রেনেসাঁ কী? রেনেসাঁর উদ্ভবের কারণগুলো বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।

উত্তর ভূমিকা : ভূমিকা : সভ্যতার বিবর্তনের ধারায় মধ্যযুগে ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁর আবির্ভাব সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা, চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে রেনেসাঁ ছিল এক ব্যাপক জাগরণ। মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী ক্রান্তিকালে এর আবির্ভাব ঘটে। এর মাধ্যমে মধ্যযুগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গোঁড়ামিপূর্ণ ধ্যানধারণার অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয় ।
রেনেসাঁ : নিম্নে রেনেসাঁ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. রেনেসাঁর সংজ্ঞা : রেনেসাঁস ( Renaissance) ফরাসি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে পুনর্জন্ম বা নবজাগরণ। এতে স্বাধীন, সাহসী ও অনুসন্ধিৎসু মনোবৃত্তির মানুষের পুনর্জন্মকেই বুঝানো হয়েছে। সাধারণভাবে রেনেসাঁ বলতে প্রাচীন গ্রিক রোমান সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের এক অদম্য উৎসাহ উদ্দীপনাকে বুঝায় । কিন্তু বিশেষ অর্থে রেনেসাঁস বলতে ব্যক্তিত্বের পুনর্জাগরণকে বুঝায়। এ পুনর্জাগরণ কেবলমাত্র প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্য বা দর্শনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ভাস্কর্য, শিল্পকলা সবক্ষেত্রেই এক নতুন চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়। এরূপ নবজাগরণের সাথে সাথে মানুষের মনে এক নতুন ধর্মনিরপেক্ষ জীবন ও সমাজের আশা জাগে । মানুষ এক নতুন সহজ ও স্বাধীন জীবনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠল। রেনেসাঁ সর্বপ্রথম ইতালিতে শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে ।
২. রেনেসাঁর কতিপয় উদ্যোক্তাগণ : যেসব মানবতাবাদীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা রেনেসাঁর প্রারম্ভ ও গতি বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন দান্তে আলিগিয়েরি, ফ্রান্সিসকো, পেত্রাক, জিত্তভানি বোক্কাচ্চিত্ত প্রমুখ। এ মহান ব্যক্তিগণের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে অন্যতম হলো দান্তের 'The Comedia', পেত্রাকের ইতালীয় ‘সনেট' রচনা, বোক্কাচিত্তের The Decameron' গ্রন্থ । এসব গ্রন্থসমূহে লেখকগণ মানবতাবাদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করেন ।
৩. শিল্পকলায় বিভিন্ন মনীষীর অবদান : শিল্পকলায় যেসব মনীষী বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো, টিশিয়ান ও রাফায়েলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জার্মানিতে যেসব মানবতাবাদী রেনেসাঁ দৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে মার্টিন লুথারের নাম অগ্রগণ্য ।
৪. ইতালিতে রেনেসাঁ শুরু হওয়ার কারণ : ইতালির ভৌগোলিক অবস্থান ইতালিতে রেনেসাঁ শুরু হওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা কনস্টান্টিনোপল অধিকার করলে ভৌগোলিক সুবিধার জন্য কনস্টান্টিনোপলের সব পণ্ডিত ইতালিতে চলে যান। ইতালির ফ্লোরেন্স, ভেনিস, মিলান প্রভৃতি শহরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রেনেসাঁ সৃষ্টি করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে রেনেসাঁ এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মানুষের নব চিন্তাচেতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। আর মানুষের এসব নবচেতনা মধ্যযুগের অবসান ঘটিয়ে আধুনিক যুগের সূচনা করে ৷

রেনেসাঁর স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।

উত্তর ভূমিকা : পনেরো শতকে রেনেসাঁর উদ্ভব ইউরোপ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সময়ের দাবি হিসেবে রেনেসাঁর উদ্ভব হয়। মধ্যযুগীয় ধর্মভিত্তিক ধ্যানধারণা ও চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রেনেসাঁর মাধ্যমে মানব মনে স্বাধীন, সাহসী ও অনুসন্ধিৎসু মনোবৃত্তির পুনর্জন্ম লাভ করে ।
