ঐতিহাসিক পদ্ধতি কী?

উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তন ও মানুষের দ্বারা সংঘটিত অতীতের কাজের ওপর গবেষণার ফসল হলো ইতিহাস। সুদূর অতীত ও নিকট অতীতের বিভিন্ন উৎসের যথাযথ সন্ধান লাভ এবং উৎসের ওপর গবেষণা করে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উদ্ধার করেন ঐতিহাসিক। ইতিহাস রচনায় একজন ঐতিহাসিককে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যা সাধারণত ঐতিহাসিক পদ্ধতি নামে সমধিক পরিচিত।
● ঐতিহাসিক পদ্ধতি : নিম্নে ঐতিহাসিক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. ঐতিহাসিক পদ্ধতির সংজ্ঞা : যে সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করে অতীতের কোনো ঘটনা, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানাদি সম্পর্কে সমীক্ষা চালানো হয় তাকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে। অতীতের ওপর সর্বাত্মক অনুসন্ধান পরিচালনা করে যতদূর সম্ভব সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে নিতে হয় এবং গবেষণাকৃত তথ্যের গভীরে প্রবেশ করে এর নিগূঢ় রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে ঐতিহাসিককে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে হয়। এ কারণে যথার্থ নিয়ম ও সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসৃত না হলে প্রামাণ্য ইতিহাস রচনা করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
খ. ঐতিহাসিক পদ্ধতির বিভিন্ন দিক : সর্বজনীন ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করার জন্য একজন ঐতিহাসিককে ঐতিহাসিক পদ্ধতির নিম্নোক্ত দিকগুলো অনুসরণ করা একান্ত আবশ্যক :
১ উৎস সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া : ইতিহাসের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাস উৎসভিত্তিক । উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় । বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে হলে ঐতিহাসিককে যথাযথভাবে উৎস সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে। ঐতিহাসিককে উৎসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে (প্রত্নতাত্ত্বিক ও লিখিত উৎস) অবগত থেকে গবেষণার মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস রচনা করতে হবে।
২. উৎস হতে তথ্য বের করা : ইতিহাসের উৎস জোগাড়করণ, উৎসের শ্রেণিবিভাগ, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলাদা করার পর সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে ঐতিহাসিককে উৎস হতে তথ্য বের করে আনতে হয়। এ ক্ষেত্রে গবেষণায় সঠিক ফল প্রাপ্তির জন্য ঐতিহাসিককে যথাসম্ভব উৎসের সমকালীন সময়ে ফিরে যেতে হবে । একজন ঐতিহাসিক গভীর অনুসন্ধান, গবেষণা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে উৎস কোন প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছিল তা বের করতে পারলে ঐতিহাসিক পদ্ধতি সার্থক হবে। ৩. ধারাবাহিকতা ও সময়ানুক্রমিকতা : ধারাবাহিকতা ও সময়ানুক্রমিতা ইতিহাসের মূল আলাচ্য বিষয় । ঐতিহাসিকগণ প্রাপ্ত উৎস ও তথ্যসমূহকে বস্তুনিষ্ঠ করার পাশাপাশি সেগুলোকে ধারাবাহিক ও সময়ানুক্রমিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। ঘটনা ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে সময় কাল উল্লেখ করতে হবে। উৎস, তথ্য ও ঘটনার সময় উল্লেখ না করলে ঐতিহাসিক পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলা যাবে না ।
৪. ভৌগোলিক অবস্থানগত নির্দেশনা : ইতিহাস রচনা করার সময় তথ্য যাচাই বাছাই করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি উৎস ও ঘটনার ভৌগোলিক অবস্থানগত নির্দেশনা প্রদান করাও একান্ত আবশ্যক। ইতিহাস রচনা করার সময় ঐতিহাসিককে স্থানের উল্লেখ সহকারে ইতিহাস রচনা করতে হয়। কারণ পৃথিবীর সব ঘটনাই কোনো না কোনো ভৌগোলিক অবস্থানে সংঘটিত হয়ে থাকে। যা ঐতিহাসিক পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যথাযথভাবে ইতিহাস রচনা করতে হলে সুষ্ঠুভাবে ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার । ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসরণ ব্যতীত ঐতিহাসিক সত্যাসত্য সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না এবং সঠিক ইতিহাস আড়ালেই থেকে যায়, যা প্রকৃত ইতিহাসচর্চার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।

