ভূমিকা : বৈজ্ঞানিক ইতিহাস রচনার অন্যতম পথিকৃৎ লিওপোল্ড ভন র্যাংকে ছিলেন ঊনবিংশ শতকের জার্মানির একজন শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক। নিয়মানুগ ও সযত্ন ইতিহাস গবেষণার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ, নৈর্ব্যক্তিকতা অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ইতিহাস পঠনপাঠনে উপযোগিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে অনবদ্য বিশ্বাস তাকে আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের ইতিহাসে দান করেছে শ্রেষ্ঠত্ব । তেমনি ইতিহাসের বিজ্ঞানভিত্তিক রূপদানের জন্য তাকে ইতিহাস দান করেছে বিশিষ্টতা ও খ্যাতি ।
● লিওপোল্ড ভন র্যাংকের জীবনী'ও গবেষণা কর্ম : নিম্নে লিওপোল্ড ভন র্যাংকের জীবনী ও গবেষণাকর্মের পরিচয়
দেওয়া হলো :
ক. লিওপোল্ড ভন র্যাংকের জীবনী : বৈজ্ঞানিক ইতিহাস রচনার অন্যতম পথিকৃৎ লিওপোল্ড ভন র্যাংকে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর স্যাক্সনির উইহেই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সময় জার্মানির প্রায় ৩৯টির মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত একটি রাজ্য ছিল স্যাক্সনি। পরে জার্মানির একত্রিকরণ সম্পন্ন হলে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য প্রুশিয়ার অধিভুক্ত হয়েছিল স্যাক্সনি ।
থুসিডিডিস বৈজ্ঞানিক ইতিহাস রচনার যে ধারা শুরু করেন তাকে পূর্ণতা দিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন লিওপোল্ড ভন র্যাংকে । তার এ কর্ম প্রচেষ্টার প্রয়াসের জন্য আধুনিককালের সূত্রনির্ভর ইতিহাস চর্চা ও বৈজ্ঞানিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক হিসেবে তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন । একজন ঐতিহাসিক হিসেবে র্যাংকে জার্মানির জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার উন্মেষ পর্বের অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে নিজের স্থান প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
খ. লিওপোল্ড ভন র্যাংকের গবেষণাকর্ম পরিচয় : বৈজ্ঞানিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক র্যাংকের ইতিহাস গবেষণাকর্ম ছিল সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণের চেয়ে অনেকটাই স্বতন্ত্র ও সৃজনশীলতা নির্ভর। নিম্নে তার গবেষণাকর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলো :
১. প্রাচীন সাহিত্য গবেষণা : প্রাচীন সাহিত্য গবেষণা সম্পর্কে র্যাংকের অত্যন্ত আগ্রহ ছিল। এ ধরনের আগ্রহই তাকে ইতিহাস চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তোলে। তিনি ক্যাথলিক ধর্মের দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানান। এ দীর্ঘ প্রতিবাদের ফলে ক্যাথলিক ধর্ম বিভক্ত হয়ে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট শাখায় রূপান্তরিত হয়। র্যাংকে ধর্ম সংস্কারক মার্টিন লুথারকে একটি ঐতিহাসিক চরিত্র দেওয়ার প্রয়াসে ইতিহাস রচনার কাজে মনোনিবেশ করেন ।
২. উৎসের সঠিকতা নির্ণয় : সাধারণত ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসের উৎস ও তথ্যসমূহ যাচাইবাছাইয়ে আত্মনিয়োগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা হয়ত উৎসের ধরন, উৎসের বিবরণের প্রকৃতি, উৎসের ভাষা ও বর্ণমালা, কালক্ৰম,
