প্রাচীন যুগের ঐতিহাসিক হিসেবে হেরোডোটাসের পরিচয় দাও ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের গবেষণা ও এর তাৎপর্যময় বিকাশে প্রাণপুরুষ হলেন হেরোডোটাস। তিনিই সর্বপ্রথম মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তিনি গ্রিক- পারসিক যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে 'Historia' শব্দটির ব্যবহার করেন। 'Historia' শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। এ কারণে হেরোডোটাস ইতিহাসের জনকের মর্যাদায় আসীন হন ।
প্রাচীন যুগের ঐতিহাসিক হিসেবে হেরোডোটাসের পরিচয় : উৎস ও তথ্যের অভাবে হেরোডোটাস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি । তিনি ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হেলিফার্নেসাস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লাইক্সেস ও মাতা ড্রাইও । পিতামাতা উভয়ে হেলেনীয় জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ ছিলেন। হেরোডোটাস জীবনের প্রথমদিকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সে কারণে তিনি রাজা লিজডামিস কর্তৃক স্বদেশভূমি হতে বিতাড়িত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি রাজা লিজডামিসকে শাসন ক্ষমতা থেকে পতন ঘটানোর জন্য স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সফলতার সাথে নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন । তিনি অত্যন্ত ভ্রমণপ্রিয় ছিলেন। জ্ঞান সাধনার অন্বেষায় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি দক্ষিণে মিসর, উত্তরে স্কিথিয়া, ভূমধ্যসাগর এবং ব্যাবিলন পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। তিনি এ ভ্রমণলব্ধ জ্ঞানই ইতিহাসে সন্নিবেশিত করেন। তিনি সর্বপ্রথম নিয়মানুগ ইতিহাস গ্রন্থ ‘ইতিবৃত্ত’ রচনা করেন। ‘ইতিবৃত্তের' প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল গ্রিক-পারসিক যুদ্ধের বিবরণ। তার রচনায় রাজা ক্লোসাসের শাসনকাল থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৮ অব্দে গ্রিকদের কাছে পারসিকদের পরাজয়ের বিবরণ পাওয়া যায় । তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪২০ অব্দে মারা যান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস সম্পর্কে পরিচিতি ও ধারণা প্রদান করে হেরোডোটাস ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ৷ তিনিই প্রথম 'Historia' শব্দটি ব্যবহার করেন । এর মাধ্যমে ইতিহাস একটি স্বতন্ত্র কাঠামো লাভ করে। এজন্য তিনি ইতিহাসের জনক হিসেবে পরিচিত। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে হেরোডোটাসের কৃতিত্বও বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে। ।
হেরোডোটাস সম্পর্কে জানার উৎসসমূহ কী কী? তার রচিত গ্রন্থসমূহের নাম লেখ ৷
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে সর্বপ্রথম যিনি ইতিহাসের সাথে মানব কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ঘটিয়েছেন তিনি হলেন হেরোডোটাস। প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তিনি গ্রিক-পারসিক যুদ্ধের ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে সর্বপ্রথম 'Historia' শব্দটির সার্থক ব্যবহার করেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ইতিবৃত্ত অন্যতম ।
হেরোডোটাস সম্পর্কে জানার উৎস : প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস সম্পর্কে জানার তেমন কোনো উৎসের সন্ধান পাওয়া যায় না । তার সম্পর্কে জানতে হলে তারই রচিত গ্রন্থ “ইতিবৃত্ত' বা 'The Histories' এর আশ্রয় নিতে হবে । এছাড়া খ্রিস্টীয় দশম শতকে বাইজান্টাইনে ‘সুদা' নামক একটি গ্রন্থ সংকলিত হয়। এ ‘সুদায়' হেরোডোটাস সম্পর্কে ছোট একটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে যেখানে হেরোডোটাস সম্পর্কে খুবই সামান্য তথ্য প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং দেখা যায় হেরোডোটাস সম্পর্কে জানার দুটি উৎস রয়েছে একটি হচ্ছে— তারই রচিত গ্রন্থ 'The Histories' এবং অপরটি হচ্ছে 'Suda.' এছাড়া নেপল্স জাদুঘরে সংরক্ষিত হেরোডোটাস ও থুসিডিডিসের যৌথ মূর্তি ও তার সম্পর্কে পরবর্তী সময়ের গবেষণার গ্রন্থসমূহ থেকে কিছু জানা যায় । এগুলোকে তার সম্পর্কে জানার দ্বিতীয় উৎস হিসেবে গণ্য করা যায় ।
হেরোডোটাসের গ্রন্থ পরিচয় : 'হেরোডোটাস ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ভ্রমণপ্রিয় ছিলেন। তিনি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তার এ ভ্রমণলব্ধ অভিজ্ঞতা স্থান পেয়েছে তারই রচিত গ্রন্থ 'ইতিবৃত্তে'। তিনি যেসব দেশ ভ্রমণ করেন সেগুলো হলো— দক্ষিণে মিসর, উত্তরে স্কিথিয়া, পশ্চিমে মেগনা-গ্রেসিয়া, এমনকি তিনি ব্যাবিলন সভ্যতাও ভ্রমণ করেন। তিনি এ অভিজ্ঞতা দিয়ে সর্বপ্রথম একটি নিয়মানুগ গ্রন্থ রচনা করতে সক্ষম হন। তার সংকলিত গ্রন্থের নাম 'ইতিবৃত্ত'। 'ইতিবৃত্তের' মূল বিষয় হচ্ছে গ্রিক-পারসিক যুদ্ধের ধারাবাহিক বিবরণ। তার গ্রন্থে লিডিয়ার রাজা ক্লোসাসের রাজত্বকাল থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭৮ সালে গ্রিকদের পারসিকদের সাথে বিজয় গাথা বর্ণিত হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হেরোডোটাস সর্বপ্রথম পৃথিবীর প্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি গ্রন্থ রচনায় অত্যন্ত মহানুভবতার পরিচয় দেন। তিনি ‘ইতিবৃত্তের' বিভিন্ন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বলেন। তিনি 'ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। সে কারণে হেরোডোটাস ইতিহাসের জনকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন ।
হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয় কেন?
