গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা জান লেখ ৷

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিহাস তত্ত্ব বলতে রচনার পদ্ধতি, সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন ও ইতিহাস বিষয় অনুসন্ধানের সব প্রায়োগিক দিককে বুঝায়। যুগানুক্রমে ইতিহাস রচনার রীতিনীতি ও পদ্ধতিতে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। প্রাচীন যুগে সমাজের ইতিহাস রচনার ঐতিহ্য বিকাশ লাভ করে গ্রিসে। অবশ্য আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের উদ্ভবের কাল গত দেড়-দুইশত বছর ধরে ইতিহাস তত্ত্বের সফল প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।
● গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য : অতি প্রাচীনকালে ইতিহাস ছিল অতিপ্রাকৃতবাদে ভরপুর। তাই মানুষের কার্যক্রমের ধারা অনুধাবন করা অসম্ভব ছিল। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বও এর ব্যতিক্রম ছিল না। নিম্নে গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ দেওয়া হলো :
১. কল্পনাশ্রয়ী সাহিত্যিক বর্ণনা : হেরোডোটাস পূর্ব গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বের রূপ ছিল কল্পনাশ্রয়ী সাহিত্যিক বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যময়। হেরোডোটাস পূর্ব গ্রিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ভাবলেই হোমারের লেখাগুলোই সবার আগে মনে আসে। এ সময়কার প্রখ্যাত লেখক হোমারের রচনাসমূহকে বর্তমানে ইতিহাসের পর্যায়ভুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। হোমারের ‘ইলিয়াড’ (Iliad) এবং ‘ওডিসি' (Odysseg) গ্রন্থের রচনাসমূহের বৃহদাংশ জুড়ে আছে কল্পনাশ্রয়ী বর্ণনা। তবে হোমারের লেখা অনেক জায়গাতেই সমকালীন গ্রিস, ক্রিট, ট্রয় প্রভৃতি নগরের বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশেষ করে হোমার ক্রিট সভ্যতার পতনে যে কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তা প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার পরিচয়কে অনেকটা স্পষ্ট করে তোলে ।
২. গদ্য সাহিত্যের অনুরূপ : গদ্য সাহিত্যের অনুরূপ ইতিহাস হেরোডোটাস পূর্ব ইতিহাস তত্ত্বের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল । এসময়ে আইওনিয়া অঞ্চলের লেখকদের বা কাহিনিকারদের দ্বারাই গ্রিক ইতিহাস তত্ত্ব বিকশিত হয়েছিল। এসময় ইতিহাস রচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, অতিরিন্দ্রয়াবাদ দেবদেবীর গুণকীর্তন প্রভৃতি।
৩. সমালোচনামূলক অনুভূতির সম্ভার : হেরোডোটাস পূর্ব সাহিত্যকর্ম ইতিহাসের পর্যায়ভুক্ত না হলেও গদ্য কাহিনিতে সমালোচনামূলক অনুভূতির সব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এসময়ের ইতিহাস রচয়িতাদের অনেকেই আবার বর্ণিত গল্পসমূহ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বৃহত্তর পরিসয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণা চালিয়ে ঘটনার সত্যিকার উৎস জোগাড় করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকতেন। যার ফলে তারা সত্য সন্ধানী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এভাবে নজিরবিহীন পদ্ধতিতে ইতিহাসে চর্চা শুরু হয় যা বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার দ্বার উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত ।
৪. হেরোডোটাস ও এ সময়কার ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য : হেরোডোটাস ও তার পরবর্তী গ্রিক ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো :
ক. মানব কেন্দ্রিকতা : হেরোডোটাস পূর্ব গ্রিক ইতিহাস চর্চায় দেবদেবীর মাহাত্ম্য, অতিরিন্দ্রীয়বাদে ভরপুর ছিল। এর স্থলে হেরোডোটাস মানুষের কর্মকাণ্ডনির্ভর ইতিহাস রচনার প্রয়াস পান। তিনি গ্রিক ও পারসিক যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে যে ইতিহাস রচনা করেন তার সে ইতিহাসে মানুষের কর্মকাণ্ডের বর্ণনাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে সর্বপ্রথম হেরোডোটাসের রচনায় অতিকথন ও দিব্যতান্ত্রিক ইতিহাসের পরিবর্তে মানব কর্মকাণ্ডভিত্তিক ইতিহাস চর্চার যাত্রা হয় ।
খ. বিজ্ঞানভিত্তিকতা : হেরোডোটাসের সময়কালে গ্রিক ইতিহাস তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিকতা। ঐতিহাসিক হেরোডোটাসই সর্বপ্রথম বিজ্ঞান বা অনুসন্ধান অর্থে ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত করেন। অনুসন্ধান, গবেষণা বা সত্যের সন্ধান এ অর্থেই ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা হয় এবং হেরোডোটাসের হাত ধরেই বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত ঘটতে দেখা যায়। হেরোডোটাসের পরবর্তী থুসিডিডিসের সময়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ইতিহাস চর্চার বাস্তব প্রয়োগ ঘটে । যে কারণে থুসিডিডিসকে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস চর্চার জনক বলেও অভিহিত করা হয়। মূলত থুসিডিডিসের পর থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস চর্চার আর কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি ।
গ. তথ্যভিত্তিক ইতিহাস : ইতিহাস মূলত উৎসভিত্তিক। উৎসসমূহের মধ্য হতে সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য বের করে আনার প্রয়াস চালানো হয়। সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার তথ্য উপকরণ সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যাবলির যর্থাথতা নিরূপণ ও যাচাই করে তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ইতিহাস রচনার যে ধারা গ্রিক ঐতিহাসিকগণ গড়ে তুলেন তা ইতিহাস চর্চার গতিকে যথেষ্ট বেগবান করে ।
ঘ. যুক্তিনির্ভরতা : প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাস রচনা ধারাতে প্রথম দিকে যুক্তিনির্ভরতার তেমন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও হেরোডোটাস, থুসিডিডিস কেন্দ্রিক ইতিহাস রচনার যুক্তিনির্ভরতা বেশ ভালোভাবেই স্বীকৃতি লাভ করে। যে তথ্যসমূহকে নিয়ে গ্রিকরা সর্বজনীন ইতিহাস রচনার চেষ্টা করেন ।
এ চেষ্টার হাত ধরেই আজকের ইতিহাস চর্চার একটা উৎকর্ষ লক্ষণীয়। গ্রিসের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার ছোঁয়া ইতিহাসের কাঠামো বিনির্মাণেও প্রয়োগ করা হয় । যার ফলে গ্রিক ইতিহাস উন্নতির দিকে ধাবিত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গ্রিক ইতিহাস চর্চা বেশ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের উন্নত অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এর পিছনে যেমন গ্রিক ঐতিহাসিকগণের কর্মনিষ্ঠা ছিল তেমনি ছিল নৈর্ব্যক্তিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিও। আর তাই আমাদের প্রত্যেককেই গ্রিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অনুসরণ করে ইতিহাস চর্চায় আত্মনিয়োগ করা উচিত।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]