মধ্যযুগের ঐতিহাসিক হিসেবে সেন্ট অগাস্টিনের পরিচয় দাও ৷

উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিনের পুরো নাম অরেলিয়াস অগাস্টিন। ইতিহাসে স্বতন্ত্র মতবাদের জন্য যেসব ঐতিহাসিকের পরিচয় পাওয়া যায় সেন্ট অগাস্টিন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। অগাস্টিনের রচনাবলিতে চতুর্থ শতকের খ্রিস্টধর্মের প্রভাব ও প্রসার এবং পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে । সেন্ট অগাস্টিনের পরিচয় : সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন উত্তর আফ্রিকার ট্যাগাস্টি নামক স্থানে ৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতা দুজনে দুই ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পিতা ছিলেন প্যাগান বা মনিসিজম (Manichaeism), যা জড়বাদী দ্বৈতবাদ নামে পরিচিত। অন্যদিকে মাতা ছিলেন খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। তিনি প্রাথমিক জীবনে পিতার ন্যায় জড়বাদে বিশ্বাসী ছিলেন । অগাস্টিনের পিতা ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। সে সুবাদে তিনি ভালো স্কুলে অধ্যয়ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। অগাস্টিন দর্শন ও প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় দর্শনের প্রতি আগ্রহী হন। পিতার জড়বাদী দ্বৈতবাদ তার জ্ঞানতৃষ্ণা মিটাতে পারেনি। তাই তিনি রোমে যান এবং রোম থেকে মিলানে গিয়ে এমব্রোসের সাথে সাক্ষাৎ করেন । তখন থেকে তিনি দর্শনের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং নব্য প্লেটোনিজমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। এ নব্য প্লেটোনিজমে তিনি খুঁজে পান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও অশুভ শক্তির উদ্ভবসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান। অতঃপর তার বয়স যখন ২৮ বছর তখন তিনি পিতার ধর্ম মনিকাইজম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। ৩৮৬ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর বিশপ এমব্রোসের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন । তিনি ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকায় পুনরায় ফিরে আসার পর পুরোহিতের দায়িত্ব পান। ৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার হিপ্পো নামক স্থানে আমৃত্যু বিশপের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সেন্ট অগাস্টিনের চিন্তাধারা তার রচিত দুটি গ্রন্থের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়। গ্রন্থ দুটি হলো— ‘দি কনফেসনস' ও 'দি সিটি অব গড'। ‘দি কনফেসনস' একটি আত্মচরিত্রমূলক গ্রন্থ। এখানে তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের ঘটনাবলি সন্নিবেশিত আছে। তার অপর গ্রন্থটি হলো 'দি সিটি অব গড'। ‘দি সিটি অব গডের' মাধ্যমে তিনি বিশ্বের সৃষ্টি বিকাশ ও পরিণতি সম্পর্কে তার দর্শনতত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন। সেন্ট অগাস্টিন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি যেমনি যাজকের দায়িত্ব পালন করেন তেমনি শিক্ষক ও বিচারকের দায়িত্বও পালন করেন। অবশেষে এই মহান গুণী ৪৩০ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একজন ঐতিহাসিক না হয়েও তিনি কীভাবে ইতিহাস রচনা করতে হয় সে দিকনির্দেশনা তার কাছ থেকে পাওয়া যায়। তার দর্শনতত্ত্ব পরবর্তী ঐতিহাসিকদের দিকনির্দেশনার উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়। তার রচিত ধর্মভিত্তিক ইতিহাস ইউরোপ জুড়ে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। তার রচিত তথ্য সংবলিত গ্রন্থ দুটি ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ ।
'The City of God' এর বিষয়বস্তু কী?
