উত্তর ভূমিকা : একজন ঐতিহাসিক কি একজন ইতিহাসবিদ? ঐতিহাসিক হতে হলে কাউকে কি ইতিহাসবিদ হতে হবে? এরূপ নানান প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদ ও ঐতিহাসিকের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের প্রয়াস চালানো হচ্ছে । মূলত একজন ঐতিহাসিক ও একজন ইতিহাসবিদের মধ্যে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে খুব বড় ধরনের পার্থক্য না থাকলেও সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য অবশ্যই আছে ।
● ঐতিহাসিক ও ইতিহাসবিদের মধ্যে পার্থক্য : একজন ঐতিহাসিক ও একজন ইতিহাসবিদের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য রয়েছে : ১. প্রকৃতি ও পরিধিগত : ঐতিহাসিক ও ইতিহাসবিদের মধ্যে বিষয়গত জ্ঞানের পার্থক্য না থাকলেও তাদের জানার পরিধি ও প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান ।
২. উপলব্ধিগত : ইতিহাসবিদ ও ঐতিহাসিক উভয়েই মানুষের অতীত কর্মের ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি হলেও একজন ঐতিহাসিক যে বিষয়টি সাধারণভাবে জানেন ও বুঝেন, একজন ইতিহাসবিদ সে বিষয়টি ইতিহাসের গভীর জ্ঞান দ্বারা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন ।
৩. জ্ঞানগত : ইতিহাসবিদকে ইতিহাস বিষয়ের একজন বোদ্ধাব্যক্তিত্ব' বলে অভিহিত করা যায়। তার জ্ঞানের পরিধি ইতিহাসের সব উপাদান ও ইতিহাসের সব শাখাপ্রশাখায় সুসমভাবে বিন্যস্ত থাকে। পৃথিবীর সব ইতিহাস তার জানা না থাকলেও সাধারণ অধ্যয়নের মাধ্যমে সব ইতিহাসের শ্রেণিবিভাগকে তিনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন। অন্যদিকে, সাধারণ ইতিহাসবিদের চেয়ে ঐতিহাসিকের জ্ঞান অনেক দুর্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে। ঐতিহাসিকের ইতিহাস বিষয়ে উপলব্ধিও অনেক পুরনো তথ্যে ভরপুর থাকতে পারে ।
৪. দক্ষতাগত : একজন ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা বা ইতিহাসের বিশেষ শাখার ওপর দক্ষতা প্রদর্শন করেন। কিন্তু একজন ইতিহাসবিদ ইতিহাসশাস্ত্রের সবদিক সম্পর্কে সমানভাবে দক্ষ হয়ে ওঠতে থাকেন ।
৫. অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে : একজন ইতিহাসবিদ সব যুগের, সব দেশের বিভিন্ন প্রকার ইতিহাস সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন। ইতিহাস বোধসম্পন্ন এবং ইতিহাসসংক্রান্ত বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বই ইতিহাসবিদ হিসেবে খ্যাত। আর ইতিহাসের বিভিন্ন শাখা বা বিশেষ দিক নিয়ে অভিজ্ঞ ইতিহাসবেত্তা হলেন একজন ঐতিহাসিক ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসবিদ ও ঐতিহাসিকের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্য মূলত জ্ঞানের চর্চাগত ও পরিধিগত দিক থেকে। তবে একথা সত্যি যে উভয়েই ইতিহাসকে পরিশুদ্ধ ও পরিশীলিত করে সর্ব সাধারণের পাঠ্য করে তোলার প্রয়াস চালান। এক্ষেত্রে ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত সব ব্যক্তিই ইতিহাসবিদ ও ঐতিহাসিকের নিকট সমানভাবে ঋণী ।
ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে লেখ।
উত্তর ভূমিকা : ঐতিহাসিক অতীতনিষ্ঠ তথ্যের সাহায্যে অতীতকে যথাযথভাবে পুনর্গঠন করেন। মানব সভ্যতার অতীতে অনেক তথ্য থাকে যার সামান্য অংশই ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। ঐতিহাসিকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করেই ঐতিহাসিক তথ্য বিবৃত হয়। তাই ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকের দায়িত্ব কর্তব্যই সবচেয়ে বেশি ।
↑ ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য : ইতিহাস রচনার সময়ে উৎসের কতটুকু ইতিহাসের তথ্যের জন্য ব্যবহৃত হবে, তথ্যের কতটুকু ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হবে, কতটুকু বাতিল হবে, ইতিহাসটির প্রকৃতি কেমন হবে, ইতিহাসটি কোন আশ্রয়ী হবে ইত্যাদি অনেক কিছু ঐতিহাসিকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে । তাই ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সবচেয়ে বেশি ।
