বাংলার কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো জাতীয়তাবোধের উদ্ভব ও বিকাশ

জাতীয়তাবোধের উদ্ভব ও বিকাশ
গণতান্ত্রিক বিপ্লবের একটি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সামন্ততন্ত্র ধ্বংস করে সমাজের অগ্রগতির পথ বাধামুক্ত করা। কৃষিভূমি ও কৃষি ব্যবস্থা সামন্তভাবে ভিত্তি। অথচ কৃষক‍ই সামন্ততান্ত্রিক শোষণের প্রধান শিকারে পরিণত হয় এবং সামন্ততন্ত্রের ধ্বংস সাধন করে সমাজের অগ্রগতির পথ বাধামুক্ত করার কার্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবে কৃষকদের এই ভূমিকা বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। বাংলার কৃষক বিদ্রোহসমূহে এরূপ লক্ষণ কিছুটা হলেও দৃষ্টিগোচর হয়। তবে এখানে একটা অসুবিধা হলো ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বুর্জোয়া শ্রেণি যেরূপ নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলার ক্ষেত্রে তা ছিল অনুপস্থিত। অর্থাৎ এখানে প্রতিটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব ছিল বিত্তশালী শ্রেণির হাতে । ফলে বাংলার কৃষককে একাই সংগ্রাম করতে হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। এই রাষ্ট্র যন্ত্র বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে ঔপনিবেশিক সরকার, রাষ্ট্র সৃষ্ট জমিদার, সকল মধ্যস্বত্বভোগী মধ্যশ্রেণি এবং নানাস্তরের পত্তনিদারদেরকে। তারা সবাই ছিল কৃষকদের প্রতিপক্ষ। তাদের মিলিত শক্তি ছিল কৃষক বিদ্রোহীদের চেয়ে অধিক। ফলে বিদ্রোহে কৃষক শ্রেণির তাৎক্ষণিক সাফল্য ছিল ক্ষীণ। কিন্তু যে বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এক অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহের প্রভাব পড়েছিল অন্য অঞ্চলের বিদ্রোহে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় মহাবিদ্রোহ এবং ১৮৫৯-৬১ খ্রিষ্টাব্দের নীলবিদ্রোহে ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণই এর প্রমাণ। আর এ সকল বিদ্রোহের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়েছিল এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে সন্দেহ নেই। এ অর্থে বাংলার কৃষক বিদ্রোহই ছিল আমাদের জাতীয়তাবোধ উন্মেষের প্রাথমিক উপকরণ। যদিও আধুনিক অর্থে জাতীয়তাবোধ বলতে যা বুঝায় সে ধরনের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার কৃষক শ্রেণি সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল এ দাবি অবশ্যই করা যাবে না। কেননা তখন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্নতর। অর্থাৎ সে সময়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল স্বৈরতান্ত্রিক, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় অভিজাতশ্রেণির হাতে। জনগণের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কোনো বিদ্রোহ ও বিপ্লব হলে নেতৃত্ব আসতো উঁচুশ্রেণির নিকট থেকে। এমতাবস্থায় এদেশের কৃষক বিদ্রোহের প্রয়াসকে আধুনিক জাতীয়তাবোধের উন্মেষ পর্ব বলা যেতে পারে নিঃসন্দেহে।

বাংলার কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো জমিদার মহাজন শ্রেণির ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। অধুনা নিম্নবর্গের সংগ্রাম সম্পর্কিত গবেষকরা মনে করেন যে, বাংলার জাতীয় আন্দোলন কেবলমাত্র এলিট বা শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হয়নি। এলিট বা মধ্যবিত্তের নেতৃত্বকে অহেতুক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিম্নবর্গের বিশেষত কৃষক শ্রেণির জাতীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। একদিক থেকে তাদের এ আন্দোলনকে একটি সমান্তরাল আন্দোলন বলা সংগত। ড. রণজিৎ গুহ প্রভৃতি মনে করেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি পরিচালিত জাতীয় আন্দোলন থেকে নিম্নবর্গের এ আন্দোলন ছিল স্বতন্ত্র ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কৃষক আন্দোলনে ধর্ম, জাতপাতের ব্যাপারটি ছিল। এর দ্বারা কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হয়। মারাঠা ব্রাহ্মণ ফাডকে ও রামোশিস নামে নিম্নবর্ণের লোক ধর্মীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু এ কৃষক বিদ্রোহের মূল কথা ছিল যে, যদিও এ বিদ্রোহগুলো প্রত্যক্ষভাবে জমিদার, মহাজন শ্রেণির বিরুদ্ধে ঘটে, কার্যত তা ছিল ইংরেজের শাসনযন্ত্রের উপর নির্মম আঘাত। কারণ ব্রিটিশ সরকার বাংলার বিশাল গ্রাম সমাজ ও কৃষকদের শাসন ও শোষণের হাতিয়ার স্বরূপ জমিদার, মহাজনকেই ব্যবহার করতো। ফলে কৃষকরা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে ।
