প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও ।

উত্তর ভূমিকা : মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন যুগ গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় বৈশিষ্ট্যের জন্য স্মরণীয়। ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভিককালকেই মূলত প্রাচীন যুগ বলে অভিহিত করা হয়। এসময়ে মানবসমাজ সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করে। প্রাচীনকালে অর্থব্যবস্থার মূল নিয়ামক ছিল কৃষি ও পশুপালন। এছাড়া কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য, কর ব্যবস্থা, মুদ্রা অর্থনীতি, দাসভিত্তিক অর্থনীতি প্রভৃতি প্রচলিত ছিল । এসবগুলোর সমন্বয়ে প্রাচীন মানুষের একটি দৃশ্যমান অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলে ।
• প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা : নিম্নে প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দেওয়া হলো :
১. কৃষি ব্যবস্থা : নবোপলীয় ও প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের মতো প্রাচীন যুগেও কৃষি ব্যবস্থা অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিরূপে বজায় ছিল। তবে এ যুগে লাঙলের ফলায় লোহার ব্যবহার করায় এবং লাঙল টানার ক্ষেত্রে শক্তিশালী পশুকে কাজে লাগানোর ফলে কৃষিকাজ সহজ ও বেশ দ্রুততার সাথে অগ্রসর হয়। সহজে ও ভালোভাবে জমিচাষ করার ফলে অধিক ফসল উৎপন্ন হতে থাকে। ৪৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসরীয়রা লাঙলের ব্যবহারের মাধ্যমে তুলা, গম, পেঁয়াজ প্রভৃতি শস্য উৎপাদন করতে শুরু করে। এসময় মিসরীয় দাসরা জমিচাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো । সুমেরীয়রা টাইগ্রিস নদী হতে সেচের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়। প্রাচীন ভারতে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা কৃষি ক্ষেত্রে বেশ উন্নয়ন সাধন করে এবং প্রচুর পরিমাণে গম, বার্লি, তুলা প্রভৃতি শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
২. খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা : প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ নিজেদের সংকটকালীন সময়ে প্রয়োজন মিটাতে খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখতো। আর এজন্য তারা বিশাল বিশাল খাদ্যশস্য ভান্ডার নির্মাণ করতো। ফলে সংকট বা দুর্ভিক্ষের সময়কালে মানুষ তাদের সংরক্ষিত খাদ্য ব্যবহার করতে পারে। ভারতের আর্যরা এবং প্রাচীন চীনের অধিবাসীরা অন্যান্য শস্যের পাশাপাশি ধান চাষ করতো। আর সেগুলোর উদ্বৃত্ত উৎপাদন করে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতো । এসময় সংরক্ষিত কৃষিপণ্য দিয়ে কৃষিভিত্তিক নানা প্রকারের শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে ।
৩. পশুপালন : প্রাচীন যুগে সুনির্দিষ্ট নামের পশুপালন করার বিষয়ে মানুষ বেশ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ হতে মহিষ, ষাঁড়, হাতি, শূকর, কচ্ছপ প্রভৃতি পশুর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। সেজন্য বলা যায়, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা প্রাচীনকালে পশুপাখি পালন করতো। প্রাচীন ভারতের আর্যরা পশুপালনকে খুবই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিল। চীনারা প্রাচীনকাল থেকেই কুকুর, ঘোড়া ও অন্যান্য পশু গৃহে পালন করতো। এভাবে প্রাচীনকালে পৃথিবীর সর্বত্র পশুপালন পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার ঘটে।
8. শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য : শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্মেষ ও বিকাশ সাধন প্রাচীন যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন কালে মিসর, সুমের, পারস্য, গ্রিস, রোম ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানাবিধ শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে ওঠে। পাথর শিল্প, বয়ন শিল্পের মতো কাচ, মৃৎপাত্র, নৌযান নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মিসরীয় শিল্প এগিয়ে যায়। সিরিয়া, ফিনিশিয়া প্রভৃতি দেশে গম, লিলেন কাপড়, মৃৎপাত্র প্রভৃতি রপ্তানি করতো। হাতির দাঁত, স্বর্ণ, কাঠ প্রভৃতিও আমদানি করা হতো ।
৫. বাণিজ্যের সম্প্রসারণ : প্রাচীনকালে মিসর, প্যালেস্টাইন, ভারতীয় উপমহাদেশ প্রভৃতি বিস্তৃত অঞ্চলে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ঘটে । আলেকজান্ডারের অভ্যুদয়ের পর থেকে প্রাচীনকালের বাণিজ্যে ব্যাপক সম্প্রসারণ লক্ষ করা যায়। এসময় মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্ররূপে খ্যাতির শীর্ষ স্থান লাভ করে। এখানে চীন থেকে রেশমি বস্ত্র, ব্রিটেন থেকে টিন, সাইপ্রাস থেকে তামা, আরবের মসলা এসে জমা হতো এবং বিভিন্ন দেশের বণিকদের মধ্যে দিনরাত ক্রয়-বিক্রয় চলত । অতএব এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়, প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার শিল্প গড়ে ওঠে এবং বহু দেশের মধ্যে একে অপরের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।
৬. কর ব্যবস্থা : প্রাচীনকালের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কর ব্যবস্থা প্রবর্তন লক্ষ করা যায়। মিসরীয় সভ্যতার কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের ১০ থেকে ২০ ভাগ কর হিসেবে রাজভান্ডারে জমা দিতে হতো। মিসরের ফারাও ও অভিজাতগণ এ কর সংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল । জনগণের ওপর পারস্য সম্রাটগণও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর ধার্য করেন । প্রাচীন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজ্যকালে বিক্রীত পণ্যের একদশমাংস কর, জন্ম কর, মৃত্যু কর প্রভৃতি নাগরিকদের জন্য আবশ্যকীয় ছিল। ফলে দেখা যায় কর ব্যবস্থা প্রাচীন যুগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্থান লাভ করে ।
৭. মুদ্রা অর্থনীতি : প্রাগৈতিহাসিক ও প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে মুদ্রা অর্থনীতি বলে কিছু ছিল না। মূলত প্রাচীন যুগে মুদ্ৰা অর্থনীতি গড়ে ওঠে। সুতরাং মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিকে প্রাচীন যুগের একটি স্বতন্ত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনেতিক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয় । সভ্যতার ইতিহাসে এশিয়া মাইনরের লিডিয়াগণ সর্বপ্রথম ধাতুর তৈরি মুদ্রা ব্যবহার শুরু করে। হেলেনিস্টিক যুগে আলেকজান্ডার গ্রিস থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন করেন । যা সমগ্র মধ্য ও পশ্চিম এশিয়াতে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বেই চীনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তাম্র মুদ্রা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এভাবে ক্রমে মুদ্রা বিভিন্ন সভ্যতার নিকট ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
৮. দাস শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি : মুদ্রা অর্থনীতির পাশাপাশি প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যে দাস শ্রম নতুনভাবে সংযোজিত হয়। সাধারণত পরাজিত, দুর্বল ও যুদ্ধবন্দিদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কৃষিপণ্য উৎপাদন, ব্যবসায়িক মালামাল পরিবহণ, বিভিন্ন দ্রব্য প্রস্তুত, রাস্তাঘাট ও স্থাপত্য নির্মাণ প্রভৃতি কাজে দাসদের ব্যবহার করা হতো । এককথায় বলা যায়, প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে দাস শ্রমকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হতো। এ কারণে প্রাচীন অর্থনীতিকে এক অর্থে দাস শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি বলে গণ্য করা হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাচীন যুগের অর্থব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক শক্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন ব্যবস্থা। এ দুই ব্যবস্থার বিকাশের মাধ্যমে প্রাচীন অর্থনীতি বিকাশের ফলে শিল্প, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মুদ্রা, অর্থনীতি ও কর ব্যবস্থার মতো বহুমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গৃহীত হয়। যার স্পষ্ট ছাপ পড়ে পরবর্তী সময়কাল তথা মধ্যযুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। তাই একথা নিশ্চিন্তেই বলা যায়, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রাচীন অর্থনীতি মানবসভ্যতাকে কতিপয় নতুন ব্যবস্থার সাথে পরিচিত করাতে সক্ষম হয় ।