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন ছিলেন একজন খ্রিস্টধর্মযাজক। তার জীবদ্দশায় তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেন । প্রথম গ্রন্থটির নাম ‘দি কনফেসনস' (The Confessions) এবং দ্বিতীয় গ্রন্থের নাম 'দি সিটি অব গড' (The City of God)। এদের মধ্যে বিখ্যাত গ্রন্থটি হচ্ছে The City of God'. তার 'The City of God' গ্রন্থটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয় ৷
● 'The City of God' এর বিষয়বস্তু : সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন তার ৭৬ বছরের জীবদ্দশায় দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার শ্রেষ্ঠ রচনাকর্ম হচ্ছে 'The City of God'. তিনি ধর্মীয় যাজক হওয়াতে সম্পূর্ণ খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গিতে 'The City of God' গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থটিতে বিধাতার রাজ্য, রাজ্যের উদ্ভব, বিকাশ ও পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। অগাস্টিন তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জোরালো যুক্তিও উপস্থাপন করতে সক্ষম হন ৷ বিষয়বস্তুর দিক থেকে অগাস্টিন 'The City of God' কে ২২ খণ্ডে বিভক্ত করে রচনা করেন। প্রথম ভাগে ১০ খণ্ড এবং দ্বিতীয় ভাগে ১২ খণ্ড-এই দুই ভাগে ভাগ করেন। প্রথম ভাগের ১০ খণ্ডকে ৫ খণ্ড করে দুইভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগের ১২ খণ্ডকে ৪ খণ্ড করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগের পাঁচ খণ্ডে তিনি তাদের কথা তুলে ধরেছেন যারা মনে করতো পার্থিব সুখসমৃদ্ধির জন্য একাধিক বিধাতার উপাসনা করা প্রয়োজন। তা না হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। প্রথম ভাগের দ্বিতীয় ৫ খণ্ডে দেখানো হয়েছে সমাজে সর্বকালে দুঃখকষ্ট বিরাজমান ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে । আর সেজন্য খ্রিস্টধর্ম কোনোভাবেই দায়ী নয়। তার ভাষায় অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে এ জোরালো বক্তব্য ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয় ভাগের প্রথম ৪ খণ্ডে সৃষ্টিকর্তার দু রাজ্যের উদ্ভব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ৪ খণ্ডে রাজ্যদ্বয়ের বিকাশ এবং শেষ ৪ খন্ডে রাজ্যদ্বয়ের পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উভয় রাজ্যের কথা প্রতিটি খণ্ডে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটির নামকরণের জন্য তিনি নিজের পছন্দকেই অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি বিধাতার রাজ্যের শ্রেষ্ঠতর রাজ্যটির নামানুসারে গ্রন্থটির নামকরণ করেন The City of God। এখানে নামকরণের ক্ষেত্রে সার্থকতার পরিচয় ফুটে ওঠে। কারণ বিষয়বস্তুর সাথে নামকরণের যথেষ্ট মিল রয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিনের অপূর্ব সৃষ্টি 'The City of God' গ্রন্থে তিনি বিধাতার রাজ্য ও বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করেন। এ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে তিনি ধর্মপ্রচারক হিসেবেও পরিচিতি পান। তাই The City of God' তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে খ্রিস্টধর্মের বিকাশ সম্পর্কে জানতে গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তাই তার রচিত এই গ্রন্থটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়।
রাষ্ট্র সম্পর্কিত অগাস্টিনের বক্তব্য তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের প্রারম্ভে যে কয়জন ধর্মযাজক ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সেন্ট অগাস্টিন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি শুধু ধর্মীয় মতবাদই প্রচার করেননি, রাষ্ট্র সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ দেন যা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব বা মতবাদ তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
রাষ্ট্র সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিনের বক্তব্য : সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, “যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোক একই মূল্যবোধের দ্বারা অথবা কোনো কারণে একই অনুভূতির দ্বারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয় তখন একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।” তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র কোনো স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি স্বয়ং স্রষ্টার দ্বারা সৃষ্টি। আমাদের এই নশ্বর পৃথিবী হচ্ছে পাপের ফসল। সৃষ্টিকর্তা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে স্বর্গে বসবাস করার অনুমতি দেন। কিন্তু সেখানে তিনি পাপাচারে লিপ্ত হলে স্রষ্টা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। এ কারণে তিনি পৃথিবীকে পাপের ফসল বলে আখ্যায়িত করেন। পৃথিবীর অধিবাসীরা সর্বদা পাপাচারে লিপ্ত থাকে। তারা ঈশ্বরের আরাধনা পর্যন্ত করে না। সর্বদাই নিজেদের মধ্যে লোভ, মোহ, অহংকার, কলুষতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এটাই হচ্ছে পার্থিব রাষ্ট্রের জনসাধারণের বৈশিষ্ট্য। তিনি মনে করেন যে, যতদিন "পাপ থাকবে ততদিন পৃথিবী থাকবে। পার্থিব জীবন হচ্ছে পাপ কাজের ফলভোগ করার জায়গা। রাষ্ট্রের শাসকগণ হচ্ছেন স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত। তারা রাষ্ট্রের সব সদস্যকে শাসন করবেন এবং রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সব সদস্য তার শাসন মেনে নিবে। তা না হলে রাষ্ট্রের শান্তি বিনষ্ট হবে এবং তারা বিধাতার নিকট অপরাধী বলে বিবেচিত হবেন। বিধাতার কৃপা থেকেও তারা বঞ্চিত হবেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ প্রদান করেন। তার এ মতবাদ রাষ্ট্রচিন্তাকে আরও বেশি বেগবান করে। যদিও তার এ মতবাদ আধুনিক রাষ্ট্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে তার মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন । সুতরাং তার রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ।
