প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : মানবজাতির ক্রমবিকাশ অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। পৃথিবীর ৫০০ কোটি বছর সময়সীমার মধ্যে অনেক প্রাণীর উত্থান বা পতনের ধারাবাহিকতায় আজকের মানুষের উদ্ভব। পুরাতাত্ত্বিকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রায় চার/পাঁচ কোটি বছর পূর্বে এক প্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়, যারা গাছে বসবাস করতো। এরা ইতিহাসে প্রাইমেট নামে পরিচিত। বিভিন্ন জীবাশ্মের ওপর দীর্ঘকাল যথাযথ গবেষণা ও নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবেত্তাগণ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, আদিকালের প্রাইমেটরাই অস্ট্রালোপিথেকাস, হোমো ইরেক্টাস, জাভা মানব প্রভৃতি নামে প্রায় লক্ষাধিক বছর ধরে ক্রমবিবর্তিত হয়ে আজকের মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে ।
• প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষের ক্রমবিবর্তন : বিভিন্ন স্তরে ক্রমবিবর্তিত হয়ে প্রাগৈতিহাসিককালের মানুষরা আজকের আধুনিক মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে । নিম্নে প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষের ক্রমবিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ তুলে ধরা হলো : ১. অস্ট্রালোপিথেকাস : মানবজাতির পূর্বপুরুষের নাম অস্ট্রালোপিথেকাস। মানুষের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে অস্ট্রালোপিথেকাস একটি বিশেষ নাম। দক্ষিণ আফ্রিকাতে অস্ট্রালোপিথেকাস নামক এক প্রকার প্রাইমেটদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এদের চোয়াল, পা প্রভৃতি ছিল প্রায় মানুষের মতো এবং মাথা ছিল মানুষের মাথার প্রায় অর্ধেক। দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ১৯২৪ সালে বিজ্ঞানীরা খননকার্যের অস্ট্রালোপিথেকাসের মাথার খুলি আবিষ্কার করেন। ১৯৫৯ সালে তাঞ্জানিয়ায় অনুরূপ মানবজাতির অনেকগুলো মাথার খুলি আবিষ্কৃত হলে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌছান যে, অস্ট্রালোপিথেকসরা গোত্রভুক্তভাবে জীবনযাপন করতো। অস্ট্রালোপিথেকাস দুই ভাগে বিভক্ত। যথা : ক. অস্ট্রালোপিথেকাস বোরাস্টাস ও খ. অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানস্ ।
২. হোমো ইরেক্টাস : অস্ট্রালোপিথেকাসের উত্তরসূরি হোমো ইরেক্টাস। যাদের চোয়াল, পা প্রভৃতি ছিল প্রায় মানুষের মতো এবং মাথা ছিল মানুষের মাথার প্রায় অর্ধেক। এরা দুই ভাগে বিভক্ত। যথা :
ক. জাভা মানব : ১৮৯১ সালে অনুসন্ধান চালিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে প্রাচীন মনুষ্য প্রজাতির কয়েকটি ফসিল পাওয়া গেছে। জাভা দ্বীপে আবিষ্কৃত এ প্রাচীন মানুষই জাভা মানব হিসেবে পরিচিতি পায়। তারা মাঝারি উচ্চতার মানুষ ছিল এবং দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারত ।
খ. পিকিং মানব : মানবজাতির বিবর্তনের অগ্রযাত্রায় জাভা মানব, খাড়া মানব প্রভৃতির মতোই এক মনুষ্য প্রজাতি হলো পিকিং মানব। চীনের পিকিং নামক অঞ্চলে এদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে এদেরকে পিকিং মানব নামে অভিহিত করা হয়। প্রায় ৭ লাখ বছর আগের এ মনুষ্য প্রজাতির আবিষ্কার হয়। এরা এশিয়াতে প্রাচীন মানবের বসবাসের তথ্যকেই ইঙ্গিত করে। পিকিং মানব আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের মতোই ছিল। পিকিং মানবেরা অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির ছিল। পিকিংদের মধ্যে পুরুষের উচ্চতা ছিল ১৫৬ সে.মি. এবং মেয়েদের ১৪৪ সে.মি.। এদের মাথার আকৃতি ছিল চ্যাপ্টা কম উচ্চতার এবং নিচের চোয়ালের হাড় ছিল সামনের দিকে। এরা চাষাবাদ জানত না। গাছের ফলমূল এবং বন্যপ্রাণী শিকার ছিল এদের খাবারের প্রধান উৎস। তারা বন্যপ্রাণীর চামড়া পরত এবং খাবার হিসেবে ফলমূল মজুত করে রাখত। এরা গুহায় বাস করতো। তাদের আয়ুষ্কাল ছিল আধুনিক মানুষের তুলনায় অনেক কম। মাত্র ৪.৫% লোক ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচত। আর ১৪ বছরের নিচে মারা যেত ৬৮.২% লোক । পিকিংদের মধ্যে পুরুষরা শিকার করতো, আর মেয়েরা গৃহস্থালির কাজ করতো।
৩. নিয়ানডারথাল মানব : মানবজাতির রিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট জাভা মানব, পিকিং মানব প্রভৃতির সমগোত্রীয় আরেকটি নাম নিয়ানডারথাল মানব। ১৮৫৬ সালে জার্মানিতে প্রথম নিয়ানডারথাল মানবের মূর্তি আবিষ্কৃত হয় । এরা পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস করতো। নিয়ানডারথাল মানুষের গড় উচ্চতা আধুনিক মানুষের চেয়ে অনেক কম ছিল । তাদের পুরুষদের গড় উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ১ ইঞি থেকে ৫ ফুট ৫ ইঞি। তারা আকারে অনেক ছোট প্রকৃতির ছিল। পুরাতাত্ত্বিকগণ বলেন, এরা আকারে অনেক ছোট হলেও এদের হাত-পা অনেক শক্ত ছিল। জাভা মানবের মতো এদের মুখের হাড় সামনের দিকে প্রসারিত ছিল । তাদের দাঁত অনেক বড় ছিল এবং তারা কিছুটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত । ৪. হোমো স্যাপিয়েন্স : নৃবিজ্ঞানীরা আধুনিক মানবজাতির নাম দেন হোমো স্যাপিয়েন্স। ক্রোম্যাগনন মানুষকে এদের খুব কাছাকাছি বলে মনে করা হয় । ফ্রান্সের ক্রোম্যাগনন পাহাড়ি এলাকায় ১৮৬৮ সালে মানুষের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। ক্রোম্যাগনন মানবের প্রাপ্ত নিদর্শন গবেষণার পর পুরাতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪০ হাজার থেকে ১৫ হাজার অব্দ পর্যন্ত পৃথিবীতে ক্রোম্যাগনন মানুষ বসবাস করতো। দৈহিক গঠনের বিচারে ক্রোম্যাগনন মানব আধুনিক মানবের মতোই ছিল । তারা সোজা হয়ে চলতে পারত । তাদের দেহ প্রশস্ত কাঁধ, সোজা ঘাড়বিশিষ্ট ছিল। ক্রোম্যাগনন মানবের গড় উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১০ ইঞ্জি থেকে ৬ ফুট এবং গড় ওজন ছিল ১৫০ পাউন্ড। মগজের পরিমাণ ছিল ১৫০০ সি.সি. । উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানুষের ক্রমবিকাশ একদিনে ঘটেনি; বরং কোটি বছর ক্রমবিবর্তনের পর উদ্ভাবিত হয়েছে আজকের বিকশিত আধুনিক মানুষ। আজকের মানবসমাজ পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমাজ ও সভ্যতার ধারণার বিকাশ ঘটিয়ে বর্তমান উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। আর তাই বলা যায়, বর্তমানের মানব সভ্যতার উৎকর্ষ পরিপূর্ণভাবে বুঝার জন্য মানবজাতির ক্রমবিবর্তন জানা একান্ত অপরিহার্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]