মধ্য প্রস্তর যুগ কী?

উত্তর ভূমিকা : মধ্য প্রস্তর যুগের সূচনা ইউরোপে প্রায় দশ হাজার খ্রিস্টপূর্বে এবং আফ্রিকা ও এশিয়ায় আরও পরে শুরু হয় । প্রকৃতপক্ষে বলা যায়, মধ্য প্রস্তর যুগটি প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রান্তিক সময়। মধ্য প্রস্তর যুগ অনেকাংশে প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে সংক্ষিপ্ত এবং স্বাতন্ত্র্য মধ্য প্রস্তরযুগে হাতিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নতুন সামগ্রীর প্রবর্তন হয় ।
• মধ্য প্রস্তর যুগ : পুরোপলীয় ও নবোপলীয় যুগের মধ্যবর্তী যুগকে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ মধ্য প্রস্তর যুগ বা মেসোলিথিক যুগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। খ্রিস্টপূর্ব দশ হাজার অব্দ থেকে ছয়/সাত হাজার অব্দ পর্যন্ত ছিল এ যুগের স্থিতিকাল । শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের যুগ নামেও মধ্য প্রস্তর যুগকে অভিহিত করা যায়। হিম যুগের অব্যবহিত পরে যে সমাজ সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠান প্রবর্তিত হয় তা পূর্ববর্তী পুরোপলীয় যুগের সর্বশেষ স্তর ম্যাগডালেনীয় প্রভাবে প্রভাবান্বিত ছিল। এ স্তর দুটির পার্থক্য খুবই ক্ষীণ। কারণ বহু ক্ষেত্রে ম্যাগডালেনীয় ও মেসোলিথিক যুগের হাতিয়ার নির্মাণ, শিল্পচর্চা, সংস্কৃতি প্রায় একই রকম বলে মনে হয়। কিন্তু মেসোলিথিক যুগের সংস্কৃতি অনেকাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সৃজনশীল এবং গতিময়। এ যুগে মানুষ মূলত খাদ্যসংগ্রহকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। পশু শিকারের পাশাপাশি তারা কিছু লতাপাতা, শিকড়বাকড়, মাছ ও জলজ উদ্ভিদকে সুনির্দিষ্টভাবে খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। এছাড়া এ যুগের মানুষ হাতিয়ারের ব্যবহারে আরও পারদর্শী হয় । এসময়ে তারা শিকারে তিরধনুক এবং মাছ শিকারে বড়শি, হারপুন, চাঁই, নৌকা ও জাল ব্যবহার করতো। এমনকি বরফের ওপর দিয়ে চলার জন্য তারা শ্লেজগাড়ি ব্যবহার করতে শেখে এবং পশুর হাড়, শিং ইত্যাদি দিয়েও অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল। মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ আধা যাযাবর, আধা স্থায়ী প্রকৃতির ছিল। এরা সমাজবদ্ধ হলেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে বসবাস করতো। পারস্পরিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে বিপদে-আপদে, সাহায্য সহযোগিতা এবং প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র ও প্রাপ্ত খাদ্যসামগ্রী বিনিময় করতো। এ যুগের মানুষ ধর্ম ও জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিল। তাদের ধর্মবিশ্বাসের মূল দিক ছিল সর্বপ্রাণবাদ, মহাপ্রাণবাদ, বস্তুভক্তি, পূর্বপুরুষ পূজা প্রভৃতি। এ যুগের মানুষ চিত্রকলার ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করতে সক্ষম হয় । আগুনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি হয়। পোশাক-পরিচ্ছদ ও গহনার ব্যবহারে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সময়েই ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধারণার বিকাশ লাভ হয় ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেসোলিথিক যুগের বিস্তৃতি আফ্রিকার কেনিয়া, উগান্ডা, টাগইনিকা, রোডেশিয়া থেকে কেপটাউন পর্যন্ত। এ যুগের শিকার ও খাদ্যসংগ্রহ স্তরের মানবগোষ্ঠী দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পূর্ব ইউরোপে বিস্তৃতি লাভ করতে শুরু করে এবং তাদের সংস্কৃতি স্থানীয় সংস্কৃতির উপাদানের সাথে মিশ্রিত হয়ে একটি নতুন সংস্কৃতির সূত্রপাত হয়। ইউরোপের এ মানবগোষ্ঠী পরবর্তীকালে আলাস্কা (তখন আমেরিকা ও ইউরোপ একই ভূখণ্ড ছিল) থেকে আমেরিকায় গমন। আধুনিক কালেও এস্কিমো ও রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে মেসোলিথিক সংস্কৃতির উপাদান দেখতে পাওয়া যায়। মধ্য প্রস্তরযুগে পশুপালন শুরু হয়। শিকারিদের হাতে জীবন্ত পশু ধরা পড়লে এবং তখন তাদের নিকট অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যের যোগান থাকলে এসব পশুকে হত্যা না করে পালন করা হতো। এভাবে পশুপালন ধারণার উন্মেষ ঘটে। আবার ধারণা করা হয়, মানুষ যখন পশুর মাংস খেয়ে এর নাড়িভুঁড়ির হাড়গোড় বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিত তখন সেগুলো খাওয়ার জন্য বন্য কুকুর জড়ো হতো । তখন মানুষ কুকুরকে পোষ মানিয়ে শিকারের কাজে ব্যবহার করতো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্য প্রস্তর যুগের মানব সংস্কৃতি তেমন উন্নত প্রকৃতির ছিল না। তবে এটি ছিল যুগ পরিবর্তনের সময়। দুটি যুগের মধ্যবর্তী যুগ বলে এটি একটি বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এ যুগের মাধ্যমেই আদিম পশু শিকার ও খাদ্যসংগ্রহ স্তর পার হয়েই মানুষ কৃষিকার্য, সমাজবদ্ধ জীবন, সংস্কৃতির উৎকর্ষের মাধ্যমে স্বকীয়তা অর্জনে সক্ষম হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]