জমিদার শ্রেণি আক্রান্ত হলে ইংরেজ সেনা সে বিদ্রোহ দমনে নিযুক্ত হতো। নিম্নবর্গের ইতিহাস লেখকরা এজন্যে বলেন যে, নিম্নবর্গের সংগ্রাম বিশেষত কৃষক বিদ্রোহ জাতীয় আন্দোলনে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে। কৃষক বিদ্রোহগুলো নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উপর বড় ধরনের আঘাত ছিল এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভারতীয় কৃষক সমাজ ব্রিটিশের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া ভূমি বন্দোবস্ত ও রাজস্ব মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। কৃষক বিদ্রোহের ফলে কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা দেখা দেয়। বিংশ শতকে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ কৃষক ঝাঁপিয়ে পড়ে, আন্দোলনকে গণআন্দোলনে পরিণত করে। সরকার ভয় পান যে, যদি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কৃষক বিদ্রোহ নেতৃত্বে দানে এগিয়ে আসে তাহলে মধ্যবিত্তের মস্তিষ্ক ও কৃষকের বাহু মিলিত হলে ব্রিটিশের দুর্দিন দেখা দেবে। এজন্যে মধ্যবিত্তকে হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তারা কিস্তিবন্দী শাসনসংস্কার ও স্বায়ত্তশাসনের টোপ ব্যবহার করেন। তাতে সবসময় ফল পাওয়া যায়নি সত্য, কিন্তু একেবাবে বিফলও হয়নি।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের বাংলার কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্ব নিয়ে অহেতুক অতিশয়োক্তি এক শ্রেণির ঐতিহাসিক করেন। ড. অমলেশ ত্রিপাঠির মতে, “কৃষক আদিবাসীদের প্রতিবাদ কোনো দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের রূপ নেয়নি।” কৃষক ও আদিবাসীরা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মতোই মাঝে মাঝে ফেটে পড়ে, কিন্তু তা স্থায়ী ও ধারাবাহিক আন্দোলন হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। কিছুদিন বাদে দমননীতি ও সরকারি সংস্কারের প্রলোভনে তা স্তিমিত হয়ে যায়। কৃষকদের মধ্যে সর্বভারতীয় চেতনা, ব্রিটিশ শাসনকে উচ্ছেদের জন্যে সচেতন প্রতিজ্ঞার যথেষ্ট অভাব ছিল। যদিও ড. রণজিৎ গুহ জোর দিয়ে বলেছেন যে, “কৃষকদের রাজনৈতিক চেতনা ছিল এবং দক্ষ নেতাও ছিল। তথাপি বিপান চন্দ্র বলেন যে, কোনো ক্ষেত্রেই ঊনবিংশ শতকের কৃষক আন্দোলন ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্যের বিপদ সৃষ্টি করেনি।” এ আন্দোলনগুলোতে কোনো উচ্চতর আদর্শবাদ, কোনো নবতর রাজনৈতিক ও সমাজ সংগঠনের লক্ষ্য ছিল না। ড. ত্রিপাঠী বলেছেন যে, “সকল শ্রেণি নিয়ে, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ গড়ার মানসিকতা কৃষকদের ছিল না। উপজাতিদের বাস্তবতাবোধ তীব্র হলেও তা এক আদিম স্বর্ণযুগের ধোঁয়াটে ভাবধারায় আচ্ছন্ন ছিল।” তাই বাংলার কৃষক আন্দোলন খুব বেশি ফলপ্রসূ ছিল না বলে প্রতীয়মান হয় ।
বাংলার কৃষক বা উপজাতি কৃষকদের সংগ্রাম ছিল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত এবং আঞ্চলিক স্বার্থকেন্দ্রিক, নেতৃত্বহীন এবং বৈপ্লবিক আদর্শ ও লক্ষ্যহীন ছিল বলে ঐ বিদ্রোহগুলো বৈপ্লবিক সংগ্রামের স্তরে উন্নীত হতে পারেন। তাছাড়া বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সচেতনতা প্রাক বিংশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত কৃষক বিদ্রোহগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি, ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর বুকে ভীতি সঞ্চার করতে সমর্থ হলেও বিপ্লবীরা প্রতিক্রিয়াশীল বাঙালি সামন্ততন্ত্রকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সর্বোপরি, ঐসব বিপ্লবের সময় বাংলায় শ্রমিকশ্রেণির আবির্ভাব ঘটেনি বলে কৃষকসমাজকে বিদ্রোহের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল । বিংশ শতাব্দীর পূর্বে পরিচালিত বিদ্রোহগুলো জাতীয় ভিত্তিতে যেমন সংগঠিত হয়নি, তেমনি আবার তাদের মধ্যে দেশীয় ও বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত স্বরূপ এবং সদস্য সমাধানের পথ সম্বন্ধে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা জন্মায়নি। ফলে ঐসব বিদ্রোহ সর্বাত্মক বিদ্রোহ না হয়ে আঞ্চলিক অভ্যুত্থান বা বিক্ষোভের পর্যায়েই থেকে গেছে বলে প্রতীয়মান হয় ।