গবেষণা কী? গবেষণা : নিম্নে গবেষণা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. গবেষণার সংজ্ঞা : গবেষণার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Research' যার অর্থ দাঁড়ায় পুনঃঅনুসন্ধান অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত উন্নত পর্যবেক্ষণ, ঘটনার ভিন্ন প্রেক্ষিত খোঁজা এবং বাড়তি জ্ঞান সংযোজন করার কাঠামোবদ্ধ ব্যবস্থা। এক কথায় বলতে গেলে জ্ঞানের সত্যাসত্য যাচাই ও নতুন জ্ঞান আহরণ করার লক্ষ্যে যখন সুসংবদ্ধ কর্মতৎপরতা বা কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা হয়. তখন তাকে গবেষণা বলে ।
খ. গবেষণার পর্যায় : ইতিহাস গবেষণার কয়েকটি পর্যায় বা স্তর রয়েছে। নিম্নে এ পর্যায়গুলো আলোচনা করা হলো : ১. প্রথম পর্যায় : ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত কোনো তথ্যের তথ্যসূত্র যথার্থভাবে অনুসন্ধান করা হয়। ইতিহাস গবেষণার ক্ষেত্রে এই তথ্য সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচনা করা হয় । বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস সূত্র, লিখিত উপাদান ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান যেমন মুদ্রা, শিলালিপি প্রভৃতি নিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ইতিহাস রচিত হয়ে থাকে। এই নিদর্শনগুলো সহজলভ্য নয় । প্রথমত নির্দিষ্ট নিয়মে অনুসন্ধানের জন্য লিখিত উপাদান সংগ্রহ করতে হয়। এরপর অতীত মানুষের বসতি শনাক্ত করে সেখানে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জরিপ ও অনুসন্ধান করে প্রত্নতাত্ত্বিক আলামত সংগ্রহ করা গবেষণার প্রথম পর্যায়ভুক্ত। ২. দ্বিতীয় পর্যায় : প্রাপ্ত তথ্য থেকে ইতিহাসের যথার্থ উপাদান সংগ্রহ করা হয়। অতীতকালে সংঘটিত প্রায় প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা অথবা নিয়ম নেই। তাই ইতিহাসবিদ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে ইতিহাস রচনায় নিজেকে নিয়োজিত করে থাকেন। এক্ষেত্রে এই ধরনের পর্যায়ে ইতিহাসবিদকে দুটি সমস্যায় পড়তে হয়। প্রথমত, তিনি ইতিহাস লিখনের পর্যায় বস্তুনিষ্ঠ ঐতিহাসিক তথ্য পান না অথবা দ্বিতীয়ত, তাকে অনেক অতিরঞ্জিত, দূষণীয় ঐতিহাসিক উপাদান থেকে ইতিহাস রচনা করতে হয়। এই দুই ক্ষেত্ৰই ঐতিহাসিকের জন্য অন্যতম সমস্যা। তাই বাস্তবসম্মত ইতিহাস রচনায় তাকে সমস্যাগুলো নিয়েই গবেষণা কার্য পরিচালনা করতে হয়, যা গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায় ।
৩. তৃতীয় পর্যায় : ইতিহাসে সংগৃহীত তথ্যসমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়। এক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি ও পদ্ধতিতত্ত্বের মতো ইতিহাস গবেষণার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। যার ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস গবেষণা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলে। ইতিহাসবিদ গবেষণার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় যথার্থভাবে সমাপ্ত করে প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে নানা পদ্ধতিতে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে ইতিহাস রচনার কাজ শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে ইতিহাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন। যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই বুঝা যায় একটি তথ্য ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কতটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, যা গবেষণার তৃতীয় পর্যায় ।
