প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্যে উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : মানব ইতিহাসের প্রায় বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে । প্রাগৈতিহাসিক কাল মূলত মানুষের উদ্ভব থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উৎস প্রাপ্তির সময়কাল পর্যন্ত ধরে নেওয়া হয়েছে। সাধারণত লিখনপদ্ধতি উদ্ভাবন পূর্ববর্তী সময়কে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে মনে করা হয় । এ যুগের কতিপয় সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য : যে সময়টাতে মানুষের লিখিত ইতিহাসের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না, সেই সময়কে প্রাগৈতিহাসিক যুগ নামে অভিহিত করা হয় । প্রাগৈতিহাসিক যুগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য হলো :
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রধান অবলম্বন হিসেবে পাথর ব্যবহার করতো ।
২. বন্য ও হিংস্র পশুপাখির আক্রমণ হতে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, মৎস্য শিকার, বন্যপশু শিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে পাথরের বেশি ব্যবহার ছিল ।
৩. এসময়ে মানুষের মধ্যে লিখন জ্ঞান ছিল না । ফলে তাদের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস রচনা করা হয় । ৪. গুহাচিত্র প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্যতম একটি শিল্প ছিল। এর মাধ্যমেও প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাসের কিছুটা পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ।
৫. এ যুগের শেষের দিকে মানুষ কৃষিকাজের উদ্ভাবন করে। যাকে নবোপলীয় বিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়। ফলে মানুষ খাদ্য উৎপাদনে আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে ।
৬. এসময়ে মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখে। পাথরের সাথে পাথরের এবং কাঠের সাথে কাঠের ঘর্ষণের মাধ্যমে মানুষ আগুন জ্বালানোর কৌশল আয়ত্ত করে। ফলে এসময় কোনো শিকারকে পুড়িয়ে খাবারের প্রচলন শুরু হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান আধুনিক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আগুনের ব্যবহার আমরা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শিখেছি। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত উপাদান না থাকলেও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, ফসিল প্রভৃতি থেকে এ সময়কালের ইতিহাস উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সুতরাং প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস বর্তমান ইতিহাসেও অনেক কিছুর নবতর সংযোজন ঘটিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে ।

প্রাগৈতিহাসিক যুগকে পাথরের যুগ বলা হয় কেন?

উত্তর ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে আমরা এমন একটি সুদীর্ঘ সময়কালকে বুঝে থাকি যার সূচনা হয় মূলত পৃথিবীতে মানুষের বসতি স্থাপন হতে এবং শেষ হয় আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর পূর্বে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, একেবারে আদিকাল থেকে শুরু করে যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৫ হাজার বছর পূর্বে মানুষের সর্বপ্রথম লিখনপদ্ধতি আবিষ্কার ও নগরভিত্তিক সভ্যতার গোড়াপত্তন পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে অভিহিত করা হয় ৷
প্রাগৈতিহাসিক যুগকে পাথরের যুগ বলার কারণ : প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ খাদ্যের উৎপাদন করতে জানত না । যার কারণে শিকার ছিল তাদের প্রধান পেশা। মানুষ প্রকৃতি থেকে খাদ্যসংগ্রহের উদ্দেশ্যে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতো। শিকারের সুবিধার্থে মানুষ হাতিয়ার আবিষ্কার করে। এসময় হাতিয়ার বানানোর প্রধান উপকরণ ছিল পাথর এসময়ে মানুষের শ্রম ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পাথর। বস্তুত মানুষ এসময় বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন হিসেবে পাথর সংগ্রহ, পাথর ভাঙা, পাথর কাটা ও ঘষেমেজে পাথরকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে । প্রকৃতপক্ষে, বন্য ও হিংস্র পশুর আক্রমণ হতে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, মৎস শিকার, বন্যপশু শিকার, গাছে বসবাসরত পশুপাখি শিকার, পশুর মাংস বিচ্ছিন্ন করা অর্থাৎ কাটার ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহারই ছিল এ যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ কারণে প্রাগৈতিহাসিক যুগের অপর নাম দেওয়া হয়েছে পাথর বা প্রস্তর যুগ। তবে একথা সর্বজন স্বীকৃত যে প্রস্তর যুগের শেষ পর্যায়ে মানুষ কৃষিও আবিষ্কারের মাধ্যমে জীবন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার প্রয়াস পায় ৷ উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে তখনকার যুগে মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কে অনুমান করা যায়। মূলত পাথরনির্ভর শ্রম ও জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ায় প্রাগৈতিহাসিক যুগকে প্রস্তর যুগ বা পাথরের যুগ বলে অভিহিত করা হয় ।

উত্তর ভূমিকা : সভ্যতার শুরুতে মানুষের ছিল রন্যদশা। সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষ যতই সামনের দিকে এগিয়েছে ততই নতুন জিনিস এবং প্রয়োজনীয় হাতিয়ার আবিষ্কার করতে শিখেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ইতিহাস চর্চায় কালক্রমকে কয়েকভাগে ভাগ করেছেন । তাদের এ শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে প্রাচীন প্রস্তর যুগ একটি । এ যুগের সভ্যতাকে হাতকুঠার সংস্কৃতি বলা হয় ।
• প্রাচীন প্রস্তর যুগ : প্রাচীন প্রস্তর যুগ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রথম পর্যায়কে পুরোপলীয় যুগ বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগ ছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটি দীর্ঘতম পর্যায়। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষের জীবনধারা অব্যাহত আছে। এজন্য প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময় নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। অনেকে দশ লাখ বছর পূর্বে বলে অনুমান করে থাকেন।
খ. প্রাচীন প্রস্তর যুগের শ্রেণিবিন্যাস : প্রাচীন প্রস্তর যুগকে সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় । যথা :
১. নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগ : এ যুগের সময়কাল তিন লাখ হতে এক লাখ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এসময়ে জনগোষ্ঠীর মধ্যে জার্মান হাইডেলবার্গ মানব, ইন্দোনেশিয়ার জাভা মানব ও চীনের পিকিং মানব ছিল অন্যতম। এসময়ে ব্যবহৃত পাথরগুলো ছিল অমসৃণ ও ভোঁতা প্রকৃতির ।
২. মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগ : খ্রিস্টপূর্ব এক লাখ অব্দ থেকে ত্রিশ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এ যুগের অবস্থান। জার্মানির নিয়ান্ডারথাল মানব এ যুগের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী। শিকার সহজীকরণের লক্ষ্যে পাথর ঘষেমেজে কিছুটা মসৃণ করার প্রবণতা এ যুগে লক্ষ করা যায়।
৩. উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ : এ যুগটির ব্যাপ্তিকাল ছিল ত্রিশ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে দশ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত । এসময় ক্রোম্যাগনন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসময়ে শিকারকে আরও সহজ করার লক্ষ্যে পাথরকে সূচালো ও ধারালো করার প্রবণতা লক্ষ করা যায় ৷
গ. প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : এ যুগের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১. মানবদেহের গঠনপ্রকৃতিতে ক্রম পরিবর্তনের সূচনা ঘটে,
২. মানুষ খাদ্যসংগ্রহ/শিকারের জন্য পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে,
৩. সমাজব্যবস্থা ছিল প্রধানত মাতৃতান্ত্রিক,
৪. সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রাচীন প্রস্তর বা পুরোপলীয় যুগে বিদ্যমান ছিল ও
৫. এসময় মানুষ যাযাবর জীবনযাপন করতো বলে স্থায়ী আবাসস্থল তৈরি করেনি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পুরোপলীয় যুগ বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ হচ্ছে প্রস্তর যুগের প্রথম ধাপ। এ যুগে মানুষ তেমন উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। শুধু খাদ্যসংগ্রহ, ফলমূলসংগ্রহ, মাছধরা এবং জীবজন্তুর শিকার ইত্যাদি নিয়ে তাদের সময় কেটেছে। তবে এগুলোর জন্য কিছু মোটা ও অমসৃণ অস্ত্রশস্ত্রও তারা তৈরি করতে পেরেছে। ফলে অনেক ধীরগতিতে হলেও সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]