ইতিহাসের কালবিভাজন কীভাবে করা যেতে পারে? ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের সব ঘটনা কালক্রম বা কালবিভাজনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ঐতিহাসিকদের নিকট কালবিভাজনের বিষয়টি ইতিহাসের বা ইতিহাস চর্চার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। মূলত মানব সভ্যতার ধারাবাহিক উন্নতি এগিয়ে চলার একটি বিশেষ অবস্থা বা পর্যায়কে তার আগের ও পরের সময় বা পর্যায় থেকে পৃথক করে দেখানোর নিমিত্তেই ইতিহাসে কালবিভাজন বা যুগবিভাজনের সূত্রপাত। কালবিভাজনের সুনির্দিষ্টতা না থাকলে ইতিহাস তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে । তাই ইতিহাসের কালবিভাজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
● ইতিহাসের কালবিভাজন উল্লেখপূর্বক এর গুরুত্ব : ইতিহাসের কালবিভাজন উল্লেখপূর্বক এর গুরুত্ব নিম্নে বর্ণনা করা হলো : ১. ইতিহাসের কালবিভাজন : খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের পূর্বে মানুষের কোনো লিখিত ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায় না। এর ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিকরা ইতিহাসের কালবিভাজনকে প্রধানত তিনটি যুগে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে ছকের মাধ্যমে ইতিহাসের কালবিভাজন দেখানো হলো : ইতিহাসের সামগ্রিককালের গতিধারা
(Course of total time of history)
প্রাগৈতিহাসিক যুগ
প্রায় ঐতিহাসিক যুগ
ঐতিহাসিক যুগ
(Pre-historic age) (Proto-historic age)
(Historic age )
পুরোপলীয় যুগ
মধ্যপলীয় যুগ
নবোপলীয় যুগ
(Palaeolithic age)
(Mesolithic age)
(Neolithic age)
প্রাচীন যুগ (Ancient age)
মধ্যযুগ (Medieval age)
আধুনিক যুগ (Modern age)
উত্তর আধুনিক যুগ (Post modern age)
নিম্নে ইতিহাসের কালবিভাজন বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো :
ক. প্রাগৈতিহাসিক যুগ : যে সময়ে মানুষের কোনো লিখিত ইতিহাসের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না, সে সময়ক্ষে প্রাগৈতিহাসিক যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের পূর্বে মানুষের কোনো লিখিত ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া য না । এসময়ের পূর্বের কালকেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয় । এ যুগকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : প্রাচীন প্রস্তু যুগ ও নতুন প্রস্তর যুগ । প্রাচীন প্রস্তর যুগ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা : নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ খ. প্রায় ঐতিহাসিক যুগ : প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল প্রায় ঐতিহাসিক যুগ বলে পরিচিত। এ যুগের সময়কাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব না হলেও এতটুকু বলা যায় যে, ঐতিহাসিক যুগের ঠিক পূর্বব সময়কালটা হলো প্রায় ঐতিহাসিক যুগ। তবে এটি ছিল ঐতিহাসিক যুগের সূচনাপর্ব। এক এক অঞ্চলে প্রায় ঐতিহাসির যুগের সময়কাল ছিল এক এক রকম ।
গ. ঐতিহাসিক যুগ : যে সময় থেকে মানুষের লিখিত ইতিহাসের সন্ধান পেতে শুরু করে তখন থেকেই ঐতিহাসিক ই যুগের শুরু হিসেবে ধরা হয়। ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মানুষের কোনো লিখিত ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া না গেলেও ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়কালকে ঐতিহাসিক যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক যুগ লে আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা :
i. প্রাচীন যুগ : খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ সময় পর্যন্ত ব্যাপৃত ।
ii. মধ্যযুগ : ৪৭৬ থেকে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপৃত ।
iii. আধুনিক যুগ : ১৪৫৩ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত ব্যাপৃত।
২. ইতিহাসের কালবিভাজনের গুরুত্ব : নিম্নে ইতিহাসের কালবিভাজনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
.
ক. মানবসমাজের পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা : ইতিহাসের কালবিভাজন মানবসমাজের অগ্রগতির ধারাকে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যাস করে। এককথায় এটি মানবসমাজের অগ্রগতির ধারা বর্ণনাকারীর ভূমিকা পালন করে। সুতরাং এক্ষেত্রে ইতিহাসের কালবিভাজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য ।
খ. সুনির্দিষ্ট সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশের ধারা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ইতিহাসের কালবিভাজন আমাদেরকে কোনো নির্দিষ্ট সময়কালের সভ্যতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে। আর তাই চৈনিক, মিসরীয়, সিন্ধু এসব সভ্যতার সময়কাল ও স্বরূপ সম্পর্কে জানতে ইতিহাসের কালক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
গ. সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : মানব বিবর্তনের ধারায় সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের কালানুক্রমিক এবং ধারাবাহিক ইতিহাস । পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক কালসমূহ বিবৃত হয় । আর তাই ইতিহাসে কালক্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । ঘ. ইতিহাস অধ্যয়ন : ইতিহাস চর্চায় ঐতিহাসিক কালবিভাজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কার্যত মানবসমাজের কালক্রমের অধ্যয়নই হলো ইতিহাস। আর সময়ের এ বিভাজন ইতিহাস অধ্যয়নকে পরিশীলিত রূপ দান করেছে ।
প্রায়
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানব বিবর্তনের ধারায় সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের কালানুক্রমিক ও ধারাবাহিক ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য ঐতিহাসিক কালসমূহের বিভাজন অনস্বীকার্য। একটি নির্দিষ্ট সময়কাল থেকে আরেকটি সময়কালকে পৃথকভাবে অনুধাবন করার জন্যই ঐতিহাসিকেরা যেমন প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের বিভাজন করেছেন তেমনি প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের এ বিভাজনের ধারাবাহিকতায় রেনেসাঁ যুগেরই সৃষ্টি। সর্বোপরি মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশের ধারা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ইতিহাসের কালবিভাজন আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট সময়কালের সভ্যতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দান করে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]