ইতিহাস চর্চার নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধর।

উত্তর ভূমিকা : আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো ইতিহাসেও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে। পদ্ধতিগত ইতিহাস চর্চার অন্যতম একটি গুণ হলো নৈর্ব্যক্তিকতা। নৈর্ব্যক্তিকতা বিজ্ঞানের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি আধুনিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রূপে বিবেচনা করা হয় । নৈর্ব্যক্তিকতা অনুশীলনের মাধ্যমে ইতিহাসবিদের পক্ষে বিজ্ঞানের লেখক ও গবেষকের মতো নিরপেক্ষ লেখক ও গবেষক হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। আর তাই বলা যায়, বিজ্ঞানের মতো ইতিহাসশাস্ত্রেও নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োগ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
" ইতিহাস চর্চায় নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োজনীয়তা : ইতিহাস চর্চায় নৈর্ব্যক্তিকতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে ব্যক্তিগত রাগ অনুরাগ, হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদির ঊর্ধ্বে ওঠে স্বাতন্ত্র্য বা নিরপেক্ষভাবে কোনোকিছু বিচারবিশ্লেষণ করার প্রক্রিয়াকে বুঝে থাকি। আর তাই ইতিহাসবিদের নৈর্ব্যক্তিকতার মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ইতিহাস রচনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিম্নে ইতিহাস চর্চায় নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরা হলো :
১. ই. এইচ. কার : দার্শনিক ই. এইচ. কারের মতে, “ইতিহাসে নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োজনীয়তা আছে। নৈর্ব্যক্তিকতা ছাড়া প্রকৃত ইতিহাস হতে পারে না।” কেননা নৈর্ব্যক্তিকতা ছাড়া কোনো ঘটনার আসলরূপ জানা সম্ভব নয়। তাই ইতিহাসকে অবশ্যই নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে ।
২. উনিশ শতকের দৃষ্টবাদীগণ : ঊনিশ শতকের দৃষ্টবাদীদের মতে, ইতিহাসে নৈর্ব্যক্তিকতার গুরুত্ব রয়েছে। তাদের মতে, জ্ঞানের যেকোনো শাখা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হলে তাকে প্রকৃত বিজ্ঞান হতে হবে। ইতিহাস থেকে যদি উপকার পেতে হয় তাহলে ইতিহাসকে প্রকৃত বিজ্ঞানের তত্ত্ব মোতাবেক সাজাতে হবে। উনিশ শতকের দৃষ্টবাদী দার্শনিকগণের সবাই ইতিহাসকে বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই মনে করতেন। তাদের মতে, ইতিহাসকে অবশ্যই বিজ্ঞানভিত্তিক হতে হবে। ইতিহাসের তথ্য হবে মুখ্য আর ব্যাখ্যা হবে গৌণ। কেননা তথ্যের ব্যাখ্যা দিতে গেলে ইতিহাস নৈর্ব্যক্তিকতা বর্জিত হয়ে পড়বে এবং নৈর্ব্যক্তিকতা না থাকলে ইতিহাসে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হবে । তাই তারা তথ্যের ব্যাখ্যার চেয়ে শুধু তথ্যের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ।
৩. দৃষ্টবাদ বিরোধীদের মন্তব্য : দৃষ্টবাদ বিরোধীদের মতে, ইতিহাসকে বুঝতে হলে বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই; বরং একজন ঐতিহাসিককে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে হবে। অন্তদর্শন দ্বারা ইতিহাসকে বুঝতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে। কেননা রসায়ন, পদার্থবিদ্যার মতো ইতিহাসকে পরীক্ষাগারে নিয়ে গবেষণা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ইতিহাসবিদকে অতীত বুঝতে হলে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আর নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগালে নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োজন হবে না ।
৪. স্যার জর্জ ক্লার্ক : স্যার জর্জ ক্লার্ক মনে করেন যে, ইতিহাসের জ্ঞান মানুষে মানুষে হস্তান্তরিত হয়। এক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ইতিহাসের এ হস্তান্তরযোগ্যতার ফলে ইতিহাস মানুষের মনের অজান্তেই অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবেই কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এভাবে পরিবর্তিত ইতিহাসই আবার পরের প্রজন্মের পাঠ্যের উপযোগী হয়ে ওঠে। আর এ কারণেই ইতিহাসে নৈর্ব্যক্তিকতার কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয় না ।
৫. ব্রিটিশ দার্শনিকগণ : ব্রিটিশ দার্শনিকগণের মধ্যে R. G. Collingwood ও ক্রোসি নৈর্ব্যক্তিকতা সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন। তাদের মতে, ইতিহাসে একেবারে নৈর্ব্যক্তিকতা নেই একথা বলা ঠিক নয় । ইতিহাস যেহেতু একজন মানুষের দ্বারা রচিত তাই এতে নৈর্ব্যক্তিকতা থাকা অসম্ভব কিছু না ।
মূল্যায়ন : ইতিহাসে নৈর্ব্যক্তিকতা থাকা বা না থাকা নিয়ে উল্লিখিত মতবাদগুলো সম্পর্কে বলা যায় যে, মতবাদসমূহের কোনোটিই প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের প্রকৃতিনির্ভর নৈর্ব্যক্তিকতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশকরণে সফল হয়নি। ইতিহাস যেহেতু অন্যান্য প্রকৃতি বিজ্ঞানের অনুরূপ বিজ্ঞান নয়, আবার সাহিত্য বা উপন্যাস রচনার মতো মনগড়া কোনো বিষয়ও নয় তাই ইতিহাসে নৈর্ব্যক্তিকতার সফল প্রয়োগ ও সঠিক বাস্তবায়ন একটি অন্যতম জিজ্ঞাসা। এ জিজ্ঞাসার মীমাংসা নির্ভর করে মূলত ইতিহাসবিদের হাতেই। সুতরাং ঐতিহাসিকগণ নির্ধারণ করবেন ইতিহাসে কতটুকু নৈর্ব্যক্তিকতার মানদণ্ড অনুসরণ ও প্রয়োগ করবেন এবং এর ফলে তার রচিত ইতিহাসের গতিপথ কেমন হবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডের বিবরণ. বলা হলেও ইতিহাসের অতীতকে আরও বাস্তব হিসেবে আমরা পেয়ে থাকি। তার অন্যতম কারণ ইতিহাস চর্চায় নৈর্ব্যক্তিকতার প্রয়োগ। তবে একথাও সত্যি যে, প্রত্যেক ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাসের গতিধারাকে অনেকটা প্রভাবিত করে। তাই নৈর্ব্যক্তিকতা ইতিহাসের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]