ইবনে খালদুন কে ছিলেন?

উত্তর ভূমিকা : ইবনে খালদুন বিশ্ববরেণ্য গুণীজনের মধ্যে অন্যতম। তিনি মূলত একজন সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। সমাজের আবর্তন বিবর্তনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি ইতিহাসে অবদান রাখেন। তিনি মুসলিম মনীষীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ছিলেন। তার সম্পর্কে টয়েনবি বলেন, “তিনি দেশকালপাত্রভেদে সর্বাপেক্ষা চমৎকার তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস দর্শনের প্রণেতা এবং প্লেটো, এরিস্টটল, অগাস্টিন তার সমকক্ষ ছিলেন না।”
• ইবনে খালদুনের পরিচয় : ইবনে খালদুনের পুরো নাম ওলিউদ্দিন আবু জাইদ আব্দুর রহমান ইবনে খালদুন আল হাযরামী । তিনি ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মে উত্তর আফ্রিকার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র তিউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুহম্মদ। জানা যায়, তার পূর্বপুরুষরা আরব থেকে তিউনিস শহরে এসেছিল। তারপর স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তারা স্পেনে চলে আসেন ৷
স্পেনীয় ঐতিহাসিক ইবনে হজমের মতে, “ইবনে খালদুনের যে পূর্বপুরুষ স্পেনে এসেছিলেন তার নাম ছিল খালেদ। এ খালেদ থেকে খালদুন হয়েছে।” ছোটবেলা থেকেই খালদুন বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং তিউনিসেই তার মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। তিনি ২০ বছর বয়সে তিউনিসের শাসক আবু ইসহাকের অধীনে সচিব পদে চাকরি পান । খালদুন তার জীবনে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি মিসর, মরক্কো, আরবদেশসমূহ, পশ্চিম এশিয়া, স্পেন প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ভ্রমণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন। এরপর তিনি মিসর থাকাবস্থায় বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। স্বীয় মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় ছড়িয়ে পড়লে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মিসরের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান। অগাধ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘ওলিউদ্দিন' উপাধিতে ভূষিত করা হয় । ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে ১৯ মার্চ ৭৫ বছর বয়সে এ মহান ঐতিহাসিক মৃত্যুবরণ করেন। তাকে মিসরের কায়রো শহরের সুফি সম্প্রদায়ের সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয় ।
ইবনে খালদুনের ইতিহাস দর্শনের প্রতিফলন তার রচিত গ্রন্থ 'কিতাব আল ইবার' এর মাধ্যমে ঘটে। 'কিতাব আল ইবার' এর মুখবন্ধকে ‘মুকাদ্দিমা' বলা হয়। এটি রচনা করতে তার চার বছর সময় লেগেছিল। 'মুকাদ্দিমা' ছয় ভাগে আলোচনা করা হয় । এখানে তিনি আফ্রিকার ও যাযাবর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ইবনে খালদুন ছিলেন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ঐতিহাসিক। তার ইতিহাসকর্ম ছিল বিশ্লেষণাত্মক। তিনি সমাজের বিবর্তনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইতিহাসে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ।
আল মুকাদ্দিমা কী
উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগে যে কয়েকজন প্রখ্যাত মুসলিম মনীষীর পরিচয় পাওয়া যায় ইবনে খালদুন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি স্বীয় চিন্তাচেতনার দ্বারা জ্ঞানভাণ্ডারকে সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন । তার প্রতিভার স্বাক্ষর 'কিতাব আল ইবার'। 'মুকাদ্দিমা' হলো 'কিতাব আল ইবারের' মুখবন্ধ।
● আল মুকাদ্দিমা : প্রখ্যাত ইতিহাস দার্শনিক ইবনে খালদুনের ‘আল মুকাদ্দিমা' অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। তিনি 'কিতাব আল ইবার' গ্রন্থে আফ্রিকার জনগণের অবস্থা তুলে ধরেন। এ গ্রন্থটি শেষ করার পূর্বে তিনি একটি অসাধারণ জ্ঞানগর্ভ বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা লিখেন। ‘কিতাব-আল-ইবারের' ভূমিকাকে আরবিতে ‘মুকাদ্দিমা' বলা হয়। তিনি আলজেরিয়ার ‘কালাত ইবনে সালামা’ দুর্গে অবস্থানকালীন সময়ে ‘মুকাদ্দিমা' রচনা করেন। এটি রচনা করতে (১৩৭৫-১৩৭৯ খ্রিস্টাব্দ) দীর্ঘ চার বছর সময় লেগেছে । তিনি ‘মুকাদ্দিমার' বিষয়বস্তুকে ছয় ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেন । যথা :
প্রথম ভাগ : মুকাদ্দিমার প্রথম ভাগে ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানের একটি সারসংক্ষেপমূলক বিবরণ তুলে ধরেন । দ্বিতীয় ভাগ : মুকাদ্দিমার দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন যাযাবর শ্রেণি ও সমাজের উত্থানপতন এবং অনগ্রসর জাতির তথ্যবহুল বিবরণ রয়েছে । তৃতীয় ভাগ : মুকাদ্দিমার তৃতীয় ভাগে রাষ্ট্রের উত্থান, ক্রমবিকাশ, পদবি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ ভাগ : মুকাদ্দিমার চতুর্থ ভাগে ইবনে খালদুন স্থায়ী সমাজ, নগর ও প্রদেশের সার্বিক বিষয়াবলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন।
পঞ্চম ভাগ : মুকাদ্দিমার পঞ্চম ভাগে খালদুন মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জীবিকার পথে বিভিন্ন প্রকার কারুকাজ ও অনুরূপ বিষয়াবলির বিবরণ তুলে ধরেছেন।
ষষ্ঠ ভাগ : মুকাদ্দিমার ষষ্ঠ ভাগে ইবনে খালদুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে খালদুন আল মুকাদ্দিমায় মানুষের সর্বপ্রকার বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেছেন । মুকাদ্দিমায় তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিষয়াবলির গঠনমূলক বিশ্লেষণ করেছেন । ফলে ‘আল মুকাদ্দিমা’ একটি সর্বজনস্বীকৃত গ্রন্থ। সুতরাং ইতিহাসে আল মুকাদ্দিমার গুরুত্ব অপরিসীম ।
‘আল মুকাদ্দিমা' রচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : 'আল মুকাদ্দিমা' হলো প্রখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রচিত ঐতিহাসিক গ্রন্থ 'কিতাব আল ইবারের' মুখবন্ধ বা ভূমিকা। তিনি সমাজের আবর্তন বিবর্তনের আলোচনা করতে গিয়ে ইতিহাসশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব বিকাশকে ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য করেন। তিনি সমাজ ও সভ্যতার উত্থান ও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন ।
● 'আল মুকাদ্দিমা' রচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ইবনে খালদুন উপলব্ধি করেন যে, ঐতিহাসিক সত্যকে একটি ভিন্ন মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠিত ́ করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি তার অভিপ্রায় আল মুকাদ্দিমাতে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি সমাজ ও সামাজিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক নতুন বিজ্ঞানের অস্তিত্ব খুঁজে পান। যার নাম “ইসলাম আল উমরান” বা সাংস্কৃতির বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো মানবসমাজ, সামাজিক পরিবর্তন। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য প্রধানত প্রকৃতি দায়ী। তিনি পরিবর্তনের এই ধারাবাহিকতা আল মুকাদ্দিমাতে উল্লেখ করেন। এভাবে সমাজ ও সভ্যতা, কালের পরিবর্তন ও তার পিছনে প্রাকৃতিক কারণ নির্দেশ করতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের প্রকৃত পরিসীমার সন্ধান পেয়েছেন । তিনি ইতিহাসকে বিজ্ঞানের মর্যাদা দান করেন। এসব কারণে তিনি ‘মুকাদ্দিমা' গ্রন্থ রচনা করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল মুকাদ্দিমাতে আলোচিত প্রতিটি বিষয়ই এক জ্ঞানদীপ্ত পর্যবেক্ষণ। তিনি মুকাদ্দিমাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক অবস্থা, সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা তাকে শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]