সেন্ট অগাস্টিনের দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব বর্ণনা কর ৷
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিন কেবল একজন ধর্মযাজকই ছিলেন না, তিনি একজন সফল রাষ্ট্র চিন্তাবিদও ছিলেন। তিনি যেসব দর্শন তত্ত্ব আলোচনা করেছেন তার মধ্যে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব অন্যতম। তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিতে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা করেছেন । তার এ ধর্মীয় দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনাটি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাই এ তত্ত্বটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয় ।
সেন্ট অগাস্টিনের দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব : রাষ্ট্র সম্পর্কে অগাস্টিনের ধারণা পার্থিব রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। তার মতে, “রাষ্ট্র হলো পাপের শাস্তিস্বরূপ”। অর্থাৎ মানুষ নানাবিধ পাপাচার, অহংকার ও স্বার্থপরতায় লিপ্ত থাকে। ফলে মানুষের এ পাপাচারের শাস্তিস্বরূপ রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। তাছাড়া তার মতে, মানুষের যেমন দুই প্রকারের সত্তা আছে তেমনি রাষ্ট্রও দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা : ১. পার্থিব বা জাগতিক রাষ্ট্র ও ২. বিধাতার রাষ্ট্র বা স্বর্গরাজ্য। নিম্নে পার্থিব রাষ্ট্র ও বিধাতার রাষ্ট্র সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পার্থিব বা জাগতিক রাষ্ট্র : সেন্ট অগাস্টিন পার্থিব রাষ্ট্র বলতে পৃথিবীকে বুঝান। হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে সৃষ্টিকর্তা স্বর্গে বসবাস করার অনুমতি দেন। কিন্তু সেখানে আদম (আ.) পাপকাজ করে ফেলে। ফলে তাকে শাস্তিস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। সে কারণে তিনি বলেন, “পার্থিব রাষ্ট্র পাপের ফসল।” এখানে পার্থিব রাষ্ট্রের অধিবাসীরা স্বার্থপরতা, হানাহানি, পাপাচার ও পারস্পরিক অবিশ্বাস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখানে সর্বত্রই নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়। তার মতে, “যতদিন পাপ থাকবে ততদিন পার্থিব রাষ্ট্র থাকবে। এখানে মানুষে মানুষে লোভ, মোহ, হিংসাবিদ্বেষ, বর্ণবৈষম্য বিরাজ করবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন। পার্থিব রাষ্ট্র ক্ষণস্থায়ী ও নশ্বর। এখানকার অধিবাসীরা আত্মকেন্দ্রিক ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত থেকে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। স্রষ্টার নাম নিচ্ছে না। এখানের অধিবাসীরা তাদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের দ্বারাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে ।
বিধাতার রাষ্ট্র বা স্বর্গরাজ্য : বিধাতা মানুষের আত্মার শান্তির জন্য যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন তাকে স্বর্গরাজ্য বা বিধাতার রাজ্য বলা হয়। প্রত্যেক আদম সন্তান এ রাজ্যের সদস্য। তবে এ বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে যে শুধু যারা খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী তারাই এ রাজ্যের সদস্য। স্বর্গরাজ্যের প্রতিনিধি হচ্ছে মানুষের আত্মা। সেখানে পার্থিব রাজ্যের বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে । সেখানকার অধিবাসীরা অনন্ত সুখ অনুভব করে। স্বর্গরাজ্যের সীমা পরিসীমা নেই। সর্বত্রই শান্তি বিরাজিত এখানে মানবাত্মা বিধাতার প্রেমে মগ্ন থাকবে। কোনো প্রকার হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, মোহ, অহংকার, বর্ণবৈষম্য এখানের অধিবাসীদের গ্রাস করবে না। এ রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বিধাতার করুণার প্রয়োজন হবে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রদান করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তবে তার স্বর্গরাজ্য তত্ত্বটির বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তবুও তিনি দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রকাশ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পেয়েছেন । এক্ষেত্রে তিনি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন ।
সেন্ট অগাস্টিনের স্বর্গরাজ্যের বর্ণনা দাও ৷
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিন তার বিখ্যাত 'The City of God' গ্রন্থে স্বর্গরাজ্যের ধারণা ব্যাখ্যা করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার রাষ্ট্রদর্শন আধুনিক রাষ্ট্র দর্শনের মতো ছিল না। তিনি সম্পূর্ণ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বর্গরাজ্য তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করেন । তবে তার স্বর্গরাজ্য ধারণাটি ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে ।