উৎসের গ্রহণযোগ্যতা প্রভৃতি পরীক্ষানিরীক্ষা করে থাকেন। এদিক বিবেচনায় র্যাংকে অন্যান্য ঐতিহাসিকগণের চেয়ে বেশ আলাদা ছিলেন। তিনি শুধু উপযুক্ত পদ্ধতিতে উৎস ও তথ্য যাচাইবাছাই এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করেই ক্ষান্ত হননি। ইতিহাসের উৎসকে সম্যকভাবে বুঝতে ও উপলব্ধিকরণের প্রতিও তিনি মনোনিবেশ করেন। তিনি জানতে চান কেন কোনো উৎস তৈরি করা হয়, কোন প্রেক্ষিতে এ উৎসের ভাষা ও বিবরণ এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে প্রভৃতি প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন । এভাবে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত ইতিহাসের সঠিক তথ্যটি চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ করতেন । ৩. উৎসদাতার নৈতিকতা অনুসন্ধান : র্যাংকে ইতিহাস রচনার জন্য শুধু উৎসের অনুসন্ধান করে ক্ষান্ত থাকেননি । যে ব্যক্তি ইতিহাসের উৎস বা তথ্য সরবরাহ করেছিল র্যাংকে তার ভাবাবেগ, যথার্থতা, ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে উৎসের সংশ্লিষ্ট তথ্য গ্রহণ করতেন। র্যাংকের কাঙ্ক্ষিত তথ্য যত ক্ষুদ্র ও নগণ্য হোক না কেন তিনি সম্পূর্ণভাবে যাচাইবাছাই না করে কখনও গ্রহণ করতেন না। আর এভাবেই তিনি সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।
উৎস ও তথ্যের সঠিকত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনি ঐতিহাসিকগণকে ভাবাবেগ, কল্পনা ও অনুমান নির্ভরতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান। ইতিহাসের সঠিক তথ্য সন্নিবেশের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এ লক্ষ্যে র্যাংকে বহুবার অস্ট্রিয়া ও ইতালি সফর করেন ।
৪. র্যাংকের নৈর্ব্যক্তিকতা অনুসরণ : ঐতিহাসিক র্যাংকে বলেন, উপযুক্ত পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ ও পরিচালনার মাধ্যমেই কেবলমাত্র ঐতিহাসিক সত্যকে উদ্ঘাটন সম্ভব। তারপরও তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও যুগ সমসাময়িক আবেগ, অনুভূতি প্রভৃতি দ্বারা কমবেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফলে ইতিহাসের গতিপথে রদবদল ঘটে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, যদি সঠিকভাবে উৎস প্রণেতার অথবা তথ্যের ভাবাবেগকে শনাক্ত করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র সঠিক ইতিহাস লেখা সম্ভব হয়। কোনো ঐতিহাসিক যে যুগের ইতিহাস রচনা করেন তাকে অবশ্যই সে যুগের সমকালীন ভাবধারা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হবে। কোনো ঐতিহাসিক তার সময়কার যুগধর্মের বৈশিষ্ট্য ও সংস্কারমূলক কাজের দ্বারা অতীত প্রেক্ষিত মূল্যায়ন করেন না। তিনি অতীত প্রেক্ষিতকে অতীতের প্রেক্ষাপটেই বিচারবিশ্লেষণ করে ইতিহাস লেখার জন্য ঐতিহাসিকদের অনুরোধ করেন। এজন্য ঐতিহাসিকদের ভাবনা জগৎকে অতীতের প্রেক্ষাপটের আলোকে তৈরি করার জন্য পরামর্শ দেন ।
৫. ধর্ম ও যুগশ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের প্রেরণা : ঐতিহাসিক র্যাংকেকে ধর্ম বিষয়ে আগ্রহ ও তৎকালীন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সমাজ ইতিহাস চর্চায় প্রেরণা দান করে। দার্শনিক ফ্রেডরিখ স্কিলিং কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহে স্রষ্টার কর্মধারা অনুধাবনের প্রয়াস পান। ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে তার পূর্বসূরি ঐতিহাসিক মবিলনের তুলনায় লিওপোল্ড র্যাংকে অনেকটা বেশিই অনুপ্রাণিত ছিলেন। এদের রচনাকর্ম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উৎসের সঠিকতা নির্ণয় ও নির্ভরযোগ্যতার বিচারবিশ্লেষণে ঐতিহাসিক মবিলন যে প্রক্রিয়া সূচনা করেন র্যাংকে তার মেধা, ধৈর্য ও মননশীলতার মাধ্যমে উক্ত চর্চা আরও বেগবান করেন এবং তা সম্পন্ন করেন ।
৬. রক্ষণশীল মতাদর্শ : রাজনৈতিক ক্ষেত্রে র্যাংকে নিজেকে রক্ষণশীল মতাদর্শের সমর্থক বলে প্রচার করেন। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পত্রিকাতে প্রকাশিত প্রবন্ধমালার তিনি বেশিরভাগ প্রবন্ধ লেখেন। এ ধরনের লেখনীতে তিনি উদারনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল রাজনীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
