নবোপলীয় যুগ বা নবোপলীয় বিপ্লব বলতে কী বুঝ ?

উত্তর ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে নবোপলীয় যুগকে মানবসভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এ যুগে মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল পাথর। এসময়ে মানুষ গতানুগতিক পাথরের ব্যবহার ত্যাগ করে পাথর দ্বারা বিভিন্ন হাতিয়ার বানানোর কৌশল আয়ত্ত করে। কৃষির আবিষ্কার, শস্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, আগুন আয়ত্তকরণ প্রভৃতি মানবজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে ।
নবোপলীয় যুগ বা নবোপলীয় বিপ্লব : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ ধাপ নব্য প্রস্তর বা নবোপলীয় যুগ নামে পরিচিত। নবোপলীয় যুগকে মসৃণ পাথর ও ধাতু ব্যবহারের যুগ বলা হয় । নবোপলীয় বা নব্য প্রস্তর যুগের প্রারম্ভিক কাল নির্ণয় করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য । প্রচলিত ধারণা অনুসারে পুরানো প্রস্তর যুগের সমাপ্তির পর মধ্য প্রস্তর যুগ দশ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয় এবং সাত হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ যুগের অবসানের পর নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়। নবোপলীয় যুগে মানুষ পাথরকে নতুনভাবে করায়ত্ত করে এর দ্বারা অপেক্ষাকৃত উন্নত, মসৃণ ও ধারালো অস্ত্র তৈরি করে এবং কৃষিকাজসহ নানাভাবে পাথরকে সার্থকরূপে ব্যবহার করে সামগ্রিক জীবনব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটায়। যাকে প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ভি. গর্ডন চাইল্ড নবোপলীয় বিপ্লব (Neolithic Revolution) বলে অভিহিত করেন ।
নবোপলীয় যুগের সময়কালেই মানুষ সবচেয়ে বেশি উন্নত জীবনধারণের কৌশল ব্যবহার করতে শিখে। যার ফলে নবোপলীয় স্তরে এসে সমাজব্যবস্থায় বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃশ্যমান হয় । এ দৃশ্যমান পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. পুরোপলীয় যুগের অনুন্নত, স্থূল, ভোতা, অমসৃণ হাতিয়ারের স্থলে নবোপলীয় যুগে ধারালো, সূক্ষ্ম ও মসৃণ হাতিয়ার ব্যবহার শুরু হয়।
২. মানুষ উন্নত হাতিয়ারের মাধ্যমে ক্রমশ কয়েক হাত উঁচু বিশিষ্ট খুঁটির ওপর শস্যগোলা তৈরি করে শস্য রাখার কৌশল আয়ত্ত করে ।
৩. নবোপলীয় যুগের অপর একটি অগ্রগামী পদক্ষেপ হলো পশুপালনের পদ্ধতির সূচনা। জমিতে খাবার খেতে আসা পশুকে ধরে তারা বশে আনত।
৪. নবোপলীয় যুগের মানুষের আগুন জ্বালানোর কৌশল, আগুন নিয়ন্ত্রণ, আগুনের বহুমুখী ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবনব্যবস্থাকে আরও উন্নত, সহজ ও উপভোগ্য করে তোলে ।
৫. নবোপলীয় যুগে মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিয়েশাদির সূত্রপাত হয় ।
৬. নবোপলীয় যুগে কৃষির প্রয়োজন, উদ্বৃত্ত ফসলের বিনিময় ও লেনদেনের ফলে ব্যক্তিমালিকানার উদ্ভব হয় । পরিবার ও বিবাহ প্রথার সূচনার ফলে সম্পত্তিতে বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের প্রথাও চালু হয় ।
এছাড়াও নবোপলীয় যুগে শ্রমের বিভাজন ছিল, মানুষ তৈজসপত্র আবিষ্কার করে, ক্রয়-বিক্রয়ের সূচনা করে। মানুষ নিজেদের ভাষার উন্নয়ন করে । আর এসব কারণকে বিবেচনা করে নবোপলীয় যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নবোপলীয় যুগ পূর্ববর্তী পুরোপলীয় যুগের চেয়ে অনেক উন্নত ও আধুনিক ছিল । মানুষ কৃষি পদ্ধতির উদ্ভাবন, আগুনের বহুমুখী ব্যবহার, চাকা আবিষ্কার, মৃৎপাত্র তৈরি প্রভৃতি কারণে এ সময়কালকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ মহৎ বৈশিষ্ট্যসমূহ মানুষকে প্রায় ঐতিহাসিক যুগে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।

নবোপলীয় যুগের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারসমূহ কী কী ?

উত্তর ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে নবোপলীয় যুগকে মানব সভ্যতার ভিত সংস্থাপনের পর্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ যুগেও মানুষের জীবনধারণের তথা বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন ছিল পাথর। এ যুগে পাথরের ব্যবহারে পরিবর্তন হয় বিধায় এ যুগের নামকরণ করা হয় নবোপলীয় যুগ অর্থাৎ নতুন পাথরের যুগ। এ যুগে মানব সভ্যতার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়ে থাকে।
নবোপলীয় যুগের আবিষ্কারসমূহ : নবোপলীয় যুগে মানুষ পূর্বের সব অর্জনকে ছাপিয়ে নানা কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করে। যার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো :
১. উন্নত হাতিয়ার উদ্ভাবন : নবোপলীয় যুগে মানুষ পূর্বের ভোঁতা, অনুন্নত, স্থূল, অমসৃণ হাতিয়ারের স্থলে অপেক্ষাকৃত ধারালো, মসৃণ হাতিয়ার তৈরি করে। ফলে এরূপ উন্নত হাতিয়ার মানুষকে যেকোনো শিকার বশে আনতে সাহায্য করে । এরূপ উন্নত হাতিয়ারসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো কোদাল, কাস্তে, কাঠের লাঙল প্ৰভৃতি ।
২. উদ্যান কৃষি ব্যবস্থার সূচনা : নবোপলীয় যুগে উন্নত হাতিয়ারের মাধ্যমে পুরুষেরা যখন অনেক দূর পর্যন্ত পশু শিকারে চলে যেত তখন নারীরা তাদের আস্তানার পাশেই বিভিন্ন ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের বীজ ও চারা রোপণ করতো। আর এভাবে মহিলারা প্রথম কৃষি ব্যবস্থার সূচনা করে। কৃষির মধ্যে গম ও বার্লির চাষ প্রাচীনতম। এভাবে মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক জীবন ত্যাগ করে খাদ্য উৎপাদনের জীবন বেছে নেয় ৷
৩. পশুপালনের সূচনা : নবোপলীয় যুগে নারীরা তাদের আস্তানার পাশে যেসব ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ রোপণ করে রাখত সেগুলো ভক্ষণের জন্য তৃণভোজী পশুরা আসত। মানুষ সেগুলো কৌশলে ধরে ফেলত এবং হত্যা না করে পোষ মানাতে চেষ্টা করতো। আর এভাবেই নবোপলীয় যুগে পশুপালনের সূচনা হয় ৷
৪. কুমারের চাকা আবিষ্কার : কুমারের চাকা আবিষ্কার নবোপলীয় যুগের অপর একটি বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ। এ যুগে মানুষ মাটির পাত্র তৈরির কৌশল আয়ত্ত করে এবং মাটির পাত্রকে মসৃণ করার জন্য ক্রমাগত হাত ঘোরাতে হয়। এভাবে হাত ঘোরানোর প্রয়োজনীয়তা থেকেই নবোপলীয় যুগের মেয়েরা কুমারের চাকা আবিষ্কার করে ।
৫. তৈজসপত্র আবিষ্কার : নবোপলীয় যুগের মানুষ সাংসারিক প্রয়োজনে বাঁশ, বেতের ঝুড়ি, পোড়ামাটির পাত্র, মাটির মসৃণ মৃৎপাত্র প্রভৃতি তৈরি করার কৌশল আয়ত্ত করে। বেত বা নলখাগড়া ঘুরিয়ে পেচিয়ে তাকে পাত্রের
