উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার যে যুগে রাজতন্ত্র, প্রশাসনিক কাঠামো কেন্দ্রীয় শাসন, ধর্ম প্রভাবিত জীবন, কৃষি বিকাশ, নগর জীবন, লিখিত পুস্তক প্রবর্তন, পুরোহিত শ্রেণি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গড়ে ওঠে তাকে প্রাচীন যুগ বলা হয় । প্রাচীন যুগ শুরু হয় আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে। ইউরোপের ইতিহাসে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন যুগের অবসান ঘটলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাচীন যুগের অবসান ঘটে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে। প্রাচীন যুগ স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে পূর্ববর্তী প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে ।
● প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্র শাসনব্যবস্থা : প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো পরিপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। এ রাষ্ট্রগুলোর অধীনে নির্দিষ্ট জনসংখ্যা ও শাসনকর্তা ছিল। এ প্রসঙ্গে আমরা প্রাচীন মিসর, ব্যাবিলন, পারস্য প্রভৃতির নাম উল্লেখ করতে পারি। রাজতান্ত্রিক,সুনির্দিষ্ট অবস্থান, নাম ও স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই মূলত প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে প্রাচীন যুগে বিশ্বের কোথাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা একেবারে ছিল না এমন ধারণা একেবারে সঠিক নয়। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র এথেন্সে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রমাণ পাওয়া যায় ।
২. নগর সভ্যতার সূচনা : প্রাচীন যুগের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো নগর সভ্যতার সূচনা। পূর্ববর্তী প্রাগৈতিহাসিক ও প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের গ্রামীণ সভ্যতার গণ্ডি পেরিয়ে এ যুগে মানুষ নগর গড়ে তুলতে সক্ষম হয় । রোম, এথেন্স, স্পার্টা প্রভৃতি নগর গড়ে তুলে মানুষ প্রাচীন যুগে সভ্যতাকে আরও অগ্রগামী করে তোলে ।
৩. আইন ও বিচার : প্রাচীন যুগে রাষ্ট্র, নগর ও শাসকশ্রেণি গড়ে ওঠার পাশাপাশি আইন ও বিচারব্যবস্থার সূচনা ঘটতে থাকে। এ যুগে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে সুমেরীয় সম্রাট ডুঙ্গি বাণিজ্য, ঋণ চুক্তি, ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে ব্যাবিলনীয় সম্রাট হাম্বুরাবি এ আইনগুলোকে সংকলিত ও উন্নত করে প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, রোমানরাও প্রাচীনকালে ৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে আইন লিপিবদ্ধ করেছিল। সুতরাং বলা যায়, আইন ও বিচারব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ প্রাচীন যুগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।
৪. সামরিক শক্তির উদ্ভব : প্রাচীন যুগে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক শক্তির উদ্ভব ঘটে। এ যুগে শাসকশ্রেণি স্বীয় ক্ষমতা ধরে রাখা, বহিরাক্রমণ প্রতিহত করা এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি করেন। পারস্য সম্রাট দারিয়ূস, প্রথম জারেক্সেস, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার, আলেকজান্ডার বিশাল সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলেন। অতএব দেখা যায়, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা প্ৰাচীন যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।
৫. পিতৃতান্ত্রিক ও পেশাভিত্তিক সমাজ : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ থেকেই সমাজে পুরুষদের অবস্থান শক্তিশালী হতে থাকে এবং প্রাচীন যুগেও তা অব্যাহত থাকে। প্রাচীন যুগে যেসব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তার সবগুলোর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় পুরুষ শাসকবৃন্দ। তাছাড়া এ যুগে কর্মের ওপর ভিত্তি করে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের উদ্ভব দেখা যায়। অভিজাত শ্রেণি রাজনীতি ও শাসনকার্যের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পুরোহিত শ্রেণি ধর্মকর্ম নিয়ে অধিক ব্যস্ত থাকতেন। এভাবে ব্যবসায়ী ও বণিক, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি পেশাভিত্তিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
৬. ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞান : প্রাচীন যুগে ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মানুষ বেশ গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়। সুমেরীয়, মিসরীয়, গ্রিক, চৈনিক, আর্য প্রভৃতি সভ্যতার লোকেরা ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করে । প্রাচীন যুগে মিসরীয়রা হায়ারোগ্লিফিক, সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম (চিত্রলিপি) নামক লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে । ফিনিশীয়রা ভাষার ব্যবহারের জন্য ২২টি বর্ণ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয় ।
৭. কৃষির উন্নতি : নবোপলীয় ও প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের মতো প্রাচীন যুগেও কৃষি পদ্ধতি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিরূপে বজায় ছিল। তবে এ যুগে লাঙলের ফলায় লোহা ব্যবহার করা এবং লাঙল টানার ক্ষেত্রে পশুকে সফলভাবে কাজে লাগানোর ফলে চাষকার্য সহজ ও বেশ অগ্রগামী হয়ে ওঠে। সহজে ও ভালোভাবে জমিচাষ করার ফলে অধিক ফসল উৎপাদন হতে থাকে। এসময়ে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য শস্যাগারে জমা রাখত। ধীরে ধীরে দেখা যায় প্রাচীন যুগে বিভিন্ন শস্য চাষ হতে থাকে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কৃষিভিত্তিক নানা প্রকার শিল্পের উন্মেষ ঘটতে থাকে ৷
৮. শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য : শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উৎপত্তি ও বিকাশ সাধন প্রাচীন যুগের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক। প্রাচীনকালে মিসর, ব্যাবিলন, পারস্য, গ্রিস, ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানাবিধ শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে। মিসরীয়রা সিরিয়া, ফিনিশিয়া, প্যালেস্টাইন প্রভৃতি দেশে চাল, লিনেন কাপড়, প্রভৃতি রপ্তানি করতো এবং হস্তীদন্ত, স্বর্ণ, রৌপ্য, কাঠ প্রভৃতি আমদানি করতো। প্রাচীন রোমান জাতি ব্যবসা বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করার জন্য গিল্ড প্রথা গড়ে তুলেছিল ।
৯. ধর্মীয় অবস্থা : প্রাচীন যুগের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য ছিল খুবই বৈচিত্র্যময়। প্রাচীনকালে বর্তমান সময়ের মতো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষ একেশ্বরবাদী ও বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করতো। তাছাড়া তারা প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি যেমন- সূর্য, বাতাস প্রভৃতি এবং অনিষ্টকারী ও কল্যাণকারী দেবতার পূজা করতো। এভাবে দেখা যায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ দেবদেবীর আরাধনা করতো। শুধুমাত্র হিব্রু ভাষগোষ্ঠী ব্যতীত আর কোনো অঞ্চলের মানুষের একেশ্বরবাদের ওপর বিশ্বাস ছিল না।
তি
১০. বিনোদন : প্রাচীন যুগের মানুষেরা বিনোদনের জন্য মৎস্য ও অন্যান্য প্রাণী শিকারে বের হতো। প্রত্যহ উদ্যান নির্মাণ করা, পাশাখেলা, সংগীত, রথ প্রতিযোগিতা প্রভৃতির মাধ্যমে বিনোদন লাভ করতো । প্রাচীন যুগে বিনোদন ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসে অলিম্পিক খেলার প্রচলন ঘটে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নগররাষ্ট্র, সামরিক শক্তির উন্নয়ন, ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ প্রাচীন যুগকে বিশেষত্ব দান করে। এ প্রথম বহুমুখী কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে মানবসভ্যতা উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্ববোধ এবং একতা বৃদ্ধিতে প্রাচীন যুগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যার হাত ধরেই মধ্যযুগের আবির্ভাব মনুষ্য সমাজকে অন্যান্য পশুর তুলনায় আরও ব্যতিক্রমী করে তোলে। এভাবে মানুষ স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে । ত
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত