ইবনে খালদুনের পরিচয় দাও। তার জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইবনে খালদুন ছিলেন বিশ্ববরেণ্য গুণিজনদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মূলত একজন সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। সমাজের আবর্তন বিবর্তনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি মুসলিম মনীষীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনি অমূল্য অবদান রাখেন ৷ খালদুন সম্পর্কে টয়েনবি বলেন, “তিনি দেশকালপাত্রভেদে সর্বাপেক্ষা চমৎকার তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস দর্শনের প্রণেতা এবং প্লেটো, এরিস্টটল, অগাস্টিন তার সমকক্ষ ছিলেন না।"
● ইবনে খালদুনের জীবন ও কর্ম : নিম্নে ইবনে খালদুনের জীবন ও কর্ম আলোচনা করা হলো :
১. পরিচয় : ইবনে খালদুনের পুরো নাম আবু জাইদ আব্দুর রহমান ইবনে খালদুন আল হাযরামী। তিনি ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭মে উত্তর আফ্রিকার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র তিউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুহম্মদ। জানা যায়, তার পূর্ব বংশধরেরা আরব থেকে তিউনিশ শহরে এসেছিল। তারপর স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তারা স্পেনে চলে আসেন। স্পেনীয় ঐতিহাসিক ইবনে হজমের মতে, “ইবনে খালদুনের যে পূর্বপুরুষ স্পেনে এসেছিলেন তার নাম ছিল খালেদ। এ খালেদ থেকে খালদুন হয়েছে।” ছোটবেলা থেকেই খালদুন বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং তিউনিসেই তার মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে ।
২. কর্মজীবন : ইবনে খালদুন বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ইবনে খালদুন মাত্র ২০ বছর বয়সে তিউনিসের শাসক দ্বিতীয় আবু ইসহাক এর সচিব পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন । তারপর তিনি মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তার প্রতিভা ও যোগ্যতার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তাকে মিসরের প্রধান কাজির পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তার খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সেখানকার লোকেরা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং তিনি বন্দি হন। বন্দি অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন করা হয়। তিনি পাঁচ বার মিসরের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন । তিনি জ্ঞান পিপাসু ছিলেন । জ্ঞান অর্জনের জন্য ইবনে খালদুন মিসর, মরক্কো, আরব দেশ, স্পেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৩৬২ সালে পঞ্চম মুহাম্মদের অধীনে চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ।
৩. গ্রানাডা গমন : ইবনে খালদুন জেল থেকে পালিয়ে ১৩৬২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের গ্রানাডার শাসনকর্তা, পঞ্চম মুহম্মদের অধীনে চাকরি লাভ করেন। তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে পঞ্চম মুহাম্মদ ক্যাস্টাইলের রাজা প্রেড্রোর রাজদরবারে সন্ধি স্থাপনের জন্য তাকে প্রেরণ করেন । তার জ্ঞান গরিমার পরিচয় পেয়ে পেড্রো তাকে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন । কিন্তু খালদুন পেড্রোর প্রস্তাবে রাজি হননি ।
৪. আফ্রিকা প্রত্যাবর্তন : স্পেনে ইবনে খালদুনের সৌভাগ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই খালদুন পঞ্চম মুহাম্মদের ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হন। তিনি স্পেন ত্যাগ করে আফ্রিকায় গমন করেন। আলজেরিয়ার সুলতানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিবদমান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপ্রাণ চেষ্টা করেন । শেষ অবধি তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।
৫. ‘কালাত ইবনে সালামা' দুর্গে বাস : ইবনে খালদুন দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে ওরানের সন্নিকটে ‘কালাত ইবনে সালামা' দুর্গে চার বছর বসবাস করেন। এ নির্জন বসবাসের সময় তার ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান এর ধারণার উদ্রেক সৃষ্টি করে । নির্জন বাসস্থানে তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাব-আল-ইবারের মুখবন্ধ' ‘আল মুকাদ্দিমা' রচনা করেন । আল মুকাদ্দিমাতে তার দর্শনতত্ত্বের পরিচয় ফুটে ওঠে ।