প্রাচীন যুগের সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও ।

উত্তর ভূমিকা : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগের পর প্রাচীন যুগ নামে একটি স্বতন্ত্র যুগের অবতারণা লক্ষ করা যায়। আবার ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভকাল থেকে শুরু হওয়া সময়কালকে অনেকে প্রাচীন যুগ বলে থাকেন। সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৬ অব্দ পর্যন্ত, সময়কাল প্রাচীন যুগের অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন যুগে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনতি সাধিত হয়। প্রাচীন যুগে মানুষ সৃজনশীলতা খাটিয়ে খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন ব্যবস্থা, জ্ঞানবিজ্ঞান, লৌহের ব্যবহার, যাতায়াত, ভাষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে ।
প্রাচীন যুগের সামাজিক অবস্থা : প্রাচীন যুগে সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। নিম্নে প্রাচীন যুগের সামাজিক অবস্থার বিবরণ দেওয়া হলো :
১. পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা : প্রোটো ঐতিহাসিক যুগ থেকে সমাজে পুরুষদের অবস্থান শক্তিশালী হতে থাকে । প্রাচীন যুগেও এ ধারা অব্যাহত থাকে । প্রাচীন যুগে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের সবগুলোর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় পুরুষ শাসকবৃন্দ। পুরুষদের দিকনির্দেশনায় সমাজ ও রাষ্ট্রসহ যাবতীয় সবকিছু দক্ষভাবে পরিচালিত হতে থাকে। যা পুরুষতান্ত্রিকতার প্রমাণই বহন করে ।
২. পেশাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা : প্রাচীন যুগে মানুষের কর্মের ওপর ভিত্তি করে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার উদ্ভব ঘটে। রাজনীতি ও শাসনকার্যের সাথে সংশ্লিষ্টরা অভিজাত শ্রেণি, মঠধর্ম নিয়ে যারা অধিক ব্যস্ত থাকতেন তারা পুরোহিত শ্রেণিতে, এভাবে ব্যবসায়ী ও বণিক, কারিগর, শিল্পী, কৃষক, শ্রমিক, দাস প্রভৃতি সাধারণ শ্রেণিতে বাস করতো ।
৩. লোহার ব্যবহার : প্রাগৈতিহাসিক যুগে পাথর, প্রোটো ঐতিহাসিক যুগে তামা ব্রোঞ্জ এবং প্রাচীন যুগে মানুষ লৌহের ব্যবহারের আয়ত্ত করে। এশিয়া মাইনরের খনিগুলোতে আকর, প্রস্তর ধাতু প্রাকৃতিক ও খনিজ দ্রব্যাদির সাথে লৌহ জড়িয়ে থাকত। এসব আকরিক পিণ্ড গলিয়ে লৌহ তৈরি করা হয়। হিট্রাইটারা ১৮০০ হতে ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালে এশিয়া মাইনরে লৌহ তৈরি করে। এসময়ে লাঙলের ফলাতে লৌহ ব্যবহার করার ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করে। দ্রব্যাদি ওজন করার ক্ষেত্রে এবং সাংসারিক ব্যবহারিক দ্রব্যাদি উন্নত তৈরি করা সম্ভব হয়।
৪. খাদ্য : প্রাচীন যুগে মানুষের খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আসে প্রভৃতি পরিবর্তন। এসময় খাদ্যের সাথে বিভিন্ন উপদ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যকে সুস্বাদু ভোগ্যপণ্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়। ভালো করে রান্না করে খাওয়াতে খাদ্যগুলো পূর্ববর্তী যুগের খাদ্য অপেক্ষা অনেকাংশে জীবাণুমুক্ত এবং সুস্বাদু হয় । মিসরীয়রা প্রাচীনকালে খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ফল, গম, যব, পিঁয়াজ ও পশুর মাংস তালিকায় রাখত। সিন্ধু লোকেরা খাদ্যের সাথে গরু, ভেড়া, শূকর, কচ্ছপ, মাছ, শুটকি প্রভৃতিও খেত। রোমানরা প্রচুর শাসকসবজি খেতে পছন্দ করতো ।
৫. পেশাক পরিচ্ছদ : নবোপলীয় যুগেই মানুষ কাপড় বুননের কৌশল আয়ত্ত করে। এরপর তারা প্রাচীন যুগে বেশ উন্নত এবং বিভিন্ন প্রকার পরিধেয় বস্ত্র ও সাজসজ্জার অলংকার তৈরি করতে সক্ষম হয়। প্রাচীন মিসরীয়রা চিত্রিত কম্বল, মূল্যবান আংটি ও মুকুট প্রভৃতি অলংকারের ব্যবহার ব্যাপক ছিল। নীলনদের তীরে যে তুলা উৎপন্ন হয় তা দ্বারা মিসরীয়রা উন্নত মানের কাপড় বুনত। সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা সাধারণ কাপড়ের পাশাপাশি শীতবস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়। অতএব বলা যায়, সুন্দর সভ্যতার অধিকারী প্রাচীন যুগে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ রুচিশীল ও মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করতো ।
৬. চিকিৎসাক্ষেত্রে অগ্রগতি : খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদে অগ্রগতি সাধনের পাশাপাশি ঐতিহাসিক যুগের শুরুতে মানুষ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্রমশ সাফল্য লাভ করতে থাকে। এসময়ে মিসরীয় চিকিৎসকগণ হৃৎপিণ্ডের গতি ও নাভির স্পন্দন সহজে লক্ষ করতে পারতেন । প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসক হিপোক্রাটস প্রাণিদেহে রোগের প্রাকৃতিক কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানী গ্যালেন ধমনিতে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ভাবন করেন। এ যুগের সোরা নাস একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন । অতএব দেখা যায়, প্রাচীন যুগে মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করে । ৭. আবাসন ও স্থাপত্যিক অগ্রগতি : আবাসন ও স্থাপত্যিক ক্ষেত্রে প্রাচীন যুগের মানুষ বেশ উৎকর্ষ সাধন করে। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বে সুমেরীয়দের নির্মিত জিগুরাত নামক ধর্মমন্দির স্থাপত্যিক ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন । এছাড়া মিসরীয় পিরামিড, ব্যাবিলনীয় সৌধ ও রাজপ্রাসাদ, ঝুলন্ত উদ্যান, ইস্টার তোরণ প্রভৃতি প্রাচীন যুগের স্থাপত্যিক উন্নয়নের সাক্ষ্য বহন করে ।
৮. ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানে অগ্রগতি : প্রাচীন যুগে ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মানুষ বেশ গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়। মিসরীয়, পারসীয়, গ্রিক, চৈনিক প্রভৃতি সভ্যতার লোকেরা ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করে। এসময়ে মিসরীয়দের হায়ারোগ্লিফিক, সুমেরীয়রা কিউনিফরম প্রভৃতি লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। আরও জানা যায় যে, ফিনিশীয়রা মিসরীয় লেখার কৌশল অনুসরণ করতে গিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার প্রচলন করে এবং তারা ভাষার ব্যবহারের জন্য ২২টি বর্ণ উদ্ভাবন করে। পরবর্তীকালে গ্রিকরা e, i, o, u এ ৪টি বর্ণ যোগ করলে আধুনিক ইংরেজি বর্ণমালায় ২৬টি বর্ণ সজ্জিত হয় ।
৯. বিয়েশাদি : প্রাচীন যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বৈশিষ্ট্য হলো বিয়েশাদি নামক সামাজিক বন্ধনের আবির্ভাব। বিবাহের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে একত্রে বসবাস করার জন্য সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় । প্রাচীন যুগের পূর্বে বিবাহ নামক এ সামাজিক বন্ধন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। মিসরীয়দের সমাজে এসময় বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। সুমেরীয়দের মধ্যে বিবাহ প্রথা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বৈশিষ্ট্যরূপে স্থান দখল করে। তাছাড়া চীনের সমাজেও সাধারণভাবে একক বিবাহ প্রথা বিদ্যমান ছিল । এসময়ে অনেক দেশের মতো প্রাচীন গ্রিসেও বিবাহ বন্ধনের প্রথা প্রচলিত ছিল।
১০. দাসপ্রথা : প্রাচীন যুগে অনেক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অন্তরালে কতিপয় কুপ্রথা যেমন— দাসপ্রথা নামক নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যও লক্ষ করা যায় । সভ্যতার সূচনা পর্ব থেকেই প্রাচীন সুমেরীয়, মিসরীয়, পারস্য, গ্রিক, রোমান প্রভৃতি সমাজে দাসপ্রথার প্রচলন হয়। সাধারণত যুদ্ধবন্দিদেরকে বা যুদ্ধে পরাজিত জাতিকে দাসে পরিণত করা হতো। তাছাড়া সমাজের সবচেয়ে নিচুস্তরের লোকদের দাস বলে গণ্য করা হতো। দাসদের সন্তানরাও উত্তরাধিকারসূত্রে দাস হিসেবে জীবনযাপন করতো । উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রচলন, পেশাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, লৌহের ব্যবহার, রকমারি খাদ্যের সম্ভার, পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন দিক থেকে প্রাচীন যুগ অবিস্মরণীয়। মূলত এ যুগের কতিপয় ভালো বৈশিষ্ট্যই প্রাচীন যুগকে উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। প্রাচীন যুগে মানুষ সামাজিক দায়িত্ব পালনসহ সব ধরনের সামাজিকতার জন্ম দেয়। তাই বলা যায়, আজকের সামাজিক উৎকর্ষতার পিছনে প্রাচীন যুগের সামাজিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]