ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ

ওয়াহাবি আন্দোলন (১৮৩১) Wahabi Movement (1831)
ওয়াহাবি আন্দোলন (১৮৩১) প্রতিরোধ আন্দোলন ও নিম্নবর্গের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। উল্লেখ্য যে, পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বাঙালি জাতি এক অনিশ্চিত অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিল। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বিচ্ছিন্নতাজনিত অন্তর্মুখিতা তখন সমগ্র ভারতবর্ষকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণ্ডিতে বিভক্ত করে দিয়েছিল। রাজনৈতিক ক্ষেত্রের এই বিচ্ছিন্নতা রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে এসে এক আত্মবিস্মৃতিতে পরিণত হয়। প্রচলিত নৈতিক কাঠামো ও শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পরায় বাঙালির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে নানা কুসংস্কার প্রবেশ করে তাদের নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। বাঙালি জাতির এই চরম দুর্দিনে মুসলিম মনীষীরা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে নব জাগরণের সৃষ্টি করেন, যা পরবর্তীতে প্রতিরোধ আন্দোলনে পরিণত হয় ।
ওয়াহাবি আন্দোলনের পটভূমি
প্রতিরোধ আন্দোলন ও নিম্নবর্গের ইতিহাসে দেখা যায় যে, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ব্রিটিশ ভারতে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কোম্পানির অপশাসন এবং ব্রিটিশ সরকারের বৈমাতৃসুলভ আচরণ এবং ‘ভাগকর ও শাসনকর' (Divide and Rule) নীতির অবধারিত ফলশ্রুতিতে বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন অংশে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম রচিত হয়। আর এ ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের পটভূমি রচনায় ও ভয়ংকর পরিণতিতে মুসলিম নেতৃবৃন্দকে অপরিসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। ফরায়েজি আন্দোলন, ওয়াহাবি আন্দোলন, বারাসাত বিদ্রোহ প্রভৃতি আন্দোলন ও বিদ্রোহে রক্ত ও জীবন দিতে হয়েছে বহু মুসলিম নেতা ও কর্মীকে, যা প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
সমগ্র ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ও সভ্যতার প্রভাবে হিন্দু সমাজে যেমন সংস্কার আন্দোলন দেখা দেয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সেরূপ সংস্কারের আন্দোলন দেখা দেয়। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতীয় মুসলিম সমাজ দুভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেখান । প্রথম গোষ্ঠী পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আধুনিক ভাবধারা গ্রহণ করে মুসলিম সমাজকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় গোষ্ঠী ইসলামের শুদ্ধিকরণ দ্বারা পবিত্র কোরআনের আদর্শকে রূপায়িত করার কথা ভাবেন। এ ভাবধারাকে ইসলামীয় পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন (Islamic Revivalism) বলা হয়। দ্বিতীয় ভাবধারা সম্পর্কে পরবর্তী পরিচ্ছেদে বিশদ আলোচনা করা হবে। সংস্কারবাদী মুসলিম নেতারা মুসলিমদের এ কথা বুঝাবার চেষ্টা করেন যে, আধুনিক শিক্ষা ও পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানকে গ্রহণ না করলে মুসলিম সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়বেন। তাঁরা যুক্তি দেখান যে, ইংরেজি শিক্ষা ও আধুনিকতা গ্রহণ করলে তা কোরআনের বিরুদ্ধতা হবে না। কারণ কোরআনে ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। ইসলাম হলো এক প্রগতিশীল প্রাণবান ধর্মমত। ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করলে মুসলিমরা আরও শক্তিশালী হবেন। ভারতে তাঁদের প্রাপ্য স্থান, সম্মান ও অধিকার রক্ষা করতে পারবেন। নতুবা তাঁরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বেন। এ ধরনের যুক্তিতর্ক মুসলমানদেরকে সচেতন করে তোলে ।
