটক, ব্যবসায়ী-আক্রমণকারী, ভাগ্যান্বেষী ভারত সম্পর্কে তাদের বিবরণ রেখে গেছেন । আবার অনেক পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকও ভারতে না এসে ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ রচনা করেছেন। সেগুলোকে ইতিহাসের বৈদেশিক বৃত্তান্তমূলক মূল উৎস বলে গণ্য করা হয়। যেমন—মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা, চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েন ও হিউয়েন সাং এর বিবরণ, তিব্বতি ঐতিহাসিক লামা তারনাথের বিবরণ, আল বেরুনির বিবরণ, ইবনে বতুতার বিবরণ ইত্যাদি ইতিহাসের বৈদেশিক বৃত্তান্ত হিসেবে স্বীকৃত । এসব গ্রন্থ বা বৈদেশিক বিবরণ হতে আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি। এর ফলে আরও ঐতিহাসিক উৎসের অভাব থেকে আপাতত নিষ্কৃতি পেয়েছি । তাছাড়া বিদেশি পর্যটকদের বিবরণীসমূহ হতে আরও নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন ইতিহাস পেয়ে থাকি ।
৩. সরকারি দলিলপত্র : ইতিহাসের মৌলিক উৎসগুলোর মধ্যে সরকারি দলিলপত্র সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক উৎস । সরকারের দলিলপত্রের মধ্যে সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রের সামরিকসহ সার্বিক কর্মের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় ৷ সরকার কর্তৃক গৃহীত সব ধরনের কার্যক্রমের নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ উৎস হলো সরকারি দলিলপত্র। সরকারের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত সরকারি দলিলপত্রসমূহকে উৎস হিসেবে ব্যবহার করে একজন ঐতিহাসিক বিগত সরকারের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর চমৎকার ইতিহাস রচনা করতে সমর্থ হন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস রচনার উপাদানসমূহের মধ্যে লিখিত উপাদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত উপাদানসমূহের নির্ভরযোগ্যতা বেশি থাকায় এবং প্রমাণিত উপাদান হওয়ায় তা ইতিহাস রচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের চেয়ে বেশি-গুরুত্ব বহন করে। তবে লিখিত উপাদানসমূহও অনেক ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত তথ্যে দূষণীয় থাকতে পারে। এজন্য আমাদের সতর্কতার সাথে লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসের তথ্য গ্রহণ করতে হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]