, ইতিহাস রচনায় উৎসের গুরুত্ব মূল্যায়ন কর ।

উত্তর ভূমিকা : ঐতিহাসিকগণ সরাসরি যেখান থেকে বা যে বস্তু হতে ইতিহাস রচনার বিভিন্ন উপকরণ পেয়ে থাকেন তা হলো ইতিহাসের উৎস। ইতিহাসের উৎসের মধ্যে বিভিন্ন জনপদ, রাজ্য, রাজবংশ, রাজত্বকাল, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিহিত থাকে। ঐতিহাসিকের দায়িত্ব হলো উৎসের তথ্যসমূহকে বিচার- বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাস জ্ঞানকে দিনে দিনে সমৃদ্ধ করা। আর এজন্যই ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিক উৎসকে প্রধানরূপে বিবেচনা করা হয় ।
> ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে উৎসের গুরুত্ব : ঐতিহাসের উৎসসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যেমন— ১. মূল উৎস ও ২. দ্বৈতয়িক উৎস । নিম্নে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে এ দুটি উৎসের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. মূল উৎসের গুরুত্ব : ইতিহাসের মূল উৎসসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— ধর্মীয় শাস্ত্র ও সাহিত্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য, বৈদেশিক বৃত্তান্ত, সরকারি দলিলপত্র প্রভৃতি ।
মূল উৎসসমূহ ইতিহাস রচনায় সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। যেমন— বেদ থেকে আমরা আর্যদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে জানতে পরি। বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ 'ত্রিপিটক', ‘নিকায়' প্রভৃতি হতে প্রাচীন ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি। একইভাবে জৈনধর্ম গ্রন্থ 'ভগবতীসূত্র' প্রভৃতিও ইতিহাসের প্রাথমিক উৎস হিসেবে ইতিহাস পুনর্গঠনে বিশেষ অবদান রাখছে। আবার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে আরও প্রাগৈতিহাসিক কালের বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী, বিভিন্ন সভ্যতা প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা, শস্যাগার, মিসরের পিরামিড, পারস্য সভ্যতার শূন্য উদ্যান, মেসোপটেমীয় সভ্যতার হাম্বুরাবি আইন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ইতিহাস জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করছে ।
তার সাথে বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ, ঐতিহাসিক সাহিত্য, বৈদেশিক বৃত্তান্তে যেকোনো জনপদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। এগুলো জনপদের সম্পর্কে যে তথ্য সরবরাহ করে ঐতিহাসিকগণ সে তথ্যসমূহকে যাচাই-বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস শাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করে। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস পুনর্গঠনে ইতিহাসের মূল উৎসসমূহের মধ্যে লিখিত উপাদানসমূহ সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কেননা গ্রিক বীর আলেকজাণ্ডারের আক্রমণের পর থেকেই অনেক বিদেশি লেখক এবং ঐতিহাসিক এদেশে এসেছেন। যাদের লিখিত গ্রন্থসমূহে ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থসামাজিক ইতিহাসের বৈচিত্র্যময় দিক সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ ছিল। এর ফলেই আজ আমরা ভারতের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানতে পারছি ।
২. দ্বৈতয়িক উৎসের গুরুত্ব : ইতিহাসের দ্বৈতয়িক উৎসসমূহ ইতিহাস জ্ঞানকে আমাদের সামনে আরও সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। যেমন— ভগবত, বেদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি ঐতিহাসিক মূল উৎস থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, দার্শনিক অনেক সহজতরভাবে ইতিহাস রচনার উপাদান পেয়ে থাকেন। এই রচনাসমূহ ইতিহাসের দ্বৈতয়িক উৎস হিসেবে আমাদের কাছে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। মোটকথা, প্রাচীন গ্রন্থসমূহকে সহজ সাবলীলভাবে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দ্বৈতয়িক উৎস প্রধান রূপে বিবেচ্য। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের উৎসসমূহ ঐতিহাসিক তথ্য সৃষ্টি এবং এই তথ্য থেকে ইতিহাসের রূপান্তর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ইতিহাসের এই দুই প্রকারের উৎসের ওপর ভিত্তি করে সঠিক গবেষণার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ইতিহাস পাওয়া সম্ভব । এজন্য হাজার বছরের হারানো ইতিহাসের উপাদানসমূহ আজও অনেক মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত।

সংশ্লেষণ বলতে কী বুঝ ?

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস লিখনের একেবারে শেষ ধাপ হলো সংশ্লেষণ। ইতিহাসে গবেষণাধীন বিষয়ের ওপর উৎসের এবং উৎসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও সমালোচনার পর ঐতিহাসিকের কাছে যে বিপুল তথ্যের পাহাড় সৃষ্টি হয় তার সবগুলো যথাযথভাবে ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। এ শেষ ধাপে ইতিহাস গবেষককে সবগুলো উৎস, উৎসসমূহের বিপরীতে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহকে একত্রিত করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়। যা প্রক্রিয়াগতভাবে সংশ্লেষণ নামে পরিচিত ।
সংশ্লেষণ : সংশ্লেষণ শব্দের অর্থ একত্রীকরণ, জোগাড়করণ প্রভৃতি। যথাযথ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা ইতিহাসের উৎসসমূহের বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি । নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি কিংবা পুরনো জ্ঞানকে আরও যুগোপযুগী ও প্রায়োগিক করে তোলার জন্য আমাদেরকে যথাযথ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াতে গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতে হয়। এ গবেষণার সময়কালে ঐতিহাসিককে কাঙ্ক্ষিত উৎসের প্রতিটি সম্ভাবনাকেই যাচাই করে দেখতে হয়। এর ফলে গবেষকের হাতে বিভিন্ন উৎসরাজি সম্পর্কে হাজারো তথ্য জমা হতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষকের মূল দায়িত্ব হবে গবেষণার পর্যায়ক্রমিক ধাপানুসারে প্রাপ্ত বিচার বিশ্লেষণের ফলাফলগুলোকে একত্রিত করে ঘটনার একটি সার্বিক বা সামগ্রিক ইতিহাস রচনার প্রয়াস চালানো। যার পুরো বিষয়টি এক কথায় সংশ্লেষণ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ধরুন আপনি পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সিংহাসনারোহণ নিয়ে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনে আগ্রহী । এ সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে আপনি গোপালের জন্ম, শৈশব, বেড়ে ওঠা, মানবিক গুণাবলি, চেতনা, সাহসিকতা, ধৈর্য, বিচার বিবেচনায় আনবেন। তার সাথে সাথে গোপালের সমসাময়িক সমাজব্যবস্থার একটি চিত্রও আপনার প্রয়োজন হতে পারে। এভাবে ঐতিহাসিকের হাতে তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে হাজারো রকমের তথ্য এসে হাজির হয়। ঐতিহাসিকের দায়িত্ব হবে এসব তথ্যসমূহ থেকে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও প্রমাণিত উৎসসমূহ কাজে লাগিয়ে গোপালের সিংহাসনারোহণের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস সাধারণত ঘটনানির্ভর একটি জ্ঞানশাস্ত্র। এই ঘটনাসমূহ যখন হাজার বছরের হয়ে যায় তখন ঘটনাসমূহ নিয়ে সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। ঐতিহাসিকের কাজ হচ্ছে এই ধূম্রজাল ছিন্ন করে সঠিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করা। তবেই ইতিহাসচর্চায় বিবদমান সমস্যাসমূহ দূর করা সম্ভব হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]