ইতিহাসের তথ্যের ব্যবহার সম্পর্কে কী জান?

উত্তর ভূমিকা : তথ্য হলো ইতিহাস রচনার মূল উপকরণ। তথ্য ছাড়া ঐতিহাসিকের পক্ষে ইতিহাস রচনা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কোনো ইতিহাসের তথ্যগত অনেক উপাদান থাকতে পারে যার সব তথ্যই আবার ইতিহাস রচনায় কাজে আসে না । এক্ষেত্রে মূলত যে তথ্যগুলো সর্বজনীন, বস্তুনিষ্ঠ ও প্রায় সকল ঐতিহাসিকের কাছেই সমানভাবে সমাদৃত সে তথ্য ইতিহাস রচনার জন্য বেশি উপযোগী ।
ইতিহাসে তথ্যের ব্যবহার : নিম্নে ইতিহাসে তথ্যের ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. ইতিহাস পুনর্গঠনে : সময়ের গতিবেগের সাথে ইতিহাস এগিয়ে চলে। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সময়ের গতিশীলতাকে যেমন বিবেচনা করতে হয়, তেমনি ঐতিহাসিকের দক্ষতা ও যোগ্যতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়। ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসকে আরও বিস্তৃত প্রয়োগিক ও যুগোপযোগী করে বিনির্মাণ করতে তথ্যকে ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বরে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভিত্তিতে বাংলার প্রাচীন ইতিহাসে নতুন তথ্য সংযোজিত হচ্ছে । যা ইতিহাসের পুনর্গঠন হিসেবেই ঐতিহাসিকের নিকট বিবেচ্য।
২. ইতিহাসকে সক্রিয় করে তুলতে : আমাদের অতীত ইতিহাস ঐতিহাসিকের দক্ষতার মাধ্যমেই বর্তমানের মধ্যে প্রাণবন্ত হয়ে থাকে। অতীতের মৃতপ্রায় ইতিহাসকে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র কারিগর হলেন ঐতিহাসিক । বর্তমানের সক্রিয় ইতিহাস আমাদেরকে ভবিষ্যতের প্রতি দিকনির্দেশনা দেয় ৷
৩. ইতিহাসকে পরিপূর্ণ করে তুলতে : কোনো বিষয়ের ওপর ইতিহাস রচনা করার জন্য যদি সার্বিক কোনো তথ্য না পাওয়া যায় তাহলে ঐ খণ্ডিত বা আংশিক তথ্য দিয়ে পরিপূর্ণ ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন কোনো বিষয়ের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিককে পূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করতে হয়। ইতিহাসের আংশিক তথ্যের ফলে আমরা সিন্ধু সভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতাম না। আজ পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার লিপিসমূহের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব না হওয়াতে তা অপূর্ণই রয়ে গেছে। হয়ত পরিপূর্ণ তথ্য আবিষ্কৃত হলে বদলে যেতে পারে সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসের ধারা।
৪. ইতিহাসকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তুলতে : জ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো ইতিহাসশাস্ত্রেরও একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা কাঠামো বিদ্যমান । ইতিহাসশাস্ত্রের এই শৃঙ্খলা কাঠামোর মূল স্তম্ভ ঐতিহাসিক তথ্য। অন্ধকার যুগ বলতে আমরা যে সময়কালকে জানি সে যুগের প্রভাবশালী কিছু ঐতিহাসিক তথ্য থাকলে হয়তো সে সময়কালকে আমরা আর অন্ধকার যুগ বলে অভিহিত করতে পারব না। ফলে অন্ধকার যুগ ব্যতীত ধারাবাহিকভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হবে। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখে। আবার ঐতিহাসিকও তার গবেষণা কর্মকে অব্যাহত রাখেন তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই। পর্যাপ্ত তথ্য থাকলে তার ধারাবাহিক বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো জাতি, শ্রেণি, গোষ্ঠী এবং দেশ সম্পর্কে আমরা বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারি। তাই ইতিহাসের ক্ষেত্রে তথ্যের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায় ।
ইতিহাসের উৎস ও তথ্য বলতে কী বুঝ? উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের উৎস হলো যেখান থেকে ইতিহাস রচনার উপাদান বা তথ্য পাওয়া যায়। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনা করা তো দূরের কথা কল্পনাও করা সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক যেখান থেকে বা যে বস্তু থেকে ইতিহাস রচনার উপকরণ পেয়ে থাকেন প্রকৃতপক্ষে তা হলো ইতিহাসের উৎস। অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাসের উৎস, উপাদান ও তথ্যকে একই অর্থে ব্যবহার করা হয় । প্রকৃতপক্ষে, উৎস ও উপাদান বা তথ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক ইতিহাস পূর্ণগঠন করা হয়ে থাকে ।
ইতিহাসের উৎস ও তথ্য : নিম্নে ইতিহাসের উৎস ও তথ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. ইতিহাসের উৎস : ইতিহাসের উৎস বলতে উৎপত্তিস্থল, সূচনাস্থল, যেখানে বা যাতে ইতিহাসের তথ্য বা উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে বুঝায়। যেমন— রোটাসগড় গিরিগাত্র বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের একটি উৎস। এটা হলো প্রাচীন বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক শশাঙ্ক সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস।
ইতিহাসের উৎসগুলোর কয়েকটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যথা : ক. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানসমূহ, খ. ধর্মশাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থসমূহ, গ. সাহিত্যিক উপাদান, ঘ. বৈদেশিক বিবরণ এবং ঙ. আর্থসামাজিক কিংবা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে এমন দলিলপত্র । তবে সামগ্রিকভাবে ইতিহাসের উৎসসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— i. অলিখিত উপাদান ও ii. লিখিত উপাদান ।
অলিখিত উপাদানসমূহ মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। সাধারণত জীবাশ্ম, যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র, সৌধমালা, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদি অলিখিত উপাদানের পর্যায়ভুক্ত। আর লিখিত উৎসের মধ্যে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে সব চুক্তিপত্র, সন্ধিপত্র, বিদেশিদের বর্ণনাভিত্তিক গ্রন্থ বা ডায়েরি, জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং খবরের কাগজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
খ. ইতিহাসের তথ্য : কোনো ঐতিহাসিক কর্তৃক রচিত বস্তুনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ লিখিত বিবরণীকে ইতিহাস বলা হয়। আর ঐতিহাসিক যে উপাদান বা উপকরণের সাহায্যে ইতিহাস রচনা করেন তাকে বলা হয় ইতিহাসের তথ্য। অর্থাৎ কোনো ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনার জন্য ইতিহাসের উৎস থেকে যে সহায়ক নিয়ামক পেয়ে থাকেন তাকে ইতিহাসের তথ্য বলা হয় । তথ্যকে ইতিহাসের কাচামাল বলে অভিহিত করা হয়। বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ছাড়া কোনো ঐতিহাসিকের পক্ষে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয় । ইতিহাসের তথ্যকে সংঘটিত কোনো ঘটনার সাথে তুলনা করা যায় । তবে অতীতের সব তথ্য ইতিহাসে স্থান পায় না। তাই স্বাভাবিক নিয়মে প্রশ্ন জাগে ইতিহাসে অন্তর্ভুক্তের জন্য তথ্যসমূহ কীভাবে নির্বাচিত হয় অথবা এ নির্বাচনের নির্ধারক কী? এ প্রশ্নের উত্তরে একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। মূলত ইতিহাসের সাধারণ আলোকে দেখা যায় যে কিছু কিছু মৌলিক তথ্য রয়েছে যা সব ঐতিহাসিকের নিকট সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে । এসব তথ্যকে ইতিহাসের মূলভিত্তি বলা হয় ৷ উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস রচনায় উৎস ও তথ্য দুটি মৌলিক উপাদান । প্রকৃতপক্ষে, ইতিহাস রচনায় উৎসের সাথে সাথে তথ্যের প্রয়োজনীয়তাও অনেক বেশি অনুভূত হয়। উৎস ও তথ্যের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । এজন্য দুইটিকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই ।
