উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের যে কয়েকজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিকের পরিচয় পাওয়া যায় জিয়াউদ্দিন বারানি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি গতানুগতিক ধারায় ইতিহাস চর্চার পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চার সূচনা করেন । তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাস রচনা করলেও নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। বারানির লেখনীতে তৎকালীন শাসকবর্গের শাসনব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় ।
জিয়াউদ্দিন বারানি : নিম্নে জিয়াউদ্দিন বারানি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১.. পরিচয় : জিয়াউদ্দিন বারানি বারান নামক স্থানে ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম জিয়াউদ্দিন। বারান হলো তার উপাধি । তার পিতা একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ছিলেন। সে সুবাদে তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করার সুযোগ পান। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পিতার কর্মসূত্র ধরে রাজদরবারে তার অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। সে কারণে তিনি সুলতানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মুহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে তিনি রাজকর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অধীনে রাজকর্মচারী ছিলেন। মুহম্মদ বিন তুঘলক মৃত্যুবরণ করলে ফিরোজশাহ তুঘলক রাজক্ষমতায় আসেন। ফিরোজশাহ তুঘলকের শাসনামলে তিনি ছয় বছর প্রধান রাজ ঐতিহাসিকের দায়িত্ব পালন করেন ।
২. রচিত গ্রন্থ : জিয়াউদ্দিন বারানি তার জীবদ্দশায় দুটি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থ দুটি হচ্ছে তারিখ ই ফিরোজশাহি’ ও ‘ফতোয়া ই জাহান্দারি' । তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাস রচনা করলেও অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে সক্ষম হন। তার গ্রন্থদ্বয়ের মাধ্যমে তৎকালীন শাসনব্যবস্থার বিবরণ পাওয়া যায়। এই মহান ঐতিহাসিক ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিকদের মধ্যে জিয়াউদ্দিন বারানি ছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার । তার রচনাবলিতে তৎকালীন শাসনব্যবস্থার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। তৎকালীন শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানার একমাত্র মাধ্যম বারানির রচনাবলি । তাই বারানির গ্রন্থদ্বয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কোনোভাবেই কম নয়।
‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থের বিষয়বস্তু লেখ ।
উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন মুসলিম ঐতিহাসিকের পরিচয় পাওয়া যায় । জিয়াউদ্দিন বারানি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাসকর্ম সম্পাদন করেন। তার বিখ্যাত ইতিহাসকর্ম হচ্ছে ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি’। ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থের মাধ্যমে তৎকালীন সুলতানি শাসনের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ পাওয়া যায় ।
● ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি” গ্রন্থের বিষয়বস্তু : জিয়াউদ্দিন বারানি রচিত বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' । তিনি ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে এটি রচনা করেন। গ্রন্থটির বিষয়বস্তু হলো ভারতবর্ষে সুলতানি শাসনামলের আটজন শাসকের ৯৫ বছরের শাসনব্যবস্থা । গ্রন্থটিতে সুলতানি আমলের রাজনৈতিক ঘটনাবলির সাথে সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থারও বিবরণ পাওয়া যায় । “তারিখ ই ফিরোজশাহিতে' মধ্যযুগের হাটবাজারের ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি, দ্রব্যমূল্যের সূচক, রাজধানী দিল্লির জনজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এতে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী শাসকদের কর্তব্য সম্পর্কে দিকনির্দেশনাসহ ঐতিহাসিকদের করণীয় দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থটির বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনায় ঐতিহাসিক গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জিয়াউদ্দিন বারানির ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার ইতিহাস দর্শন সম্পর্কে জানা যায় । তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষক হয়েও বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করেন। ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থের মাধ্যমে তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায় ।
লেকচার হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স প্রথম বর্ষ ... ইতিহাস পরিচিতি
বারানি কেন ইতিহাস লিখতে অনুপ্রাণিত হন?
উত্তর ভূমিকা : জিয়াউদ্দিন বারানি মধ্যযুগের ঐতিহাসিকদের মধ্যে একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি নিজের আত্মোপলব্ধি থেকে ইতিহাস রচনায় আগ্রহী হন। তিনি দীর্ঘ সময় মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অধীনে নাদিম ছিলেন । তিনি
সুলতানের নানাবিধ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করেননি। সে কারণে বিবেকের তাড়নায় এক সময়ে এসে ইতিহাস লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করার প্রয়াস পান ।
• জিয়াউদ্দিন বারানির ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্য : নিম্নে জিয়াউদ্দিন বারানির ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হলো : ১. অন্যায়ের প্রতিবাদ : জিয়াউদ্দিন বারানি ১৩৩৪–১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৭ বছর মুহম্মদ বিন তুঘলকের নাদিম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি সুলতানের নানাবিধ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন। সুলতানের মৃত্যুর পর তার জীবনে নেমে আসে সীমাহীন দুঃখকষ্ট। শত্রুদের দ্বারা তিনি জেল খেটেছেন। ফলে তিনি উপলব্ধি করেন যে, সুলতানের অন্যায় কাজগুলোর প্রতিবাদ না করায় তার ওপর নেমে এসেছে দুর্দশা। তাই তিনি ইতিহাস লেখার মাধ্যমে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন । ২. পারলৌকিক কারণ : জিয়াউদ্দিন বারানি পারলৌকিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে ইতিহাস রচনা করেন। তিনি যদি সত্য প্রকাশ না করেন তাহলে সৃষ্টিকর্তা তার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন এমন ধারণা থেকে তিনি ইতিহাস চর্চা শুরু করেন ।
৩. সুলতানের সন্তুষ্টি : ফিরোজশাহ তুঘলকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জিয়াউদ্দিন বারানি ইতিহাস রচনা শুরু করেন। তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' গ্রন্থের নামকরণ থেকেও বুঝা যায় তার ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্য মূলত কী ছিল । তাছাড়া ফিরোজশাহ তুঘলকের সংস্পর্শে এসে তার দুঃখদুর্দশা লাঘব হয় এবং নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হন । ৪. পৃষ্ঠপোষকতা লাভ : জিয়াউদ্দিন বারানির ইতিহাসকর্মের জন্য ফিরোজশাহ তুঘলক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি' রচিত হয়।
৫. প্রতিশোধ গ্রহণ : মুহম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যুর পর শত্রুরা তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে পাঠায়। ইতিহাস লেখার মধ্য দিয়ে তিনি তাদের শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জিয়াউদ্দিন বারানি তার দায়বদ্ধতা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস চর্চা করেন। তিনি নানারকম সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করেন। তিনি ইতিহাস রচনায় যতটুকু অবদান রেখেছেন তা অনস্বীকার্য, এর বেশি তার দ্বারা সম্ভব ছিল না ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত