পিকিং মানব সম্পর্কে কী জান?

উত্তর ভূমিকা : আধুনিক এশিয়া মহাদেশের প্রাগৈতিহাসিক মানবগোষ্ঠীর মধ্যে পিকিং মানবগোষ্ঠীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হয়, পিকিং মানবরা বর্তমান আধুনিক মানবগোষ্ঠীর মতোই ছিল। এদের খাদ্যাভ্যাস, জীবন প্রণালি প্রভৃতি থেকেই দীর্ঘ বিবর্তনের ফলে আধুনিক চৈনিক সভ্যতার জন্ম নিয়েছে। মানব সভ্যতা বিকাশে পিকিং মানবের অস্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ।
● পিকিং মানব : পিকিং মানব সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :
১. পিকিং মানব পরিচিতি : মানবজাতির বিবর্তনের অগ্রযাত্রায় জাভা মানব, খাড়া মানব প্রভৃতির মতোই এক মনুষ্য প্রজাতি হলো পিকিং মানব । চীনের পিকিং নামক অঞ্চলে এদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে এদেরকে পিকিং মানব নামে অভিহিত করা হয় । প্রায় সাত লাখ বছর আগের এ মনুষ্য প্রজাতির আবিষ্কার হয় । এরা এশিয়াতে প্রাচীন মানবের বসবাসের তথ্যকেই ইঙ্গিত করে । ২. পিকিং মানবের আবিষ্কার : ১৯২১ সালে সুইডেনের প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ভূতত্ত্ববিদ অ্যান্ডারসন চীন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। তিনি লোকমুখে শুনলেন রাজধানী পিকিংয়ের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়ে জীবাশ্ম ও জীবজন্তুর হাড়গোড় পাওয়া গেছে। অ্যান্ডারসন সেখানে ছুটে গেলেন। জরিপ চালিয়ে তিনি প্রাণীর হাড়গোড়ের সাথে খুঁজে পেলেন বিশেষ ধরনের ফোয়ার্জ পাথর। ১৯২৩ সালে একই স্থানে তিনি খুঁজে পেলেন প্রাচীন মানুষের দুটি দাঁত। ১৯২৬ সালে সুইডেনের রাজপুত্রের চীন সফরকালে এক সংবর্ধনা সভায় অ্যান্ডারসন নিজের আবিষ্কার তুলে ধরেন। কানাডার প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. ব্লাকের পাওয়া দুটি দাঁতের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হলেন এগুলো প্রকৃতপক্ষেই আদিম মানুষের । তিনি এর নাম দেন 'Sinanthropus Pekinensis'. আর আমেরিকার ভূতত্ত্ববিদ A. William Grabae নাম দিলেন পিকিং মানব ।
I
৩. পিকিং মানবের প্রকৃতি : পিকিং মানব আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের মতোই ছিল । পিকিং মানবেরা অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির ছিল । পিকিংদের মধ্যে পুরুষের উচ্চতা ছিল ১৫৬ সে. মি. এবং মেয়েদের ১৪৪ সে. মি. । এদের মাথার আকৃতি ছিল চ্যাপ্টা কম উচ্চতার এবং নিচের চোয়ালের হাড় ছিল সামনের দিকে। এরা চাষাবাদ জানত না। গাছের ফলমূল এবং বন্যপ্রাণী শিকার ছিল এদের খাবারের প্রধান উৎস। তারা বন্যপ্রাণীর চামড়া পরত এবং খাবার হিসেবে ফলমূল মজুত করে রাখত। এরা গুহায় বাস করতো। তাদের আয়ুষ্কাল ছিল আধুনিক মানুষের তুলনায় অনেক কম। মাত্র ৪.৫% লোক ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচত। আর ১৪ বছরের নিচে মারা যেত ৬৮.২% লোক । পিকিংদের মধ্যে পুরুষরা শিকার করতো, আর মেয়েরা গৃহস্থালির কাজ করতো । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিবর্তন ধারায় পিকিং মানবের আবিষ্কারের ফলে মানবজাতির প্রাচীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ রহস্যের দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। একই সাথে এশিয়াতে প্রাচীন সমৃদ্ধ মানব সভ্যতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। পিকিং মানবের প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রাকৃতিক পরিবেশও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক শক্তির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত এ কারণেই অধিকাংশ মানুষ অপ্রাপ্ত বয়সেই মৃত্যুবরণ করেছে ।

নিয়ানডারথাল মানব সম্পর্কে যা জান লেখ ৷

উত্তর ভূমিকা : এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপেও প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আবিষ্কৃত হয়। তাদের মধ্যে নিয়ানডারথাল মানবগোষ্ঠী অন্যতম। আধুনিক জার্মানিতে আবিষ্কৃত এ মানবগোষ্ঠী অনেকটা হিংস্রভাবে জীবনযাপন করতো। তবে তাদের অনেকেই আবার অস্ত্রচালনা, আগুনের ব্যবহারের মতো কিছু সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে মানব সভ্যতার বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয় ।
নিয়ানডারথাল মানব : নিম্নে নিয়ানডারথাল মানব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. নিয়ানডারথাল মানবের আবিষ্কার : মানবজাতির বিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট জাভা মানব, পিকিং মানব প্রভৃতির সমগোত্রীয় আরেকটি নাম নিয়ানডারথাল মানব। মানুষের এরূপ পরিবর্তনের ইতিহাসে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মতো জার্মানির নিয়ানডার গিরিপথের নিকটস্থ গুহায় আবিষ্কৃত হয় নিয়ানডারথাল মানবের ফসিল। ধারণা করা হয় যে, এক লাখ বছর পূর্বে এরা পৃথিবীতে বসবাস করতো ।
২. নিয়ানডারথাল মানবের প্রকৃতি : ১৮৫৬ সালে জার্মানিতে প্রথম নিয়ানডারথাল মানবের মূর্তি আবিষ্কৃত হয় । এরা পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস করতো। নিয়ানডারথাল মানুষের গড় উচ্চতা আধুনিক মানুষের চেয়ে অনেক কম ছিল। তাদের পুরুষদের গড় উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ১ ইঞি থেকে ৫ ফুট ৫ ইঞি। তারা আকারে অনেক ছোট প্রকৃতির ছিল। পুরাতাত্ত্বিকগণ বলেন, এরা আকারে অনেক ছোট হলেও এদের হাত-পা অনেক শক্ত ছিল। জাভা মানবের মতো এদের মুখের হাড় সামনের দিকে প্রসারিত ছিল। তাদের দাঁত অনেক বড় ছিল এবং তারা কিছুটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত ।
৩. নিয়ানডারথাল মানবের জীবন ব্যবস্থা : সুইডিশ বিজ্ঞানী ১৯৯৭ সালে নিয়ানডারথাল মানবের ওপর গবেষণা করে মত দেন, তারা শিম্পাঞ্জির মতো আগুনের ব্যবহার জানত, অস্ত্র বানাত ও অস্পষ্ট কথাও বলতে পারত। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্রাইটনের জেমস কোল বলেন, নিয়ানডারথাল মানবগোষ্ঠী স্বজাতিকে ভক্ষণ করতো । এর পিছনে কারণ ছিল যখন দেখা যেত ৮/১০ জন নিয়ানডারথাল মানুষ একটি বুনো গন্ডারের সাথে অথবা বুনো হাতির সাথে পেরে উঠছিল না তখন দেখা যায়, তারা নিজেরাই একে অপরকে শিকারের জন্য বেছে নিত। অন্যান্য প্রজাতিকে শিকারের চেয়ে নিজেদের মধ্যে শিকার করাই ছিল তখন অত্যন্ত সহজ কাজ। অনেক বিজ্ঞানী ব্রাইটন জেমসের মতকে অস্বীকার করলেও তার বিপরীতে তারা শক্ত কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেননি। তবে এ কথা বিবেচ্য যে, খাদ্য সংকটের কারণে নিয়ানডারথাল মানবজাতির মধ্যে এরূপ বিকৃত রুচির অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। নিয়ানডারথাল মানুষের আবাসস্থল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন যে, তারা ভাল্লুককে তাদের গুহা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে গুহাটিকে তাদের বাসস্থান বানাত। সময়ের বিবর্তনে নিয়ানডারথালদের অনেকেই আবার কুড়েঘরেও বসবাস করতো। নিয়ানডারথাল মানবরা আগুনের ব্যবহার রপ্ত করার কারণে অধিকাংশ সময়েই মৃতদেহ পুড়িয়ে খেত। যা ধীরে ধীরে তাদের স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নিয়ানডারথাল মানব মনুষ্য প্রজাতির আদি অবস্থানকেই প্রমাণ করে। নিয়ানডারথাল মানবজাতি কুড়েঘরে বসবাস, শিকারকে পুড়িয়ে ভক্ষণ করা প্রভৃতি কতিপয় ভালো গুণ অর্জন করেছিল। তার ধারাবাহিকতায় মানব সম্প্রদায় সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বিবর্তনের কল্যাণে মানবসমাজ আজকের আধুনিক অবস্থানে পৌঁছায় ৷
রামাপিথেকাস মানব সম্পর্কে যা জান লেখ। উত্তর ভূমিকা : অধিকাংশ নৃবিজ্ঞানী আজকের এ মানবগোষ্ঠীকে কিছু প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর বংশধর মনে করেন। এর মধ্যে ভারত ও কেনিয়াতে রামাপিথেকাস মানবগোষ্ঠীর পরিচয়ের কথা জানা যায়। যারা দুপায়ে হাঁটতে পারত, ক্রমশ দাঁড়াতে শিখেছিল । এভাবে ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে তারা প্রাগৈতিহাসিক কাল জুড়ে টিকে ছিল ।
" রামাপিথেকাস মানব : নিম্নে রামাপিথেকাস মানব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রামাপিথেকাস মানব পরিচিতি : নৃবিজ্ঞানীগণ ভারত ও কেনিয়াতে এক জাতের প্রাইমেটদের জীবাশ্ম পেয়েছেন। যাদেরকে তারা রামাপিথেকাস মানব নামে নামকরণ করেন। ধারণা করা হয় যে, রামাপিথেকাসা মানবরা দুপায়ে ভর করে চলাচল করতো এবং হাতকে আত্মরক্ষা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতো। বৈজ্ঞানিকদের ধারণা অনুযায়ী রামাপিথেকাস মানবদের বংশধর সুদীর্ঘ কালক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে ।
২. রামাপিথেকাস মানবের বৈশিষ্ট্য : এদের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য ছিল :
ক. রামাপিথেকাসরা প্রায় পাঁচ কোটি বছর পূর্বে বৃক্ষের শাখায় বাস করতো। কিন্তু সময়ের বিবর্তন ধারায় প্রায় তিন কোটি
বছর পূর্বে এদের একটি শাখা খাদ্যের সন্ধানে মাটিতে বসবাস শুরু করে ।
খ. রামপিথেকাসা মানব হোমোনিড বংশধরের প্রতিষ্ঠা করে ।
গ. এদের ছোট দাঁত ছিল ।
ঘ. এরা সম্ভবত অধিকাংশ সময় দুপায়ে হাঁটত এবং অন্য হাত কাজে লাগাত ৷
ঙ. সম্ভবত এরা খোলা মাঠে চলতে গিয়ে ক্রমশ দাঁড়াতে শিখেছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাইমেটদের মূল অবস্থান থেকে মাটিতে বসবাস ও জীবনধারণ করায় তাদের গঠন প্রকৃতিতে অপেক্ষাকৃত পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এ পরিবর্তনের কারণেই প্রাইমেটদেরকে রামাপিথেকাস মানব নাম দেওয়া হয়। এ সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞানীদের মতকে স্বীকার করে নিলে বলতে হয়, রামাপিথেকাস মানবরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অন্যতম ছিল ।
অস্ট্রালোপিথেকাস মানব সম্পর্কে যা জান লেখ ৷ উত্তর ভূমিকা : পৃথিবীর আদি মানবগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আবিষ্কৃত হয়। এ মহাদেশ থেকে আবিষ্কৃত মানবগোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রালোপিথেকাস অন্যতম। অস্ট্রালোপিথেকাসদের গোত্রভুক্ত জীবনযাপন পদ্ধতি, হাতিয়ার তৈরি ও ব্যবহার কৌশল প্রভৃতি নৃতাত্ত্বিকদের তাদের প্রতি উৎসাহী করে তোলে ।
> অস্ট্রালোপিথেকাস মানব : অস্ট্রালোপিথেকাস মানব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. অস্ট্রালোপিথেকাস মানব পরিচিতি : মানবজাতির পূর্বপুরুষের নাম অস্ট্রালোপিথেকাস । মানুষের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে অস্ট্রালোপিথেকাস একটি বিশেষ নাম। দক্ষিণ আফ্রিকাতে অস্ট্রালোপিথেকাস নামক এক প্রকার প্রাইমেটদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এদের চোয়াল, পা প্রভৃতি ছিল প্রায় মানুষের মতো এবং মাথা ছিল মানুষের মাথার প্রায় অর্ধেক। ২. অস্ট্রালোপিথেকাস মানবের বৈশিষ্ট্য : অস্ট্রালোপিথেকাস মানবের মধ্যে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান ছিল । যথা : ক. অস্ট্রালোপিথেকাসরা গোত্রভুক্তভাবে জীবনযাপন করতো। দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ১৯২৪ সালে বিজ্ঞানীরা খননকার্যের অস্ট্রালোপিথেকাসের মাথার খুলি আবিষ্কার করেন। ১৯৫৯ সালে তাঞ্জানিয়ায় অনুরূপ মানবজাতির অনেকগুলো মাথার খুলি আবিষ্কৃত হলে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, অস্ট্রালোপিথেকসরা গোত্রভুক্তভাবে জীবনযাপন করতো ।
খ. অস্ট্রালোপিথেকাসরা জীবনযাপনকে সহজ করার জন্য নানান ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করতো।
গ. এরা ক্রমবিবর্তিত হয়ে আফ্রিকার খাড়া মানুষ নামে পরিচিতি লাভ করে ।
ঘ. তারা গাঁইতি ও হাতকুড়াল জাতীয় হাতিয়ার ব্যবহার করতো।
ঙ. . তারা তাদের ব্যবহার্য সব হাতিয়ারই পাথর দ্বারা তৈরি করতো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অস্ট্রালোপিথেকাসরা মানুষের পূর্ববর্তী প্রাণী তথা পূর্বপুরুষ। তারা প্রায়, মানুষের মতোই ছিল এবং গোত্রভুক্ত জীবনযাপন করতো। আর এজন্যই অস্ট্রালোপিথেকাসদের জীবনযাপন প্রণালি বর্তমান মানবসমাজের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পণ্ডিতদের মতে, অস্ট্রালোপিথেকাসরা মানুষের পূর্ববর্তী প্রাণী তথা পূর্বপুরুষ ।
খাড়া মানব সম্পর্কে যা জান লেখ ৷ উত্তর ভূমিকা : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে খাড়া মানবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা বর্তমান পরিপূর্ণ ও পুর্ণাঙ্গ, মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্যই আয়ত্ত করতে পেরেছিল । যুগের বিবর্তনের সাথে সাথে খাড়া মানবের বড় একটি অংশ সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয় ।
• খাড়া মানব : খাড়া মানব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. খাড়া মানবের পরিচিতি : দক্ষিণ আফ্রিকাতে অস্ট্রালোপিথেকাস নামক এক প্রকার প্রাইমেটদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এদের চোয়াল, পা প্রভৃতি ছিল প্রায় মানুষের মতো এবং মাথা ছিল মানুষের মাথার প্রায় অর্ধেক। পুরাতাত্ত্বিকগণের মতে, এ অস্ট্রালোপিথেকাসরা ক্রম পরিবর্তিত হয়ে আফ্রিকার খাড়া মানব নামে পরিচিতি লাভ করে। পুরাতাত্ত্বিকগণ আরও মনে করেন, এ অস্ট্রালোপেথিকাসরাই অর্থাৎ খাড়া মানবরাই আমাদের পূর্বপুরুষ।
২. খাড়া মানবের শারীরিক গঠন : শারীরিকভাবে খাড়া মানব অন্যান্য মানব সম্প্রদায় থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। খাড়া মানুষদের মগজ ছিল বেশ বড় এবং তারা হাতকুড়াল জাতীয় হাতিয়ার ব্যবহার করতো। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে খাড়া মানবগোষ্ঠী দুপায়ে হাঁটতে শুরু করে । তাদের হাত ও পা অনেকটা বর্তমান মানুষের মতোই ছিল ।
৩. খাড়া মানবের বৈশিষ্ট্য : খাড়া মানবের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান ছিল ।
ক. খাড়া মানবের মস্তিষ্ক ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস মানবের প্রায় অর্ধেক ।
খ. তারা মানুষের মতো খাড়াভাবে চলাফেরা করতো বলে এদের খাড়া মানব বলা হয় ।
গ. খাড়া মানব নিজেদের প্রয়োজনে যেমন— শিকার, আত্মরক্ষা প্রভৃতি কারণে হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু করে ।
ঘ. তারা তাদের আশপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করে ।
ঙ. খাড়া মানব জলে প্রান্তরে এমনকি গুহার গহ্বরে বিচরণ করতো ।
চ. তারা ক্রমে জীবজন্তুর মাংসকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে ।
ছ. খাড়া মানবরাই প্রথম আদিম শিকারি জীবনের সূত্রপাত ঘটায় ।
জ. সর্বোপরি খাড়া মানবরা পুরোপলীয় যুগের স্রষ্টা হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করতে সক্ষম হয় । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাসে 'অস্ট্রালোপিথেকাস ও খাড়া মানব বিশেষভাবে বিবেচ্য। খাড়া মানবেরা তাদের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের কারণে পুরোপলীয় যুগের স্রষ্টা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে । তার সাথে বর্তমান মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে খাড়া মানবেরা ইতিহাসের পাতায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিতে সমর্থ হয় ।
ক্রোম্যাগনন মানব সম্পর্কে যা জান লেখ ৷ উত্তর ভূমিকা : মানবজাতির বিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আদি মানবজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এরূপ আদি মানবজাতির একটি হচ্ছে ক্রোম্যাগনন মানব। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত ফ্রান্সে ক্রোম্যাগনন মানবের অস্তিত্ব বেশি পাওয়া যায়। ক্রোম্যাগনন মানবের প্রাপ্ত নিদর্শন গবেষণার পর পুরাতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪০ হাজার থেকে ১৫ হাজার অব্দ পর্যন্ত পৃথিবীতে ক্রোম্যাগনন মানুষ বসবাস করতো ।
ক্রোম্যাগনন মানব : ক্রোম্যাগনন মানব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ক্রোম্যাগনন মানব নামকরণ : ফ্রান্সের ক্রোম্যাগনন পাহাড়ি এলাকায় ১৮৬৮ সালে প্রাচীন মানবজাতির ফসিল আবিষ্কৃত হয় । আবিষ্কৃত এ ফসিলকে জায়গার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয় ক্রোম্যাগনন মানব
২. ক্রোম্যাগনন মানবের দৈহিক গঠন : দৈহিক গঠনের বিচারে ক্রোম্যাগনন মানব আধুনিক মানবের মতোই ছিল। তারা সোজা হয়ে চলতে পারত। তাদের দেহ প্রশস্ত কাঁধ, সোজা ঘাড় বিশিষ্ট ছিল । ক্রোম্যাগনন মানবের গড় উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১০ ইঞ্জি থেকে ৬ ফুট এবং গড় ওজন ছিল ১৫০ পাউন্ড। মগজের পরিমাণ ছিল ১৫০০ সি. সি.
৩. ক্রোম্যাগনন মানবের বৈশিষ্ট্য :
ক. ক্রোম্যাগনন মানবরা ছিল গুহাবাসী।
খ. তারা তাদের বসবাসরত গুহায় গুহাচিত্র অঙ্কন করতো। গুহাচিত্রের মধ্যে বন্য গরু ও ষাঁড় অন্যতম ছিল ।
গ. ক্রোম্যাগনন মানবের মধ্যে বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজন দেখা যায় ।
ঘ. তারা হাতির দাঁত, চুনাপাথর, হাড়, শিং দিয়ে নানা শিল্পদ্রব্য তৈরি করতো ।
ঙ. ক্রোম্যাগনন মানবেরা শিকারের জন্য বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াত। যার কারণে ফ্রান্সের সুলটি, ইংল্যান্ডের হগলিং, চেকোশ্লোভাকিয়ার লাউটচ, ভেস্টানিস প্রভৃতি অঞ্চলে ক্রোম্যাগনন মানবের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রোম্যাগনন মানবরা বর্তমান মনুষ্য প্রজাতির পূর্বপুরুষ ছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প যেমন ছবি আঁকা গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবিকার তাগিদে তারা ছড়িয়ে পড়লেও তাদের মধ্যে হিংস্রতা খুব একটা দেখা যায়নি। এ থেকে বুঝা যায়, মানবজাতির এ পূর্বপুরুষেরা ছিলেন সংস্কৃতিমনা ও রুচিশীল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]