ইতিহাসের উৎসসমূহ বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস উৎসভিত্তিক। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনার কথা কল্পনাও করা যায় না। মানুষের অতীত কার্যক্রমের যে অংশটুকু প্রমাণিত উৎসের মাধ্যমে ঐতিহাসিকের বিচার বিশ্লেষণের আওতাভুক্ত হয় সে অংশটুকুই ইতিহাসের পাঠ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিকগণ সুসংবদ্ধনীতির আলোকে ধারাবাহিক ও সময়ানুক্রমিকভাবে, যা লিপিবদ্ধ করেন তাই প্রকৃত ইতিহাস। ইতিহাসের উৎস বলতে উৎপত্তিস্থল, সূচনাস্থল, যেখানে বা যাতে ইতিহাসের তথ্য বা উপাদান নিহিত আছে তাকে বুঝায় ।
● ইতিহাসের উৎসসমূহ : ঐতিহাসিক যেখান থেকে বা যে বস্তু হতে ইতিহাস রচনার উপকরণ পেয়ে থাকেন তা হলো ইতিহাসের উৎস । ইতিহাসের উৎসসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. মূল উৎস বা মৌলিক উৎস ও ২. দ্বৈতয়িক উৎস । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. মূল উৎস বা মৌলিক উৎস : সাধারণত যেসব উৎস থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনার প্রয়াস পান এবং যেসব উৎস অপর কোনো উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে উৎসে পরিণত হয়নি সেগুলোকে ইতিহাসের মূল উৎস বা মৌলিক উৎস বলা হয় । ইতিহাসের মূল উৎসকে আবার নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়—
ক. ধর্মীয় শাস্ত্র ও সাহিত্য, খ. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, গ. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য, ঘ. বৈদেশিক বৃত্তান্ত ও ঙ. সরকারি দলিলপত্র প্রভৃতি । নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. ধর্মীয় শাস্ত্র ও সাহিত্য : মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো ধর্ম। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধর্মীয় শাস্ত্র থেকে পাওয়া যায় । যেমন— আর্যদের সাহিত্যিক গ্রন্থ বেদ। আর্য ঋষিগণ এটি রচনা করেন । হিন্দু সমাজে বেদকে ধর্মশাস্ত্র রূপে গ্রহণ করা হয়। বেদ এর বিভিন্ন খণ্ড হতে আর্যদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ 'ত্রিপিটক', 'নিকায়' প্রভৃতি হতে প্রাচীন ভারতের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় । একইভাবে জৈনধর্ম গ্রন্থ ভগবতী-সূত্র প্রভৃতিও ইতিহাসে প্রাথমিক উৎস বলে গণ্য হয় ।
খ. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন : ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়। যেমন— জীবাশ্ম : প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলো জীবাশ্ম। হাজার হাজার বছর মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষ, অন্য কোনো প্রাণী বা দেহের অংশবিশেষকে জীবাশ্ম বলা যায়। জীবাশ্ম গবেষণা করে পিকিং মানব, নিয়ানডারথাল মানব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। যা বর্তমানে 'জীবাশ্ম হিসেবে ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে।
ii. লিপি : লিপি বলতে রাজ্য শাসনের জন্য পাথরের গায়ে খোদিত নির্দেশনাবলি, লিখন পদ্ধতি প্রক্রিয়া প্রভৃতি লিখিত উৎসকে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে রোটাসগড় গিরিগাত্রের শ্রীমহাসামন্ত শশাঙ্ক নামক লিপি, খালিমপুর তাম্রশাসনে গোপালের রাজপদ দখল সংক্রান্ত লিপি, সম্রাট অশোকের শিলালিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি প্রভৃতি লিপিকে ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মূল উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় ।
iii. মুদ্রা : ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হলো প্রাচীন মুদ্রা। মুদ্রা হতে শক, কুষাণ ও গুপ্তদের শাসনসহ ইতিহাসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়। মধ্যযুগে বাংলা ও ভারতের মুসলিম শাসকগণ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মুদ্রা জারি ও খুতবা পাঠ করতেন। মুদ্রাতে টাঁকশালের নাম, সন ও শাসকের নাম লেখা থাকতো।
iv. সৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ : পুরানো অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন সমাধিসৌধ ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। কোনো সভ্যতার স্থাপত্যকর্মের গঠনরীতি ও বিশালতা দেখে ঐ সভ্যতার উৎকর্ষ সম্পর্কে আমরা জ্ঞানলাভ করতে পারি। চীনের মহাপ্রাচীর, সোমপুর বিহার, ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান প্রভৃতি এই ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন ।
গ. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য : ঐতিহাসিক সাহিত্য ও বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। পুরাণ একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক সাহিত্য। 'রামায়ণ', ‘মহাভারত', ‘হর্ষচরিত', রামচরিত, রাজতরঙ্গিণী প্রভৃতি গ্রন্থ ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিবেচিত। বল্লাল সেনের 'দানসাগর' ও 'অদ্ভুতসাগর', মিনহাজউদ্দিন সিরাজের 'তবকাত ই নাসিরি', গোলাম হোসেন সলিমের 'রিয়াজুস সালাতিন', জিয়াউদ্দিন বারানির ‘তারিখ ই ফিরিস্তা', আবুল ফজলের 'আকবরনামা' প্রভৃতি গ্রন্থ ইতিহাসের মৌলিক উৎসরূপে অত্যন্ত মূল্যবান ।
ঘ. বিদেশি পর্যটকদের বিবরণী : বিভিন্ন সময় নানা দেশ থেকে আসা পর্যটক, ব্যবসায়ী, আক্রমণকারী, ভাগ্যান্বেষী ভারতে আগমন করে ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ বিবরণ রেখে গেছেন। আবার অনেকে পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক ভারতে না এসেও ভারত সম্পর্কে অন্য মাধ্যমে ভারতের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলো ইতিহাসের বৈদেশিক বৃত্তান্তমূলক মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। চৈনিক পর্যটক ফা হিয়েন, ইউয়েন সাং ভারত সম্পর্কে মূল্যবান ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গেছেন। আফ্রিকার ইবনে বতুতা, আল বেরুনি প্রভৃতি পর্যটকগণও ভারতের ইতিহাসের অনেক মূল্যবান তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন ।
ঙ. সরকারি দলিলপত্র : প্রাচীন ইতিহাস পুনর্গঠনের নিমিত্তে সরকারি দলিলপত্র সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকারের দলিলপত্রে সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, সমাজসহ সার্বিক অবস্থার প্রামাণ্য চিত্র পাওয়া যায়। এছাড়া সরকার কর্তৃক গৃহীত সব ধরনের কার্যক্রমের সংশয়হীন ও বস্তুনিষ্ঠ উৎস হলো সরকারি দলিলপত্র। সরকারের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত সরকারি দলিলপত্রসমূহকে ইতিহাসের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে একজন ঐতিহাসিক বিগত সরকারের সব কার্যক্রমের ওপর বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে পারেন ।
২. দ্বৈতয়িক উৎস : ইতিহাস রচনার দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎসসমূহকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উৎস বলে বিবেচনা করা হয় । ইতিহাসের মূল উৎসসমূহের ওপর নির্ভর করে যেসব ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্য যেকোনো গ্রন্থ ও উৎস হতে যেসব ইতিহাস রচনার প্রয়াস চালানো হয় সেগুলোকে দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎস বা দ্বৈতয়িক উৎস বলে গণ্য করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য মূল উৎসগুলো ব্যতীত ইতিহাসসংক্রান্ত সব গ্রন্থ ও অনুরূপ সব উৎসই ইতিহাসের 'Secondary Source' বলে গণ্য হয়। যেমন— ড. মো. শামসুজ্জামানের 'Introduction to History', মোহাম্মদ এনায়েত হোসেনের 'Introduction to History' প্রভৃতি ইতিহাসের দ্বৈতয়িক উৎস হিসেবে বিবেচ্য। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে উৎস একান্তভাবে প্রয়োজনীয় । বস্তুত উৎসের ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস রচিত হয়। ইতিহাস রচনাকে সমৃদ্ধ করতে হলে ইতিহাসের বিভিন্ন উৎস থেকে নিরপেক্ষভাবে ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আর এ জন্য ইতিহাসের উৎসগুলোকে অত্যন্ত যত্নের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে । তবেই হয়তো ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে আরও তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম হবে ।

ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উৎসের গুরুত্ব লেখ ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস যেসব প্রামাণ্য উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে সে গুলোকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। সঠিক ইতিহাস রচনায় লিখিত উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস রচনায় লিখিত উপাদানের মধ্যে যেসব অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে অন্যতম হলো সাহিত্য বিশেষত ইতিহাস আশ্রয়ী সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র প্রভৃতি সাহিত্যিক উপাদানের মধ্যে আরও রয়েছে রূপকথা, কিংবদন্তি ও গল্প কাহিনি। এই সমস্ত সাহিত্যিক উপাদানসমূহ সঠিকভাবে ঐতিহাসিক সত্যকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে ।
↑ ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উৎসের গুরুত্ব : ইতিহাস রচনার যে উপাদানসমূহ লিখিত আকারে পাওয়া যায় তাকে লিখিত উৎস বলে। ইতিহাসের লিখিত উৎসগুলোর অধিকাংশই সাহিত্যিক উপাদান বা ঐতিহাসিক সাহিত্য। এগুলোকে ইতিহাস আশ্রয়ী সাহিত্য হিসেবেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন। ইতিহাসের লিখিত উপাদানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক. দেশীয় সাহিত্যিকগণের লিখিত উৎস ও খ: বিদেশি সাহিত্যিকগণের লিখিত উৎস। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. দেশীয় সাহিত্যিক উৎস : দেশীয় লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাস গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিকগণের ইতিহাস আশ্রয়ী লিখিত গ্রন্থ, প্রবন্ধ, গবেষণা সংকলন প্রভৃতি দেশীয় সাহিত্যিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত। দেশীয় সাহিত্যিক উপাদানের . একটা বড় অংশ জুড়ে আছে রাজসভার সভাকবিগণের রচনা বা রচনাসমূহ। নিম্নে দেশীয় সাহিত্যিক উৎসগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. প্রাচীন সাহিত্য : ইতিহাসের প্রকৃত উৎস হিসেবে প্রাচীন সাহিত্যের সংখ্যা খুবই কম। প্রাচীন সাহিত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থটি। এখানে লেখক শাসকের গুণ, দক্ষতা, শাসনতান্ত্রিক বিভিন্ন পদ্ধতি, দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সমাজের সাথে রাজার সম্পর্ক, বহির্দেশীয় রাজ্যের সাথে রাজার সম্পর্ক, কূটনীতির বিভিন্ন মৌলিক বিষয়াবলি সংযুক্ত করেন। ফলে খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে লিখিত কৌটিল্যের প্রাচীন ইতিহাস আশ্রয়ী সাহিত্যিক উপাদানটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস পুনর্গঠনে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে সমকালীন ইতিহাস গবেষকের নিকট ।
২. প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ : ধর্ম মানব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্মীয় শাস্ত্র হতে ইতিহাসের অনেক উপাদান পাওয়া যায় । যেমন- হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ আর্যঋষিগণ এটি রচনা করেন। বেদের বিভিন্ন খণ্ড হতে আর্যদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ জানা যায়। বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ ত্রিপিটক, নিকার প্রভৃতি হতে প্রাচীন ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। একইভাবে জৈনধর্ম গ্রন্থ ‘ভগবতীসূত্র' প্রভৃতি ইতিহাসে প্রাথমিক উৎস বলে বিবেচিত হয় ।
