ঐতিহাসিক কলহণের পরিচয় দাও।

উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস রচনায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, কলহণ তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি ধারাবাহিকভাবে কাশ্মীরের ইতিহাস রচনা করে সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন । তিনি একাধারে কবি, ঐতিহাসিক ও প্রশাসক ছিলেন। কলহণের রচিত গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণী'র মাধ্যমে তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ।
● ঐতিহাসিক কলহণের পরিচয় : কলহণ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন স্বনামধন্য ঐতিহাসিক । তিনি প্রাচীন যুগের শেষ এবং মধ্যযুগের উষালগ্নে জন্মগ্রহণ করেন বলে তাকে যুগসন্ধিক্ষণের ঐতিহাসিকও বলা হয়। তবে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তিনি দ্বাদশ শতকের প্রথমে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল চম্পক । তিনি কাশ্মীরে রাজকর্মচারী ছিলেন। কলহণ নিজেও কাশ্মীরের রাজা হর্ষের মন্ত্রী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই কলহণ খুব মেধাবী ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, ঐতিহাসিক ও প্রশাসকের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় তিনি খুব সহজেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন। তিনি সংগৃহীত তথ্য দ্বারা রচনা করেন কালজয়ী ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণী'। তিনি ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রন্থটি রচনা করেন। ‘রাজতরঙ্গিণী’ হতে জানা যায় তিনি শৈবধর্মের অনুসারী ছিলেন। তিনি ইতিহাস রচনায় অলকদত্তের নিকট থেকে উৎসাহিত হন, উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যুগসন্ধিক্ষণে জন্ম নেওয়া কলহণ ঐতিহাসিক হিসেবে প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি নিজ মেধা ও যোগ্যতার দ্বারা যে কালজয়ী ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন তা অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি পূর্বের ঐতিহাসিকদের চেয়ে অত্যন্ত সফলভাবে কাশ্মীরের ইতিহাস রচনা করেন। ঐতিহাসিক তথ্যবহুল গ্রন্থ 'রাজতরঙ্গিণী' রচনা করে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
কলহণের ‘রাজতরঙ্গিণী' সম্পর্কে কী জান?
উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে যে কয়জন ঐতিহাসিক তাদের লেখনীর দ্বারা স্মরণীয় হয়ে আছেন, কলহণ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি অলোকদত্তের উৎসাহ ও প্রেরণায় ইতিহাস রচনায় আত্মনিয়োগ করেন এবং মহামূল্যবান তথ্যের সমন্বয়ে কালজয়ী ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণী' সংকলন করেন। ‘রাজতরঙ্গিণী' ঐতিহাসিক তথ্য থাকায় ভারতীয় উপমহাদেশে এ গ্রন্থটি ঐতিহাসিক গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে।
* কলহণের রাজতরঙ্গিণী : নিম্নে কলহণের ‘রাজতরঙ্গিণী' সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. রাজতরঙ্গিণী রচনার প্রেক্ষাপট : প্রাচীনকাল থেকেই কাশ্মীর ছিল সমৃদ্ধ নগরী। এখানে যারা বাস করতো তারা উন্নতর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। কলহণের ‘রাজতরঙ্গিণী' রচনার পূর্বে কাশ্মীরের ওপর কোনো তথ্যবহুল গ্রন্থ রচিত হয়নি। তার সময়ে কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অরাজকতাপূর্ণ এবং অস্থিতিশীল। এমন অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তিনি কাশ্মীরের ইতিহাস রচনায় ব্রতী হন । তিনি প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করে তথ্যের সত্যতা যাচাইবাছাই করার পর ইতিহাস কর্মে ব্যবহার করেন ।
খ. ‘রাজতরঙ্গিণী' রচনা : কলহণ কাশ্মীরের মন্ত্রী ছিলেন। সরকারের উচ্চপদে থাকার সুবাদে তিনি তথ্যসংগ্রহ করে একটি তথ্যবহুল ইতহাস গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সক্ষম হন। তিনি ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ‘রাজতরঙ্গিণী' রচনা করেন। গদ্য, পদ্যের সমন্বয়ে লেখা 'রাজতরঙ্গিণীর শ্লোকের সংখ্যা ৮০০০। ‘রাজতরঙ্গিণী' আট পর্বে বিভক্ত। গ্রন্থটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করে ।
গ. রাজতরঙ্গিণীর আলোচ্য বিষয় : কলহণ কাশ্মীরকে নিয়ে 'রাজতরঙ্গিণী' রচনা করলেও গ্রন্থটিতে কেবল কাশ্মীরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়নি, এখানে আরও অনেক রাষ্ট্রের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় রচিত আট খণ্ডের 'রাজতরঙ্গিণী' গ্রন্থের বিষয়বস্তুকে তিন ভাগে আলোচনা করা হয়েছে। ভাগগুলো হলো :
প্রথম ভাগ : ‘রাজতরঙ্গিণীর' গ্রন্থের প্রথম ভাগে কাশ্মীরের প্রাচীনকালের ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। এ অংশের ইতিহাস সংকলনের উৎস হিসেবে কলহণ জনশ্রুতি, কিংবদন্তি, প্রশস্তি, লৌকিক কাহিনিকে ব্যবহার করেন । প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের সমন্বয়ে ‘রাজতরঙ্গিণীর' প্রথম ভাগ গঠিত। এ পর্বে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ৫২ জন রাজার কাহিনি বর্ণিত হয়েছে ।
দ্বিতীয় ভাগ : ‘রাজতরঙ্গিণী'র দ্বিতীয় ভাগের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কার্কোটা ও উৎপল রাজ বংশের ইতিহাস। এ পর্বের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি পূর্ববর্তীদের রচনাবলি উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। তাছাড়া তিনি সমসাময়িকদের রচনা হতেও তথ্যসংগ্রহ করেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ডের সমন্বয়ে দ্বিতীয় ভাগ গঠিত ।
তৃতীয় ভাগ : কলহণের ‘রাজতরঙ্গিণী’র তৃতীয় ভাগের বিষয়বস্তু হলো দুই লোহারা রাজবংশের সিংহাসন লাভ, রাজা হর্ষের মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ের অরাজকতা। কলহণ এ অংশের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য নিজ পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন। সম্ভবত সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি । তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তির বিবরণের সাহায্যে তথ্যসংগ্রহ করেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কলহণ স্বীয় প্রচেষ্টার দ্বারা কাশ্মীরের ইতিহাস পুনর্গঠন করেছেন। তার অক্লান্ত সাধনার দ্বারা রচিত ‘রাজতরঙ্গিণী' সত্যিকারার্থে প্রশংসার দাবিদার। ‘রাজতরঙ্গিণী' ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থে কাশ্মীরের ওপর ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ‘রাজতরঙ্গিণীর' ঐতিহাসিক গুরুত্ব কোনোভাবে কম নয় ৷
কলহণের ইতিহাস রচনার উৎসসমূহ কী কী ?
উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে যারা ইতিহাস রচনা করে খ্যাতির শীর্ষে আছেন, কলহণ তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি কালজয়ী ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণী' রচনা করেন। তিনি ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কাশ্মীরের তথ্যবহুল ধারাবাহিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেজন্য 'রাজতরঙ্গিণী' ঐতিহাসিক গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে ।
কলহণের ইতিহাস রচনার উৎসসমূহ : কলহণ কাশ্মীরের ইতিহাস রচনার জন্য বিভিন্ন উৎস হতে তথ্যসংগ্রহ করেন; যার ফলে গ্রন্থটি সর্বজনীন ও নিরপেক্ষতা পেয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যসংগ্রহ করে তিনি কাশ্মীরের ওপর একটি প্রামাণ্য বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। নিম্নে তার ইতিহাস রচনার উৎসসমূহ তুলে ধরা হলো :
ক. কলহণ তার পূর্ববর্তী শাসকদের প্রচলিত মুদ্রা, লিপিমালা হতে তথ্যসংগ্রহ করেন। তবে এগুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের
মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য তথ্য তিনি ইতিহাস রচনায় ব্যবহার করেন ।
খ. তিনি পূর্ববর্তী ও সমসাময়িক ১১টি রাজকীয় ঘটনাপঞ্জি হতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন ।
গ. কলহণ কাশ্মীরের ইতিহাস রচনা করার জন্য পুরাণের আশ্রয় গ্রহণ করেন। পুরাণ ও পূর্বাপর প্রশস্তি হতে বিভিন্ন
ঘটনার তথ্য বিবরণী সংগ্রহ করেন ।
ঘ. তিনি বিভিন্ন রাজবংশের নানারূপ কুলপঞ্জি হতে তথ্যসংগ্রহ করেন ।
ঙ. বিভিন্ন লৌকিক উপাখ্যান ও কল্পকাহিনি হতে তথ্যসংগ্রহ করে ‘রাজতরঙ্গিণী' রচনা করেন ।
উপরিউক্ত উৎস হতে তথ্যসংগ্রহ করে কলহণ কাশ্মীরের ওপর একটি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। তার পূর্ব হতে কলহণের সময় পর্যন্ত কাশ্মীরের ওপর ধারাবাহিকভাবে কোনো ঐতিহাসিক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেননি। কলহণের উত্তরসূরীরা যাতে কাশ্মীরের ধারাবাহিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য তিনি 'রাজতরঙ্গিণী' রচনা করেন । তথ্যসংগ্রহে সাবধানতা অবলম্বন : কলহণ তার ইতিহাসকর্ম সংকলনে নির্বিচারে তথ্যসংগ্রহ করেননি। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তথ্যসংগ্রহ করে তার যাচাইবাছাই করে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি লিপিমালা, মুদ্রা, পৌরাণিক কাহিনি হতে তথ্যসংগ্রহ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কাশ্মীর শাসকদের কুলপঞ্জি, মুদ্রা, লিপিমালা, পুরাণ, প্রশস্তি প্রভৃতি থেকে কলহণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তথ্যসংগ্রহ করে একটি উৎস নির্ভর ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। 'রাজতরঙ্গিণীর' মাধ্যমে কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের তথ্য পাওয়া যায়। সে কারণে ‘রাজতরঙ্গিণীর' ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম ।

উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে যারা স্বীয় লেখনীর দ্বারা স্মরণীয় হয়ে আছেন, কলহণ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বিভিন্ন উৎস হতে তথ্যসংগ্রহ করে কাশ্মীরের ওপর একটি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গ্রন্থ সংকলন করেন । তথ্যের অভাবে কলহণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা সম্ভব হয়নি । তবে তার রচিত ইতিহাস গ্রন্থ হতে তার দর্শন তত্ত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় ।
কলহণের ইতিহাস দর্শন : কলহণের ইতিহাসকর্মের কৃতিত্ব হচ্ছে ‘রাজতরঙ্গিণী' ।'রাজতরঙ্গিণীতে' সুপ্রাচীনকাল হতে কলহণের সময় পর্যন্ত কাশ্মীরের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। 'রাজতরঙ্গিণী' সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছে। নিম্নে কলহণের ইতিহাস দর্শন আলোচনা করা হলো :
১. ধারাবাহিকতা : কলহণের ইতিহাসকর্মের কৃতিত্ব হচ্ছে ‘রাজতরঙ্গিণী'। এর প্রথম ভাগে সুপ্রাচীনকাল হতে কলহণের সময় পর্যন্ত ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবরণ রয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে কার্কোটা ও উৎপল রাজবংশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। ২. তথ্যের যাচাইবাছাইকরণ : কলহণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ইতিহাসকর্মের তথ্যসংগ্রহ করেছেন। তিনি নির্বিচারে সব তথ্য উৎস হিসেবে গ্রহণ করেননি : কোনো সময়ে তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য মুদ্রা ও লিপির আশ্রয় নেন। এভাবে তিনি ভুলভ্রান্তি দূর করে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ইতিহাস রচনা করেন ।
৩. আদর্শ বজায় : কলহণ নিজে ঐতিহাসিকের আদর্শ বজায় রেখে একজন ঐতিহাসিকের আদর্শ কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন । তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে, একজন ঐতিহাসিককে বিচারকের ন্যায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করেন । যেমন- তিনি রাজা ললিত্যকে প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করেন । ৪. নিরপেক্ষতা : কলহণ ইতিহাসকর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। তার মতে, ঐতিহাসিকের বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ।”
৫. ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি : কলহণ অত্যন্ত সাহসী ও বলিষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। কিন্তু তিনি সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারেননি। তার চিন্তাচেতনায় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি জাদুমন্ত্র, ঘটনার জন্য দেবতাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেন । এসব কারণে তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কলহণ নিজ কর্মের দ্বারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি যুগসন্ধিক্ষণের ঐতিহাসিক হলেও তার দর্শনে সমসাময়িককালের দিক ফুটে ওঠে । তিনি শৈবধর্মের অনুসারী হয়েও যতটা বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ দর্শন তত্ত্বের পরিচয় দেন, এর বেশি তার পক্ষে সম্ভব ছিল না । তিনি নিজ কর্মের দ্বারা ইতিহাসে যে অবদান রাখেন তা খুবই মূল্যবান ।
একজন ঐতিহাসিকের দায়িত্ব সম্পর্কে কলহণ কী বলেছেন ?
উত্তর ভূমিকা : প্রাচীন যুগের শেষের দিকে ভারতবর্ষে যে কয়জন ঐতিহাসিকের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে কলহণ অন্যতম । প্রাচীন ভারতের তথ্য সল্পতার জন্য কলহণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কলহণের শ্রমের ফসল হচ্ছে ‘রাজতরঙ্গিণী’। এ গ্রন্থে তিনি নিজে একজন দায়িত্ববান ঐতিহাসিক থেকে একজন ঐতিহাসিকের দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন ।
● একজন ঐতিহাসিকের দায়িত্ব সম্পর্কে কলহণের মতামত : কলহণ নিজে দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তার মতে, একজন ঐতিহাসিক একজন বিচারকের ন্যায় দায়িত্ব পালন করবেন । নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচারও যেমন একজন বিচারকের অপরিহার্য বিষয় ঠিক তেমনি একজন ঐতিহাসিক সব প্রকার পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে ওঠে নিরপেক্ষভাবে ইতিহাস রচনা করেন । তার মতে, একমাত্র গুণীলোক প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ঐতিহাসিক শুধুমাত্র ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করলেই হবে না তাকে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। ঐতিহাসিক সকল প্রকার ঘটনাকে নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে বিচার করবেন। ঘটনার প্রেক্ষাপটকে সার্বিকভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করবেন । ঐতিহাসিককে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও কুসংস্কারমুক্ত হতে হবে । এভাবে তিনি একজন আদর্শ ঐতিহাসিকের কর্তব্য নির্ধারণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কলহণ নিজে একজন দায়িত্ববান ঐতিহাসিক থেকে একজন আদর্শ ঐতিহাসিকের কর্তব্য কর্ম নির্ধারণ করেন । উৎসের সীমাবদ্ধতা, সংকীর্ণতা, যুগের প্রভাব ও শাসকের নীতিনির্ধারণে প্রভাবিত হয়ে কোনো ঐতিহাসিক যেন তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে বিচ্যুত না হয় । তার ইতিহাসকর্ম পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় তিনি কতটা কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন ।
‘রাজতরঙ্গিণী” গ্রন্থের খন্ডগুলোর বিষয়বস্তুভিত্তিক বিভক্তিগুলো কী কী? অথবা, কলহণের ‘রাজতরঙ্গিণী' সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে কয়জন ঐতিহাসিকের পরিচয় পাওয়া যায় কলহণ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ধারাবাহিকভাবে কাশ্মিরের ইতিহাস সংকলন করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হচ্ছে ‘রাজতরঙ্গিণী'। এ গ্রন্থে তিনি কাশ্মীরের ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণনা করেন । যার দ্বারা আমরা কাশ্মীরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি।
• রাজতরঙ্গিণী গ্রন্থের বিষয়বস্তু : ‘রাজতরঙ্গিণী' কাশ্মীরের ওপর রচিত তথ্যবহুল একটি কালজয়ী ইতিহাস গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে শুধু কাশ্মীর নয় এখানে আরও অনেক দেশের অতিপ্রাচীনকাল থেকে ঐতিহাসিককাল পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। 'রাজতরঙ্গিণী' গ্রন্থের বিষয়বস্তুকে তিন খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে । নিম্নে এ ভাগগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : প্রথম ভাগ : ‘রাজতরঙ্গিণীর' প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডের সমন্বয়ে প্রথম ভাগ গঠিত। 'রাজতরঙ্গিণীর' প্রথম ভাগে সুপ্রাচীনকাল থেকে কাশ্মীরের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। তিনি প্রথম ভাগ রচনার জন্য উৎস হিসেবে জনশ্রুতি, কিংবদন্তি, কাহিনিমালা এবং কুলপঞ্জির আশ্রয় নেন ।
দ্বিতীয় ভাগ : ‘রাজতরঙ্গিণীর' দ্বিতীয় ভাগ চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত। দ্বিতীয় ভাগের বিষয়বস্তু হচ্ছে কার্কোটা ও উৎপল বংশের ইতিহাস। এ পর্বের ইতিহাস রচনায় তিনি পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকদের ও তার সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের নিকট হতে তথ্যসংগ্রহ করেন ।
তৃতীয় ভাগ : ‘রাজতরঙ্গিণীর' তৃতীয় ভাগ সপ্তম ও অষ্টম খণ্ডের সমন্বয়ে রচিত হয়েছে। এ ভাগের বিষয়বস্তু হচ্ছে দুই লোহারা রাজবংশের সিংহাসন আরোহণ। এ ইতিহাস পুনর্গঠনে কলহণ স্বয়ং তথ্যের পরীক্ষা ও যাচাইবাছাই করে ইতিহাসকর্মে ব্যবহার করেন। তিনি ইতিহাসকর্ম সম্পাদনের জন্য প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সংগ্রহ করেন। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক মত প্রদান করেন যে, কলহণ সম্ভবত সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শীর নিকট থেকে তথ্যসংগ্রহ করতে সক্ষম হননি । তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় জনের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কলহণ তার রচিত ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণীর' মাধ্যমে কাশ্মীরের ইতিহাস সংকলন করেন। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে 'রাজতরঙ্গিণীকে' প্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থের মর্যাদা দেওয়া হয় । এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জানতে পারি। মূলত “রাজতরঙ্গিণীকে' কাশ্মীরের ইতিহাসের তথ্য ভান্ডার বলা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]