• রেনেসাঁর স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য : নিম্নে রেনেসাঁর স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. জাগতিক জীবনের প্রতি আকর্ষণ : রেনেসাঁর ফলে মানুষের পরজগতের প্রতি আকর্ষণ কমে জাগতিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যের পুনরুজ্জীবনের সাথে সাথে ইউরোপীয়দের নিকট যেন এক নতুন চেতনার দ্বার উন্মোচিত হয়। মানুষ পারলৌকিক জীবনের চিন্তা বাদ দিয়ে পার্থিব জীবনের প্রতি গভীর আকর্ষণ ও ভালোবাসা অনুভব করতে শিখে।
২. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : রেনেসাঁর ফলে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধিত হয় এবং মানুষ বুঝতে পারে যে, আত্মার অবনতি না ঘটিয়েও মানুষ নিজ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং এটি অধর্মের কাজ নয়। এর ফলে মানুষ ধর্মের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে মানসিক মুক্তি লাভ করে। রেনেসাঁ প্রতিটি স্তরের মানুষের মনেই স্বীয় মর্যাদা সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুনভাবে সম্মান ও মর্যাদা পেতে থাকে ।
৩. আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা : রেনেসাঁ মধ্যযুগের রাজনৈতিক আদর্শের যে আমূল পরিবর্তন ঘটায়, তার মাধ্যমে সে আধুনিক রাষ্ট্রের আদর্শ স্থাপন করে। মধ্যযুগের রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল রাজতন্ত্র এবং সে রাজতন্ত্র ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু রেনেসাঁর ফলে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার জ্ঞান মানুষকে মধ্যযুগের রাজনৈতিক আদর্শ ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়। মানুষ বুঝতে পারে যে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো জনগণের উন্নতি ও কল্যাণমূলক শাসন পরিচালনা করা। সুতরাং মানুষ বুঝতে শিখে যে সরকার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে সে সরকারই সর্বশ্রেষ্ঠ ।
৪. জীবনাদর্শে পরিবর্তন : রেনেসাঁ ইউরোপের মানসিক ও নৈতিক জগতে বিপুল পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে এক নতুন জীবনাদর্শ স্থাপন করে। এ বিপ্লবকে রেনেসাঁর ফলাফলের দিক থেকে বিচার করলে একমাত্র খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। খ্রিস্টধর্মের প্রচার যেমন ইউরোপে নীতি ও চিন্তার জগতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করে, তেমনি রেনেসাঁও ইউরোপের মানুষের সম্মুখে এক নতুন ও উন্নত আদর্শের দ্বার উন্মোচন হয় ।
৫. শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্মেষ সাধন : শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রতি রেনেসাঁ এক নবউদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। মধ্যযুগে প্রাচীন মনীষীদের চিন্তাধারা এবং তাদের গ্রন্থাদির আলোচনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রেনেসাঁর ফলে লুপ্তপ্রায় সব মনীষীর গ্রন্থাদি ও চিন্তাচেতনার সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপিত হয় এবং এর ফলে আধুনিককালের জ্ঞানার্জন ও চিন্তার পথ খুলে যায়। প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ মনীষীদের দার্শনিক চিন্তাধারার সাথে পরিচয়ের ফলে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার বিকশিত হয়। রেনেসাঁ কেবল প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যানুরাগই সৃষ্টি করেনি, এর মধ্য দিয়ে সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রেনেসাঁ ইউরোপে মানসিক ও নৈতিক জগতে ব্যাপক আলোড়ন ও বিরাট বিপ্লবের সৃষ্টি করে। রেনেসাঁর ফলে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে । তাই রেনেসাঁ আধুনিক ইতিহাসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে ।

রেনেসাঁর উদ্ভবের কারণগুলো আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : পনেরো শতকে রেনেসাঁর উদ্ভব ইউরোপ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিক্ষণে সময়ের দাবি হিসেবে রেনেসাঁর উদ্ভব হয়। মধ্যযুগীয় ধর্ম, ধর্মভিত্তিক ধ্যানধারণা চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রেনেসাঁর মাধ্যমে মানব মনে স্বাধীন, সাহসী ও অনুসন্ধিৎসু মনোবৃত্তি পুনর্জন্ম লাভ করে । মানবতাবাদী প্রতিভাধর মনীষীদের লেখনী ও শিল্পকর্ম, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গির ফলে মধ্যযুগীয় বৈশিষ্ট্য গুলো দূরীভূত হয়ে আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করে ।
● রেনেসাঁর উদ্ভবের কারণ : রেনেসাঁ হঠাৎ করে অথবা আকস্মিক কারণে শুরু হয়নি। এর পিছনে ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং বহু ঘটনার পুঞ্জীভূত সমন্বয়। নিম্নে রেনেসাঁর উদ্ভবের কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
১. নগর সভ্যতার বিকাশ : আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে মধ্যযুগীয় নগর সভ্যতার বিকাশ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সভ্যতা ও নগর একে অপরের পরিপূরক। নাগরিকবোধ, মধ্যভিত্তিক জীবনযাত্রা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষাদীক্ষা সবকিছুর পিছনেই নগরের ভূমিকা রয়েছে। মধ্যযুগীয় শহরগুলো সংস্কৃতির বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আধুনিক নগর ও নগর জীবন মধ্যযুগীয় শহর থেকে বিকশিত হয়েছে এবং আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব এ শহর জীবনের পরিণতি বলা যেতে পারে ।
২. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আধুনিক যুগের বিকাশে প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। জল ও স্থলপথে সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলে পণ্যসম্ভার আনা-নেওয়া করা হতো। পথের অসুবিধা দূর করার জন্য মাঝে মাঝে সেতু নির্মাণ করা হতো ।
৩. শিক্ষাবিস্তার : তেরো ও চৌদ্দ শতকে ইউরোপে নবজাগরণের জোয়ার দেখা দিলে এসময় ইউরোপীয়রা রেনেসাঁ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষাবিস্তারের প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়ে। শিক্ষার বিস্তারকল্পে ইতালির বিভিন্ন শহরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পনেরো শতকে কনস্টাস্টিনোপলের পতনের পর জ্ঞানপিপাসু পণ্ডিতগণ জ্ঞান আহরণের জন্য ইতালির বিভিন্ন সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলোতে সমবেত হলে ইতালিতে রেনেসাঁসের পথ আরও সুগম হয় এবং ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ঘটে। মধ্যযুগে তারা যে কঠিন শৃঙ্খলে অবরুদ্ধ ছিল, রেনেসাঁসের যুগে তার পরিপূর্ণ মুক্তি ঘটে।
৪. প্রাচ্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবদান : মুসলমানগণ কর্তৃক স্পেন বিজয় একটি অভূতপূর্ণ ঘটনা। এর সাথে সাথে ইউরোপের সাংস্কৃতিক দৃশ্যপটে সম্পূর্ণ পরিবর্তন আসতে শুরু করে। দুই সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এক উন্নততর সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে। এ সংস্কৃতি ইউরোপীয়দের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ প্রাচ্য দেশের সভ্যতা ইউরোপের ব্যক্তিত্বের ওপর আঘাত হানে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সংস্কৃতির বিনিময়ের ফলে ইউরোপীয়দের মনে গভীর অনুসন্ধিৎসার প্রভাব দৃষ্টিগোচর হয় ।
৫. ভৌগোলিক আবিষ্কারের প্রভাব : রেনেসাঁসের প্রভাব ইউরোপে ভৌগোলিক আবিষ্কারের উৎসাহ ও দুঃসাহসিকতা জাগিয়ে তুলেছিল। রেনেসাঁ যুগের সূচনালগ্নে সমুদ্রের মানচিত্র, কম্পাস, তালিকা ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়, যা ইউরোপের . সাথে প্রাচ্য দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে তোলে। প্রাচ্যদেশগুলোতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় ইউরোপীয়
নাবিকগণ আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ আবিষ্কার করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সুদীর্ঘকালব্যাপী নানাবিধ কারণের সমন্বয়ে ইউরোপে রেনেসাঁর আবির্ভাব ঘটে। এর পিছনে বহু কারণ থাকলেও প্রত্যেকটি কারণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। রেনেসাঁ উদ্ভবের কারণে চৌদ্দ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত ইউরোপের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে ।
রেনেসাঁর ফলাফল লেখ ৷ উত্তর ভূমিকা : সমকালীন ইতালি এবং সমগ্র ইউরোপে রেনেসাঁর ভাবধারা এক নব বিপ্লবের জন্ম দেয়। ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়া এ বিপ্লব পুরাতন ও জরাজীর্ণ সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে তার স্থলে এক নতুন চেতনার সৃষ্টি করেছিল। এ চেতনা মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ধর্ম ও নৈতিক জীবনকেও নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রেরণা দিয়েছিল ।
• রেনেসাঁর ফলাফল : রেনেসাঁর ফলাফল ছিল যেমন ব্যাপক ও তেমনি সুদূরপ্রসারী। নিম্নে রেনেসাঁর ফলাফলসমূহ দেওয়া হলো : ১. ইহজাগতিক জীবনের প্রতি আকর্ষণ : রেনেসাঁর ফলে মানুষের পূর্ববর্তী পরজগতের প্রতি আকর্ষণ ক্রমে ইহজাগতিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যের পুনরুজ্জীবনের সাথে সাথে ইউরোপীয়দের নিকট যেন এক নতুন চেতনার দ্বার উন্মোচিত হয়। মানুষ পারলৌকিক জীবনের চিন্তা বাদ দিয়ে পার্থিব জীবনের প্রতি গভীর আকর্ষণ ও ভালোবাসা অনুভব করতে শিখে।
২. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : রেনেসাঁর ফলে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধিত হয় এবং মানুষ বুঝতে পারে যে, আত্মার অবনতি না ঘটিয়েও মানুষ হিসেবে নিজ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থেকে জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব এবং এটি অধর্মের কাজ নয় । এর ফলে মানুষ ধর্মের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে মানসিক মুক্তি লাভ করে। রেনেসাঁ প্রতিটি স্তরের মানুষের মনেই স্বীয় মর্যাদা সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করে । ফলে মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুনভাবে সম্মান ও মর্যাদা পেতে থাকে । ৩. আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা : রেনেসাঁ মধ্যযুগের রাজনৈতিক আদর্শের যে আমূল পরিবর্তন ঘটায়, তার মাধ্যমে সে আধুনিক রাষ্ট্রের আদর্শ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। মধ্যযুগের রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল রাজতন্ত্র এবং সে রাজতন্ত্র ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু রেনেসাঁর ফলে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার জ্ঞান মানুষকে মধ্যযুগের রাজনৈতিক আদর্শ ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষ বুঝতে পারে যে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো জনগণের উন্নতি ও কল্যাণমূলক শাসন পরিচালনা করা । সুতরাং মানুষ বুঝতে শিখে যে সরকার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে সে সরকারই সর্বশ্রেষ্ঠ ।
৪. জীবনাদর্শে পরিবর্তন : রেনেসাঁ ইউরোপের মানসিক ও নৈতিক জগতে বিপুল পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে এক নতুন জীবনাদর্শ স্থাপন করে । এ বিপ্লবকে রেনেসাঁর ফলাফলের দিক থেকে বিচার করলে একমাত্র খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। খ্রিস্টধর্মের প্রচার যেমন ইউরোপে নীতি ও চিন্তার জগতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করে, তেমনি রেনেসাঁও ইউরোপের মানুষের সম্মুখে এক নতুন ও উন্নত আদর্শের দ্বার উন্মোচন হয় ।
৫. শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্মেষ সাধন : শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রতি রেনেসাঁ এক নবউদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। মধ্যযুগে প্রাচীন মনীষীদের চিন্তাধারা এবং তাদের গ্রন্থাদির আলোচনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রেনেসাঁর ফলে লুপ্তপ্রায় সকল মনীষীর গ্রন্থাদি ও চিন্তাচেতনার সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপিত হয় এবং এর ফলে আধুনিককালের জ্ঞানার্জন ও চিন্তার পথ খুলে যায়। প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ মনীষীদের দার্শনিক চিন্তাধারার সাথে পরিচয়ের ফলে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার বিকশিত হয়। রেনেসাঁ কেবল প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যানুরাগই সৃষ্টি করেনি, এর মধ্য দিয়ে সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রেনেসাঁ ইউরোপ তথা মানব সভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়ে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করে। এ জাগরণের ফলে মানবতার মুক্তির সাথে মানবতা স্বকীয় মর্যাদা নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষে মানুষের মধ্যকার শ্রেণিভেদের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও মেধা সামাজিক স্তরবিন্যাস সৃষ্টি করে। এভাবে গণজাগরণের ছোঁয়া এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা প্রভৃতি সব মহাদেশেই ছড়িয়ে পড়ে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]