৪. চতুর্থ পর্যায় : এ পর্যায়ের ইতিহাসের গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠা করা হয় । এক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তগুলোকে নির্দিষ্ট শ্রেণিকরণের পর একজন ইতিহাসবিদের দায়িত্ব হয়ে যায় ঐ তথ্য ও উপাত্তগুলোর প্রত্যেকটিকে গ্রহণযোগ্য যৌক্তিক ব্যাখ্যা দান । কারণ ব্যাখ্যা দানের মাধ্যমেই অতীত ঘটনাপ্রবাহ ইতিহাসে বিধিবদ্ধ হয়ে বর্তমানে স্থান করে নেয় । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটনের মতো গভীর অনুসন্ধান বা গবেষণা ইতিহাসের মূল বিষয়। গবেষণার প্রথম থেকে চূড়ান্ত ধাপগুলো অনুসরণের মাধ্যমে আরও সঠিক ও যুক্তিনির্ভর ইতিহাস রচনার প্রয়াস পাই । যার ফলে আমরা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জানতে পারি। তাই ইতিহাসচর্চায় গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : গবেষণার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। সাধারণত গবেষণার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও পদ্ধতিগতভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করা। উদ্দেশ্যগতভাবে যেকোনো গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অতীত জ্ঞানকে বিষয়করণের প্রয়াস চালানো হয়। অবশ্য এর পেছনে গবেষকের অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহলী মন এবং সমস্যা সমাধানের সঠিক পথনির্দেশ উদ্ভাবনের প্রত্যাশা নিহিত থাকে ।
• গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ ।
১. পুরনো তথ্যউপাত্ত বা উৎসের সাহায্যে নতুন সাধারণ নিয়মে উপনীত হওয়া ।
২. নতুন উৎস বা তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে পুরনো বিষয়াদি বা সিদ্ধান্তসমূহ সম্পর্কে অবগত হওয়া ।
৩. একই ধরনের তথ্যউপাত্তের ওপর নির্ভর করে অধিকসংখ্যক সিদ্ধান্ত বা উপসংহারে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা ।
৪. নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্বের বিদ্যমান পরস্পরবিরোধী ধারণা দূর করা ।
৫. সম্পূর্ণ নতুন ধারণা বা তত্ত্ব গড়ে তোলা কিংবা জ্ঞানের অনাবিষ্কৃত দিগন্তকে আবিষ্কার করা ।
৬. প্রচলিত বা বিদ্যমান জ্ঞানের উন্নতি সাধনে বোধগম্য ও যাচাই সাপেক্ষে নতুন জ্ঞান অর্জনে অবদান রাখা ।
অতএব, গবেষণা হলো একটি নিয়মতান্ত্রিক অনুসন্ধান। বিভিন্ন প্রত্যয় ও প্রতীককে এক্ষেত্রে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিদ্যমান জ্ঞান ও ধ্যান ধারণার যথার্থতা যাচাই করাই গবেষণার উদ্দেশ্য। এর ফলে এর কার্যকর সাধারণ নিয়ম গড়ে ওঠে, যা ইতিহাস বিনির্মাণে সাহায্য করে। প্রচলিত বা বিদ্যমান জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারণ করাই হচ্ছে গবেষণার মূল লক্ষ্য। বাস্তব কোনো সমস্যা সমাধানে বা সমাধানের লক্ষ্যে কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এমনকি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি জাতি গঠনে তথা উন্নত থেকে উন্নততর ভবিষ্যৎ গঠনের উদ্দেশ্য ও জ্ঞান আহরণ করা যেতে পারে। তাই গবেষণা হলো জ্ঞান অনুসন্ধানের আদর্শ বা মানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ, বস্তুনিষ্ঠ ও সুসংগঠিত জ্ঞানের আবিষ্কার ও বিকাশের লক্ষ্যে নিবেদিত পদ্ধতিগত কর্মকাণ্ড। যেকোনো গবেষণা কোনো না কোনো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এজন্য ইতিহাসবিদের প্রয়োজন সঠিক ও নির্ভুল পর্যবেক্ষণ, সঠিক বর্ণনা এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসন্ধান করা,
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গবেষণা হবে যুক্তিযুক্ত ও নৈর্ব্যক্তিক। তাই গবেষককে অবশ্যই সাহসী, নিরপেক্ষ, ধৈর্য, ধীরস্থির ও অনুসন্ধিৎসু স্বভাবের অধিকারী হতে হবে এবং গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষককে তার সমুদয় গুণের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে । তবেই গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।

গবেষণার প্রকারভেদ উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটনে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিককে যেমন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হয়, তেমনি কতিপয় পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে গবেষণাকার্য পরিচালনা করতে হয়। গবেষণা পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক গবেষণার মূলনীতি হলো— নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা এবং ফলিত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা করে তা প্রয়োগ করা হয় ।
গবেষণার প্রকারভেদ : অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে গবেষণাকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— ১. মৌলিক গবেষণা ও ২. ফলিত গবেষণা; নিম্নে এ দুটি গবেষণা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. মৌলিক গবেষণা : ইতিহাসশাস্ত্রের গবেষণার ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। মৌলিক গবেষণাকে ক্ষেত্র বিশেষে 'Pure research' বা 'Fundamental research' নামেও অভিহিত করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ের ইতিহাসের মৌলিক নীতি ও সত্য উদ্ঘাটন করা। এ নীতি অনুসারে মৌলিক গবেষণা সুদৃঢ় ভাবে কেবল ইতিহাসতত্ত্বের পরীক্ষা ও উন্নয়ন ঘটিয়ে থাকে। এর তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবহার প্রত্যাশা থাকে না । পরোক্ষভাবে এর ব্যবহার বিদ্যমান থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে মৌলিক গবেষণায় কোনো প্রকার ঝুঁকির প্রবণতা থাকে না। এসব কারণে মৌলিক গবেষণার গবেষকবৃন্দ প্রাপ্ত তথ্যের ব্যবহার উপযোগিতার পরিবর্তে এর নিয়ন্ত্রণ ও যথার্থতার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন । মৌলিক গবেষণা নিম্নের দুটি কাজ সম্পন্ন করে থাকে।
ক. মৌলিক গবেষণা যে তত্ত্ব আবিষ্কার করে তা সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে গবেষকের প্রতিভা, মেধা, তার
আবিষ্কৃত জ্ঞানকে উৎকৃষ্টতা দান করে থাকে ।
খ. মৌলিক গবেষণা বিদ্যমান বা প্রচলিত তত্ত্বের কিছু কিছু অনুমানকে যথার্থভাবে সংশোধন বা পরিমার্জনের মাধ্যমে
বিদ্যমান তত্ত্বের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করে থাকে।
২. ফলিত গবেষণা : ইতিহাস গবেষণার ক্ষেত্রে ফলিত গবেষণা বেশ কার্যকর হিসেবে ঐতিহাসিকের কাছে বিবেচিত হয়। ফলিত গবেষণাকে মাঠপর্যায়ের গবেষণাও বলা হয়ে থাকে। এ গবেষণার মূল লক্ষ্যই হলো প্রাপ্ত তথ্যকে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করা এবং যথাযথ প্রয়োগ করা। বাস্তব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ, চাহিদা, সম্পদ, প্রক্রিয়া ও লাভক্ষতি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং কারণ সম্পর্কে যাচাই করা হয়ে থাকে ফলিত গবেষণার মাধ্যমে। ফলিত গবেষণার অবদান হচ্ছে—
ক. কোনো বিষয়ে সমাজের উপকার সাধনের লক্ষ্যে সমাজ থেকে যেসব বিষয়ের জন্য যথার্থ সমর্থন প্রয়োজন তাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ফলিত গবেষণা প্রয়োজন।
খ. ইতিহাসের ফলিত গবেষণা তথাকথিত মৌলিক গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশলের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে । গ. তথ্য বা জ্ঞানের সাধারণীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য উপাত্ত ও ধারণা সরবরাহ করে থাকে । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস গবেষণা পদ্ধতি মূলত সাক্ষ্য প্রমাণিত তথ্যউপাত্তের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। পূর্বে তথ্যের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আধুনিক যুগে তথ্যের পর্যাপ্ততা ও বিচিত্রতা বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস গবেষণা ও লিখন পদ্ধতিকে সঠিক, অর্থবহ ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। ইতিহাসের লিখন পদ্ধতি ও তাই সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসিত হচ্ছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]