লিখিত উপাদান আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইতিহাস রচনা করার জন্য প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একজন ঐতিহাসিকের দায়িত্ব হলো প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে ‘অধিক’ ও ‘কম’ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ দুই ভাগে ভাগ করা। আবার অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে রেখে বাকিগুলোকে অনৈতিহাসিক তথ্য বলে বর্জন করা। তাছাড়া একটি বিষয় বিবেচ্য যে, ঐতিহাসিকের নিকট বিপুল পরিমাণ তথ্য থাকলে এ বিপুল তথ্যের ওপর গবেষণা করে অনেক সময়ই সঠিক বা বাস্তব জ্ঞানলাভ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই খুব প্রয়োজনীয় ও পরিমিত তথ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানলাভ করে ঐতিহাসিকের ইতিহাস রচনা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর ফল বয়ে আনে এবং অন্যান্য তথ্যের পরিত্যাগকরণ ঐতিহাসিকের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বলে বিবেচিত হয়। এভাবে সঠিক তথ্যের নির্বাচন ঐতিহাসিকের একটি প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় আবার ঐতিহাসিকের অন্যতম কর্তব্য হলো গবেষণার ফলে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে নিরপেক্ষ ও সঠিক ইতিহাস রচনা করা। ইতিহাসশাস্ত্রকে তার মূল চেতনায় ধরে রেখে ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতাকে যথাসম্ভব বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালানো ঐতিহাসিকের নৈতিক দায়িত্ব। ঐতিহাসিককে ইতিহাস রচনার পূর্বে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে তার রচিত ইতিহাস যেন সর্বজনীন স্বীকৃতি পায় এবং মানুষের আত্মোপলব্ধির চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আর এজন্য ইতিহাস রচয়িতা তথা ঐতিহাসিককেই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যেহেতু ইতিহাস মানুষকে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় সেহেতু ইতিহাস রচয়িতাকে ইতিহাস রচনার সময় এই দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। তাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ, আত্মোপলব্ধিমূলক, দৃষ্টান্তমূলক সর্বজনীন ইতিহাস রচনা করতে হবে । তাহলেই ঐতিহাসিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালিত হবে।
অথবা, তথ্য কী?
উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস রচনার মূল উপকরণ হলো তথ্য। তথ্য ছাড়া কোনো ঐতিহাসিকের পক্ষে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয় । তবে তথ্য ইতিহাস রচনার জন্য অপরিহার্য হলেও সব তথ্য ইতিহাস রচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় । প্রকৃতপক্ষে যে তথ্য সর্বজনীন বস্তুনিষ্ঠ ও প্রায় সব ঐতিহাসিকের নিকট সমানভাবে স্বীকৃত সেই তথ্য ইতিহাস রচনার জন্য অপরিহার্য।
তথ্য : কোনো ঐতিহাসিক কর্তৃক রচিত বস্তুনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ লিখিত বিবরণীকে ইতিহাস বলা হয়। আর ঐতিহাসিক যে উপাদান বা উপকরণের সাহায্যে ইতিহাস রচনা করেন তাকে বলা হয় ইতিহাসের তথ্য। অর্থাৎ কোনো ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনার জন্য ইতিহাসের উৎস থেকে যে সহায়ক নিয়ামক পেয়ে থাকেন তাকে ইতিহাসের তথ্য বলা হয়। তথ্যকে ইতিহাসের কাচামাল বলে অভিহিত করা হয়। বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ছাড়া কোনো ঐতিহাসিকের পক্ষে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। ইতিহাসের তথ্যকে সংঘটিত কোনো ঘটনার সাথে তুলনা করা যায়। তবে অতীতের সব তথ্য ইতিহাসে স্থান পায় না। তাই স্বাভাবিক নিয়মে প্রশ্ন জাগে ইতিহাসে অন্তর্ভুক্তের জন্য তথ্যসমূহ কীভাবে নির্বাচিত হয় অথবা এ নির্বাচনের নির্ধারক কী? এ প্রশ্নের উত্তরে একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন । মূলত ইতিহাসের সাধারণ আলোকে দেখা যায় যে কিছু কিছু মৌলিক তথ্য রয়েছে যা সব ঐতিহাসিকের নিকট সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে। এসব তথ্যকে ইতিহাসের মূলভিত্তি বলা হয় ।
আবার অতীতের সব তথ্য ঐতিহাসিক তথ্য নয়। ঐতিহাসিক চাহিদা পূরণে যে তথ্য ব্যবহার করা হয় বা প্রয়োজন সেগুলোকে ইতিহাসের তথ্য বলা হয়। ইতিহাসের তথ্যকে অনেক ঐতিহাসিক চটের থলের সাথে তুলনা করেছেন । চটের থলে যেমন পণ্য ছাড়া দাড়াতে পারে না মাটিতে পড়ে থাকে তেমনি তথ্য ছাড়া ইতিহাসও পরিপূর্ণ হতে পারে না ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস রচনার জন্য তথ্য একান্ত অপরিহার্য। তবে তথ্যকে বস্তুনিষ্ঠ ও সব ধরনের প্রভাবমুক্ত থাকা জরুরী। অন্যথায় সঠিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। একজন ঐতিহাসিক একটি তথ্যকে নিয়ে গবেষণা করে ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত করতে পারেন। সুতরাং তথ্য ও ঐতিহাসিকের মতে সমঝোতার ফলই হলো বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত