প্রায় ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? প্রায় ঐতিহাসিক যুগে মানব সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর ৷

উত্তর ভূমিকা : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ বলতে প্রায় ঐতিহাসিক যুগ বোঝায় । মানুষ ধাতু ব্যবহার বিশেষত তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার ব্যবহার ‘শেখে। আর এ ধাতুসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ নতুন নতুন হাতিয়ার তৈরি করলে পূর্বেকার পাথরের হাতিয়ারের চাহিদা কমতে থাকে। মানুষ ধাতুর দ্বারা সূক্ষ্ম ও ধারালো হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও তৈরি করে, ফলে মানুষ নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয় । ধাতু ব্যবহারে এরূপ নীরব পরিবর্তনের ফলে অনেকে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগকে সুপ্ত ঐতিহাসিক যুগও বলে থাকেন । প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ : প্রায় ঐতিহাসিক যুগকে অনেক ঐতিহাসিক প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ বলেও অভিহিত করেছেন। প্রায় ঐতিহাসিক যুগের সঠিক সময়কাল নির্ণয় করা কঠিন। তবে প্রোটো বা প্রায় ঐতিহাসিক যুগ বলতে আমরা এমন একটি যুগকে বুঝে থাকি যাকে প্রাগৈতিহাসিক যুগও বলা যায় না, আবার ঐতিহাসিক যুগও বলা যায় না । এই দুই যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রায় ঐতিহাসিক যুগ বলে চিহ্নিত করা যায়। এই সময়কালে মানুষ পাথর ও ধাতু ব্যবহার করে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরি করে। ফলে প্রোটো ঐতিহাসিককাল থেকেই সমাজ বিকাশ অনেক দ্রুততর সময়ে ঘটতে থাকে।
প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানবসমাজের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছিল বা এ যুগের শনাক্তকারী বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন ছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ধাতুর ব্যবহার বৃদ্ধি : নবোপলীয় যুগের শেষদিকে মানুষ তামার উদ্ভাবন করে। এর ফলে মানব ইতিহাসে সংযোজিত হয় আরও একটি নতুন বৈশিষ্ট্য। এসময়ে মানুষ আগুনকে ব্যবহার করে তামা ও টিন মিশিয়ে সফলভাবে ব্রোঞ্জ তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং ব্রোঞ্জের হাতিয়ার পাথরের চেয়ে অধিক ঘাতসহ ছিল। ফলে ব্যাপকভাবে ব্রোঞ্জের ব্যবহার বেড়ে যায়। কাজেই তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি বিভিন্ন রকমের হাতিয়ার তৈরির ফলে মানবসমাজ প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ বেশ অগ্রগামী হয় ।
২. উন্নত হাতিয়ার উদ্ভাবন : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানুষ ধাতু গলাবার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। ফলে মানুষ পাথরের পরিবর্তে উন্নত হাতিয়ার উদ্ভাবন করতে পেরেছিল। ধাতু দ্বারা লাঙলের ফলা, চাকু, তির, কুঠার, বর্শা, তলোয়ার, কোদাল প্রভৃতি তৈরি আরও সহজ হয়ে ওঠে। এ যুগে মানুষ ধাতু নির্মিত কুঠার, ছুরি প্রভৃতি দিয়ে কাঠ কেটে প্ৰয়োজনীয় ব্যবহার্য উপাদান তৈরি করে। এসময় জমি চাষের ক্ষেত্রে ধাতব কোদাল বেশ সহায়ক হয়ে ওঠে। তদুপরি কাঠের লাঙ্গলের ফালায় ধাতুর পাত ব্যবহৃত হওয়ায় অত্যন্ত সহজ ও দ্রুততার সাথে জমি চাষ করা সম্ভব হয়।
৩. পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সূচনা : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে পুরুষরা খাদ্য উৎপাদন, পশুপালন, গৃহনির্মাণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে তোলে। এসময়ে গৃহকার্য সম্পাদন ও পারিবারিক কৰ্তৃত্বগত দিকে মেয়েরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। এসময় মেয়েদের কাজ দাঁড়ায় সন্তান লালনপালন, রান্না করা, ঘর গোছানো, কৃষি ও পশুপালনে সহযোগিতা প্রভৃতি। যার ফলে পূর্বের মাতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামো পরিবর্তিত হয় এবং পুরুষরা পরিবার ও সমাজের মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।
৪. নদী তীরে বসতি স্থাপন : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের একটি বড় বৈশিষ্ট্য নদী তীরে মানুষের বসতি স্থাপনের সূচনা। কৃষিকাজ, পশুর খাবারের পানি, নদীপথে সহজে মালামাল পরিবহণ প্রভৃতি সুবিধা প্রাপ্তিতে নদী অনেক বেশি কার্যকরী ছিল। ফলে মানুষ তার বসতি স্থাপনের জন্য নদী তীরকে বেছে নেয়। এভাবে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে নদীর তীরে কৃষকদের বসতি গ্রাম ও কৃষি খামার গড়ে ওঠে। যে কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ক্রমে জনবসতির ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং গ্রাম বিবর্তিত হয়ে হাটবাজার গড়ে ওঠতে শুরু করে ।
৫. হাটবাজার সৃষ্টি : নবোপলীয় যুগে বিনিময় প্রথার সূচনা হওয়ার পর সমাজের মানুষ একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পেশায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। কৃষক, পশুপালক, তাঁতি, কামার, কুমার প্রভৃতি নানাবিধ পেশার লোক সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকে। এ নানাবিধ পেশার লোক তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হয় এবং এখানে তারা বিনিময় প্রথার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লেনদেন করতো। এভাবে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে পণ্য বিনিময়ের নির্দিষ্ট স্থানকে কেন্দ্র করে হাটবাজার গড়ে ওঠে। এ বিনিময়ের স্থান হাটবাজারসমূহ পরবর্তীকালে ব্যবসা বাণিজ্যের সফল সূচনা করে ।
৬. দাসপ্রথার সূচনা : মানুষ যখন বসতি ও গ্রাম গড়ে তোলার মাধ্যমে ধীরে ধীরে গোষ্ঠীবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত হয় তখন বিভিন্ন গ্রাম ও গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ, শক্তি প্রভৃতি বিষয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে কারণে তারা নিজেদের মধ্যে নেতা নির্বাচন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং নেতার নির্দেশে তারা অন্য জাতিকে পরাজিত করে পরাজিতদের দাস হিসেবে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। দাসদের দ্বারা অপেক্ষাকৃত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রথা প্রচলিত হয়। এভাবে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানবসমাজ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমাজে দাসপ্রথার সূচনা হয় । ৭. পশুর ব্যবহার : প্রোটো' ঐতিহাসিক যুগে মানুষ চাষের জন্য ভালোভাবে লাঙল টানার প্রয়োজন এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে পশুকে ব্যবহার করতে শুরু করে। পশুকে চাষের কাজে ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। অল্পসময়ে খুব ভালোভাবে অধিক পরিমাণ জমিচাষ করা ও অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। তাছাড়া পশুকে কাজে লাগিয়ে ভারী পণ্য পরিবহণ করার ফলে অল্পসময়ে খুব বেশি পরিমাণ পণ্য স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানুষ স্বীয় বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের চেয়েও শক্তিশালী পশুকে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
৮. রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণির উদ্ভব : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শিখে গ্রাম ও বাজার গড়ে তোলে । এসময় মানুষ দুশ্চিন্তা হতে অনেকটা মুক্ত হওয়াতে ধীরে ধীরে আধিপত্যবাদী চিন্তায় অনুপ্রাণিত হতে থাকে । নিজের গ্রাম ও গোষ্ঠীর মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা একজন ব্যক্তিকে দলনেতা মনোনীত করার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করে। যিনি নেতা হিসেবে ঐ গ্রাম বা গোষ্ঠীকে রক্ষার সর্বময় কর্তৃত্বে থাকতেন। এসময়ে মানুষ পার্শ্ববর্তী গ্রামের আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য কয়েকটি গ্রাম মিলে একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এভাবে সুদীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে গোষ্ঠী ও গ্রামসমূহ একত্রিত করার মধ্য দিয়ে মানুষ ক্রমশ রাষ্ট্র নামক বৃহৎ সংগঠন গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যায় ৷ উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মানুষের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। কৃষি আবিষ্কার ও খাদ্য উৎপাদন, পশুর ব্যবহার, ধাতুর ব্যবহার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ মানবসমাজের অগ্রগতির ধারাকে আরও বেগবান করে। এসময়ের বিভিন্ন অগ্রগতিমূলক কার্যক্রম মানুষকে ধীরে ধীরে প্রাচীন যুগের দিকে নিয়ে যায়। যা প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যালোচনা করলে পরিলক্ষিত হয়। ফলে মানুষ প্রাকৃতিক সব প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয় ।

প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের নগরায়ণ কী? এ নগরায়ণের কারণগুলো বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ নবোপলীয় যুগে মানুষ কৃষি আবিষ্কার, ধাতু ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলে একসময়কার যাযাবর জীবনযাপনকারী মানবসমাজ নদী তীরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। এসময়ে মানুষ অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদন, বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শাসক শ্রেণির উদ্ভব, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি মানুষকে ক্রমে নগরায়ণের দিকে নিয়ে যায়। যার ফলে ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেকেই নবোপলীয় যুগকে নগরায়ণের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন ।
প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের নগরায়ণ : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ কথাটির অর্থ প্রায় ঐতিহাসিক যুগ । মূলত প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ বলতে আমরা এমন একটি যুগ বা কালকে বুঝে থাকি যে যুগকে প্রাগৈতিহাসিক যুগও বলা যায় না আবার ঐতিহাসিক যুগও বলা যায় না। ফলে পণ্ডিতগণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে উক্ত দু যুগের মধ্যবর্তী স্বল্পকাল স্থায়ী আরও একটি যুগের অবতারণা করেছেন যাকে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ বলা হয় । এসময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল নগর বিপ্লব । নবোপলীয় যুগের কৃষি ব্যবস্থা এসময়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যের যোগান দেয়। ফলে উৎপাদনভিত্তিক কৃষি সভ্যতার সম্প্রসারণ, ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শ্রমিক শ্রেণির অবদানের ফলে নগরায়ণ ঘটে। যাকে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের নগরায়ণ বলা হয়ে থাকে ।
প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে নগরায়ণের কারণ : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে নগরায়ণের কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো : ১. উদ্বৃত্ত কৃষি ব্যবস্থা : আদিম যুগে মানুষ নিজে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না। ফলে শিকার ও খাদ্যসংগ্রহের ওপর তাদের জীবিকা নির্ভর করতো। নবোপলীয় যুগের শেষের দিকে মানুষ কৃষির আবিষ্কার করে নিজেদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়। এভাবে কৃষিকাজে মানুষের দক্ষতা আসলে অধিক পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হয় । ফলে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পরও কিছুটা উদ্বৃত্ত থাকত। কৃষির এরূপ উদ্বৃত্ত ফসল মানুষকে খাদ্য সংস্থানের চিন্তা থেকে বেরিয়ে
স্থায়ী বাসস্থান গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। স্থায়ী বাসস্থান গঠনের ফলে মানুষের মধ্যে নগরায়ণের চিন্তা আসতে থাকে ।
২. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : নবোপলীয় যুগে বিবাহশাদির সূচনা ঘটে। এসময়ে দুধরনের বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল। পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকার ফলে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে মানুষ অধিক কাজকর্মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে তৎপর হয়। মানুষ স্থায়ী বসতিকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে । যা নগর গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
৩. শাসক শ্রেণির উদ্ভব : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগেই রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণির উদ্ভব ঘটতে থাকে । এসময় ধাতুর ব্যবহার আয়ত্ত করা, গ্রাম ও বাজার গড়ে তোলা এবং খাদ্যের দুশ্চিন্তা হতে অনেকটা মুক্ত হওয়াতে মানুষ ক্রমশ আধিপত্যবাদী চিন্তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে থাকে। স্বীয় গ্রাম ও গোষ্ঠীর মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা একজন ব্যক্তিকে দলনেতা মনোনীত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে । এ মনোনীত নেতার নির্দেশে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের মানুষকে আরও সংঘবদ্ধ হতে থাকে । এভাবে দল নেতার নেতৃত্বে মানুষ উন্নয়নের ধারা উন্মোচনের সাথে নগরায়ণের শুভ সূচনা করতেও সক্ষম হয় ।
৪. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের শুরুতে মানুষ নদী তীরে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। নৌযান ও পালের ব্যবহারের ফলে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে ওঠে। মানুষ তার বরে আশপাশে দ্রব্য বিনিময়ের জন্য হাটবাজার প্রতিষ্ঠা করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতির ফলে সেখানে বরোজের মানুষেরাও আসতে শুরু করে। এভাবে ছোট হাট একসময় বড় হাটে পরিণত হয়। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে।
নগরায়ণের শুভ সূচনা হয় ।
৫. দাস শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি : কৃষির উন্নতি ও বিনিময় প্রথার সাথে সাথে নেতৃত্ব বিকাশের ফলে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে এক গোত্র পার্শ্ববর্তী অন্যগোত্রের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। পরাজিত গোত্রের সামর্থবানদের দ্বারা জয়ী গোত্রের লোকেরা কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজ করে নিত। এভাবে সহজলভ্য শ্রমের মাধ্যমে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে নগরায়ণের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৬. লৌহের ব্যবহার : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে তামা, ব্রোঞ্জ, টিনের ব্যবহারের সাথে লৌহ ব্যবহারের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়তে থাকে। এশিয়া মাইনরের খনিগুলোতে আকর, প্রস্তর ধাতু ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দ্রব্যাদির সাথে লৌহ জড়িয়ে থাকত । এসব পিণ্ড গলিয়ে লৌহ তৈরি করা হতো। লৌহের ব্যবহার আয়ত্ত করার ফলে মানুষ বড় বড় নগর ও বাড়িঘর তৈরি করতে থাকে । যাকে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের নগর বিপ্লব বলা হয় ।
৭. নদী তীরে বসতি স্থাপন : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে নদী তীরবর্তী উর্বর অঞ্চলে ধাতু তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত কম উর্বর এলাকা মানুষ প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে অতি গুরুত্বের সাথে পশুপালনের কাজে ব্যবহার করতো। এভাবে পশুপালন, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা বিনিময় প্রথাকে আরও কার্যকর করে তোলে। বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে সার্থক করে তোলার জন্য হাটবাজার বসতে শুরু করে। এভাবে হাটবাজার যখন অর্থব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করে তখন থেকেই ঐ হাটকে কেন্দ্র করে নগরায়ণের প্রসার ঘটতে থাকে । ৮. ধর্মীয় স্থান : এসময়ে ধর্মীয় তীর্থস্থানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোক একত্রিত হতে থাকে । এসব ধর্মীয় তীর্থস্থানকে কেন্দ্র করে মানুষের ঢল নামতে থাকে এবং এভাবে ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোতে নগরায়ণের সূচনা ঘটে। ৯. অনুকূল আবহাওয়া : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের অনুকূল আবহাওয়া কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসা বাণিজ্যের বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে মানুষের সাথে মানুষের লেনদেন বাড়তে থাকলে মানুষ ভোগবিলাস ও আভিজাত্যপূর্ণ জীবনের লোভে নগরায়ণের কথা বা নগর জীবনের কথা ভাবতে থাকে। এরূপ ভাবনা থেকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বড় বড় খামারিরা একত্রিত হয়ে নগর গঠনে সম্মিলিত অবদান রাখে।
১০. শিক্ষার প্রসার : মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজতর করা এবং বুদ্ধি দ্বারা অপরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির জন্য পড়াশুনা তথা জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে। তখন শিক্ষার প্রসার ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের উর্বর কৃষি ব্যবস্থা, বিনিময় প্রথা, নদীকেন্দ্রিক বসতি স্থাপন ও নদীভিত্তিক সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য মানুষকে নগরায়ণের দিকে নিয়ে যায়। নগরায়ণের চিন্তাভাবনা মানুষের মধ্যে যেমন আধুনিকতার বীজ রোপিত করে তেমনি উন্নয়নের গতিকেও জোরদার করে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেমন রোম, এথেন্স, স্পার্টা, জেরুজালেম, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি নগর গড়ে ওঠতে থাকে। এ কারণে ঐতিহাসিকগণ এ সময়কালকে প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের নগর বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]