উত্তর ভূমিকা : বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবীয় ইতিহাসের সূচনা করেন হেরোডোটাস। তিনি সর্বপ্রথম 'Historia' শব্দটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য বুঝাতে ব্যবহার করেন। সর্বপ্রথম তিনিই একটি ব্যাপক ও নিয়মানুগ গ্রন্থ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। যখন কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয়ে অসামান্য অবদান রাখেন বা, আবিষ্কার করেন, তখন ঐ ব্যক্তিকে তার অবদান আবিষ্কারের জন্য তাকে জনক বলা হয় ।
হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলার কারণ : নিম্নে হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলার কারণগুলো উল্লেখ করা হলো : ১. উৎপত্তিগতভাবে : হেরোডোটাস ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ভ্রমণপ্রিয় ছিলেন। তার জীবদ্দশায় পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেন। তার এ ভ্রমণলব্ধ অভিজ্ঞতাকে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন । তার সংকলিত গ্রন্থের নাম “ইতিবৃত্ত'। তিনি গ্রিক- পারসিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘ইতিবৃত্ত' গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি সর্বপ্রথম 'Historia' শব্দটি ব্যবহার করেন। 'Historia' শব্দটির অর্থ হচ্ছে সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। মানুষের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণা বুঝানোর জন্য 'Historia' শব্দটির যথার্থ ও সার্থকভাবে ব্যবহার করার জন্যই তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয় ।
২. লিখিত ইতিহাস সূচনাকারী : একজন আদর্শ ঐতিহাসিকের কর্তব্য হলো তথ্যের যাচাইবাছাই করে প্রামাণ্যরূপে ইতিহাস রচনা করা। তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে প্রাপ্ত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠ যাচাইবাছাই করে ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস রচনার সূচনা করেন । এ কারণে তাকে তথ্য নির্ভর ঐতিহাসিকও বলা হয় ।
৩. সর্বজনীন ও নিরপেক্ষতার জন্য : ইতিহাসকর্ম সর্বজনীন ও নিরপেক্ষ না হলে তা গ্রহণযোগ্যতা হারায় । হেরোডোটাস নিজে গ্রিক জাতি হয়েও গ্রিক-পারসিক যুদ্ধে পারসিকদের বীরত্বগাথা তুলে ধরে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম সর্বজনীন ও নিরপেক্ষ ইতিহাস লেখা শুরু করেন।
৪. সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতনতা : হেরোডোটাস শুধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে নয়, সময়ানুবর্তিতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন । অতএব সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতনতা তাকে ইতিহাসের জনকের মর্যাদা দান করেছে।
৫. ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা : ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধারাবাহিকতা বজায় থাকা। হেরোডোটাস তার ইতিহাসকর্ম অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ধারাবাহিকভাবে বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ করেন ।
৬. গদ্যরীতির প্রবর্তন : হেরোডোটাসের পূর্বে পদ্যরীতিতে ইতিহাস লেখার প্রচলন ছিল। কিন্তু তিনি পদ্যরীতির পরিবর্তে প্রথম গদ্যরীতিতে ইতিহাস লেখার সূচনা করেন। তিনি মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডকে Resgestae বলে আখ্যায়িত করে সেগুলোকে গদ্যরীতিতে ‘ইতিবৃত্তে' লিপিবদ্ধ করেন ।
৭. প্রকৃতির প্রভাব : হেরোডোটাসের সার্থক উপলব্ধি হচ্ছে মানবজীবন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর তারতম্যের জন্য একেক অঞ্চলে একেক ধরনের ইতিহাস, সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় । তিনি মিসর ভ্রমণ করে মিসরকে নীলনদের দান বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মূল্যায়ন করার জন্য তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয় ৷
I
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হেরোডোটাস ইতিহাস শাস্ত্রের অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হন । তিনি গদ্য রীতিতে ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা শুরু করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সার্থকভাবে মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বলে আখ্যায়িত করে 'Historia' শব্দটি ব্যবহার করেন। 'Historia' শব্দটির যথাযথ ব্যবহারের ফলে তাকে ইতিহাসের জনক বলে আখ্যায়িত করা হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]