৬. প্রধান অধ্যাপক ও বিচারকের পদে নিয়োগ : ইবনে খালদুন ১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন। হজ শেষে মিসর প্রত্যাবর্তন করলে তৎকালীন কায়রোর শাসক মামলুক সুলতানদের অধীনে প্রধান বিচারক ও বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিচারক পদে থাকা অবস্থায় নানারূপ বিশৃঙ্খলা দূর করতে তৎপর ছিলেন। তিনি মালিকি মাজহাবের বিভিন্ন বিষয় সংস্কার করেন ।
৭. প্রিয়জন বিয়োগ : তিউনিসিয়া থেকে ইবনে খালদুনের পরিবারের সদস্যরা জাহাজে করে মিসরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । পথিমধ্যে জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে নিমজ্জিত হয়। সেখানে পরিবারের সব সদস্যদের সলিল সমাধি ঘটে। এই দুর্ঘটনায় তার জীবনে নেমে আসে সীমাহীন অন্ধকার । তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে জীবনের বাকি সময় ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন । ৮. তৈমুরের আক্রমণ প্রতিহত : ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে মামলুক সুলতান দামেস্ক সফর করেন। এ সফর কালে তাদের সাথে
· ইবনে খালদুনও সফরসঙ্গী ছিলেন। এ সময় তাতার নেতা তৈমুরের আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে খালদুন মিসর ফিরে যান এবং কূটনৈতিকভাবে তৈমুর লং এর আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হন। ফলে মিসর তৈমুর লং এর আক্রমণ হতে রক্ষা পায়। তার প্রজ্ঞা ও কৌশল দেখে তৈমুর তাকে উচ্চপদ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু খালদুন তা প্রত্যাখ্যান করে মিসরে ফিরে আসেন। মামলুক সুলতান খুশি হয়ে তাকে প্রধান বিচারকের পদে নিযুক্ত করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।
৯. জীবনাবসান : নানা বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী ইবনে খালদুন ১৪০৬ সালের ১৯ শে মার্চ ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । কায়রোর 'বাব আল নাসর' এর সুফি সম্প্রদায়ের সমাধি ক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয় । উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিচিত্র কর্মময় জীবনের অধিকারী ইবনে খালদুন একাধারে ঐতিহাসিক, সমাজবিজ্ঞানী, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি সমাজের বিবর্তনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইতিহাসে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হন। জিয়াউদ্দিন বারানির ইতিহাস চিন্তা ছিল ধর্মীয় উদ্দেশ্যভিত্তিক। এজন্য তার ইতিহাস দর্শন অল্প পরিসরে ছিল । কিন্তু তার বিশ্লেষণাত্বক ইতিহাসকর্ম তাকে ইতিহাসে অমরত্ব দান করেছে।
ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগে যে কয়জন প্রখ্যাত মুসলিম মনীষীর পরিচয় পাওয়া যায় ইবনে খালদুন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি স্বীয় মেধা ও চিন্তাচেতনার দ্বারা বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারকে সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ইবনে খালদুনের প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাব-আল-ইবার'। এ কিতাব আল ইবারের মুখবন্ধ বা ভূমিকাকে বলা হয় ‘আল মুকাদ্দিমা'। আল মুকাদ্দিমাতে তিনি মানব কর্মকাণ্ড, সভ্যতার ক্রমবিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, যা তাকে ঐতিহাসিকের মর্যাদা প্রদান করেছে।
* ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা : নিম্নে ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো : ক. আল মুকাদ্দিমা রচনা : প্রখ্যাত ইতিহাস দার্শনিক ইবনে খালদুনের ‘আল মুকাদ্দিমা’ অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। তিনি 'কিতাব-আল-ইবার' এ আফ্রিকার জনগণের অবস্থা তুলে ধরেন । এ গ্রন্থটি শেষ করার পূর্বে তিনি একটি অসাধারণ জ্ঞানগর্ভ বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা লিখেন। 'কিতাব-আল-ইবারের' ভূমিকাকে আরবিতে ‘মুকাদ্দিমা' বলা হয়। তিনি আলজেরিয়ার ‘কালাত ইবনে সালামা’ দুর্গে অবস্থানকালীন সময়ে 'মুকাদ্দিমা' রচনা করেন। এটি রচনা করতে (১৩৭৫-১৩৭৯ খ্রিস্টাব্দ) দীর্ঘ চার বছর সময় লেগেছে। আল মুকাদ্দিমার বিষয়বস্তু ‘মুকাদ্দিমার' বিষয়বস্তুকে ছয় ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেন। নিম্নে এ বিভাগগুলো আলোচনা করা হলো :
প্রথম ভাগ : মুকাদ্দিমার প্রথম ভাগে ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানের একটি সারসংক্ষেপমূলক বিবরণ তুলে ধরেন।
দ্বিতীয় ভাগ : মুকাদ্দিমার দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন যাযাবর শ্রেণি ও সমাজের উত্থানপতন এবং অনগ্রসর জাতির তথ্যবহুল বিবরণ আলোচনা রয়েছে।
তৃতীয় ভাগ : মুকাদ্দিমার তৃতীয় ভাগে রাষ্ট্রের উত্থান, ক্রমবিকাশ, পদবি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ ভাগ : মুকাদ্দিমার চতুর্থ ভাগে ইবনে খালদুন স্থায়ী সমাজ, নগর ও প্রদেশের সার্বিক বিষয়াবলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে
আলোচনা করেছেন ।
পঞ্চম ভাগ : মুকাদ্দিমার পঞ্চম ভাগে খালদুন মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জীবিকার পথে বিভিন্ন প্রকার কারুকাজ ও অনুরূপ বিষয়াবলির বিবরণ তুলে ধরেছেন ।
ষষ্ঠ ভাগ : মুকাদ্দিমার ষষ্ঠ ভাগে ইবনে খালদুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
খ. ‘আল মুকাদ্দিমা' রচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ইবনে খালদুন উপলব্ধি করেন যে, ঐতিহাসিক সত্যকে একটি ভিন্ন মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি তার অভিপ্রায় আল মুকাদ্দিমাতে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি সমাজ ও সামাজিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক নতুন বিজ্ঞানের অস্তিত্ব খুঁজে পান। যার নাম ‘ইসলাম আল উমরান' বা সাংস্কৃতির বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো মানবসমাজ, সামাজিক পরিবর্তন। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য প্রধানত প্ৰকৃতি দায়ী । তিনি পরিবর্তনের এই ধারাবাহিকতা আল মুকাদ্দিমাতে উল্লেখ করেন। এভাবে সমাজ ও সভ্যতা, কালের পরিবর্তন ও তার পিছনে প্রাকৃতিক কারণ নির্দেশ করতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের প্রকৃত পরিসীমার সন্ধান পান। তিনি ইতিহাসকে বিজ্ঞানের মর্যাদা দেন । এসব কারণে তিনি 'মুকাদ্দিমা' গ্রন্থ রচনা করেন ।
গ. আল মুকাদ্দিমার ধারণাসমূহ : আল মুকাদ্দিমাতে ইবনে খালদুন সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন । আল মুকাদ্দিমায় বিধৃত ধারণাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ইতিহাসের ধারণা লাভ : ইবনে খালদুন সমাজ বিকাশে এক দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটি তাকে ইতিহাসের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তনের সাথে পরিচয় ঘটায়। এর প্রেক্ষাপটে তিনি ইতিহাস ও বিজ্ঞানের এক নতুন শাখার সন্ধান লাভ করেন, যাকে সংস্কৃতির বিজ্ঞান বলা হয়। এখানে সমাজজীবনের আচার আচরণ, রীতিনীতি, সাধারণ মানুষের জীবনাচারণ তুলে ধরা হয় ।
২. মানুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ : বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন মানুষ ও সমাজের ওপর প্রকৃতির প্রভাব সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে । আবার কোথাও সভ্যতা বিকশিত হয়নি । তাছাড়া আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে মানুষের জীবনধারা, স্বভাব চরিত্র, আচার আচরণের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নাতিশীতোষ্ণ অবতলের মানুষ যেমন নম্রভদ্র মার্জিত আচরণের অধিকারী হয়, মরু অঞ্চলের মানুষেরা তেমন রুক্ষ স্বভাবের হয়ে থাকে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষেরা প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট হয় এবং তারা চমৎকার সভ্যতার জন্ম দিতে পারে।
৩. সভ্যতা ও সমাজের বিকাশ লাভ : ইবনে খালদুনের মতে, মানুষ প্রয়োজনবোধ থেকেই একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে থাকে। এ একতাবদ্ধ জনগোষ্ঠী তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নানাবিধ কর্মসম্পাদন করে থাকে। এরূপ কার্যক্রম থেকেই গড়ে ওঠে সামাজিক সংগঠন। সামাজিক সংবিধানের কর্মতৎপরতার ফলে রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম দেয়। এভাবেই সমাজ ও সভ্যতা বিকাশ লাভ করে ।
৪. সভ্যতার পতন সম্পর্কে ধারণা লাভ : পৃথিবীর কোনো কিছুই উন্নতির চরম শিখরে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। সভ্যতা যখন চরম উন্নতির পর্যায়ে পৌছায় তখনই অবক্ষয় শুরু হয়। এ সভ্যতা আস্তে আস্তে কার্যকারিতা হারিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ।
৫. ঐতিহাসিকের কর্তব্যকর্ম নির্ধারণ : ইবনে খালদুন আল মুকাদ্দিমায় ঐতিহাসিকের কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেন। তার মতে, একজন ঐতিহাসিক সৎ ও নিরপেক্ষভাবে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করবেন। কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নিবেন না। ভুলভ্রান্তির দিকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন ।
মূল্যায়ন : ‘আল মুকাদ্দিমা' ইবনে খালদুনের অমর প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। আল মুকাদ্দিমাতে ইবনে খালদুনের ইতিহাস দর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মুকাদ্দিমাতে তিনি মানব কর্মকাণ্ড, মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ, উত্থানপতন, ঐতিহাসিকের কর্তব্যকর্ম নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। যা আধুনিক ইতিহাস দর্শনেও প্রভাব বিস্তার করেছে। ‘আল মুকাদ্দিমা' ১৮৬০ সালে ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালে F. Rosenthal মুকাদ্দিমার প্রথম তিন খন্ড অনুবাদ করেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, আল মুকাদ্দিমার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতটুকু। আল মুকাদ্দিমায় বিধৃত ধারণাসমূহ খালদুনের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। ইতিহাস দর্শনের ক্ষেত্রে ইবনে খালদুন ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন ৷ উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আল মুকাদ্দিমায় ইবনে খালদুনের দূরদর্শিতার পরিচয় ফুটে ওঠে। মুকাদ্দিমায় বিধৃত ধারণা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তাকে অমরত্ব দান করেছে। আল মুকাদ্দিমাতে ইবনে খালদুন মানবসভ্যতার বিবর্তনধারা, তার দর্শনতত্ত্ব আধুনিক কালের ঐতিহাসিককে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস দর্শনের ক্ষেত্রে ইবনে খালদুন ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন ।
• ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব বিশ্লেষণ কর । ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগের ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব তার প্রতিভার পরিচয় বহন করে । ইবনে খালদুন আল মুকাদ্দিমাতে 'আসাবিয়া তত্ত্বের' ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ধর্ম ও জাতীয়তাবোধের সময়ন্বয়ে তিনি রাষ্ট্র গঠনের তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য Y. Laeoste বলেন, “থুসিডিডিস যদি বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক হয়ে থাকেন তাহলে খালদুনকে উপস্থাপক বলতে হবে। *
● ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব : নিম্নে ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব বিশ্লেষণ করা হলো :
ক. আসাবিয়া তত্ত্ব : ‘আসাবিয়া' বলতে সাধারণত গোষ্ঠী সংহতিকে বুঝায়। কোনো জাতি, দল, গোত্রের মধ্যে পারস্পরিক একাত্মবোধকে ইবনে খালদুনের ভাষায় আসাবিয়া বলা হয়। আসাবিয়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে। বংশ, রক্তের সম্পর্ক, রাজনৈতিক চেতনাবোধ ও জাতীয়তাবোধ থেকেও আসাবিয়া গঠিত হয়। তবে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সংহতির দীর্ঘায়িত করার ক্ষেত্রে আসাবিয়াহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে গোষ্ঠী, দল, জাতির মধ্যে দৃঢ় ঐক্য রয়েছে তাদের মধ্যকার দৃঢ় আসাবিয়া দীর্ঘকাল রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। রক্তের বন্ধনে গড়ে ওঠা আসাবিয়া জাতীয়তাবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে যেরকম ভূমিকা রাখতে পারে বিভিন্ন রক্তের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আসাবিয়া জাতীয়তাবোধ রক্ষায় তদ্রূপ ভূমিকা রাখতে পারে না। ইসলামে নবি ও রাসুলদের আগমনের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আসাবিয়া গড়ে ওঠে। তবে পরবর্তী সময়ে আসাবিয়া শিথিল হয়ে পড়ে। বক্তের সম্পর্ক ছাড়াও আসাবিয়া গড়ে ওঠতে পারে। যেমন— একই স্থানে দীর্ঘকাল বসবাসের ফলে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এ থেকে তাদের মধ্যে একটা ঐক্যের সৃষ্টি হয়। এ ঐক্যই তাদেরকে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে । রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যেরূপ আসাবিয়ার প্রয়োজন হয়, রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তেমনি আসাবিয়ার প্রয়োজন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজবংশ যদি পরিপূর্ণ আসাবিয়া সৃষ্টি করতে পারে তবে সে রাজবংশ ধারাবাহিক শাসনক্ষমতায় টিকে রাখতে সক্ষম হবে। খালদুনের মতে, পরিবার, সামাজিক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে আসাবিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