৭. আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের সূচনা : ইতিহাসকে গভীরভাবে বুঝা, জানা, উপলব্ধি করা, উৎসানুসন্ধানের জন্য নিয়মানুগত তথা বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল যথার্থ প্রয়োগ করা এবং সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়া অনুসারে ইতিহাস লিখন ও পঠনপাঠনকে আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব বলে অভিহিত করা হয়। উনিশ শতকে র্যাংকে প্রামাণ্য ইতিহাস লেখার জন্য ইতিহাসের উৎসানুসন্ধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জোরালো ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐতিহাসিক র্যাংকের মতে, প্রতিটি মানুষ সমাজ ও জাতীয়তার সমকালীন ভাবাবেগ ও যুগধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত হন। সেজন্য এরূপ উপলব্ধি বিবেচনায় রেখে র্যাংকে সতকর্তা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তথ্যসংগ্রহ করার উপদেশ দেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন, "Must describe how it really was." এভাবে তিনি আধুনিক ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত ঘটান।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, র্যাংকের ইতিহাস দর্শনের ফলে ইতিহাস বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় । ইতোপূর্বে থুসিডিডিস বৈজ্ঞানিক ইতিহাস চর্চা শুরু করলেও তিনি তা অপূর্ণ রেখে যান। থুসিডিডিসের অপূর্ণ কাজকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্নকরণ ও ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে র্যাংকের অবদান স্মরণীয় । এজন্য তাকে আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক বলে অভিহিত করা হয় ৷
বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে লিওপোল্ড ভন র্যাংকের অবদান আলোচনা কর ।
ভূমিকা : লিওপোল্ড ভন র্যাংকে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি ও পদ্ধতিতত্ত্বের প্রচলন করেন তার মাধ্যমে ইতিহাস রচনা অনেক বেশি সহজ, সাবলীল ও নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে র্যাংকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি ইতিহাসকে তথ্যসূত্র ও উৎসের ভিত্তিতে অনুধাবন করার একটি নিয়মানুগ ও গ্রহণযোগ্য রীতির প্রচলন করেন । লিখিত ইতিহাসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তিনি ব্যবহারকৃত সূত্রের উৎস ও তার নির্মাতা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার চেষ্টা করেন। আর এভাবেই বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে র্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হন ।
→ বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে লিওপোল্ড ভন র্যাংকের অবদান : আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক বলে খ্যাত র্যাংকের ইতিহাস চর্চা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল । থুসিডিডিসের অসম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ইতিহাস চর্চাকে র্যাংকে পরিপূর্ণতা দান করেন। তার হাত ধরেই ঊনবিংশ শতকে আধুনিক ইতিহাস চর্চা দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে র্যাংকে যে সমস্ত নীতি বা পদ্ধতি অবলম্বন করেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : ১. বিজ্ঞানসম্মতভাবে উৎসের অনুসন্ধান : বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে র্যাংকে ইতিহাসের উৎসের সঠিকতার ওপর বেশি জোর দেন। সঠিক উৎসের জন্য তিনি শুধু উৎসে যা লেখা বা বর্ণনা করা আছে তা জেনেই থেমে থাকেননি; বরং উৎসের নির্মাতা চারিত্রিকভাবে কেমন ছিলেন এবং তিনি কোন সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে উৎস নির্মাণ করেছেন সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ শুরু করেন। তার মতে, উৎস ও দলিল সে কথাই আমাদের জানায় যা উৎসের নির্মাতা ও দলিলের স্রষ্টা উৎস দ্বারা আমাদের বলতে চায়। এজন্য র্যাংকে নিজ উদ্যোগে সর্বপ্রথম ঐতিহাসের উৎসের পশ্চাদভূমি খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেন। র্যাংকের এ ধরনের গুণাবলি তাকে আধুনিক ইতিহাসের জনকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ২. ভাবাবেগ অনুসন্ধান : বৈজ্ঞানিক ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য র্যাংকে বলেন, প্রতিটি মানুষ, সমাজ ও জাতি তার সমকালীন ভাবাবেগ ও যুগধর্মের দ্বারা কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত হন। সেজন্য এরূপ উপলব্ধি বিবেচনায় রেখে অত্যন্ত সচেতনতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তথ্যসংগ্রহে নিয়োজিত হতে হবে। তাছাড়া ঐতিহাসিককে সব ধরনের আবেগ ও বাহ্যিক প্রভাবমুক্ত থেকে তিনি যে যুগের ইতিহাস লিখবেন সে যুগের ভাবাবেগ যথার্থভাবে জেনে সব ধরনের ভাবাবেগকে পাশ কাটিয়ে একেবারে নিরেট ইতিহাস লেখার পরামর্শ দেন র্যাংকে। ঐতিহাসিক কোনো যুগ ও সমাজের প্রেক্ষিতে নয়; বরং তিনি যে যুগের ও সমাজের সমসাময়িক প্রেক্ষিত উপলব্ধি করে সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে ইতিহাস রচনার দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করবেন ।
৩. নৈর্ব্যক্তিকতা অর্জনের চেষ্টা : র্যাংকে ইতিহাস চর্চায় নৈর্ব্যক্তিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক জাতি এবং যুগ প্রচলিত সমসাময়িক ভাবাবেগের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অতএব ঐতিহাসিক যেকোনো জাতি বা যুগ সম্পর্কে ইতিহাস লিখতে হলে প্রথমে ঐ জাতি বা যুগের ভাবাবেগকে উদ্ঘাটন করতে হবে। নতুবা বিশ্লেষণ অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সর্বোপরি সব প্রকার সমসাময়িক সংস্কারের ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিকভাবে অতীতকে পর্যালোচনা ও উপস্থাপনের জন্য তিনি ঐতিহাসিকদের প্রতি আন্তরিক আবেদন জানান । এক্ষেত্রে র্যাংকের বক্তব্য ছিল, "Must describe how it really was. '
৪. ঐতিহাসিকের মানসিকতা নির্ধারণের চেষ্টা : র্যাংকে ইতিহাসের উৎস প্রদানকারী ব্যক্তি বা ঐতিহাসিকের ভাবাবেগ, যথার্থতা, ব্যক্তিত্ব, মতাদর্শ এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তার বিনির্মিত ঐতিহাসিক সংশ্লিষ্ট তত্ত্ব ও তথ্যসংগ্রহ করতেন। তথ্য যত ক্ষুদ্র ও নগণ্য হোক না কেন তিনি তা সম্পূর্ণভাবে যাচাইবাছাই না করে কিছুতেই গ্রহণ করতেন না ।
৫. বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার বিস্তার : র্যাংকে ইতিহাস চর্চার ফলে নতুনভাবে উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। এ আদর্শের ব্যাপক প্রসার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও তিনি নিজেই করেন। এ লক্ষ্যে ১৮৩৩ সালে তার ইতিহাস সেমিনার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। এ ইতিহাস সেমিনার কেন্দ্রে প্রধানত তিনি নিজেই প্ৰশিক্ষণ কর্মে ওতপ্রোতভাবে নিয়োজিত ছিলেন ।
৬. র্যাংকের Historicism : লিওপোল্ড ভন র্যাংকে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সহজ ও প্রচলিত পদ্ধতি পরিহার করে প্রতিটি সত্য ঘটনা ও তার পিছনে সত্যকে যথাযথভাবে উদ্ঘাটন করতে সচেষ্ট ছিলেন। র্যাংকে মনে করেন যে, সময় ও পরিস্থিতির বিচারে অনেক অসত্য ইতিহাসে সত্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তা নির্ধারণ না করে ইতিহাস রচনা করা হলে ঐ ইতিহাস যথার্থ মানদণ্ড থেকে বিচ্যুত হতে বাধ্য। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে র্যাংকে যে ইতিহাস দর্শনের গোড়াপত্তন করেন তাকেই ইতিহাসে Historicism বলে অভিহিত করা হয় । পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি একটি ব্যাপক জটিলতা সৃষ্টি করে। এ জটিলতা থেকে বের হয়ে আসার সহজ উপায় হচ্ছে ডিডাকটি অ্যাপ্রোচ বা বিয়োজনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিজেদের মধ্যে ধারণ করা ।
৭. বৈজ্ঞানিক ইতিহাস চর্চার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা : বিখ্যাত পণ্ডিত, গবেষক, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক সুষ্ঠু গবেষণা প্রণালির প্রবর্তক হিসেবে র্যাংকের মহত্ত্ব সর্বজনবিদিত। তিনি ইতিহাসকে বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র হিসেবে মূল্যায়ন করেন এবং ইতিহাসের বিষয়বস্তু অতীতে ঠিক যেমন ছিল (The past is actually was) ঠিক তেমনভাবেই ব্যাখ্যা করতে হবে এ ধরনের মন্তব্যকে পণ্ডিতদের নিকট গ্রহণযোগ্য করেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনকের স্বীকৃতি এবং আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। তিনি স্বযত্ন এবং নিয়মানুগ ইতিহাস গবেষণার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেন। নৈর্ব্যক্তিক অর্জনে আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ইতিহাস পাঠের যথার্থ তাৎপর্য সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস তাকে ইতিহাস তত্ত্বের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা, পদ্ধতিগত উন্নয়নের পাশাপাশি এর তাত্ত্বিক কাঠামোতে আমূল সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক হিসেবে র্যাংকে বিখ্যাত হয়ে আছেন । পরবর্তী ঐতিহাসিকরা তার প্রবর্তিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুধু পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত করেছেন মাত্র। ফলে প্রকৃত অর্থেই ইতিহাস বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পায় ৷
লিওপোল্ড ভন ব্যাংকেকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় কেন?
উত্তর ভূমিকা : বিভিন্ন উৎস ও তথ্যের উৎপত্তির প্রেক্ষিত বিশ্লেষণের পাশাপাশি উৎস ও তথ্যের সমালোচনামূলক পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে র্যাংকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার শুভ সূচনা করেন। তিনি ইতিহাসের উৎসের সবচেয়ে প্রাথমিক ও সমসাময়িক তথ্যসংগ্রহের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন। যার ফলে তার ইতিহাস চর্চা আধুনিক ইতিহাস চর্চার অন্যতম মানদণ্ডরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনায় লিওপোল্ড ভন র্যাংকেকে আধুনিক ইতিহাসের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।
লিওপোল্ড ভন র্যাংকেকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলার কারণ : নিম্নে লিওপোল্ড ভন র্যাংকেকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলার কারণ আলোচনা করা হলো :
১. উৎসের সঠিকতা নির্ণয় : সাধারণত ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসের উৎস ও তথ্যসমূহ যাচাইবাছাইয়ে আত্মনিয়োগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা হয়ত উৎসের ধরন, উৎসের বিবরণের প্রকৃতি, উৎসের ভাষা ও বর্ণমালা, কালক্রম, উৎসের গ্রহণযোগ্যতা প্রভৃতি পরীক্ষানিরীক্ষা করে থাকেন। এদিক বিবেচনায় র্যাংকে অন্যান্য ঐতিহাসিকগণের চেয়ে বেশ আলাদা ছিলেন। তিনি শুধু উপযুক্ত পদ্ধতিতে উৎস ও তথ্য যাচাইবাছাই এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করেই ক্ষান্ত হননি। ইতিহাসের উৎসকে সম্যকভাবে বুঝতে ও উপলব্ধিকরণের প্রতিও তিনি মনোনিবেশ করেন। তিনি জানতে চান কেন কোনো উৎস তৈরি করা হয়, কোন প্রেক্ষিতে এ উৎসের ভাষা ও বিবরণ এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে প্রভৃতি প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন। এভাবে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত ইতিহাসের সঠিক তথ্যটি চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ করতেন। ২. উৎসদাতার নৈতিকতা অনুসন্ধান : র্যাংকে ইতিহাস রচনার জন্য শুধু উৎসের অনুসন্ধান করে ক্ষান্ত থাকেননি । যে ব্যক্তি ইতিহাসের উৎস বা তথ্য সরবরাহ করেছিল র্যাংকে তার ভাবাবেগ, যথার্থতা, ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে উৎসের সংশ্লিষ্ট তথ্য গ্রহণ করতেন। র্যাংকের কাঙ্ক্ষিত তথ্য যত ক্ষুদ্র ও নগণ্য হোক না কেন তিনি সম্পূর্ণভাবে যাচাইবাছাই না করে কখনও গ্রহণ করতেন না। আর এভাবেই তিনি সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন ।
উৎস ও তথ্যের সঠিকত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনি ঐতিহাসিকগণকে ভাবাবেগ, কল্পনা ও অনুমান নির্ভরতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান। ইতিহাসের সঠিক তথ্য সন্নিবেশের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এ লক্ষ্যে র্যাংকে বহুবার অস্ট্রিয়া ও ইতালি সফর করেন ।
৩. র্যাংকের নৈর্ব্যক্তিকতা অনুসরণ : ঐতিহাসিক র্যাংকে বলেন, উপযুক্ত পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ ও পরিচালনার মাধ্যমেই কেবলমাত্র ঐতিহাসিক সত্যকে উদঘাটন সম্ভব। তারপরও তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও যুগ সমসাময়িক আবেগ, অনুভূতি প্রভৃতি দ্বারা কমবেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফলে ইতিহাসের গতিপথে রদবদল ঘটে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, যদি সঠিকভাবে উৎস প্রণেতার অথবা তথ্যের ভাবাবেগকে শনাক্ত করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র সঠিক ইতিহাস লেখা সম্ভব হয়। কোনো ঐতিহাসিক যে যুগের ইতিহাস রচনা করেন তাকে অবশ্যই সে যুগের সমকালীন ভাবধারা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হবে। কোনো ঐতিহাসিক তার সময়কার যুগধর্মের বৈশিষ্ট্য ও সংস্কারমূলক কাজের দ্বারা অতীত প্রেক্ষিত মূল্যায়ন করেন না। তিনি অতীত প্রেক্ষিতকে অতীতের প্রেক্ষাপটেই বিচারবিশ্লেষণ করে ইতিহাস লেখার জন্য ঐতিহাসিকদের অনুরোধ করেন। এজন্য ঐতিহাসিকদের ভাবনা জগৎকে অতীতের প্রেক্ষাপটের আলোকে তৈরি করার জন্য পরামর্শ দেন।
৪. ভাবাবেগ গবেষণা : সঠিক ইতিহাস রচনার জন্য তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি বিশ্লেষিত তথ্যের ঐ ইতিহাসের আবেগ, অনুভূতি তথা ভাবাবেগ নির্ণয়ের ওপর র্যাংকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি যৌক্তিকভাবে বলেন, যদি সঠিকভাবে ভাবাবেগকে শনাক্ত করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র সঠিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব, অন্যথায় নয়। কোনো ঐতিহাসিক যে যুগের ইতিহাস রচনা করবেন বলে মনস্থির করেছেন তাকে ইতিহাসের সমসাময়িককালের ভাবধারা যথার্থভাবে উপলব্ধি করায় সক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো ঐতিহাসিক তার সময়কার চিন্তাচেতনার মানদণ্ড ও সংস্কারমূলক কর্মের দ্বারা অতীত প্রেক্ষিত মূল্যায়ন করবেন। তিনি ইতিহাসকে অতীতের প্রেক্ষাপটে ঐ সময়কার
স্থানকালপাত্রভেদে বিচার করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন ।
৫. ইতিহাস সেমিনার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা : সুষ্ঠুভাবে ইতিহাস চর্চা ও গবেষণার স্বার্থে লিওপোল্ড র্যাংকে ১৮৩৩ সালে ইতিহাস সেমিনার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। উনিশ শতকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার স্বরূপ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ সেমিনারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, লিওপোল্ড র্যাংকে উৎস ও তথ্যানুসন্ধানের যে নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন সে বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য ঐতিহাসিকদের যথাযথ জ্ঞান সরবরাহ করার জন্যই এ ইতিহাস সেমিনার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জ্ঞানীগুণী ও ঐতিহাসিকগণ র্যাংকের সেমিনারে এসে তথ্যানুসন্ধানের নব পদ্ধতি সম্পর্কে প্রায়োগিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। র্যাংক নিজেই এ সেমিনারের প্রশিক্ষকের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। তিনি জার্মানিতে যে সেমিনার প্রতিষ্ঠা করেন তা
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যাবৎ সমগ্র ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু সংখ্যক শিক্ষানবিস ঐতিহাসিককে নতুনভাবে ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত করে। র্যাংকের ইতিহাস সেমিনার হতে বিজ্ঞান ও নব দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করে ঐতিহাসিক সমাজ নব আঙ্গিকে সম্পূর্ণ সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে তথা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ইতিহাস লেখা শুরু করেন। এভাবে ইতিহাস সেমিনার ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার সাথে সাথে তার প্রভাব ও খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
৬. মূল্যায়ন : হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক এবং লিওপোল্ড ভন র্যাংকেকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় । ইতিহাসকে গভীরভাবে বুঝা, জানা, উপলব্ধি করা, উৎসানুসন্ধানের জন্য নিয়মানুগ তথা বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলের যথার্থ প্রয়োগ করা এবং সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়ায় ইতিহাস লিখন ও পঠনপাঠন প্রক্রিয়াকে আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব বলা হয়। দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার পর আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের উদ্ভব হলেও এক্ষেত্রে লিওপোল্ড ভন র্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে স্বীকৃত। কারণ তিনি শুধু উৎসের বর্ণনা জেনেই ক্ষান্ত হননি; বরং উৎসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণেও মনোযোগী হন। তিনি বলেন, উৎস ও' দলিল আমাদেরকে সে কথাই বলবে যা উৎসের নির্মাতা ও দলিলের স্রষ্টা উৎসের দ্বারা বলতে চান । এজন্য লিওপোল্ড র্যাংকে সর্বপ্রথম ইতিহাসের উৎসের পশ্চাদভূমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। মূলত এ বিষয়টি তাকে আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের সূচনাতে সহযোগিতা করে ৷
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাসে লিওপোল্ড ভন র্যাংকের অবদান অবিস্মরণীয়। র্যাংকের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্র ছিল বিশাল। পদ্ধতিগতভাবে তিনি ইতিহাসের রচনাতে যে পরিবর্তন আনয়ন করেছেন তা তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। তাকে ঊনবিংশ শতকের আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক হিসেবে লিওপোল্ড ভন র্যাংকেকে অভিহিত করা যথার্থ সার্থক হয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত