প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে যা জান লেখ ।

উত্তর ভূমিকা : পৃথিবীতে মানুষের বসতি স্থাপনের পর থেকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে। তাই মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন হিসেবে প্রাগৈতিহাসিককালের বিভাজন ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানব সভ্যতার বিকাশ পর্বকে সুনির্দিষ্ট করে দেখানোর ক্ষেত্রে প্রাগৈতিহাসিককালকে কতিপয় ক্ষুদ্রকালে বিভাজন করা হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিককালের বিভাজনের দ্বারা মানব সভ্যতার উত্তরণকে সুন্দরভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা যায়। যার হাত ধরেই মানব সভ্যতা ঐতিহাসিক যুগে পদার্পণ করে ।
● ঐতিহাসিক যুগ : নিম্নে ঐতিহাসিক যুগ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরিচয় : প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে আমরা একটি দীর্ঘ সময়কে বুঝি, যার সূচনা হয় মূলত পৃথিবীতে মানুষের বসতি স্থাপন এর মাধ্যমে এবং শেষ হয় আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে। অন্যভাবে বলা যায়, সভ্যতার সূচনাকাল থেকে শুরু করে যিশু খ্রিস্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত যখন মানুষ সৰ্বপ্ৰথম ট লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার ও নগরভিত্তিক সভ্যতার গোড়াপত্তন করতে সক্ষম হয় ঐ সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ কবলে অভিহিত করা হয় ।
খ, প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে জানার উপায় : প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে জানার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত প্ৰামাণিক তথ্য-উপাত্ত বা কোনো গ্রন্থ পাওয়া যায়নি। কারণ ঐ সময়ে কোনো লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটেনি । আর ’িতাই আমাদেরকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে জানার জন্য ঐ সময়ের জীবাশ্ম, গুহাচিত্র, হাতিয়ার এবং মানুষের অব্যবহার্য বিভিন্ন দ্রব্যাদির ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করতে হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগকে পাথর যুগ বলেও অভিহিত করা হয় ।
গ. প্রাগৈতিহাসিক যুগকে পাথরের যুগ বলার কারণ : প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পাথর। বস্তুত পাথর যুগে মানুষ বেঁচে থাকার প্রধান সম্বল হিসেবে পাথর সংগ্রহ করা, পাথর ভাঙা, পাথর কাটা ও ঘষেমেজে পাথরকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু করে । প্রকৃতপক্ষে বন্য ও হিংস্র পশুর আক্রমণ হতে মানুষ নিজেদেরকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে, মৎস্য শিকার, বড় বন্যপশুর শিকার, গাছে বসবাসরত পশুপাখি শিকার, পশুর মাংস বিচ্ছিন্ন করা অর্থাৎ কাটার ক্ষেত্রে, পাথর ভাঙা বা কাটার ক্ষেত্রেও পাথরের ব্যবহার ব্যতীত আর কোনো বিকল্প পদ্ধতি মানুষের জানা ছিল না। দৈনন্দিন জীবনে পাথরের ওপর এরূপ নির্ভরশীলতার জন্যই প্রাগৈতিহাসিক যুগের অপর নাম দেওয়া হয়েছে পাথর যুগ (প্রস্তর যুগ) ।
ঘ. প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন পর্যায় : প্রাগৈতিহাসিক যুগ বা পাথর যুগ প্রধানত তিন পর্যায়ে বিভক্ত। যথা : ১. পুরোপলীয় যুগ, ২. মধ্যপলীয় যুগ ও ৩. নবোপলীয় যুগ ।
১. পুরোপলীয় যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনাকাল পুরোপলীয় যুগ বা পুরাতন প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত। পুরোপলীয় যুগে ব্যবহৃত পাথর ও পাথরের অস্ত্রশস্ত্র ছিল স্থূল, অমসৃণ ও অমার্জিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের তিনটি বিভাজনের মধ্যে পুরোপলীয় যুগই ছিল সর্বাপেক্ষা বেশি দীর্ঘস্থায়ী। পুরোপলীয় যুগে মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, জীবাশ্ম প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে এ যুগের সময়কাল জানা যায়। এ যুগ পঞ্চাশ হাজার বছর থেকে শুরু করে পনেরো হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল বলে মনে করা হয় ।
২. মধ্যপলীয় যুগ : প্রায় দশ হাজার বছর পূর্বে বরফ যুগের অবসান ঘটে। বরফ যুগের অবসানের পর এবং 510 নবোপলীয় যুগের পূর্বে যে যুগের সূচনা হয় তা মধ্যপলীয় যুগ নামে পরিচিত। অন্যভাবে বলা যায়, পুরোপলীয় ও নবোপলীয় যুগের মাঝখানে অপেক্ষাকৃত স্বল্পকাল স্থায়ী যে যুগের অবস্থান চিহ্নিত করা হয় তা মধ্যপলীয় যুগ নামে পরিচিত। পুরোপলীয় যুগ ও নবোপলীয় যুগের মধ্যবর্তী সময়ে মধ্যপলীয় যুগের সময়কালের ব্যাপ্তি ছিল আনুমানিক দশ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ হতে সাত হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এ যুগকে আবার মেসোলিথিক বা মধ্যপ্রস্তর যুগ নামেও আখ্যায়িত করা হয় ।
৩. নবোপলীয় যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে নবোপলীয় যুগকে মানব সভ্যতার প্রকৃত ভিত সংস্থাপনের সময়কাল বলে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য এ যুগেও মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন ছিল পাথর। তবে এ যুগে পাথরের ব্যবহার মানুষের জীবনে পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করে। পাথরের ব্যবহার পরিবর্তনের কারণে এ যুগকে নবোপলীয় যুগ অর্থাৎ নতুন পাথরের যুগ বলে অভিহিত করা হয়। এ যুগে মানুষ পাথরকে আরও নতুনভাবে আয়ত্ত করে । এর দ্বারা অপেক্ষাকৃত উন্নত মসৃণ ও ধারালো হাতিয়ার তৈরি করে এবং কৃষিকাজসহ নানাভাবে পাথরকে সার্থকরূপে ব্যবহার করতে থাকে সে যুগকে নবোপলীয় যুগ বলে অভিহিত করা হয়। নবোপলীয় যুগে পূর্বের যেকোনো যুগ থেকে মানুষ অনেক বেশি উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয় ।
ছাড়া মানুষ পাথরের সাহায্যে উন্নত হাতিয়ার উদ্ভাবন, নারীসমাজ কর্তৃক কৃষি পদ্ধতির সূচনা, শস্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, শুপালনের সূচনা, আগুন করায়ত্তকরণ, কুমারের চাকা আবিষ্কার, সামাজিক বন্ধনের সূচনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি াধন করে। এজন্য অনেক ঐতিহাসিকগণ নবোপলীয় যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলেও আখ্যা দেন ।
পসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ।রিসমাপ্তি ঘটলেও তা মানব সভ্যতার জন্য আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ প্রাগৈতিহাসিক যুগে গানুষের অর্জন ও সফলতা আর বর্তমান যুগে মানুষের অর্জন ও সফলতার মধ্যে একটি বিস্তর পার্থক্য নিরূপণের মাধ্যমে ানব সভ্যতার উন্নয়নকে বিশ্লেষণ করা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]