উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার ইতিহাস একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ চলমান প্রক্রিয়াটি মানুষের গৌরবোজ্জ্বল কিংবা বিষাদময় অতীতকে বর্তমানের মধ্যে প্রাণবন্ত করে রাখে। যারা নিরলস কর্ম প্রচেষ্টার দ্বারা ইতিহাস নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মাধ্যমে মানুষের অতীত কর্মের প্রামাণ্য বিবরণ তুলে ধরেন তারাই ঐতিহাসিক। সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস নামক শিল্পকর্মের শিল্পী হলেন একজন ঐতিহাসিক । ঐতিহাসিক অত্যন্ত দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের পুরনো অতীতকে বর্তমানের মধ্যে জীবন্ত করে রাখেন ।
ঐতিহাসিক : যে ব্যক্তি মানব সভ্যতার যাবতীয় অতীত কর্ম বর্ণনার মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে লেখনীর দ্বারা ফুটিয়ে তোলেন তিনি ঐতিহাসিক নামে পরিচিত। অর্থাৎ যে শিল্পী অতীতের যাবতীয় ঘটনাকে ইতিহাস নামক সুতোয় একত্রে গ্রোথিত করে বর্তমানের মধ্যে অতীতকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস পান তাকে ঐতিহাসিক বলা হয়। একজন ঐতিহাসিক মানুষের অতীতকে নিয়ে সুসংবদ্ধভাবে জ্ঞানান্বেষণ করেন। অন্যভাবে বলা যায়, ইতিহাস বোধসম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তিই একজন ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস রচয়িতাও একজন ঐতিহাসিক। মানুষের অতীত কর্ম সংশ্লিষ্ট উপাদান, উৎস ও তথ্যকে যথাযথভাবে যাচাইবাছাই করে সত্যকে নিরপেক্ষ ও সর্বজনীনভাবে লিখিত আকারে তুলে ধরার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই ঐতিহাসিক। আবার আত্মোপলব্ধিমূলক মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত সমাজ ও সভ্যতার অতীত সন্ধানী ব্যক্তি হলেন একজন ঐতিহাসিক। একজন ঐতিহাসিক কার্যত একজন অতীতাশ্রয়ী গবেষক এবং মানুষের অতীত কর্ম সংশ্লিষ্ট জ্ঞানতাপস। যিনি একান্ত মমত্ববোধ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের অতীত কর্মের অসীম সাগরে অবগাহন করে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রামাণ্য তথ্যের আলোকে নিরপেক্ষভাবে অতীতকে বর্তমানের মাঝে তুলে ধরেন তিনিই ঐতিহাসিক । যারা মানব সভ্যতার অতীত নিয়ে পর্যালোচনা করেন, মানুষের বিগত কর্ম নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে নিমগ্ন থাকেন, মানুষের মানবিক দিকগুলো যাদের সযত্নতার কাগজের পাতায় স্থান করে নেয় এবং যারা অতীতের সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলকে অক্ষরবিন্যাসের মাধ্যমে বিবৃত করার চেষ্টা করেন তারা হলেন ঐতিহাসিক উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যিনি ইতিহাসকে সম্যকভাবে জানেন, বুঝেন ও যার ইতিহাস উপলব্ধি জ্ঞান আছে তিনিই প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিকের শ্রেণিভুক্ত। আবার, ইতিহাসের উৎস থেকে যথাযথ তথ্যসংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস প্রণয়ন করতে সক্ষম ব্যক্তিও ঐতিহাসিক পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য। ঐতিহাসিকের নিরলস চেষ্টার ফলেই আমরা ইতিহাসকে একটা সমৃদ্ধ বিকশিত ও বহুমুখী জ্ঞানের আধার হিসেবে পেয়ে থাকি ।
একজন ঐতিহাসিকের কী কী গুণাবলি থাকা দরকার ?
উত্তর ভূমিকা : ঐতিহাসিক বর্তমানে বসে গবেষণার মাধ্যমে সুদূর অতীত সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। এ লক্ষ্যে একজন ঐতিহাসিক অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে মানুষের অতীত তথ্যকে পুনর্গঠিত করে একটি ধারাবাহিক বিবরণী তৈরি করেন। তাই একজন ঐতিহাসিককে বেশকিছু গুণাবলি অর্জন করতে হয় ।
• একজন ঐতিহাসিকের গুণাবলি : একজন ঐতিহাসিকের নিম্নোক্ত গুণাবলি থাকা দরকার :
১. ইতিহাসবোধ ; ইতিহাসবোধ একজন প্রকৃত ঐতিহাসিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। জাতীয়তাবোধ যেভাবে একজন নাগরিককে খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলে, ঠিক তেমনিভাবে ইতিহাসবোধ একজন মানুষকে ইতিহাস প্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। কার্যত কোনো ব্যক্তির ইতিহাসবোধ না থাকলে তিনি ঐতিহাসিক হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে পারেন না। ইতিহাসবোধহীন কোনো তথাকথিত ঐতিহাসিকের রচিত ইতিহাস পক্ষপাত দোষে দুষ্ট ও বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
২. অধ্যবসায় ও ত্যাগ : ঐতিহাসিককে অধ্যবসায়ী, ত্যাগী মানসিকতাসম্পন্ন এবং ধীরতা ও দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং এজন্য অনেক ধৈর্য ও ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। ঐতিহাসিককে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস রচনা করার জন্য ঠান্ডা মস্তিষ্কে, ধীরস্থিরভাবে এবং বলিষ্ঠ মনোবল নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
৩. আত্মসমালোচনার মানসিকতা : আত্মসমালোচনামূলক মানসিকতা একজন ঐতিহাসিকের একটি মহৎ গুণ বলে বিবেচিত হয়। তিনি যেমন অন্য ঐতিহাসিকের রচিত ইতিহাস অধ্যয়ন করে ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষতা মূল্যায়ন করে থাকেন, তদ্রুপ অন্য ঐতিহাসিকগণও তার রচিত ইতিহাস পড়ে নিরপেক্ষতার বিষয়টি যথার্থভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
৪. অনুসন্ধিৎসু : অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি একজন ঐতিহাসিকের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গুণাবলি । যথাযথ অনুসন্ধানমূলক মানসিকতা ও কার্যক্রম ছাড়া প্রামাণ্য ইতিহাস রচনা করা প্রায় অসম্ভব। অনুসন্ধিৎসুমূলক মানসিকতা ঐতিহাসিককে গবেষণাধর্মী করে তোলে। কারণ তিনি জানেন ও বুঝেন যে, অনুসন্ধিৎসার মাপকাঠিতে ঐতিহাসিক উৎসসমূহ গবেষণার দ্বারা পরিশুদ্ধ করে নিতে হয় । ৫. সাহসিকতা : সাহসিকতা ঐতিহাসিকের অন্যতম গুণ। কারণ তাকে সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্ভুল ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। রাজনৈতিক প্রশাসক এবং দলীয় প্রভাব ও চাপের ঊর্ধ্বে ওঠে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে ঐতিহাসিককে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করতে হবে। উল্লেখ্য, মধ্যযুগে রাজাশ্রিত ও রাজদরবার কেন্দ্রিক ঐতিহাসিকগণ রাজদণ্ডের ভয়ে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনায় অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছেন ।
৬. ন্যায়নিষ্ঠতা : ন্যায়নিষ্ঠতা ঐতিহাসিকের একটি বড় মানদণ্ড। তিনি অবশ্যই সব বিষয় ও ঘটনাকে নৈতিক মানদণ্ড মোতাবেক বিচারবিশ্লেষণ করেন। তিনি যখন ইতিহাসের কোনো উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন তখন তিনি ঐসব পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অতএব একজন ন্যায়নিষ্ঠ বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি ইতিহাসের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা থাকে। তার ব্যক্তিগত লাভের প্রতি কোনো মোহ থাকবে না । কারণ ন্যায়নিষ্ঠাহীন ভাবাবেগ ও মোহাচ্ছন্নতায় আবদ্ধ থেকে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা সম্পূর্ণই অসম্ভব । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক একটি মহৎ দায়িত্ব নিয়ে দেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য সর্বজনীন ইতিহাস রচনায় প্রয়াসী হন। ঐতিহাসিক তার ওপর অর্পিত সব দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারেন যদি তিনি উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ঐতিহাসিকে পরিণত হন ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত