ইতিহাস চর্চায় উৎসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনার তাৎপর্য লেখ ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের উৎস থেকে ইতিহাস লেখার উপাদান পাওয়া যায়। উৎসের ওপর বিভিন্ন ধাপে গবেষণার মাধ্যমে মূলত ঐতিহাসিক সত্য তথ্যটি বের করে আনতে হয়। যাকে আবার ঐতিহাসিক নিজস্ব পদ্ধতিতে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনার পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ ঐতিহাসিক তথ্যে পরিণত করে ইতিহাস রচনায় ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণত সাক্ষ্য বা প্রামাণিক তথ্যের বিচারবিশ্লেষণ ও বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যার মাধ্যমে একজন ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করেন । এজন্য ইতিহাস রচনায় তথ্যের বিচারবিশ্লেষণ ও বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয় ।
● ইতিহাস চর্চায় উৎসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনার তাৎপর্য : ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিককে প্রথমত উৎসের জোগাড়করণ সম্পন্ন করতে হয়। উৎসের জোগাড়কার্য সম্পন্ন হলে ঐতিহাসিক প্রাপ্ত উৎসসমূহের মধ্যে কোনগুলো ব্যবহার করবেন আর কোনগুলো অপ্রয়োজনীয় বলে এড়িয়ে যাবেন এরূপ সিদ্ধান্তে মনস্থির করা প্রয়োজন। এরপর বিদ্যমান উৎসগুলো থেকে একজন ঐতিহাসিক উৎসের যথাযথ সমালোচনার মাধ্যমে উৎস সম্পর্কে যৌক্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। এজন্য ঐতিহাসিক সাধারণত উৎসের দুই ধরনের সমালোচনা কর্মসম্পাদন করেন। যথা : ১. উৎসের বাহ্যিক সমালোচনা ও ২. উৎসের অভ্যন্তরীণ সমালোচনা । নিম্নে ইতিহাস চর্চায় উৎসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোপাত করা হলো :
১. ইতিহাস চর্চায় উৎসের বাহ্যিক সমালোচনা : ঐতিহাসিকের জোগাড়কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক কিংবা লিখিত উৎসগুলো ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত কি না তা প্রথমেই ঐতিহাসিক অনুসন্ধান করে থাকেন। বাহ্যিক সমালোচনা উৎসের সঠিকতা ও মৌলিকত্ব যাচাইয়ের নিমিত্তে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে উৎসের ভিতর কোনো জালিয়াতি, ভাওতাবাজি, অতিরঞ্জিত ? তথ্য ইত্যাদি থাকলে তা উদ্ঘাটন করা সহজ হয়। অনেক সময় লিপিকার ও অনুবাদকের অমনযোগিতার জন্য প্রাচীন দলিল, দস্তাবেজে অনেক ভুলভ্রান্তি প্রবেশ করতে পারে। উৎস ব্যবহারের পূর্বে খুব সাবধানে ইতিহাসবিদকে এসব অপূর্ণতা দূর করতে হয়। এর ফলেই ইতিহাস হয়ে উঠবে পূর্ণ এবং উৎস হয়ে উঠবে নিরেট ও নির্ভেজাল। এরূপ পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস প্রকৃত ইতিহাসে পরিণত হবে ।
২. ইতিহাস চর্চায় উৎসের অভ্যন্তরীণ সমালোচনা : উৎসের অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ইতিহাস রচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিখিত উপাত্তের মূল্যায়নে ইতিহাস লেখককে সর্বদা উৎসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবাদর্শ ও প্রেষণা সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে হবে এবং বর্ণিত বক্তব্য সঠিক কি না তা যাচাইবাছাই করতে হবে। এজন্য গবেষণাধীন জনগোষ্ঠীর ধ্যানধারণা, যুগ ধর্ম, উৎসের ভাষা ইত্যাদি ইতিহাস লেখকের আয়ত্তে আনতে হবে, বা যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে উৎস প্রণেতা বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন তা গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। উৎসের গভীরে প্রবেশ করে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে এটা একান্ত দরকার । উৎসের অভ্যন্তরীণ সমালোচনার তাৎপর্য সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা দেওয়া হলো :
ক. তথ্যের প্রেক্ষাপট জানা : ইতিহাসবিদের সংগৃহীত তথ্যের প্রেক্ষাপট উদ্ঘাটন খুবই দরকারি কাজ বলে বিবেচিত। কেননা এই তথ্যগুলোকে কোন প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন তার সম্বন্ধে ঐতিহাসিককে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। নয়ত তথ্যের বিচারবিশ্লেষণে তিনি যথেষ্ট দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন না ।
খ. লেখকের অবস্থান নির্ণয় : প্রত্যেক লেখকই আর্থসামাজিকভাবে যেকোনো অবস্থান দ্বারা বেষ্টিত হয়ে ইতিহাস রচনায় আত্মনিয়োগ করে থাকেন। লেখকের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ইতিহাস রচনায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারে । এজন্য অভ্যন্তরীণ সমালোচনার ধাপে ইতিহাস লেখকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হয় ।
গ. লেখকের আদর্শ অনুধাবন : প্রত্যেক লেখকই ব্যক্তিগতভাবে কিছু মৌলিক আদর্শের অনুসারী। তার আদর্শ ইতিহাস রচনায় প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করে। এজন্য লেখকের আদর্শ অনুধাবন করতে পারলে লেখকের দ্বারা রচিত ইতিহাস অনেকাংশেই সহজ ও সাবলীল হয়ে উঠবে ।
ঘ. ধর্ম সম্পর্কে ধারণা : ঐতিহাসিক রচনায় লেখকের ধর্মমত সম্পর্কে ধারণা বা ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। কেননা লেখক তার নিজের ধর্মের গুণকীর্তন তার ইতিহাস রচনাতে সংযোজন করতে উদ্যোগী হতে পারেন। এটি তাকে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও সাবলীল ইতিহাস রচনায় বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
ঙ. কাল বা যুগ সম্পর্কে ধারণা : ইতিহাসের সময়কাল মানুষের মন ও চিন্তাধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। মধ্যযুগের কোনো ঐতিহাসিক যেমন আধুনিক যুগের ঐতিহাসিকের মতো চিন্তাচেতনার অধিকারী নন, তেমনি ইতিহাসের কাল বা যুগের ঊর্ধ্বেও কোনো ঐতিহাসিক নন। আর তাই ইতিহাস রচনায় সময়কাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উৎসের সমালোচনা উৎসকে নির্ভেজাল ঐতিহাসিক তথ্য প্রদানে উপযোগী করে তোলে । উৎসরাজির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনা এজন্যই ইতিহাস রচয়িতাদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই বলা যায়, ইতিহাস চর্চায় উৎসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনা একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]