ইতিহাসের উৎস ও তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য লেখ ।
উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের উৎস হলো যেখান থেকে ইতিহাস রচনার উপাদান বা তথ্য পাওয়া যায়। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনা করা তো দূরের কথা কল্পনাও করা সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক যেখান থেকে বা যে বস্তু থেকে ইতিহাস রচনার উপকরণ পেয়ে থাকেন প্রকৃতপক্ষে তা হলো ইতিহাসের উৎস । অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাসের উৎস, উপাদান ও তথ্যকে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, উৎস ও উপাদান বা তথ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
" ইতিহাসের উৎস ও তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য : নিম্নে ইতিহাসের উৎস ও তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করা হলো : ১. সংজ্ঞাগত : সাধারণত ইতিহাসের উৎস বলতে উৎপত্তিস্থল, সূচনাস্থল বা যাতে ইতিহাসের তথ্য বা উপাদান নিহিত আছে তাকে বুঝানো হয়। পক্ষান্তরে, তথ্য বলতে ইতিহাসের উৎসের সুনির্দিষ্ট কোনো দিককে বুঝায় ।
২. ইতিহাস রচনায় : ইতিহাস রচনায় উৎসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে শুধুমাত্র উৎসের ওপর নির্ভর করে ইতিহাস রচিত হয় না। সুতরাং ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিককে অবশ্যই ঘটনা সংশ্লিষ্ট নানাবিধ তথ্যের সাহায্য নিতে হয় । তথ্যের ওপর নির্ভর করেই প্রকৃত ইতিহাস রচনা সম্পন্ন হয় ।
৩. বিচার বিশ্লেষণে : অনেকগুলো উৎসের যথার্থ সংশ্লেষণের ফলে যে সারমর্ম দাঁড়ায় তা হলো তথ্য। তথ্যের সংশ্লেষণে কখনও উৎসকে খোঁজা হয় না। তাই এই ক্ষেত্রে উৎস ও তথ্য প্রকৃতপক্ষেই এক জিনিস বলে প্রতীয়মান হয় না ।
৪. ব্যবহারের ক্ষেত্রে : ইতিহাসের উৎসসমূহের মধ্যে বহুমুখিতা লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো উৎস সম্পূর্ণ বা একেবারে নির্ভেজাল নয় বলে ইতিহাস রচনার কাজে নাও লাগতে পারে। কিন্তু তথ্য ইতিহাসবিদের সবচেয়ে কাঙ্খিত জিনিস । যার জন্য তাকে অনেক ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ ধরে গবেষণা কর্ম চালিয়ে যেতে হয় ।
৫. চর্চার ক্ষেত্রে : কাঙ্ক্ষিত ঐতিহাসিক উৎস পাওয়ার পরও ইতিহাস চর্চা বা ইতিহাস লিখন শুরু করা যায় না। ঐতিহাসিককে ঐ কাঙ্ক্ষিত উৎস থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি বের করে আনতে আরও সময় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়। তবেই ইতিহাস চর্চার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের উৎস ও তথ্যের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে, ইতিহাস রচনায় উৎসের সাথে সাথে তথ্যের প্রয়োজনীয়তাও অনেক বেশি অনুভূত হয়। উৎস ও তথ্যের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও একে - অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এজন্য দুইটিকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই ।
একটি সাধারণ তথ্য কীভাবে ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয়? উত্তর ভূমিকা : ঐতিহাসিক যে উপাদান বা উপকরণের সাহায্যে ইতিহাস রচনা সম্পূর্ণ করেন তা হলো ইতিহাসের তথ্য। অন্যভাবে বলা যায়, ইতিহাসের উৎস থেকে ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিক যে সহায়ক নিয়ামক পেয়ে থাকেন তা হলো তথ্য। তথ্যকে ইতিহাসের কাঁচামাল বলে অভিহিত করা হয়। তবে, একথাও সত্যি যে, প্রত্যেকটি তথ্যই ইতিহাসে স্থান করে নিতে পারে না। অতিসাধারণ তথ্যও অনেক সময় ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয় ।
* একটি সাধারণ তথ্য যেভাবে ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয় : সব তথ্যকেই ঐতিহাসিক তথ্য বলা যায় না। যথাযথ প্রামাণ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যই সাধারণভাবে ঐতিহাসিক তথ্য হিসেবে স্বীকৃত। নিম্নে একটি সাধারণ তথ্য কীভাবে ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
উদাহরণস্বরূপ, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এক নাট্যমঞ্চকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হট্টগোল হয় এবং হট্টগোলের একপর্যায়ে নাটক দেখতে আসা জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে নাট্য পরিচালককে গুরুতরভাবে আঘাত করলে তিনি নিহত হন । এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ হট্টগোল ও নাট্যপরিচালকের মৃত্যুসংক্রান্ত তথ্যটি কার নিকট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে স্বীকৃত। এটি কি সাহিত্যের তথ্য, নাকি ঐতিহাসিক তথ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। তবে নিঃসন্দেহেই বলা যায়, নাট্য পরিচালকের মৃত্যু এটি আর যাই হোক কোনো ঐতিহাসিক তথ্য নয় ।
আবার ধরা যাক, উপযুক্ত নাট্যমঞ্চকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও নাট্যকারের মৃত্যুর ঘটনাটি নাটক দেখতে আসা একজন ব্যক্তির জীবনী গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হলো। প্রায় দুশত বছর পর ১৯০০ সালে কোনো ঐতিহাসিক ষোড়শ শতকের কলকাতার সামাজিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উক্ত ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সেমিনারে তুলে ধরলেন। যেখানে অনেক সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক উপস্থিত ছিলেন। এভাবে তথ্যটি সেমিনারে উপস্থিত ঐতিহাসিকদের গবেষণার সংস্পর্শে আসে মাত্র । এরপর উক্ত সেমিনারে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি বা ঐতিহাসিকের দ্বারা নাট্য পরিচালকের নিহত হওয়ার তথ্যটি হয়তো কোনো লেখার পাদটীকায় স্থান পাবে এবং আরও দীর্ঘদিন পরে তথ্যটি কলকাতার ইতিহাসবিষয়ক কোনো গ্রন্থে স্থান লাভ করলে একজন ঐতিহাসিক ঐ গ্রন্থটিকে ইতিহাসের ক্ষুদ্র উৎসরূপে তার লেখায় ব্যবহার করতে পারেন এবং গ্রন্থে বর্ণিত হলেই তথ্যটি একটি ঐতিহাসিক তথ্য বলে গণ্য হবে। এভাবে একটি সাধারণ তথ্য সময়ের পরিক্রমায় ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হয় । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো সাধারণ তথ্যকে ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হতে হলে তাকে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ হলো ঐ তথ্যটি অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে ঐতিহাসিকের নজরে আসতে হবে। ঐতিহাসিক সমাজ স্বীকৃতভাবে তথ্যটি ব্যবহার করতে হবে। তবেই একটি সাধারণ তথ্য ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত হবে ।
ইতিহাসে তথ্যের সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা বলতে কী বুঝ?
উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস বিনির্মাণের প্রধান উপকরণ তথ্য। ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিকের নিকট সবচেয়ে কাঙ্খিত বিষয় হলো তথ্য। ইতিহাস রচনার জন্য তথ্য অপরিহার্য হলেও সব তথ্যই আবার ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। মূলত যে তথ্যগুলো সর্বজনীন, বস্তুনিষ্ঠ ও সকল ঐতিহাসিকের কাছেই সমভাবে সমাদৃত সে তথ্য ইতিহাস রচনার জন্য প্রযোজ্য । এজন্য ইতিহাসবিদগণ তথ্যকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় এই দুই ভাগে বিভক্ত করেন ।
● ইতিহাসে তথ্যের সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা : নিম্নে ইতিহাসে তথ্যের সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা বলতে যা বুঝায় তা আলোচনা করা হলো : ক. ইতিহাসে তথ্যের সক্রিয়তা : সাধারণত তথ্যের কার্যকারিতা, উপযোগিতা এবং সর্বোপরি ঐতিহাসিকের উক্ত তথ্যটি ব্যবহারের মাধ্যমে ইতিহাসে তথ্যের সক্রিয়তা নির্ভর করে। ইতিহাসে ব্যবহৃত তথ্যগুলো প্রকৃত অর্থে সক্রিয় না নিষ্ক্রিয় তা নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক মত দেন যে, তথ্য সক্রিয় তথা তথ্য নিজেই কথা বলে । প্রকৃতপক্ষে, ব্যাপারটি সঠিক নয়। কারণ তথ্য কখনও নিজে সক্রিয় হতে পারে না এবং কথাও বলতে পারে না। ঐতিহাসিক যখন তথ্যটি ব্যবহার করে আমাদের সবার দৃষ্টিতে নিয়ে আসেন তখন তথ্যটি একটি সক্রিয় তথ্যে পরিণত হয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে, যেমন— বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার উয়ারী বটেশ্বরের কথা বলা যায় । উয়ারী বটেশ্বরের খনন কার্য শুরু হয় ২০০০ সালে। কিন্তু তারও অনেক আগে থেকেই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব হানিফ পাঠান এখানকার প্রত্নস্থলের কথা প্রচার করতে শুরু করেন ১৯৩০ সাল থেকেই। মাঝখানের ৭০ বছরে উয়ারী বটেশ্বরের তথ্যটি ঐতিহাসিকদের নজরে এসেছে। ফলে উয়ারী বটেশ্বর আজ আমাদের জাতিসত্তার সক্রিয় ইতিহাস। খ. ইতিহাসে তথ্যের নিষ্ক্রিয়তা : ইতিহাসের যে দিগন্ত আজও জনসম্মুখে উন্মোচিত করা যায়নি, আজও আমাদের নিকট যা অজানা রয়ে গেছে তা মূলত ইতিহাসের তথ্যের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে,ইতিহাসের সকল প্রকার উৎস বা তথ্য মৃত অবস্থায় থাকে। কোনো ঐতিহাসিক বা গবেষক যদি উৎসের ওপর গবেষণা না চালান এবং প্রকৃত সত্য খুঁজতে ব্যাপৃত না হন তাহলে ঐ তথ্যকে সক্রিয় তথ্যে রূপান্তরিত করা যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, ঐতিহাসিক যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেননি। এগুলোকে ইতিহাসের নিষ্ক্রিয় তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন— ১৯২২-২৩ সালে সিন্ধু সভ্যতার খনন কার্য ও প্রত্নবস্তুসমূহ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আজ অবধি অনেক গবেষণার পরও সিন্ধু সভ্যতার লিপিসমূহের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি যার ফলে সিন্ধু সভ্যতার অনেক তথ্যই এখনো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস মূলত ঐতিহাসিক তথ্যের সক্রিয়তার ওপরই বেঁচে থাকে। আর ঐতিহাসিক তথ্যের সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা নির্ভর করে ঐতিহাসিকের কোনো তথ্যের ব্যবহার যোগ্যতার ভিত্তিতে। তাই ঐতিহাসিকগণ অবশ্যই মহৎ মানসিকতা নিয়ে ইতিহাসের সব তথ্যকে সক্রিয় তথ্যে রূপান্তরের চেষ্টা করবেন এটাই সবার কাম্য ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]