উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসবিষয়ক আলোচনায় কার্যকারণ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কার্যকারণ মূলত দর্শনশাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়। সাধারণত দুটি বস্তু বা ঘটনার মধ্যকার অনিবার্য সম্পর্ককে কার্যকারণ সম্পর্ক বলে অভিহিত করা হয় । পৃথিবীর প্রতিটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পিছনে কোনো না কোনো কারণ নিহিত থাকে। বস্তুত মানবজীবনের প্রত্যেকটি ঘটনাই কোনো না কোনো কার্যক্রম অনুযায়ী সংঘটিত হয়। নিমিত্ত্ববাদ ঘটনার কার্যকারণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ঘটনার কারণসমূহ নির্দিষ্ট কয়েকটি সূত্রে গাথা। এ সূত্র অনুযায়ী একটি ঘটনা পূর্বের কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয় ।
কার্যকারণ : ইতিহাসের কার্যকারণ বলতে ঐতিহাসিক বিষয় ও ঘটনাসমূহের যথাযথ প্রেক্ষিতকে বুঝানো হয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পিছনে নানাবিধ কারণই হলো কার্যকারণ। আবার অন্যভাবে বলা যায়, ঐতিহাসিক কাজ বা ঘটনা সম্পন্ন বা সংঘটিত হওয়ার পটভূমিই হলো যথার্থ কার্যকারণ। গোপন চুক্তি, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, যুদ্ধবিগ্রহ, নিৰ্মাণ, ধ্বংস ও পতনকে অনিবার্য করে তোলার পিছনে তাড়নামূলক দিকসমূহকেও কার্যকারণ বলে অভিহিত করা হয়। সুতরাং সহজভাবে বলা যায়, কোনো কাজ সংঘটিত হওয়ার পিছনের প্রেক্ষিত হলো ঐ ঘটনার কার্যকারণ।
একজন আদর্শ ঐতিহাসিকের মূল দায়িত্ব হলো ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার সমসাময়িক প্রেক্ষিত যথাযথভাবে অনুধাবন করে ঐ ঘটনার সত্যিকার রহস্য উন্মোচন করা। এক্ষেত্রে তাকে যথার্থ উত্তর খুঁজে বের করার জন্য প্রশ্নের পর প্রশ্ন তথা অবিরত প্রশ্ন করে যেতে হয় । যেমন— ঐতিহাসিককে যথাযথ প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে হবে কোনো ঘটনা কেন ঘটল বা সম্ভাব্য কী কী কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে, সত্যিকার অর্থে কী ঘটনা ঘটেছিল, কীভাবে অথবা কোন কোন উপায়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে। কোন ধরনের ব্যক্তি বা জাতির দ্বারা এ ঘটনা ঘটতে পারে, কোন প্রেক্ষাপটে ঘটনা ঘটেছে, ঘটনাটির ফলাফল কী হয়েছিল। এমনিভাবে প্রশ্নের দ্বারা জর্জরিত করে কার্যত ঐতিহাসিককে উত্তরের পাহাড় গড়ে তুলতে হবে এবং সব প্রশ্নোত্তরের মাঝ থেকে সত্যিকার তথ্যগুলো বাছাই করে নিতে হবে। যেমনিভাবে অসংখ্য তথ্য হতে সঠিক তথ্যগুলোকে বাছাই করে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করে থাকেন। আর এভাবেই ইতিহাসের কার্যকারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা, গবেষণা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইত্যাদি নানারকম পন্থা আছে। সব পন্থা অবলম্বন করে ঐতিহাসিককে কোনো ঘটনার বাহ্যিক কারণ ও অন্তর্নিহিত রহস্য খুঁজে বের করতে হবে। তাহলেই ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা ঐতিহাসিকের পক্ষে সম্ভবপর হবে যা হবে সত্যিকার অর্থেই ইতিহাসের কার্যকারণ ।
● ইতিহাসের কার্যকরণ ব্যাখ্যায় নিমিত্তবাদ : : আমাদের রাষ্ট্রীয় সামাজিক পরিমণ্ডলে যা কিছু ঘটছে তার পিছনে অবশ্যই কিছু বোধগম্য ও যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ধরে নেওয়া যাক জনাব করিম ও জনাব খাইরুলের মধ্যে বেশ সখ্যতা আছে। তারা প্রায়ই পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে। কিন্তু একদিন করিম সাহেব হঠাৎ খাইরুল সাহেবের সাথে দেখা হওয়ার পর গতানুগতিক শুভেচ্ছা বিনিময় না করে বিরূপ আচরণ করে। এ বিরূপ আচরণের কারণ কী, জনাব করিম কি কোনো অলৌকিক বা দৈব কারণে বিরূপ আচরণ করেছে, নাকি জনাব করিম ইচ্ছে করেই বিরূপ আচরণ করেছে, নাকি বিরূপ আচরণের পিছনে অন্য কোনো লৌকিক বা মানবীয় প্রেক্ষিত কাজ করেছে। নিমিত্তবাদ অনুসারে জনাব করিম কোনো লৌকিক বা মানবীয় কারণে জনাব খাইরুলের সাথে বিরূপ আচরণ করেছে অথবা বিরূপ আচরণে জনাব খাইরুল কীরূপ ক্ষুব্ধ হয় তা দেখে মজা করার জন্য ইচ্ছে করেই বিরূপ আচরণ করেছে এমনটা নয় । জনাব করিম সাধারণভাবে জনাব খাইরুলকে শুভেচ্ছা জানানো ব্যতিরেকে বিরূপ আচরণ করে না। নিমিত্তবাদী তথা বাস্তব প্রত্যয়ী ঐতিহাসিককে জনাব করিমের বিরূপ আচরণ করার সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে পর্যালোচনা ও বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় যথাযথ অনুসন্ধান ও গবেষণার পর দেখা যাবে জনাব করিম হয়তো শারীরিক বা মানসিকভাবে কমবেশি অসুস্থ। হয়তো অর্থনৈতিকভাবে কোনো সমস্যা, কোনো দুঃসংবাদের দ্বারা শোকাহত অথবা কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় কারণে সমস্যাগ্রস্থ থাকতে পারেন। অর্থাৎ জনাব করিমের খারাপ আচরণের কোনো বাস্তব ও মানবীয় কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। তাছাড়া জনাব করিম যদি ইচ্ছে করে খারাপ আচরণ করে জনাব খাইরুলের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে ঐ ইচ্ছটাই মানবীয় কারণ। আর এটিই হলো নিমিত্তবাদ দ্বারা ইতিহাসের কার্যকারণ উদঘাটনের বাস্তব প্রক্রিয়া। নিমিত্তবাদে ঐশ্বরিক, ভৌতিক এবং অনুরূপ কোনো লৌকিক দর্শনের স্থান নেই। সত্যিকার অর্থে নিমিত্তবাদী প্রক্রিয়ার ঐতিহাসিক বহুমাত্রিক অনুসন্ধান ও গবেষণা করে প্রতিটি বিষয় ও ঘটনার যথাযথ কারণ উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হন ।
নিমিত্তবাদের অনিবার্যতা : নিমিত্তবাদ মূলত এক ধরনের বিশ্বাস। এ বিশ্বাস মতে, প্রতিটি মানবীয় কর্মকাণ্ডে এক বা একাধিক কারণ নিহিত থাকে এবং এ কর্মকাণ্ডগুলো অন্য যেকোনোভাবে ঘটতে পারে না। যতক্ষণ না কারণ বা কার্যাদিতে কোনো না কোনো পরিবর্তন সূচিত হয়। নিমিত্তবাদকে শুধু ইতিহাসের সমস্যা না বলে সমগ্র মানবীয় আচার আচরণের সমস্যা বলে চিহ্নিত করা যায়। যেমন— সমাজবহির্ভূত কোনো মানুষের অস্তিত্ব আমাদের ধারণায় আসে না তেমনি কারণবিহীন বা নিমিত্ত ছাড়া কোনো মানবীয় কর্মকাণ্ডের কল্পনা করা যায় না। যারা ভাবে যে, মানুষের ক্ষেত্রে সবকিছুই সম্ভব তাহলে হয় তা অর্থহীন নতুবা মিথ্যা। সাধারণ বা প্রাত্যাহিক জীবনে কেউ এটি বিশ্বাস করে না বা করতে পারে না। প্রত্যেক ঘটনার মূলে কোনো না কোনো কারণ নিহিত আছে বলে কথিত স্বতঃসিদ্ধটি আমাদের চারদিকে কী ঘটছে তা বুঝার পূর্বশর্ত। মানুষের আচরণ কার্যকারণ দ্বারা নির্দিষ্ট এবং এ কারণগুলো শনাক্ত ক্রা সম্ভব । অনরূপ ধারণা ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রায় অসম্ভব ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের কার্যকারণ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে ইতিহাস জ্ঞানকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। মূলত ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসের ঘটনাবলি উভয়ের সাথেই কার্যকারণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যা পরিশুদ্ধ সম্পূর্ণ ইতিহাস চর্চার পন্থা হিসেবে ঐতিহাসিকের নিকট কার্যকারণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত