ঐতিহাসিক কারা? ঐতিহাসিকদের কার্যাবলি আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : যারা মানবসমাজের অতীত নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকেন। মানুষের মানবিক দিকগুলো যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কাগজের পাতায় স্থান পায় এবং যারা অতীতের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলকে অক্ষরবিন্যাসের মাধ্যমে বর্ণনা করেন তারা হলেন ঐতিহাসিক। নিরেট ও নির্ভেজাল ইতিহাস পরিবেশন, ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে ওঠে একমাত্র ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন ঐতিহাসিক ।
ঐতিহাসিক : যারা নিরলস প্রচেষ্টায় ইতিহাস নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে মানুষের অতীত কর্মের প্রামাণ্য বিবরণ তুলে ধরেন তারাই ঐতিহাসিক। অন্যভাবে বলা যায়, ইতিহাসবোধসম্পন্ন প্রত্যকটি ব্যক্তিই ঐতিহাসিক। মানুষের অতীত কর্ম সংশ্লিষ্ট উপাদান উৎস বা তথ্যকে যথাযথভাবে যাচাইবাছাই করে সত্যকে নিরপেক্ষ ও সর্বজনীনভাবে লিখিত আকারে
উপস্থাপন করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি একজন ঐতিহাসিক। অতীত আত্মোপলব্ধিমূলক মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত সমাজ ও সভ্যতার অতীত সন্ধানী ব্যক্তি হলেন ঐতিহাসিক। একজন ঐতিহাসিক কার্যত একজন অতীত কেন্দ্রিক গবেষক এবং মানুষের অতীত কর্ম সংশ্লিষ্ট জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের অধিকারী, যিনি মমত্ববোধ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডের বিশাল সাগরে অবগাহন করে জাতিধর্মনির্বিশেষে প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষভাবে অতীতকে উপস্থাপন করেন ।
● ঐতিহাসিকের কার্যাবলি : নিম্নে একজন ঐতিহাসিকের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. অতীত সম্পর্কে জানা : একজন ঐতিহাসিক গবেষণার মাধ্যমে সুদূর অতীত সম্পর্কে জানার চেষ্টায় রত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে, অতীত সম্পর্কে এটি বস্তুনিষ্ঠ চিত্র দাঁড় করানো গেলেও কারো পক্ষেই অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় । একজন ঐতিহাসিক নিজ অবস্থান থেকে অতীতের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে ইতিহাস রচনার প্রয়াস পান। ঐতিহাসিক যে ইতিহাস রচনা করেন তা যেমন তথ্যনির্ভর হওয়া জরুরি তেমনি তাকে ব্যক্তিগত মতাদর্শ, আবেগ বা প্রাক ধারণা থেকেও মুক্ত হতে হবে। বাস্তবতার বিচারে একথা সত্য যে, অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো ধর্ম কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারপরও ঐতিহাসিককে ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে নির্মোহভাবে ইতিহাস রচনায় সচেষ্ট হতে হয় । ২. অতীতকে পুনর্গঠন : ঐতিহাসিক তার কাঙ্ক্ষিত তথ্যের সাহায্যে অতীতকে পুনর্গঠন করেন। সাধারণ অতীত ও ইতিহাসের অতীত এক জিনিস নয়। ইতিহাসের অতীতে অনেক তথ্য নিহিত থাকে। যার সামান্য অংশই ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনার প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন। ঐতিহাসিক আমাদের অতীতের যেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান সেসব তথ্য তাকে সন্তুষ্ট করে । অতীতের সব তথ্যই ঐতিহাসিক তথ্য বলে বিবেচ্য নয়। ঐতিহাসিকের চাহিদা পূরণে যে তথ্যের প্রয়োজন সেগুলোর মাধ্যমেই তিনি অতীতকে পুনর্গঠনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন ।
৩. উৎস সম্পর্কে জানা : একজন ঐতিহাসিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো উৎস বা ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। উৎসের সমস্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হন। তাছাড়া বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার জন্য তিনি প্রাথমিক উৎস ও দ্বৈতয়িক উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। তিনি ক্রমেই একজন তথ্যানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ।
৪. আত্মসমালোচনা : ইতিহাসবিদকে ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনার সাথে সাথে আত্মসমালোচনামূলক মানসিকতা পোষণ করতে হয়। ঐতিহাসিক মাত্রই জানেন যে, তিনি যেমন অন্য ঐতিহাসিকের রচনা পড়ে তার নিরপেক্ষতা মূল্যায়ন করে থাকেন তেমনি অন্য ঐতিহাসিকও তার ইতিহাসকে একসময় মূল্যায়ন করবেন। এজন্য তিনি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করলে তার ইতিহাস অনেকাংশেই নিরপেক্ষ হয়ে উঠতে বাধ্য ।
৫. সমকালীন ঘটনাসমূহ অধ্যয়ন : একজন ঐতিহাসিক অতীতকে জানার সাথে সাথে বর্তমান সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করেন। কেননা তার ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে অতীতের ঘটনাকে বর্তমানের মধ্যে চিরজীব্য করে তোলা। এজন্য সমকালীন ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিত সম্পর্কে ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে তিনি যে সময়কার ইতিহাস রচনা করবেন, সে সময়কার সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানলে তার দ্বারা বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা সম্ভবপর হবে ।
৬. কল্পিত সমঝোতা স্থাপন : ইতিহাসবিদ যে জনগোষ্ঠীর বা জনপদের ইতিহাস রচনা করবেন বলে মনোস্থির করেছেন তাদের কর্মকাণ্ডের মূলে নিহিত চিন্তাভাবনা বুঝার জন্য ঐতিহাসিককে ঐ সমাজের লোকের মনোজগতের সাথে এক কল্পিত সমঝোতায় পৌঁছানো অপরিহার্য। কল্পিত সমঝোতা ছাড়া সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস মানব সম্প্রদায়ের কঠিনতম কাজ। উনিশ শতকের মধ্যযুগের ওপর তেমন কোনো ভালো ইতিহাস লেখা হয়নি। কারণ ঐ সময়কার ঐতিহাসিকদের মধ্যে ঐ যুগের লোকদের মনোজগতের সাথে কোনো কল্পিত সমঝোতা বিদ্যমান ছিল না। মোটকথা, ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে গবেষণাধীন মানব সম্প্রদায়ের সাথে ঐতিহাসিকের কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইতিহাস রচনা সম্ভব নয় । ৭. ইতিহাসের ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ : ঐতিহাসিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতার সংরক্ষক। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা না থাকলে ইতিহাস প্রাণ হারায়। তিনি ঘটনা ধারাবাহিকভাবে রচনা করার পাশাপাশি যথাযথভাবে সময়কালও উল্লেখ করেন । উৎস, তথ্য ও ঘটনার সময় উল্লেখ না করলে ইতিহাস সঠিকভাবে রচনা করা যায় না। কোন ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছে তার সময়কাল ঐতিহাসিককে অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৮. ভৌগোলিক অবস্থানগত নির্দেশনা : ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইবাছাই করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি উৎস ও ঘটনার ভৌগোলিক অবস্থানগত দিকনির্দেশনাও একজন ঐতিহাসিক প্রদান করে থাকেন। ইতিহাস রচনা করার সময় ঐতিহাসিককে স্থানের উল্লেখসহ ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করতে হয়। আর এজন্য ঐতিহাসিককে ভূগোলশাস্ত্র সম্পর্কেও যথেষ্ট অধ্যয়ন করতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যারা ইতিহাস রচনা করেন এবং ইতিহাসের চেতনা মনে ধারণ করে তারা সবাই ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিকগণকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয়, যেগুলোর দ্বারা তারা ইতিহাসকে শুদ্ধ ও পরিমার্জিত করার চেষ্টা করেন। একজন ঐতিহাসিক জ্ঞানের আলোকে সামনে রেখে তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অতীতকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও দেন। আর এর ফলেই ইতিহাস তার স্বাচ্ছন্দ্য গতিধারায় ফিরে যায়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]