ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের দৃষ্টিভঙ্গিতে মার্কসীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর ৷

ভূমিকা : মার্কসবাদের অন্যতম রূপকার ছিলেন ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস। তাই তার দৃষ্টিতে মার্কসবাদী দর্শনের বৈশিষ্ট্য ইতিহাসে ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করে। প্রয়োগিক বিবেচনায় মার্কসবাদ হচ্ছে মালিক শ্রেণির তথা বুর্জোয়া শ্রেণির শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন তথা মজুরি দাসত্ব থেকে প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির মতবাদ। ব্যাপক পরিসরে মার্কসবাদ একটি বিশ্বদর্শন বলে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস মতামত ব্যক্ত করেন। এককথায় মার্কসীয় দর্শনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে এর যথার্থ স্বরূপ প্রকাশ করা দুঃসাধ্য । তাই তিনি এই দর্শনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে এর যথার্থ স্বরূপ ও প্রকৃতি বুঝানোর চেষ্টা করেন ।
• এঙ্গেলসের দৃষ্টিতে মার্কসীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে এঙ্গেলসের দৃষ্টিতে মার্কসীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো : ১. বামপন্থি শ্রেণিভুক্ত দর্শন : মার্কসীয় দর্শন হেগেলোত্তর কালের বামপন্থি শ্রেণিভুক্ত একটি দার্শনিক মতবাদ । হেগেলের মৃত্যুর পর হেগেলের মতবাদকে রক্ষণশীলভাবে প্রয়োগের পরিবর্তে যারা প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন মার্কসবাদী দর্শন এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ।
২. বস্তুবাদী দর্শন : মার্কসবাদ দার্শনিক হেগেলের পদ্ধতিকে এক বিশেষ দার্শনিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেন । হেগেল তার দ্বান্দ্বিক মতবাদকে ব্যবহার করেন ভাববাদী দর্শনের ক্ষেত্রে, কিন্তু মার্কসবাদ সেটাকে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন।
৩. দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ : মার্কসবাদী দর্শন বস্তুবাদী দর্শন নামেও খ্যাত। এ মতবাদ সর্বপ্রকার ভাববাদী দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী নীতির মাধ্যমে এ মতবাদ সবকিছু ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পায়। এ মতবাদ ইতিহাস; সমাজভুক্ত, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুকেই বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে ।
৪. বিজ্ঞানভিত্তিক : মার্কসবাদ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক মতবাদ। এ মতবাদ এর সমসাময়িক সব বৈজ্ঞানিক উন্নতির প্রতি বিশেষ সচেতনতা থেকে উদ্ভূত। বিজ্ঞানের মতে, মার্কসবাদী দর্শনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞানের মতো পর্যবেক্ষণ ও পদ্ধতিগতভাবে অনুসন্ধান কার্য এ দর্শনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলেই পরিগণিত হয় । ৫. বস্তু ও চেতনার একাত্মতা : মার্কসীয় দর্শন দেহ-মন, অর্থাৎ বস্তু ও চেতনা উভয়ের স্বতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তবে এই বৈশিষ্ট্য স্বীকার করলেও মার্কসবাদের উৎপত্তির ক্ষেত্রে দেহ ও মন উভয়ের মধ্যে একাত্মতা অবশ্যই বিদ্যমান ছিল ।
৬. গতিময়তা : মার্কসবাদী দর্শন বস্তুতান্ত্রিক গতিবিধির পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। মার্কসবাদ অনুসারে জগৎ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ও চলমান। ঠিক তেমনিভাবে এটি মানুষের ইতিহাস, চিন্তাচেতনা ও মানবজাতির বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সবসময় পরিবর্তন হয়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক হিরাক্রিটাস এবং হেগেলোত্তরকালের ফরাসি দার্শনিক হেনরি বার্গসোর মতে, মার্কবাদ পরিবর্তনকে জগতের প্রকৃত সত্য বলে মনে করে ।
৭. বিবর্তনবাদে বিশ্বাস : মার্কসীয় দর্শন বিবর্তনবাদের একান্ত বিশ্বাসী। এ মতবাদের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে, জগৎ প্রক্রিয়া কোনো এক বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ স্রষ্টার সৃষ্টি নয়; বরং এটা বিবর্তনের মাধ্যমকে সর্বদা এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় উন্নীত হচ্ছে। বিবর্তনবাদের মধ্যে মার্কসবাদ উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদী মতকে সমর্থন করে। এ মতবাদ অনুসারে পূর্ববর্তী অবস্থার আবশ্যিক ফল পরবর্তী অবস্থার মধ্যে নিহিত। কিন্তু এই দুই অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। কোনো বিবর্তিত অবস্থাই তার পূর্ববর্তী অবস্থার নিছক রূপান্তর নয়, বরং ভিন্ন কিছু নির্দেশ করতে পারে। বিবর্তন তাই একটি উন্মেষিত গুণ ।
মার্কসবাদ একটি বিপ্লবী বিশ্বদর্শন : মার্কসবাদ সমসাময়িক অন্যান্য মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তত্ত্বটি পূর্ববর্তী সব দর্শন ও তত্ত্বকে অকার্যকর আখ্যা দিয়ে মানুষদের মনে বিপ্লবের স্ফুরণ সৃষ্টি করেছে। এই দর্শন
শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব প্রদান করে ধনিক বা পুঁজির মালিক শ্রেণির সাথে পুঁজিহীন শ্রেণির দ্বন্দ্বকে সামনে মুখোমুখি করে তোলে ।
ইতঃপূর্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে। মার্কসবাদ আজ সে ব্যবস্থায় বিতর্ক বা দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে।
গ. দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সাধারণ সূত্র : মার্কসবাদ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের নীতিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর কিছু সাধারণ সূত্র নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। এই সূত্রগুলোকে ৩টি শিরোনামে ব্যক্ত করা হয় ।
১ পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তনে উত্তরণের প্রচেষ্টা ।
২. বিরোধে ঐক্য ও দ্বন্দ্বের নিয়ম প্ৰতিষ্ঠা ।
৩. নিষেধনের নিষেধন নিয়ম অনুসরণ ।
ঘ. সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে দর্শন : সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ কিংবা সাম্যবাদকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কস এঙ্গেলসকে অনেক বেশি সহযোগিতা করেন। মার্কস এঙ্গেলস তত্ত্বের অনেক কিছু সম্পর্কেই এঙ্গেলস তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি মার্কসবাদে তুলে ধরেছেন ।
The Communist Manifesto' কে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ইশতেহার বলা হলেও অবশ্যিকভাবে তাতে এঙ্গেলসের অবদানকেও স্বীকার করতে হয়। এতে দর্শনে প্রভাব অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনে এটি অনেকটা দৃঢ়ভাবে সমাজকে অনুপ্রাণিত করতে পারে ।
ঙ. মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের দর্শন : 'The Communist Manifecto'তে মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানেও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে শোষণ মুক্তির সংগ্রামের অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে। মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের পূর্ণ বিকাশে এঙ্গেলস যথার্থ কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি তার 'The Origin of the Family, Private Property and the State' গ্রন্থ রচনা করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কসীয় ব্যাখ্যা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্র একশ্রেণি কর্তৃক অপর শ্রেণিকে শোষণ করার এক অনবদ্য হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই নয় এ ধারণাকে এঙ্গেলস পরিপূর্ণভাবে রূপদান করেন। মার্কস এর মৃত্যুর পর ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস মার্কসবাদের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কার্ল মার্কসের দর্শনের সাথে এঙ্গেলসের দর্শন অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ বা ক্ষেত্র বিশেষ একই রকম। এ কারণে মার্কস-এঙ্গেলসের দর্শনে এঙ্গেলস এর দর্শনের রূপরেখা খুঁজে পাওয়া যায়। এঙ্গেলস এর দর্শন দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে আজও সার্থকভাবে চর্চা করা হচ্ছে সারা বিশ্বময় ।
এঙ্গেলসের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ তত্ত্বের ব্যাখ্যা উল্লেখ কর ।
উত্তর ভূমিকা : মনকে বস্তুর জটিলতা বিকাশের বিশেষ পর্যায় বিবেচনা করে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের যাত্রা শুরু হয় । বস্তুর সাথে মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। জীবিকা যেমন ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে তেমনি ব্যক্তি তার মস্তিষ্ক ও মনের চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে বাস্তব জীবিকার পরিবর্তন করার সক্ষমতা বহন করে। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নীতির ওপরই মার্কসীয় দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত হয়ে আছে ।
• ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের বিখ্যাত দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা : দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হলো এমন একটি দার্শনিক মতবাদ যেখানে বস্তুবাদ হলো দার্শনিক ভিত্তি ও দৃষ্টভঙ্গি এবং দ্বান্দ্বিকতা হলো তার অন্যতম পদ্ধতি। মার্কসবাদীরা মনে করেন, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হচ্ছে এক বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা দর্শনের বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে এবং বস্তুগত ও জীবনের সাধারণ নিয়মাবলি আবিষ্কারের চেষ্টা চালায়। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে ব্যাখ্যা করে এঙ্গেলস বলেন, প্রচলিত যান্ত্ৰিক বস্তুবাদের সাথে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ মনকে যেমন বস্তুর অতিরিক্ত কোনো স্বাধীন সত্তা বলে মেনে নেয় না, আবার মনকে পুরোপুরি অস্বীকারও করতে পারে না। মনকে বস্তুর জটিল বিকাশের একটি বিশেষ পর্যায়রূপে বিবেচনা করে। বস্তুর সাথে মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন । সমাজের বিকাশে মানুষের জীবিকার ভূমিকা প্রধানভাবে প্রতীয়মান হয়। তবে ইতিহাসে ব্যক্তি বিশেষের ভূমিকাকেও এঙ্গেলস স্বীকার করে থাকেন।
প্রকৃত অর্থে মার্কসীয় দর্শন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নামক এক যুগান্তকারী বস্তুবাদী দর্শনের জন্ম দেয়। ফলে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী নীতির ওপরই মার্কসীয় দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই অনেকে মার্কসীয় দর্শন বলতে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে বুঝে থাকেন। এ সম্পর্কে Afanasyer বলেন, "The Philosophy of Marxism is called dialectical Materialism."
আমরা বলে থাকি, বস্তুবাদ অনুসারে বস্তুই এই জগতের প্রধান উপাদান। মার্কসীয় দার্শনিকগণ জগতের মূলে জড়বাদ বা বস্তুবাদকেই একান্তভাবে অনুমোদন করে থাকে। কোনো অজড় আধ্যাত্মিক সত্তার ওপর এ মতবাদের কোনো নির্ভরশীলতা তারা স্বীকার করেন না। তবে মার্কসীয় দর্শনে বস্তুবাদ একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটা এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে সবকিছু কেবল প্রাকৃতিক বস্তু ও ঘটনার জগৎ এর মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সব কিছুকেই অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ নির্ভর করার প্রয়াস চালানো হয় ।
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সাধারণ সূত্র : মার্কসবাদ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর কিছু সাধারণ সূত্র নির্ণয় করেন । মার্কসবাদের মতে, এটি যুক্তিনির্ভর পদ্ধতি এবং এ যৌক্তিক নিয়মের ভিত্তির ওপর সমগ্র মার্কসবাদী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত। ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এই সূত্রকে তিনটি শিরোনামে তুলে ধরেন। এই তিনটি সূত্র নিম্নরূপ :
ক. পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তনে উত্তরণের চেষ্টা করা ।
খ. বিরোধের ঐক্য ও দ্বন্দ্বের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা । গ. নিষেধনের নিষেধন নিয়ম অনুসরণ করা ৷
নিম্নে এ সূত্র তিনটির ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো :
ক. পরিমাণগত পরিবর্তন গুণগত পরিবর্তনে উত্তরণ : এই নিয়মটির অর্থ হলো গুণগত পরিবর্তন শুধু গুণবাচক উপাদান দ্বারা সংঘটিত হয় না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে পরিমাণগত পরিবর্তন ও গুণগত পরিবর্তন সংঘটিত করতে পারে। মার্কসবাদ বুঝাতে চায় যে, কোনোকিছুর পরিবর্তন হলে তা এমন একটি অবস্থায় উন্নীত হতে পারে, যে অবস্থা থেকে আকস্মিকভাবে ভিন্ন গুণসম্পন্ন ফলাফলও বের হয়ে আসতে পারে ।
হেগেলের সূত্র ধরে মার্কসবাদ সার্বিকভাবে পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত বিষয়টি অনুমোদন করে ।
জড়জগৎ, প্রাণী, উদ্ভিদ, সমাজ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই মার্কসীয় দর্শন বুঝাতে চায় যে, এসবের বিকাশের মূলে দ্বান্দ্বিক নিয়ম কাজ করে এবং এই দ্বান্দ্বিক নিয়মের একটি বিশিষ্ট দিক হলো পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তনের উত্তরণ ঘটানো। এঙ্গেলস তার বিখ্যাত 'Anti During' এবং 'Dialecties of Nature' এ বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করেন ।
খ. বিরোধে ঐক্য ও দ্বন্দ্বের নিয়ম : মার্কসবাদের মতে, জগতের প্রতিটি বস্তু, ঘটনা বা বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বহুবিধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক সমাহার। কোনোকিছুই একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত তা বলা যায় না। মার্কসবাদ অনুসারে দ্বন্দ্ব লড়াইয়ের ফলে এদের মধ্যে সংঘটিত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ামূলক যে সম্বন্ধ থাকে তাকে বলা হয় বিরুদ্ধতা। তবে এটিই বস্তুজগতের শুধুমাত্র বাস্তবতা নয়। এই বিরুদ্ধের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াসও দেখা যায় । সব বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের দ্বন্দ্ব সংঘাতমূলক বিরুদ্ধতার মাধ্যমেও একটা সমন্বয়মূলক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ দ্বন্দ্ব বা বিরোধিতার মধ্যে রয়েছে ঐক্য এবং ঐক্যের মধ্যেই আবার রয়েছে বিরোধিতা বা দ্বন্দ্ব। এটাই জাগতিক নিয়মের বাস্তবতা।
গ. নিষেধনের নিষেধন নিয়ম : দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো নিষেধনের নিষেধন নিয়ম। মার্কসবাদীরা বুঝাতে চান যে, এই প্রক্রিয়ায় মূলত পরিবর্তন বা বিকাশ পূর্বের চেয়ে কম সময়ে সংঘটিত হয়। নিষেধনের নিষেধন এর সাধারণ অর্থ হলো দুইবার নিষেধন বা কোনো বিষয়ে দুইবার অস্বীকৃত হওয়া। বিকাশের একপর্যায়ে দুইবার নিষেধিত বা অস্বীকৃত হয়ে থাকে বলে মার্কসবাদ যে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তাই নিষেধনের নিষেধন নিয়ম। মার্কসবাদীগণ বুঝাতে চান যে, আকারগত যুক্তিবিদ্যার নিষেধনের নিষেধন নিয়মের সাথে এই নিয়ম একত্রিত হয়। এটি একটি ভিন্নতর যৌক্তিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক যুগের সমাজতান্ত্রিক ও দার্শনিক হিসেবে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস একটি বিখ্যাত নাম। তার দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী তত্ত্ব। এর মাধ্যমে মনের দ্বান্দ্বিকতা জানা, মানবজীবনের বস্তুবাদী জানা এবং সে অনুযায়ী মানবজীবনের বস্তুবাদী দিক উন্মুক্ত করার পথ তৈরি হয়। আর এজন্যই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ইতিহাসে এতটা গুরুত্বের দাবি রাখে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]