ধাতু যুগের পরিচয় উল্লেখপূর্বক এ যুগের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : নবোপলীয় যুগের পর মানুষ ক্রমাগত ব্যবহার্য ধাতু (তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহা) উদ্ভাবন করতে শুরু করে । উদ্ভাবিত ধাতুসমূহের ওপর মানুষের ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে ধাতুর যুগ নামে স্বতন্ত্র একটি যুগের আবির্ভাব ঘটে। এসময় মানুষ তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার ব্যবহার বাড়িয়ে নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় ।
● ধাতু যুগ : ধাতু যুগ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ধাতু যুগের পরিচয় : নবোপলীয় যুগের শেষদিকে মানুষ তামা উদ্ভাবন করে। যার ফলে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সংযোজিত হয় আরও একটি নতুন বৈশিষ্ট্য। তামার পর মানুষ ব্রোঞ্জ তৈরির কৌশল আয়ত্ত করে। মানুষ সার্থকভাবে আগুনকে ব্যবহার করে তামা ও টিনের সংমিশ্রণে ব্রোঞ্জ তৈরি করে। ব্রোঞ্জের পর মানুষ ধীরে ধীরে লোহার ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এভাবে বিভিন্ন ধাতু মানুষের জীবন প্রণালিতে অবদান রাখে বলে এ সময়কালকে ধাতুর যুগ বলা হয়। এ যুগে মানুষ ধাতু নির্মিত কুঠার, ছুরি বা দা, লাঙলের ফলা, চাকু, তির, হার্পণ, ছেদনযন্ত্র, বর্শা, তলোয়ার, কোদাল প্রভৃতি তৈরি করতে সমর্থ হয় ।
২. ধাতু যুগের শ্রেণিবিভাগ : ধাতু যুগকে প্রধানত তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। এগুলো হলো :
ক. তাম্রযুগ : নবোপলীয় যুগের শেষদিকে যখন মানুষ তামার উদ্ভাবন করে তখন তামার ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ারের ওপর মানুষ ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তামার হাতিয়ার ইতোপূর্বের পাথরের হাতিয়ারের চেয়ে অনেক বেশি ধারালো, সুচালো ও তীক্ষ্ণ হওয়ায় শিকারে, গাছ কাটায় ও কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে মানুষের বেশ কাজে দেয়। ফলে মানুষ পাথরের ব্যবহার পরিত্যাগ করে তামার ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
খ. ব্রোঞ্জযুগ : তামার যুগের কিছু পরেই সবচেয়ে শক্ত অথচ নমনীয় এবং ব্যবহারযোগ্য পদার্থ হিসেবে ব্রোঞ্জের প্রচলন শুরু হয়। চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয়। তারপর তা ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে ।
গ. লৌহযুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের যে সময়কালে কোনো এলাকার ধাতব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি মূলত লোহা দ্বারা তৈরি হতো সে সময়কালকে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় লৌহযুগ বলা হয়। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সর্বোচ্চ স্তর লৌহ যুগ। লোহার ব্যবহার শুরুর সাথে সাথে মানবসমাজে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে কৃষি ব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শিল্পকলা অন্যতম। লৌহযুগের সময়কাল ও বৈশিষ্ট্য অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ছিল। তবে সব অঞ্চলেই লৌহযুগের শেষে ঐতিহাসিক যুগের আবির্ভাব ঘটে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাথরের ব্যবহারের পর ধাতুর ব্যবহার মানবসমাজ ও সভ্যতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ধাতু মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ ও সুন্দর করে তোলে। ফলে মানুষ ধাতু ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায়। ধাতুর এরূপ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি মনোজাগতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে মানব সভ্যতা বিকাশে অবদান রাখে ।

কীভাবে তামা আবিষ্কার হয়?

উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে ধাতু যুগ একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। এ পর্বে মানুষ জীবনযাপনের জন্য নতুন উপাদান পায়, যেগুলো সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রভূত অবদান রাখে। এ উপাদানগুলো হলো সোনা, তামা, টিন, ব্রোঞ্জ ও লোহা। এ উপাদানসমূহকে ভিত্তি করে ধাতু যুগকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা : ক. তাম্র যুগ, খ. ব্রোঞ্জ যুগ ও গ. লৌহ যুগ। আর এসব ধাতুর মধ্যে তামা অন্যতম ।
* তামা আবিষ্কার : নবোপলীয় যুগের শেষদিকে এসে তামার আবিষ্কার হয়। তামা মানুষের কাছে পরিচিত প্ৰথম ধাতুগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রথমদিকে তামার বহুল প্রচলন ছিল না। সম্ভবত তামা খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী উপত্যকার মানুষ প্রথম ব্যবহার করে। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে মিসরীয়রা হাতিয়ার ও অলংকার তৈরির নিমিত্তে তামাকে পাতে পরিণত করে। পরবর্তীকালে চীনা, পেরুর ইনকা সভ্যতার জনগোষ্ঠী তামা ব্যবহার করে । সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০-৩০০০ অব্দ থেকে প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অঞ্চলে তামার বহুল প্রচলন আরম্ভ হয়। এটির ব্যবহার আরম্ভ হওয়ার কারণ হলো মানুষ এটিকে দেশীয় পরিবেশে পায় এবং এটিকে সহজে হাতিয়ার, অস্ত্রশস্ত্র ও অলংকারে রূপান্তরিত করা যেত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তামার আবিষ্কার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবে মনে করা হয় যে, কোনো ব্যক্তি নিভানো আগুনে চকচকে কিছু দেখতে পায়। এখান থেকে মানুষ হয়ত তামার সন্ধান পায়। প্রথমদিকে তামার ব্যবহার কম ছিল । কিন্তু পরবর্তীতে সুবিধাজনক কারণে ব্যাপকভাবে তামার ব্যবহার শুরু হয় ।
ব্রোঞ্জ যুগ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ । উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে ধাতু যুগ একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। আর ধাতু যুগকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা : ক. তাম্র যুগ, খ. ব্রোঞ্জ যুগ ও গ. লৌহ যুগ। তন্মধ্যে মানব সভ্যতা বিকাশে ব্রোঞ্জ যুগের অবদান অপরিসীম। এ পর্বে মানুষ জীবনযাপনের জন্য নতুন জিনিসপত্র আবিষ্কার করে নতুন উপাদান পায়, যেগুলো সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রভূত অবদান রাখে ।
ব্রোঞ্জ যুগ : যে যুগে কোনো জনগোষ্ঠী বা অঞ্চলের অগ্রগতিতে অস্ত্রশস্ত্র ও হাতিয়ার তৈরির জন্য পাথর বা নরম তামা ব্যবহারের পরিবর্তে ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হয় সে যুগকে ব্রোঞ্জ যুগ বলা হয় ।
তামা ও টিন গলিয়ে তৈরি ব্রোঞ্জ মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রাচীন সংকর ধাতু হিসেবে পরিচিত। প্রস্তর যুগ ও লৌহ যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে ব্রোঞ্জ যুগ বলা হয়। কারণ এ যুগে সাধারণত তামার তৈরি পেয়ালা, কলসি ও ফুলদানির মতো বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি হতো। এসময় মানুষ ব্রোঞ্জের যুদ্ধ কুঠার, হেলমেট, চাকু, ঢাল ও তরবারি তৈরি করতো। তারা এর অলংকার এবং কখনও কখনও আদিম স্টোভও বানাত ।
ব্রোঞ্জ যুগ কোনো বিশেষ সময়কার নয়। কোনো অঞ্চল আগে ও কোনো অঞ্চল পরে ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশ করে । কোনো কোনো অঞ্চলে এটি অল্প সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সিরিয়ায় ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হয়। আবার, খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ অব্দে পূর্ব ইউরোপে ও ইজিয়ান সাগর অঞ্চলে এর প্রচলন শুরু হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তামার যুগের কিছু পরেই ব্রোঞ্জ ও পিতলের ব্যবহার শুরু হয়। তামা ও টিনের সংমিশ্রণে তৈরি ব্রোঞ্জ একটি সংকর ধাতু। ব্রোঞ্জ তামা অপেক্ষা অনেক বেশি কঠিন এবং অনেক কম উষ্ণতায় গলানো যায়। ফলে মানুষ তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করতে শুরু করে। যা মানব সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।
ধাতু যুগের গুরুত্ব লেখ । উত্তর ভূমিকা : ধাতু যুগ জনজীবনে বিপ্লব আনয়ন করে। প্রস্তর নির্মিত হাতিয়ার তৈরি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। হাতিয়ারগুলো ছিল ভোঁতা। অন্যদিকে, ধাতুর হাতিয়ার নির্মাণে সময় কম লাগত এবং এগুলোকে শানিত করা যেত। তাছাড়া ধাতুর তৈরি হাতিয়ার দিয়ে শিকার করা আগের থেকে সহজ হয়। কারণ ধাতুনির্মিত হাতিয়ার বেশি কার্যকর ছিল।
ধাতু যুগের গুরুত্ব : ধাতু যুগের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি : ধাতু যুগে কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন- লাঙল, কোদাল, কাস্তে ইত্যাদি ধাতুর দ্বারা তৈরি হয়। ফলে কৃষির উন্নতি হয় ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
২. উন্নত যানবাহন তৈরি : ধাতু উন্নত যানবাহন তৈরিতে সাহায্য করে। ধাতুনির্মিত চাকাওয়ালা শকটের বহুল প্রচলন হয় । তাছাড়া ধাতুনির্মিত নৌকাও সমুদ্রগামী জাহাজের মতো জলযানের আবির্ভাব ঘটে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উন্নতি হয়।
৩. উন্নত শিল্প যন্ত্রপাতি তৈরি : ধাতু দ্বারা শিল্প যন্ত্রপাতি তৈরি হয়। ধাতুর তৈরি চরকা, তাঁত ও কুমোরের চাকের বহুল ব্যবহার হয়। ফলে শিল্পের উন্নতি ঘটে।
৪. বিভিন্ন পেশাজীবীর উত্থান : কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পের অগ্রগতির ফলে বিশেষিকৃত সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে। তারা হলো সুত্রধর, কামার, কুমার, তাঁতি, শকট প্রস্তুতকারক ইত্যাদি ।
৫. সামরিকবাদের উত্থান : ধাতু যুগ সামরিকবাদের জন্ম দেয় । তখন যুদ্ধাস্ত্র, যেমন— বর্শা ও তিরের আগা, ঢাল, তরবারি, হেলমেট ইত্যাদি ধাতুর দ্বারা নির্মিত হয়। এগুলো প্রস্তর যুগের হাতিয়ার থেকে বেশি কার্যকর ছিল। তাই প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাচীন বিশ্বে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। কোনো কোনো সময় এক জাতি প্রতিবেশী অন্যান্য জাতিদেরকে পরাজিত করে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যা আধুনিককালের সামরিকবাদের পথপ্রদর্শক। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রস্তর যুগের অস্ত্র ও হাতিয়ার তৈরি ছিল সময়সাপেক্ষ এবং কম ধারালো। অন্যদিকে, ধাতু নির্মিত অস্ত্র কম সময়ে তৈরি করা যেত এবং অস্ত্রগুলো ছিল ধারালো। এসব হাতিয়ারের গুণগত মানও ছিল উন্নত। চাকা, লাঙলসহ কৃষি যন্ত্রপাতিতে ব্যাপকভাবে ধাতুর ব্যবহারের ফলে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। শিকারও আগের তুলনায় সহজ হয়।
ঘ. এরা সম্ভবত অধিকাংশ সময় দুপায়ে হাঁটত এবং অন্য হাত কাজে লাগাত ৷
ঙ. সম্ভবত এরা খোলা মাঠে চলতে গিয়ে ক্রমশ দাঁড়াতে শিখেছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাইমেটদের মূল অবস্থান থেকে মাটিতে বসবাস ও জীবনধারণ করায় তাদের গঠন প্রকৃতিতে অপেক্ষাকৃত পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এ পরিবর্তনের কারণেই প্রাইমেটদেরকে রামাপিথেকাস মানব নাম দেওয়া হয়। এ সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞানীদের মতকে স্বীকার করে নিলে বলতে হয়, রামাপিথেকাস মানবরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অন্যতম ছিল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]