খ. আসাবিয়া তত্ত্বের বিভিন্ন দিক : ইবনে খালদুন আসাবিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব, সার্বভৌমত্ব নিয়ে আলোচনা করেন । তিনি আসাবিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালান। নিম্নে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. একীভূত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা : রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা একে অপরের সাথে জড়িত। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান । আলো থাকলে যেমন ছায়া থাকে ঠিক তেমনি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক একই রকম । এরিস্টটল রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে অভিন্ন সংগঠন হিসেবে দেখেননি । ইবনে খালদুনের চিন্তাধারায় তদ্রূপ ধারণার উদ্রেক হয়েছে । ২. সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপন : ইবনে খালদুন তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাব আল ইবার' এর আল মুকাদ্দিমায় সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপনের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। একই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ সমাজে ধর্মীয় ঐক্য গড়ে তোলে । যা পরবর্তী সময়ে সমাজের বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। মানুষের আত্মকলহ থেকে সমাজে অশান্তি বিরাজ করে । এ আত্মকলহ একে অপরের সাথে সার্বক্ষণিক কলহে লিপ্ত হয়, যা সমাজের স্থিতিশীলতার পরিপন্থি। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শক্তিশালী গোত্রপ্রীতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। যা সমাজের এ হীন মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারে ।
৩. গোত্র সম্পর্ক সৃষ্টি : গোত্র সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আসাবিয়া সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ় করে। মানুষের মানসিকতার ওপর আসাবিয়া সৃষ্টি নির্ভরশীল। আসাবিয়ার প্রাথমিক স্তর হচ্ছে গোত্র সম্পর্ক তারপর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় । প্রাচীন আরবগণ অন্য গোত্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে গোত্রীয় আসাবিয়ার সমস্যা সমাধান করেছেন ।
৪. উৎপাদন ও নগরায়ণ : ইবনে খালদুনের মতে, সমাজের মানুষ তাদের প্রয়োজনবোধ থেকে উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে থাকে । কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে তার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদন করা সম্ভব নয় । এজন্য কোনো সমাজ বা অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য অন্য সমাজ বা অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এভাবে মানুষ বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ গঠন করে । একে অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে। খালদুন এটিকে নগরায়ণ বলে অভিহিত করেন।
৫. রাজবংশ প্রতিষ্ঠা : বংশ প্রতিষ্ঠায় গোত্রপ্রীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি লোক যখন সুদৃঢ় গোত্রপ্রীতি বা সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তখন তারা কোনো রাজবংশ বা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতা অর্জন করে। গোত্রপ্রীতি ছাড়া অনৈক্যভাবে কোনো জাতি বা সমাজ বংশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না ।
৬. রাষ্ট্র গঠনে আসাবিয়ার ভূমিকা : ইবনে খালদুনের মতে, রাষ্ট্র গঠনে আসাবিয়ার বা গোত্রপ্রীতির ভূমিকা রয়েছে। মানুষ কতিপয় দিক নিয়ে আসাবিয়া গঠন করে। যেমন— রক্তের সম্পর্ক, ধর্মীয় সংহতি, পারস্পরিক সমঝোতা। অনেক সময় প্রয়োজনে রক্তের সম্পর্কের মাধ্যমে গোত্রপ্রীতি তৈরি হয়। স্বগোত্রের মধ্যে মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে বিজয়ী গোত্র প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। বিজয়ী গোষ্ঠী অন্যত্র বসবাস করলে সেখানে তারা রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয়। আবার একই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় সংহতি। তারা ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুংসবদ্ধভাবে শক্তি প্রদর্শন করে রাষ্ট্র গঠন করে । আবার বহুদিন পর্যন্ত একত্রে বসবাসের ফলে সংহতি সৃষ্টি হয়, ফলে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা উত্তম । কেননা একই ধারায় বহুদিন পর্যন্ত শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হলে জাতীয়তাবোধ অটুট থাকে। ফলে সংঘবদ্ধভাবে শক্তি প্রদর্শনে সমর্থ হয় । এভাবে রাজবংশের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয় । ৭. রাষ্ট্র শাসনব্যবস্থা : প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন রাষ্ট্র শাসনের ব্যাপারে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর গুরুত্ব দেন। রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে তিনি যুক্তি উত্থাপন করে বলেন, রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাস্তবায়ন করা যায়। এ শাসনব্যবস্থায় কোনো মতপার্থক্যের আশঙ্কা থাকে না। সমাজে বিরাজমান অনিয়ম ও অনৈতিক কার্যক্রম কঠোরতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার খালদুনের মতো এক হস্তে শাসনব্যবস্থা থাকার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। ভলতেয়ার বলেন, “সহস্র ইঁদুর দ্বারা শাসিত না হয়ে একটি সিংহের শাসন অধিক শ্রেয়।” অবশ্য খালদুনের এরূপ মত প্রদানের কারণও আছে। তিনি যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন সেসব রাষ্ট্র রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হতো ।
৮. আসাবিয়ার ব্যাপ্তিকাল : ইবনে খালদুন আসাবিয়ার ব্যাপ্তিকাল সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে গোত্রপ্রীতি তিন জামানার বেশি স্থায়ী হয় না । তিনি এক জামানাকে ৪০ বছর ধরে হিসাব করলে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব হয় ১২০ বছর ।
৯. আসাবিয়ার অভাবে রাষ্ট্রের পতন : কোনো সম্প্রদায় যখন প্রয়োজনীয় ‘আসাবিয়া' বা গোত্রপ্রীতি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় তখন ঐ সম্প্রদায় শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর শাসকশ্রেণি তাদের শক্তিমত্তাকে কাজে লাগাতে চান না। তারা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। উক্ত সম্প্রদায় সমস্ত দায়দায়িত্ব প্রতিনিধির কাজ বলে মনে করে। অপরদিকে, সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বহিঃশক্তি তাদের দুর্বলতার সুযোগে আক্রমণ করে এবং শাসন ক্ষমতা থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করে। এভাবে আসাবিয়া বিলুপ্তির ফলে রাষ্ট্রের পতন ঘটে।
সমালোচনা : ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্বটি সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তার তত্ত্বটি সম্পর্কে নিম্নোক্ত সমালোচনা করেছেন :
প্রথমত, ইবনে খালদুন তার আসাবিয়া তত্ত্বে সভ্যতার উৎপত্তি, পতন ও বিকাশকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু এটা সভ্যতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ।
দ্বিতীয়ত, ইবনে খালদুন তার আসাবিয়া তত্ত্বে সভ্যতার উৎপত্তি সংক্রান্ত খণ্ডিত অংশের বিশ্লেষণ করেছেন। ফলে তার আসাবিয়া তত্ত্বকে দুর্বল করে দেয়।
তৃতীয়ত, ইবনে খালদুনের মতে, কোনো রাষ্ট্র শৌর্যবীর্যের সাথে ১২০ বছর টিকে থাকে। অনেক ঐতিহাসিক ইবনের খালদুনের রাষ্ট্রের এ আয়ুষ্কাল সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইবনে খালদুনের মধ্যে আসাবিয়া বা গোত্রপ্রীতি সুচারুভাবে বিদ্যমান ছিল। তিনি আসাবিয়ার বিভিন্ন দিক মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। তার আসাবিয়া তত্ত্বে রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম ও রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এ কারণে আসাবিয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]