৩. পুরাণসমূহ : ঐতিহাসিক সাহিত্যিক উপাদানের মধ্যে পুরাণ একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য উৎস। মোট আঠারোটি পুরাণের বেশ কয়েকটি হস্তিনাপুরের কৌরবরাজ সম্পর্কে জানা যায়। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ভি. এ স্মিথের মতে, মৌর্য ও শিশুনাগ বংশের ইতিহাস জানার জন্য বিষ্ণু পুরাণ ও মৎস্য পুরাণ ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎস ।
৪. অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী সাহিত্য : অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী সাহিত্যের মধ্যে আমরা মহাভারত, রামায়ণ, শ্রীচৈতন্যের জীবনী সাহিত্যের কথায় জানতে পারি। রামায়ণ ও মহাভারতে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানই খুঁজে পাওয়া যায়। এর ফলে আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। ধর্মকেন্দ্রিক মানবজীবনের ইতিহাসের উত্কৃষ্ট উৎস হিসেবে ধর্মশাস্ত্রীয় সাহিত্যিক, উপাদানগুলোই সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা চলে ।
৫. সংস্কৃত সাহিত্য : সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভাষা। এ ভাষায় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস সংবলিত অনেক প্রাচীন গ্রন্থ রচিত হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার যেসব সাহিত্যিকগণের মধ্যে পাণিনি ও পতঞ্জলি অন্যতম। পাণিনি ও পতঞ্জলির লিখিত গ্রন্থসমূহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাছাড়া সংস্কৃত ভাষায় রচিত নাটক মুদ্রারাক্ষস, মালবিকাগ্নিমিত্র প্রভৃতিতে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিহিত আছে। তাই নিরপেক্ষ ইতিহাস গবেষকের জন্য এ উপাদানসমূহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
৬. জীবনচরিত : সাধারণত রাজা বা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবন নিয়ে রচিত গ্রন্থ হলো জীবনচরিত । ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সভাসদসমূহ কর্তৃক রাজার জীবনচরিতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এই জীবনচরিতে অনেক অতিরঞ্জিত তথ্য থাকলেও সেগুলো ইতিহাসের ধারা বর্ণনার মাধ্যমে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করতে পারে। যেমন- বুদ্ধচরিত, হর্ষচরিত, গৌড়বহো, রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থের কথা বলা যায়। এ গ্রন্থসমূহ মূল্যবান ঐতিহাসিক সূত্র। যার ওপর নির্ভর করে অনেক ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে ।
খ. বিদেশি সাহিত্যিক/লিখিত উপাদান : রাজ্য জয়, ভ্রমণের কৌতূহল কিংবা নিয়তির 'পরিণতিতে সৌভাগ্যবশত অনেক বিদেশি কবি, গবেষক, লেখক ও দার্শনিক ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন— হিউয়েন সাং, টলেমি, ফা হিয়েন, মার্কো পোলো, ইবনে বতুতা, আল বেরুনি, ইৎসিং প্রমূখ ।
প্রাগৈতিহাসিক কালের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস জানার জন্য কোনো লিখিত গ্রন্থ পাওয়া যায় নি। তবে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ধারাবাহিক ইতিহাস সম্পর্কে বিদেশিদের লিখিত বিবরণ আমরা পেয়ে থাকি। এই বিবরণ বা গ্রন্থসমূহে ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাসের লিখিত উপাদানসমূহ যৌক্তিক প্রমাণ দাঁড় করানোর মাধ্যমে আমাদের ইতিহাস পুনর্গঠন করতে সাহায্য করেছে। এর ফলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর দেশীয় ঐতিহাসিক উৎসের সাথে সাথে' বৈদেশিক ঐতিহাসিক উৎস পাওয়াতে নিঃসন্দেহেই বলা যাচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ অতিপ্রাচীন কাল থেকেই বহির্বিশ্বের নিকট বেশ সমাদৃত ছিল। যা আমাদের ঐতিহাসিক সমৃদ্ধিকেই পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]