ইতিহাসের সংজ্ঞা দাও। ইতিহাসের কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার অতীত কার্যক্রমের ধারাবাহিক ও প্রামাণ্য দলিল হলো ইতিহাস। ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে মানবসমাজের যাবতীয় কর্মকাণ্ড, চিন্তাচেতনা ও জীবনযাত্রার অগ্রগতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। তাছাড়া ইতিহাস পাঠ চেতনাবোধ জাগ্রত করে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। বলা হয়ে থাকে "Man can do what man has done " অর্থাৎ, মানুষ যা করেছে মানুষ তাই করতে পারে। মূলত মানুষের অতীত কার্যাবলির নিরিখে মানুষ কী এবং কী করতে সক্ষম তার দিকনির্দেশনাই ইতিহাস দিয়ে থাকে।
ইতিহাসের সংজ্ঞা : নিম্নে ইতিহাসের সংজ্ঞা দেওয়া হলো :
সাধারণ সংজ্ঞা : ইতিহাস কী তা এককথায় বলা কঠিন। কারণ অনেক ঐতিহাসিক ইতিহাসের সংজ্ঞা বিষয়ে নিজেদের মতো করে মত দিয়েছেন। তাই সহজেই নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় পৌঁছা যায় না। তবে পণ্ডিতগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতসমূহ বিশ্লেষণ করে ইতিহাসের একটি সাধারণ সংজ্ঞা তৈরি করা সম্ভব। অতীতে যা কিছু ঘটেছে সাধারণভাবে তাকেই ইতিহাস বলা হয়, কিন্তু অতীতের সবকিছুকেই ঢালাওভাবে ইতিহাস বলা যায় না। শুধুমাত্র অতীতের যেসব ঘটনা প্রবাহ মানুষের দ্বারা নির্মিত ও সংঘটিত বলে জানা যায় তার সত্যনিষ্ঠ লিখিত বিবরণকেই ইতিহাস বলা যায় ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : ইতিহাসের বিষয়বস্তু বা মাত্রাগত ভিন্নতার কারণে একেক ঐতিহাসিক একেকভাবে ইতিহাসের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । নিম্নে অন্যতম কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো :
ঐতিহাসিক জনসনের (Johnson) মতে, “যা কিছু ঘটে তাই ইতিহাস; যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়। তাই বলা যায়, মানবসমাজের অনন্ত ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের (R. C. Majumdar) মতে, “মানবসমাজের অতীত কার্যাবলির পূর্ণ বিবরণীই হলো ইতিহাস ।” ঐতিহাসিক র‍্যাপসনের (Rapson) মতে, “ইতিহাস হলো ঘটনার বৈজ্ঞানিক এবং ধারাবাহিক বর্ণনা ।” ইতিহাসবেত্তা ই. এইচ. কারের (E. H. Carr) মতে, “ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।" ইংরেজ ইতিহাসবেত্তা আর্নল্ড টয়েনবির (Amold Toynbee) মতে, “মানবসমাজের সার্বিক ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।”
↑ ইতিহাসের কার্যাবলি : মানবজাতির অতীত কার্যাবলির ধারাবাহিক ও সময়ানুক্রমিক লিখিত বিবরণ হলো ইতিহাস । ইতিহাস মানুষকে অতীত সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে। যেকোনো জাতির বা রাষ্ট্রের উত্থানপতনের তথ্য আমাদেরকে ইতিহাস সরবরাহ করে। এ কারণে জ্ঞানের অন্য যেকোনো শাখার চেয়ে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করা কার্যাবলি (মানুষ ও তার পরিবেশের সাথে সম্পর্কের বিশেষ দিক হিসেবে) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে ইতিহাসের কার্যাবলি ব্যাখ্যা করা হলো :
১. অতীতের দর্পণ : ইতিহাসকে মানবজাতি ও তার পরিবেশের অতীতের দর্পণ হিসেবে অভিহিত করা যায়। দর্পণের দিকে তাকালে যেমন স্বীয় প্রতিবিম্ব স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায়, ইতিহাসের দিকে তাকালেও তেমনি ইতিহাস আমাদের অতীত স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবেই অতীতের শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সাহায্য করে ।
২. সভ্যতার সোপান : মানুষের অতীত কর্মের খতিয়ান হিসেবে ইতিহাসকে সভ্যতার সোপান বলে গণ্য করা যায়। আদিম গুহাবাসী মানুষের জীবন থেকে শুরু করে নিকট অতীত পর্যন্ত বর্ণনা করে থাকে। যা মানুষ ও তার পরিবেশ সম্পর্কে আমাদেরকে আরও গভীরভাবে জানতে সাহায্য করে ।
৩. ইতিবৃত্তের সংরক্ষক : মানুষ ও তার পরিবেশের ইতিবৃত্তের সংরক্ষক হিসেবে ইতিহাস গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। ইতিহাস সব সভ্যতার ক্রমবিবর্তন, সব জাতির উত্থান বিকাশ ও পতন এবং সব রাজাবাদশার যাবতীয় কর্মের বিবরণ সংরক্ষণ করে আমাদের সরবরাহ করে ।
৪. বর্তমানকে জানায় : ইতিহাস অতীতের ঘটনা হলেও এটি মৃত নয়; বরং জীবিত। ইতিহাস জীবিত অতীত হিসেবে বর্তমানের মধ্যে বেঁচে থাকে । তাই মানুষ ও তার পরিবেশের বর্তমানকে উপলব্ধিকরণে ইতিহাস গুরুদায়িত্ব পালন করে। ৫. সামাজিক স্থিতিশীলতা : একটি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। ইতিহাসের পাতায় স্থান পাওয়া অগণিত সমাজের মধ্যে কোন কোন সমাজ কেন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল, আর কোন কোন সমাজ স্থিতিশীল ছিল এ সম্পর্কে জ্ঞানদানের মাধ্যমে ইতিহাস সামাজিক স্থিতিশীলতা দান করে ।
৬. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যাবলি : ইতিহাস মানুষ ও তার পরিবেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে কার্যাবলি সম্পন্ন করে। কোন শাসক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ভারসাম্য ও প্রশাসনিক উৎকর্ষ সাধন করেছেন ইতিহাস তা সরবরাহ করে । ইতিহাস থেকে যথাযথ শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করা যায় ।
৭. সচেতনতা বৃদ্ধি : ইতিহাসের জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে। বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর উত্থানপতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালোমন্দের পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে ।
৮. জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি : অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনায় মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ-জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে ।
,
৯. জ্ঞানের বিকাশ সাধন : সার্বিকভাবে আমাদের জ্ঞানভান্ডারে জ্ঞান সঞ্চারণের মাধ্যমে ইতিহাস তার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাদি সম্পন্ন করে । ইতিহাসে সভ্যতার উত্থানপতন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিভিন্ন সংস্কার, আন্দোলন, বিপ্লব, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে । যা আমাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আদি মানবসমাজ, সভ্যতার ক্রমবিবর্তন, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইত্যাদি সব দিক থেকেই মানুষ ও তার পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ইতিহাস তার কার্যাবলি সম্পন্ন করে । আর এজন্যই J.E. Swain বলেন, "History has an important role to play in the development of civilization".

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]