সেন্ট অগাস্টিনের স্বর্গরাজ্য : সেন্ট অগাস্টিনের মতে, “যখন কোনো সম্প্রদায়ের লেখা একই মূল্যবোধের দ্বারা অথবা কোনো কারণে একই অনুভূতির দ্বারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয় তখন একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়”। ঠিক তেমনি ঈশ্বরের প্রেমে একীভূত হয়ে গড়ে উঠেছে স্বর্গরাজ্য। এখানে পুণ্যবান মানুষের আত্মা প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি আদম সন্তান স্বর্গরাজ্যের সদস্য। স্বর্গরাজ্যের অধিবাসীদেরকে কোনো প্রকার পাপ, জরা, দুঃখ, কুটিলতা স্পর্শ করে না । তাদের লক্ষ্য একটাই আর তা হলো স্রষ্টার প্রেম ভালোবাসা। এ রাজ্যের অধিবাসীরা বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের হয়ে থাকে। স্বর্গরাজ্য অনন্ত চিরস্থায়ী। এটি পবিত্র ও মঙ্গলময়। এ স্বর্গ রাজ্যের শেষ নেই, এটা অবিনশ্বর। স্বর্গ রাজ্যের সদস্য হতে হলে তাকে যাবতীয় পাপাচার ও কলুষতা মুক্ত থাকতে হবে। কোনো প্রকার শ্রেণিবৈষম্য, বর্ণবৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না । তাহলে বিধাতার কৃপা পাবে না। আর বিধাতার কৃপা বা করুণা না পেলে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা যাবে না। কিন্তু সমস্যা হলো, বিধাতা সব মানুষের প্রতি সবসময় কৃপা প্রদর্শন করেন না । কেবল যাদের খ্রিস্টধর্মে অটুট বিশ্বাস থাকে শুধু তারাই ঈশ্বরের কৃপা পেয়ে থাকে । সুতরাং বলা যায়, স্বর্গরাজ্যের সদস্য শুধু খ্রিস্টধর্ম অনুসারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এটাও বলা হয়েছে যে, এটা সর্বজনীন, সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরিব্যাপ্ত ছিল। তিনি তৎকালীন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নতুন ধ্যানধারণার ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি স্বর্গীয় রাজ্যতত্ত্ব প্রকাশ করে প্রচলিত ধ্যানধারণাকে স্থবির করে দিতে সক্ষম হন। তাই খ্রিস্টান সমাজে অগাস্টিনের স্বর্গরাজ্য তত্ত্বের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
অগাস্টিনের দুই তরবারি তত্ত্ব কী?
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে খ্রিস্টধর্মের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বিশ্বাসের ভাবধারায় অগাস্টিন নতুন যে দর্শন প্রচার করেন তা হচ্ছে দুই তরবারি তত্ত্ব। প্রকৃতপক্ষে তিনি এ তত্ত্বের প্রবর্তক ছিলেন না। পোপ গেলাসিয়াস দুই তরবারি তত্ত্বের প্রবর্তক ছিলেন। দুই তরবারি তত্ত্বটি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কর্তৃত্বকে নির্দেশ করে। এখানে তরবারিকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ।
অগাস্টিনের দুই তরবারি তত্ত্ব : তরবারি কর্তৃত্বের প্রতীক বা চিহ্ন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের মতানুসারে পঞ্চম শতকে খ্রিস্টান সমাজে পোপ ও সম্রাটের মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয় । পোপ আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে মানবাত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করবে । এটাকে আধ্যাত্মিক বা পারলৌকিক প্রতিনিধিত্ব বলা হয়। অপরদিকে, সম্রাট মানুষের বাহ্যিক আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করেন । এটাকে বলা হয় ইহলৌকিক বা জাগতিক প্রতিনিধিত্ব। এ দুই তত্ত্বকে বলা হয় দুই তরবারি তত্ত্ব। খ্রিস্টধর্ম যাজকগণ বিশ্বাস করতেন যে, বিধাতাই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। দুই তরবারির প্রবর্তক পোপ গেলাসিয়াস এ তত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে বলেন, “ধর্মীয় ব্যাপারে সম্রাট যাজকের অধীন। এ ব্যাপারে তার শুধু শেখার আছে, শিক্ষা দেওয়ার কিছু নেই।”এখানে এ ধারণাই প্রতীয়মান হয় যে, যাজকের মর্যাদা শাসকের ওপরে ছিল। তবে রাষ্ট্রের আইনকানুন যাজককে মানতে হতো। এ তত্ত্বের সারকথা হচ্ছে অনেকটাই দায়মুক্তির মতো। দুই তরবারির তত্ত্ব অনেকটাই গির্জার কর্মকর্তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল । তুলনামূলক দেখা যায় যে, গির্জার কর্মকর্তার গুরুত্ব জাগতিক সংগঠনের কর্মকর্তার চেয়ে অধিক। কারণ রাষ্ট্রের সব মানুষের মতো যাজকদেরকে বিধাতার নিকট জবাবদিহি করতে হবে। অপরদিকে, পার্থিব বা জাগতিক শাসকগণ তাদের মুক্তির জন্য কেবল যাজকদের নিকট নির্ভরশীল ছিল। বিধাতার নিকট তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। যাজকদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল। সে কারণে তাদের সাধারণ মানুষের ন্যায় রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হতো । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দুই তরবারি তত্ত্বের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আর এ সীমাবদ্ধতার কারণে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্বের কারণেই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ক্ষমতা পোপের অধীনে চলে যায় । ফলে পোপ হয়ে ওঠেন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ।
শান্তি নীতি সম্পর্কিত সেন্ট অগাস্টিনের মতামত লেখ ।
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিন ছিলেন মধ্যযুগের একজন খ্যাতিমান দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টধর্ম যাজক ৷ তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শান্তি সম্পর্কে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সেন্ট অগাস্টিনের শান্তি তত্ত্ব ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
সেন্ট অগাস্টিনের শান্তি নীতি : সেন্ট অগাস্টিন শান্তি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন । সাধারণ অর্থে শান্তি বলতে বুঝায় কোনোরূপ সংঘাতবিহীন অবস্থা। পার্থিব রাষ্ট্রের অধিবাসীরা সবসময় নিজেদের স্বার্থপরতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা লোভ ও মোহ দ্বারা আচ্ছাদিত। সুতরাং তার মতে এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে হলে দৈবরাষ্ট্র বা বিধাতার রাষ্ট্রের প্রয়োজন। বিধাতার রাষ্ট্রের সদস্যরা সর্বত্রই ভ্রাতৃত্ববোধ ও বিধাতার প্রেমে নিমগ্ন থাকে। তাদেরকে কোনোরূপ কলুষতা স্পর্শ করে না। এটাই বিধাতার রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। সে কারণে তিনি বলেন বিধাতার রাষ্ট্র ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অগাস্টিনের শান্তি তত্ত্বে দুটি শর্ত পরিলক্ষিত হয় ১. বিশ্বভ্রাতৃত্ব ২. সর্বজনীন রাষ্ট্রব্যবস্থা। তার মতে, বিধাতার রাষ্ট্র ছাড়া যেমন ন্যায়বিচার সম্ভব নয় তেমনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব নয়। বিশ্বশান্তির জন্য সর্বজনীন রাষ্ট্রের প্রয়োজন । একমাত্র বিধাতার রাষ্ট্রের সদস্যদের মাঝে এক ও অভিন্ন লক্ষ্য থাকে । আর তা হচ্ছে ঈশ্বরপ্রেম ও ভালোবাসা । এ রাষ্ট্রে সবাই সমানভাবে ঈশ্বরের প্রেম ভালোবাসা ও করুণা পেয়ে থাকে। ফস্টার অগাস্টিনের শান্তি নীতির ব্যাখ্যা করে বলেন, “যে ব্যবস্থায় সব মানুষ অভিন্ন ঈশ্বরপ্রেমের বন্ধন সূত্রে পরস্পর সক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ সেটিই হচ্ছে অগাস্টিনের শান্তি নীতি।” সুতরাং বলা যায় সর্বজনীন রাষ্ট্র ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর অগাস্টিনের শান্তি নীতি প্রতিষ্ঠিত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন ধর্মযাজক হিসেবে যে বাণী উচ্চারণ করেন তা শুধু খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তার শান্তি নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই তার নীতি দ্বারা কোনো পার্থিব রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ।
কর । ন্যায়বিচার সম্পর্কে অগাস্টিনের মতবাদ আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের প্রারম্ভে- যিনি রাষ্ট্রদর্শন প্রচার করে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি হলেন সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন। রাষ্ট্রদর্শনের পাশাপাশি তিনি ন্যায়বিচারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তিনি সর্বত্র শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছেন । অগাস্টিনের ন্যায়বিচার তত্ত্বটি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
• ন্যায়বিচার সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিনের মতবাদ : ন্যায়বিচার সম্পর্কে অগাস্টিনের মতামত হলো এই যে, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব নিয়ম বা রীতিনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ তাদের ওপর আরোপিত নিয়মকানুন যথাযথভাবে পালন করলে তখন ধরা হবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দকে ন্যায়পরায়ণ বলে গণ্য করা হবে। তবে আগে বুঝতে হবে প্রতিষ্ঠানটির স্বরূপ কেমন। যদি প্রতিষ্ঠান উচ্চতর কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশবিশেষ হয়, তাহলে বুঝতে হবে চূড়ান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে না। এ সম্পর্কে অগাস্টিন বলেন, “সর্বোচ্চ ও সর্বজনীন দৈবরাষ্ট্র ব্যতীত অন্য কোনো সমাজের প্রেক্ষিতে ন্যায়বিচার চূড়ান্ত হতে পারে না।” এটাকে আপেক্ষিক ন্যায়বিচার অর্থে বলা যেতে পারে। এ সম্পর্কে তিনি একটি চমৎকার উদাহরণের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন । যেমন— “একটি পরিবার একটি সমাজের অংশবিশেষ; যদি শুধু এই পরিবারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তাকে প্রকৃত ন্যায়বিচার বলা যৌক্তিক হবে না। কারণ এ পরিবার বিশাল সমাজের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।” ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য একমাত্র বিধাতার রাষ্ট্রের প্রয়োজন। পার্থিব রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কেননা পার্থিব রাষ্ট্র বিধাতার রাষ্ট্রের অংশবিশেষ। কোনো বস্তুর অংশবিশেষ দেখে যেমন প্রকৃত অবস্থা বিচার করা যায় না তেমনি কোনো ক্ষুদ্র অংশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বলা যায় না যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সুতরাং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিধাতার রাষ্ট্রের প্রয়োজন । অগাস্টিনের মতে, স্বর্গরাজ্য ব্যতীত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ন্যায়বিচারের ধারণা দিতে গিয়ে তিনি আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করেন। আইনবিহীন রাষ্ট্রকে তিনি দস্যুর সাথে তুলনা করেন। তার মতে, কোনো রাষ্ট্র যদি ধর্মবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা থেকে বিরত থাকে এবং চার্চের নিয়ম মোতাবেক পরিচালিত হয় তাহলে সে রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন ধর্মীয় মতবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রদর্শনকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তার ন্যায়বিচার তত্ত্বে সর্বক্ষেত্রে বিধাতার কর্তৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তার ন্যায়বিচার তত্ত্ব রাষ্ট্রদর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
আইন সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিনের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিন তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'The City of God'-এ আইন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করেন । তিনি একজন খ্রিস্টান যাজক ছিলেন। সে কারণে তিনি প্রতিটি বিষয় ধর্ম দর্শনের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন । অগাস্টিনের আইন সম্পর্কিত মতবাদটি এর ব্যতিক্রম ছিল না । তিনি আইন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।
• আইন সম্পর্কে অগাস্টিনের মতামত : অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন তত্ত্বের মধ্যে আইন তত্ত্বটি অন্যতম। যেসব ব্যবস্থা ও বিধিবিধান সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখে সেগুলোকে আইন বলা হয়। প্রকৃত আইন হতে হলে সেটির জনস্বীকৃতি থাকতে হবে। এ সম্পর্কে অগাস্টিন বলেন, “আইনের পিছনে জনসমর্থন থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই, জনসমর্থন থাকুক বা না থাকুক সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব বিধিবিধান প্রযোজ্য তাই আইন”। আবার অনেক আইন আছে যা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না; কিন্তু জনসমর্থন আছে। এ ধরনের আইনকে অগাস্টিন আইন বলে মানতে নারাজ । এ ধরনের আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যে বিধিবিধান সমাজে ন্যায়বিচার করে না এবং জাগতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের পথকে প্রশস্ত করে সেসব বিধিবিধান আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না” । সুতরাং সেটিকে আইন বলা যায় যেটি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষমতা অর্জন করেছে। আবার সমাজে আইন প্রচলিত আছে এর পিছনে জনস্বীকৃতিও আছে কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ, এরূপ আইনকে আইন বলা যায় না। যেমন— মিসরের আইনতত্ত্ব ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অগাস্টিনের আইন তত্ত্বটি একটি আলোকবর্তিকা । এ আইন তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হয়েছিলেন। সেন্ট অগাস্টিন সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য আইন তত্ত্ব তুলে ধরেন তার আইন তত্ত্বটি ইতিহাসে তাকে স্থায়িত্ব দান করেছে । সিক
দাস সম্পর্কে অগাস্টিনের মতামত লেখ ।
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টান দার্শনিকদের মধ্যে সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রচিন্তার পাশাপাশি দাস সম্পর্কেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন। তার দর্শনতত্ত্বের অন্যতম হলো দাসতত্ত্ব। দাস সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।
• দাস সম্পর্কে অগাস্টিনের মতামত : সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি মাত্র দুজন দার্শনিক দাস সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেন। একজন হলেন এরিস্টটল এবং অন্যজন সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন। যদিও উভয় দার্শনিক দাস সম্পর্কিত মতবাদ ব্যক্ত করেন কিন্তু একে অপরের সমর্থক ছিলেন না। এরিস্টটল আলোচনা করেন সমকালীন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকে, অন্যদিকে অগাস্টিন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দাস সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাদের দুজনের মতামতের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অগাস্টিনের মতে, মানুষের পাপের কারণে বিধাতা তাদেরকে দাস হিসেবে পাঠিয়েছেন। এভাবে দাসপ্রথাকে তিনি বিধাতার অমোঘ নিয়ম বলে অভিহিত করেন। এরিস্টটলের মতে, “সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শাসক ও শাসিত এ দুই ভাগে বিভক্ত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।” অর্থাৎ প্রথাগতভাবেই কিছু লোক উৎকৃষ্ট এবং কিছু লোক নিকৃষ্ট। সুতরাং উৎকৃষ্ট শ্রেণি নিকৃষ্টদেরকে শাসন করবে এটাই স্বাভাবিক। অগাস্টিন এরিস্টটলের এ মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “সব মানুষের প্রতি স্রষ্টার করুণা সমানভাবে নিপতিত হয়। তার দৃষ্টিতে সবাই সমান। তবে স্বীয় কৃতকর্মের কারণে কিছু মানুষ দাসে পরিণত হয়— এটা তাদের কর্মফল ।
অগাস্টিন দাসতত্ত্বকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক ব্যাখ্যার ওপর দাঁড় করতে সক্ষম হননি। এ তত্ত্ব তৎকালীন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে । কেননা তিনি একবার অভিমত ব্যক্ত করেন যে, “স্রষ্টার দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ ও সমাজের প্রতি সমানভাবে করুণা বর্ষিত হয়।” আবার তিনি বলেন, “দাসপ্রথা মূলত মানুষের পাপের পরিণতির ফল” । সুতরাং তার বক্তব্য ধরে বলা যেতে পারে যদি স্রষ্টার করুণা সবার ওপর সমানভাবে বর্ষিত হয় তাহলে মানুষ দাসে পরিণত হয় কেন? অগাস্টিনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এ.বি.ফস্টার বলেন, “যদি এরূপ মনে করা হয় যে, দাসরা মোটের ওপর প্রভুদের চেয়ে অধিক পাপী তাহলেও হয়তো তার এ মতবাদ সমর্থন করা সম্ভব হতো” । কিন্তু পরবর্তী সময়ে অগাস্টিনের এ মতবাদ ব্যর্থ হয়ে যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে 'বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিনের দাসতত্ত্ব তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে অগ্রহণযোগ্যতায় পর্যবসিত হয়। যদিও তিনি দাসকে মানুষের কৃতকর্ম ও বিধাতার অমোঘ নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়াস পান কিন্তু সমালোচকদের কাছে অগাস্টিনের দাসপ্রথা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।
সম্পত্তি সম্পর্কে অগাস্টিনের ধারণা কী ছিল?
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টধর্মযাজকদের মধ্যে সেন্ট অগাস্টিন ছিলেন অনন্য প্রতিভার অধিকারী। অগাস্টিন তার বিখ্যাত 'The City of God' গ্রন্থে বিভিন্ন বিষয়ে তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে সম্পত্তি সম্পর্কে তত্ত্ব অন্যতম । এ গ্রন্থে তিনি সম্পত্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।
সম্পত্তি সম্পর্কে অগাস্টিনের ধারণা : সেন্ট অগাস্টিন ছিলেন একজন খ্রিস্টধর্মযাজক। ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেও তিনি সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা বা সম্পত্তি বণ্টন নীতি তত্ত্ব ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন, মানুষের সম্পদের পরিমাণ বেশি হলে তা পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ ততটুকু সম্পদ অর্জন করবে ঠিক যতটুকু তার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজন। তার সম্পত্তি তত্ত্ব সরাসরি মঠ প্রথার বিরুদ্ধে আঘাত হানে। কোনো এক সময়ে মঠে উৎপাদিত সম্পদ বিশপ সঞিত করে রাখতেন। ফলে সম্পদের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। তিনি সম্পদের সমবণ্টনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সম্পদ যদি কোনো শ্রেণির হাতে সঞিত থাকে, তাহলে বাকিদের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা সম্পদের অভাবে প্রয়োজন মেটাতে পারে না। অগাস্টিন মনে করেন—“সম্পদের ব্যবহার বিধিবদ্ধ ও ন্যায়সংগতভাবে
হওয়া উচিত”। তাই তিনি অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি সবকিছুই আধ্যাত্মিক উপায়ে সমাধান করার চেষ্টা করেন। সম্পত্তি বণ্টন নীতি এর ব্যতিক্রম নয়। তার দর্শনের মূলে রয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা । এভাবে সম্পদ বণ্টন নীতি ব্যক্ত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর সব মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে সৃষ্টিকর্তা সম্পদ তৈরি করেন। এজন্য সেন্ট অগাস্টিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ ও সঞ্চয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি সম্পদের সুসম বণ্টন ও ব্যবহারের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন ।
মানুষ সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিনের ধারণা ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর ভূমিকা : খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যিনি রাষ্ট্রচিন্তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি হলেন সেন্ট অরেলিয়াস অগাস্টিন। তিনি মানুষ সম্পর্কে মতবাদ ব্যক্ত করে ব্যাপক প্রতিভার পরিচয় দেন। তার রচিত গ্রন্থ 'The City of God'-এ মানুষ সম্পর্কে ধারণা ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
মানুষ সম্পর্কে অগাস্টিনের ধারণা : মানুষ সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিন দ্বৈত-ধারণা পোষণ করেন । তার মতে, “মানুষের দুই প্রকারের সত্তা আছে” । একটি হচ্ছে মানুষের পার্থিব জগৎ অর্থাৎ দেহ এবং অপরটি হচ্ছে আধ্যাত্মিক বা মানবাত্মা । এই নশ্বর জগতে মানবদেহ বিরাজ করে। এখানে মানবদেহ স্বার্থপরতা, অবিশ্বাস, হানাহানি ও যাবতীয় পাপাচারে লিপ্ত থাকে । পাপের কারণেই মানুষ শাস্তি ভোগ করে এবং দাসে পরিণত হয়। পার্থিব জগতে মানুষ, বর্ণবৈষম্য সৃষ্টি করে। অপরপক্ষে, মানুষের আত্মা পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। আত্মা স্বর্গরাজ্যে বা বিধাতার রাজ্যে বিরাজ করে। এখানে আত্মার সাথে বিধাতার মিলন ঘটে। এখানে হিংসাদ্বেষ, পাপ, কলুষতার কোনো অস্তিত্ব নেই। সর্বত্র শান্তি বিরাজিত । এ রাজ্য অসীম, যার কোনো সীমা বা পরিসীমা নেই। এখানে কারো বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে না। সব আত্মাই পরম শান্তিতে বিরাজ করে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি যে, অগাস্টিন মানুষকে দৈহিক ও আত্মিক এ দুই ভাগে বিভক্ত করেন । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের জাগতিক রাজ্যের ইতিহাস জরা, মৃত্যু, পাপাচার ও ব্যর্থতার বিবরণে পরিপূর্ণ । মানুষ সম্পর্কে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন তা ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তার এ মতামত খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসীদের মনে গভীরভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে । তার মতবাদটি ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দান করে ।
সেন্ট অগাস্টিনের ইতিহাস দর্শন সম্পর্কে লেখ ।
উত্তর ভূমিকা : সেন্ট অগাস্টিন চতুর্থ শতকের একজন প্রাণপুরুষ। তিনি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তার ইতিহাসকর্ম তুলে ধরেন। ৪১০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য রোমানরা খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবকে দায়ী করেন । রোমান সাম্রাজ্যের পতনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তিনি ইতিহাস দর্শনের অবতারণা করেন ।
সেন্ট অগাস্টিনের ইতিহাস সম্পর্কিত ধারণা : সেন্ট অগাস্টিনের বিখ্যাত গ্রন্থ 'The City of God' এর মাধ্যমে তার রাষ্ট্রদর্শন তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। তিনি রোমান সাম্রাজ্যের পতন, শান্তি নীতি, দাসপ্রথা, সম্পত্তি প্রভৃতি সবকিছু সম্পর্কে ধারণা খ্রিস্টধর্মের আলোকে তুলে ধরেন। তিনি ধর্ম দর্শনের আলোকে দুটি রাষ্ট্রের উল্লেখ করেন। একটি বিধাতার রাষ্ট্র এবং অপরটি পার্থিব রাষ্ট্র। বিধাতার রাষ্ট্র সর্বজনীন। সব আদম সন্তান এ রাজ্যের নাগরিক। এ রাজ্যের সদস্যগণ সব প্রকার দুঃখ, জরা থেকে মুক্ত। লোভ, মোহ, অহংকার, হিংসা তাদের স্পর্শ করতে পারে না। তারা বিধাতার অপার করুণার জন্য মত্ত থাকেন । অপরদিকে, পার্থিব রাজ্যের মানুষেরা সর্বদা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে। তাদের ওপর বিধাতার করুণা সমভাবে বর্ষিত হয়.না। 'The City of God' এর প্রতিটি ঘটনাই ধর্মীয় দর্শনে আবর্তিত। সুখদুঃখ বিধাতার দান । এখানে মানুষের কোনো হাত নেই। তিনি প্রতিটি ঘটনার জন্য ঈশ্বরের আধিপত্যের গুণগান করেছেন। পার্থিব রাজ্যের ইতিহাস ব্যর্থতার বিবরণে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে স্বর্গরাজ্যের ইতিহাস আদম (আ.) থেকে যিশু খ্রিস্টের সময়কাল পর্যন্ত ধারাবাহিক বর্ণনা করা হয়েছে। রোম সাম্রাজ্য পতন সম্পর্কে বলেন, পার্থিব রাজ্যের অংশ হিসেবে রোম সাম্রাজ্যের পতন খুবই স্বাভাবিক। পার্থিব রাষ্ট্র নশ্বর আর স্বর্গরাজ্য অবিনশ্বর। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মেই রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। সেজন্য খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাব কোনোভাবেই দায়ী নয়। অগাস্টিন সীমাবদ্ধতার বৃত্তের বাইরে আসতে পারেননি। ধারাবাহিকতা ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ইতিহাসকর্ম সম্পাদন করেননি। তিনি ইতিহাসকে একান্ত নিজের মতো করে ব্যবহার করেন। আর এটাই ছিল তার ইতিহাসকর্মের দুর্বল দিক। তার ইতিহাসকর্ম মূল্যায়ন করলে প্রতীয়মান হয় যে, খ্রিস্টধর্মের প্রভাব প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি সর্বদাই ঈশ্বরের আধিপত্যের কথা উল্লেখ করেন।
উপসংহার : ‘পরিশেষে বলা যায় যে, অগাস্টিন তার ইতিহাসকর্মের মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা করেন। যারা রোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবকে দায়ী করেন, তাদের অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে সেন্ট অগাস্টিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন । অগাস্টিন ইতিহাসতত্ত্বের অবতারণা করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন । <

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]