ভারতের বিখ্যাত মৌলবি চিরাগ আলি (১৮৪৪-৯৫ খ্রিঃ) মুসলিমদের পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আধুনিক ভাবধারা গ্রহণের ডাক দেন। চিরাগ আলি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে চাকরি করতেন। সুতরাং ইংরেজদের তিনি কাছ থেকে দেখেন। তিনি তাঁর স্ব- ধর্মাবলম্বীদের বলেন যে, অর্থহীন ইংরেজ বিরোধিতা করে কোনো লাভ হবে না। একদা মুসলিমরা ছিলেন শাসক শ্রেণি। ইংরেজ তাঁদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ায় ক্ষোভ দেখিয়ে লাভ হবে না। মুসলিমদের উচিত ব্রিটিশের সহযোগিতা করে প্রশাসন ও অন্যান্য পদে যোগদান করা। তিনি মুসলিমদের সমাজ সংস্কারের কথা বলেন। তিনি মুসলিম সমাজে বহুবিবাহ প্রথার নিন্দা করেন এবং এক পত্নী গ্রহণের জন্যে আবেদন জানান, যা আধুনিক মুসলিম সমাজ গঠনে প্রেরণা যুগিয়েছে ৷
সমগ্র ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন মুসলিম সমাজে আধুনিক সংস্কার প্রবর্তনের প্রধান পুরুষ । রাজা রামমোহন হিন্দুসমাজের সংস্কারের জন্য যা করেন, স্যার সৈয়দ আহমদ খান অনেকটা তাই করেন। স্যার সৈয়দ আহমদ ছিলেন পণ্ডিত ব্যক্তি । ১৮১৭ খ্রি. দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তিনি মুসলিম মাদ্রাসায় শিক্ষা নেন ও কোম্পানির বিচার বিভাগে কিছুকাল চাকরি করেন। স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখান যে, পবিত্র কোরাআনে ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে কিছু নেই। তিনি ইসলামীয় ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ইংরেজি চর্চা করা সম্ভব বলে প্রচার চালান। ভিকার উল মূলক প্রভৃতি বহু মুসলিম নেতা তাঁর সাথে যোগ দেন। তিনি ১৮৭৫ খ্রিঃ আলিগড় এংলো ইসলামিক কলেজ স্থাপন করেন। এ কলেজ ভারতীয় মুসলিমদের উচ্চশিক্ষার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজে পর্দা প্রথা ও বহু বিবাহের সমালোচনা করেন। তিনি পীর ও মুরিদি প্রথার নিন্দা করেন। তাঁর কমেন্টারিজ অন কোরআন (Commentaries on Quaran) গ্রন্থে তিনি কোরআনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেন। তিনি কোরআন পাঠ দ্বারা ইসলামের ধর্মতত্ত্ব জানার জন্য সকলকে বলেন। তিনি ক্রীতদাস প্রথাকে ইসলাম বিরোধী বলে মনে করতেন। স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজে নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন। পরে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর সংস্কার প্রচেষ্টায় ভাটা পড়ে। বিপানচন্দ্রের মতে, তাঁর কলেজের জনপ্রিয়তা রক্ষা ও রক্ষণশীল মুসলিমদের সমর্থন তাঁর কলেজে শিক্ষা লাভের জন্যে তিনি সংস্কার আন্দোলনে ক্রমে আপোষপন্থি নীতি নেন, যা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল।
ভারতে ঊনবিংশ শতকে ইসলামের নবজাগরণের অন্যতম নায়ক ছিলেন মির্জা গোলাম আহমদ (১৮৩৯-১৯০৮ খ্রিঃ)। তিনি পাঞ্জাবের অধিবাসী ছিলেন। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান অঞ্চলে তিনি তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন। তাঁর ধর্মতত্ত্ব বাহরিন-ই-আহম্মদিয়া (১৮৮০ খ্রিঃ) গ্রন্থে পাওয়া যায়। এজন্য তাঁর অনুগামীদের আহম্মাদিয়া বলা হয়। সুন্নি মুসলিমরা এই বিতর্কিত আহম্মাদিয়া সম্প্রদায়ের মতের তীব্র সমালোচনা করেন। পাঞ্জাব, সিন্ধু অঞ্চলে এ মতে বহু মুসলিম অনুপ্রাণিত হন। আহম্মদিয়া সম্প্রদায় ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কারের যে নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন, বিতর্কিতও বটে ।
দৃশ্যত ঊনবিংশ শতকের প্রথম হতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চাপে ভারতীয় মুসলমানরা তাদের দীর্ঘ পাঁচশত বছরের প্রভুত্ব প্রায় হারিয়ে ফেলে। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি সরকারি মান মর্যাদা ও এমনকি ভাষা বিপন্ন হয়ে ওঠে। বিদ্যালয় ও সরকারি কাজকর্মের সকল ব্যাপারে ফারসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার প্রচলন শুরু হলে মুসলমানদের মনে এ ধারণার উন্মেষ হয় যে ইংরেজরা তাদের প্রভু ও মুসলমানরা তাদের প্রজামাত্র। স্বভাবতই মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক দারুণ বিদ্বেষ ধূমায়িত হয়ে উঠতে থাকে । তাদের ক্ষোভ, হতাশা ও বিদ্বেষের বহিপ্রকাশ পায় ইংরেজি বিরোধী ওয়াহাবি আন্দোলনে। ‘ওয়াহাবি' শব্দের অর্থ নবজাগরণ। আরবে আবদুল ওয়াহাব নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি (১৭০৩-১৭৮৭ খ্রিঃ) মুসলিম ধর্মের সংস্কারের জন্য এক আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায় ‘ওয়াহাবি' নামে প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ ।
ওয়াহাবি আন্দোলনের জনক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব ১৭০৩ খ্রিঃ আরব দেশের আয়াইনা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বলেন যে, ইসলাম তার বিশ্বব্যাপী প্রভাব বর্তমানে হারিয়ে ফেলেছে। তার প্রধান কারণ হলো, হজরত মুহাম্মদের প্রচারিত আদি ইসলাম থেকে অনেকেই বিচ্যুত হয়েছেন এবং আল্লাহের প্রতি তাঁদের ভক্তি আগের মতো দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন যে, প্রকৃত মুসলিমদের একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। পীর-আউলিয়াদের প্রতি অতিরঞ্জিত ভক্তি ও উপাসনা হলো ইসলামের বিচ্যুতি। আবদুল ওয়াহাব বলেন যে, ইসলামকে তার আদি পবিত্রতা দান করতে হলে ইসলামের যে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা হয় তার অনেকগুলোকে বর্জন করতে হবে। পীর, ওলিদের জন্য মাত্রাহীন উচ্ছ্বাস প্রদর্শন করা উচিত নয়। আবদুল ওয়াহাব বলেন যে, খাঁটি ইসলামকে পালন করা হলে ইসলামের পুনরুজ্জীবন ঘটবে

ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল মূলত এক পুনরুজ্জীবনবাদী ( Revivalist) আন্দোলন। মক্কাযাত্রী বহু ধর্মপ্রাণ মুসলিম ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং নিজ নিজ দেশে ফিরে এসে ওয়াহাবি আদর্শ প্রচার করেন। মক্কা ফেরত ভারতীয় মুসলমানরা ভারতে ওয়াহাবি আদর্শ প্রচার করেন।
সারা ভারতে ওয়াহাবি মত ও আদর্শ প্রচারের পথিকৃৎ ছিলেন রায় বেরিলীয় সৈয়দ আহমদ। তিনি ১৭৮৬ সালে রায় বেরিলী জেলার (লক্ষ্ণৌতে-অবস্থিত) সম্ভ্রান্ত সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। ইসলামি শিক্ষা শেষ করে ১৮০৮ খ্রি. তিনি ভারতে টংকে গমন করেন এবং নবাব আমীর খাঁর অধীনে সামরিক বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন। নবাব আমীর খাঁ তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরণ করছিলেন এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করেছিলেন। সৈয়দ আহমদ শহীদ সামরিকভাবে তাঁর অধীনে সামরিক কাজে নিযুক্ত হন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দিল্লি যান সেখানে শাহ্ ওয়ালিউল্লাহের পুত্র আবদুল আজিজের শিষ্যত্ব নেন। শেখ আবদুল আজিজ ছিলেন ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত। তাঁর প্রভাবে সৈয়দ আহ্মদ ওয়াহাবি মতের সাথে পরিচিতি হন। তিনি সিরাজ উল মুস্তাকিম নামে এক গ্রন্থে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। ১৮১৮ সালে শাহ্ আব্দুল হাই এবং শাহ্ ইসমাইল তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সৈয়দ আহমদ শহীদ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে সফর শুরু করেন ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে থেকে । সফরকালে তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মকে মানুষের মনে স্থান করে দেওয়া। ধর্মবিশ্বাসে তিনি ছিলেন তৌহিদপন্থি আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী। সব রকমরে শিরকের ঊর্ধ্বে রাসুলুল্লাহ (স) একান্ত অনুসারী হওয়াই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাঁর প্রচারিত ওয়াহাবি মতাদর্শ গ্রহণ করে। এভাবেই ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন গড়ে ওঠে
ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ
প্রতিরোধ আন্দোলন ও নিম্নবর্গের ইতিহাসে দেখা যায় যে, ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়। প্রথম দিকে এটি ছিল ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন এবং ধর্মসম্মতভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে গড়ে তোলাই এর প্রধান লক্ষ্য ছিল। এর বাণী ছিল ইসলাম ধর্ম ও সমাজকে কলুষতা হতে মুক্ত করা ও হজরত মুহাম্মদের আদর্শ গ্রহণ করা। সৈয়দ আহমদ তাঁর ধর্মীয় মতামত প্রচার করলে বহু নিষ্ঠাবান মুসলিম তাঁর প্রতি আনুগত্য জানান। ১৮২০ খ্রি. থেকে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে আবদুল ওয়াহাবের মতামত প্রচার করেন। শাহারানপুর, রামপুরে তাঁর মতামত প্রচারের পর তিনি জৌনপুর, গোরক্ষপুর অঞ্চলে বহু ব্যক্তিকে তাঁর ধর্মমমত প্রচার করেন। মৌলবি ওয়ালিয়াত আলি ও ইনায়েত আলি ওয়াহাবি আদর্শে প্রভাবিত হন।

তিনি তাঁদের পাটনার ওয়াহাবি সম্প্রদায়ের খলিফা পদে নিয়োগ করেন। এরপর সৈয়দ আহমদ ১৮২১ খ্রি. কলকাতায় আসেন এবং কলকাতার মুসলিম সমাজে তাঁর মত বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। জেমস ও কিনলের মতে, এ সময় বাংলার তিতুমীরের সাথে সৈয়দ আহমদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সৈয়দ আহমদ তাঁর ৪০০ অনুগামীসহ ১৮২২ খ্রি. মক্কা শরীফ ও মদিনায় হজ যাত্রা করেন। মক্কায় তারা ব্যাপকভাবে এ মতাদর্শ প্রচার করেন।
তাঁরা ১৮২৩ খ্রিঃ ভারতের ফিরে এসে বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াহাবি সংগঠন স্থাপন করেন। পাটনায় ওয়াহাবি গোষ্ঠীর প্রধান কেন্দ্র স্থাপিত হয়। সৈয়দ আহমদ ঘোষণা করেন যে, ভারতে ব্রিটিশের শাসন স্থাপিত হওয়ার ফলে ভারতবর্ষ দার উল হরবে পরিণত হয়েছে। এখন ওয়াহাবিদের কর্তব্য হলো ভারতবর্ষকে দারুল ইসলামে পরিণত করা। এজন্যে তিনি বিধর্মী ও আগ্রাসনকারী ইংরাজের বিরুদ্ধে জেহাদ বা যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কলিকাতার ওয়াহাবি মুসলিম ব্যবসায়ী আমীর খাঁর মামলায় কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার অ্যানেস্টি সাহের প্রমাণ করেন যে, ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্র ছিল রাজনৈতিক। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ছিল ওয়াহাবিদের মূল লক্ষ্য। বিপিনচন্দ্র পালও এ মত স্বীকার করেছেন। ওয়াহাবি আদর্শে দীক্ষিত মুসলিমরা বিদেশি শত্রুকে উচ্ছেদ করে “ধর্মরাজ্য” বা দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সৈয়দ আহমদ ইংরেজের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উদ্দেশ্যেই তাঁর সংগঠন তৈরি করেন। এ সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সকল কলুষতা ও কুসংস্কার প্রবশে করেছিল তা ত্যাগ করে কোরআনীয় আদর্শে মুসলিম সমাজকে উদ্দীপিত করার জন্যে ওয়াহাবিরা প্রচার ও বিতর্ক চালান। এ থেকে ওয়াহাবি আন্দোলনের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী ভূমিকা প্ৰমাণিত হয় ৷
·
সৈয়দ আহমদ ওয়াহাবিদের মুক্তিসংগ্রামকে সফল করার জন্যে সৎ নির্ভযোগ্য নেতৃত্ব; উপযুক্ত সংগঠন, জেহাদ পরিচালনার জন্য নির্ভরযোগ্য নিরাপদ অঞ্চল বেছে নেওয়ার নীতি নেন। তিনি নিজে এ আন্দোলনের ইমাম হিসেবে থাকেন। ৪ জন খলিফা বা আঞ্চলিক শাসনকর্তার দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াহাবি সংগঠনকে কার্যকরী করা হয়। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সিতানা অঞ্চলকে দারুল ইসলাম বা পবিত্র অঞ্চল ঘোষণা করে এ স্থান থেকে জেহাদ পরিচালনার লক্ষ নেওয়া হয়। সিন্ধুর খয়েরপুর ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে ইউসুফজাই উপজাতিদের সাথে শিখদের তীব্র বিরোধ ছিল। শিখ জমিদার ও জায়গিরদাররা এ উপজাতিদের জমি গ্রাস করায় সংঘর্ষ বাঁধে। সৈয়দ আহমদ বিধর্মী শিখদের দার উল ইসলামের শত্রু বলে ঘোষণা করেন। আকোরার যুদ্ধে শিখদের হাতে সৈয়দ আহমদ ও ইউসুফজাইগণ পরাজিত হন। এরপর ইউসুফজাই নেতা ইয়ার মুহাম্মদ খানের সাথে সৈয়দ আহমদের বিরোধ দেখা দেয়। ওয়াহাবিদের আক্রমণে ইয়ার মুহাম্মদ খাঁ নিহত হন। এভাবে বাংলা তথা ভারতে ওয়াহাবিদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]