আকার দান করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নবোপলীয় যুগে সত্যিই মানুষ অনেক যুগান্তকারী কিছু অর্জনে সক্ষম হয়েছিল । আর এসব যুগান্তকারী অর্জনের ফলে নবোপলীয় যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় মানবসমাজ পরে আরও উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর । উত্তর ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে নবোপলীয় যুগকে মানব সভ্যতার ভিত্তিস্থাপনের যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ যুগে মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল পাথর। এসময়ে মানুষ গতানুগতিক পাথরের ব্যবহার ত্যাগ করে পাথর দ্বারা বিভিন্ন হাতিয়ার বানানোর কৌশল আয়ত্ত করে। পাথরের বিভিন্ন হাতিয়ার মানুষের জীবনযাপনের ধারাকে বদলে দিতে শুরু করে ।
• নবোপলীয় যুগের উল্লেখযোগ্য দিক : নবোপলীয় যুগের সময়কালেই মানুষ সবচেয়ে বেশি উন্নত জীবনধারণের কৌশল ব্যবহার করতে শিখে। যার ফলে নবোপলীয় স্তরে এসে সমাজব্যবস্থায় বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। এ দৃশ্যমান পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. উন্নত হাতিয়ার উদ্ভাবন : পুরোপলীয় যুগের অনুন্নত, স্থূল, ভোঁতা অমসৃণ হাতিয়ারের স্থলে নবোপলীয় যুগে ধারালো, সূক্ষ্ম ও মসৃণ হাতিয়ার ব্যবহার শুরু হয়। এ উন্নত হাতিয়ারসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল পাথরের কুঠার, ছুরি, পশুর চামড়া ছড়ানোর জন্য স্ক্রাপার, বর্শা প্রভৃতি
২. শস্য সংরক্ষণ পদ্ধতি : কৃষি পদ্ধতির ক্রমোন্নতির সাথে সাথে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শস্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কাজেই মানুষ উন্নত হাতিয়ারের মাধ্যমে ক্ৰমশ কয়েক হাত উঁচু বিশিষ্ট খুঁটির ওপর শস্যগোলা তৈরি করে শস্য রাখার কৌশল আয়ত্ত করে।
৩. পশুপালনের সূচনা : নবোপলীয় যুগের অপর একটি অগ্রগামী পদক্ষেপ হলো পশুপালনের পদ্ধতির সূচনা। জমিতে খাবার খেতে আসা পশুকে ধরে তারা বশে আনত। এভাবে নবোপলীয় যুগে অনেকটা ধীর গতিতে পশুপালনের সূচনা ঘটে।
৪. আগুনের ব্যবহার আয়ত্তকরণ : নবোপলীয় যুগের মানুষের আগুন জ্বালানোর কৌশল, আগুন নিয়ন্ত্রণ, আগুনের বহুমুখী ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত, সহজ ও উপভোগ্য করে তোলে। এভাবে আগুনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় সমাজব্যবস্থা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যায় ।
৫. সামাজিক বন্ধন : নবোপলীয় যুগে মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিবাহের সূত্রপাত হয়। তারা দুই প্রকার বিবাহের সূচনা করে। যথা : ১. একগামিতা ও ২. বহুগামিতা। বিবাহ প্রথার মাধ্যমে এ যুগেই পরিবারের মতো প্রাচীন সামাজিক বন্ধনের সূচনা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নবোপলীয় যুগ পূর্ববর্তী পুরোপলীয় যুগের চেয়ে অনেক উন্নত ও আধুনিক ছিল । কৃষি পদ্ধতির উদ্ভাবন, আগুনের বহুমুখী ব্যবহার, চাকা আবিষ্কার, মৃৎপাত্র তৈরি প্রভৃতি কারণে এ সময়কালকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ মহৎ বৈশিষ্ট্যসমূহ মানুষকে প্রায় ঐতিহাসিক যুগে নিয়ে যেতে সক্ষম করে তোলে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]