সব বিদ্রোহের, বিশেষত ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী সময় সংঘঠিত কৃষক বিদ্রোহগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার সহচর জমিদার মহাজনগোষ্ঠীর অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে যে আপসহীন সংগ্রামের মহান ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কম নয়। বাংলায় বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিরচনায় এবং পরাধীন বাংলার মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার করায় ঐসব বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। আপসহীন ঐসব বৈপ্লবিক সংগ্রাম বাংলার মধ্যবিত্তশ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দিয়েছিল এবং তাঁদের জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করে। পরবর্তী সকল আন্দোলনে প্রাণ সঞ্চার করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে অতি সংক্ষেপে বলা যায় যে, কোম্পানি শাসনের শুরু থেকেই বাংলায় নতুন শাসকের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ লক্ষ করা যায় ৷ তবে এসব কৃষক বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী এবং তাদের সংগঠনের গঠন পদ্ধতি ও নেতৃত্ব কখনো একই স্বার্থে এবং একই লক্ষে পরিচালিত ও সংগঠিত হয়নি। প্রেক্ষাপট পরিবর্তন এবং নতুন স্বার্থ ও শক্তির উত্থানের সাথে সাথে ঔপনিবেশিক শাসক প্রদত্ত চাপ সকল সময়েই এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণির উপর গিয়ে পড়েছে এবং দৃশ্যপটে পরিবর্তন এনেছে। বিদ্রোহীদের দাবি এবং অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়া কখনো সমরূপ ছিলনা। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এসব প্রক্রিয়ার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কে আমাদের অভিমত এই যে, বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীরা অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিল, কিন্তু শ্রেণিবৈষম্য উপলব্ধি থেকে নয়। সনাতন রাষ্ট্রকাঠামোর ধ্বংসস্তুপের উপর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার ফলে যারা ভোগান্তির শিকার হয়েছে তারাই মূলত বিদ্রোহ করেছে। এ সকল ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কৃষক শ্রেণি। ফলে কৃষকরাই প্রতিটি বিদ্রোহের সূত্রপাত করেছে এবং বিদ্রোহী বাহিনী গঠন করেছে। কিন্তু নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে পারেনি। নেতৃত্ব এসেছে ভুক্তভোগী উঁচুশ্রেণির নিকট হতে । ঔপনিবেশিক শাসনের প্রারম্ভিক পর্বে বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত নতুন শাসনকে (ঔপনিবেশিক) উৎখাত করে সনাতন শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু পরবর্তীকালের বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল জমিদার ও তৎসহযোগীদের খাজনা বৃদ্ধির প্রবনতা প্রতিহত করা। এ পর্বে কৃষক আন্দোলনে দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ৷ প্রথমত, প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠনে কৃষকরা শ্রেণিগতভাবে ছিল নিঃসঙ্গ। দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনে বাংলার মধ্যবিত্তশ্রেণির কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেনি। এছাড়া তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যও ছিল সীমিত। কৃষি অর্থনীতিতে কোনো বড় রকমের বৈপ্লবিক পরিবর্তন তাদের কাম্য ছিল না। কৃষক আন্দোলনের নেতারা মাঝে মাঝে খাজনা বন্ধের হুমকি দিতেন বটে তবে তারা জমিতে কখনো ব্যক্তিগত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেননি। জমিদার ও মধ্যস্বত্বাধিকারীদের সাথে খাজনার পরিমাণ নিয়ে বিরোধ থেকে তারা খাজনা বন্ধের হুমকি দিতেন। এটা তাদের যুদ্ধের কৌশল, মৌলিক পরিবর্তনের হাতিয়ার নয়। আসলে কৃষকদের একার পক্ষে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাফল্য আশা করা যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনো উদাহরণ নেই। বাংলার কৃষক আন্দোলনেরও একই অভিজ্ঞতা। তথাপিও ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে বাংলার কৃষকদের অর্জন ছিল অসামান্য। কেননা চেতনা ও বৈশিষ্ট্যের দিক হতে বাংলার পরবর্তীকালের ইতিহাসের গতিপথ নির্মাণে কৃষক বিদ্ৰোহগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে ৷
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত কৃষক বিদ্রোহগুলো ছিল বাংলা ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় যে মুহূর্তে গ্রামীণ কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছিল, দেশ যখন সম্মুখীন হয়েছিল এক অজ্ঞাত শত্রুর, যাদের শক্তি ছিল অপ্রতিরোধ্য তখন এই কৃষক বিদ্রোহগুলো ছিল কোম্পানি সরকারের নির্বিচার শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘবদ্ধ সশস্ত্র প্রতিবাদ। অর্থাৎ বাংলার কৃষক বিদ্রোহগুলো ছিল কতিপয় জটিল পরিস্থিতির প্রতি কৃষকদের প্রতিক্রিয়া। এ প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সরকার, জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করা। এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কৃষক শ্রেণি কিন্তু সরকারের রাজস্ব না দেওয়ার দাবি তোলেনি বরং তাদের উপর জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আরোপিত অতিরিক্ত করের অবসান ঘটানো ছিল তাদের বিদ্রোহের অন্যতম কারণ । অর্থাৎ নিম্নশ্রেণির মানুষদের দ্বারা পরিচালিত বিদ্রোহসমূহে রাজশক্তির অবসান ঘটানোর চেয়ে আত্মরক্ষার প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। এ নিরিখে বাংলার কৃষক
বিদ্রোহগুলো কখনো আঞ্চলিক ও আন্ত-আঞ্চলিক রূপ লাভ করে। বিদ্রোহের ব্যাপকতা থেকে দাবি ওঠে ইংরেজ সরকারের নির্মম-নিষ্ঠুর শাসন থেকে বের হয়ে এসে একজন সনাতন ভূস্বামীর শাসন প্রতিষ্ঠার। কিন্তু প্রয়োজনে আনুগত্য হস্তান্তর কৃষকের অধিকার- এ শর্ত মেনে নিতে জমিদার ও সরকার ছিল অপ্রস্তুত। কারণ এতে জমিদারশ্রেণির মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় আর সরকার তাতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার তত্ত্ব আবিষ্কার করে। এছাড়া বিদ্রোহীদের সাফল্য নবগঠিত সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করতো যা শাসকশ্রেণির কাম্য ছিল না। আর অনুগত জমিদার ও মধ্যবিত্তশ্রেণির স্বার্থ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের সঙ্গে একীভূত ছিল। এর বিপরীত হওয়ার অর্থই ছিল তাদের পতন। ফলে সরকার উপনিবেশ ও রাষ্ট্রকাঠামোর উপর দখল সুদৃঢ় করার লক্ষে বিদ্রোহ দমনের জন্য সকল প্রকার শক্তি প্রয়োগ করে এবং নানা কৌশল অবলম্বন করে। ঔপনিবেশিক শক্তির মহাদাপটের বিপক্ষে সহজ সরল রণনৈপুণ্যপুষ্ট কৃষক শ্রেণির পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ ছিল অসম্ভব ব্যাপার ।
Bengal 1904
Darjeeling
Jalpaiguri
Champara
Darbhanga
Saran Muzaffar
Porniah
Rangpur
Dinajpur
Paine
Bhagaly
Stubated
Gaya
Monghyr pur
Makda!
A Bogra
Mainansingh
Rajshahi
Santal
Fizzaribagh Parganes Aased Pabna
abad
Birbhem Nadia
Badwan
Dacca
Tipper
faridpu
Jesser
Randu
Parulu
Bankira
Hugh 24 Khulna
Parganas
Barisal
Midnapur
Chittagong
Puri
Cuttack
Balasor
Districts
Princely States
চিত্র : অবিভক্ত বাংলার কৃষক বিদ্রোহের মানচিত্র

এছাড়া দুর্বার শক্তি নিয়ে বিদ্রোহী কৃষকের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও সংগঠিত কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও মতাদর্শের অভাবের কারণে তারা স্থায়ী সাফল্য লাভে সমর্থ হয়নি। সে সাথে কৃষকদের মধ্যে শ্রেণিচেতনা ও সংগঠনের অভাব, অনভিজ্ঞতা, ধর্মীয় ভেদাভেদ এবং অন্যান্য শ্রেণির স্বার্থপর নীতির কারণে কৃষক বিদ্রোহগুলোর দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। তবে এটাও সত্য যে, কোনো কোনো বিদ্রোহের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কৃষকদের বিদ্রোহের ফলে সরকার বিদ্রোহীদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সুতরাং বিভিন্ন শ্রেণির অংশগ্রহণে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত এই বিদ্রোহগুলোর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই সকল প্রতিবাদের মাধ্যমে কৃষক শ্রেণির মধ্যে জেগে ওঠে সাংগঠনিক শক্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ, সমবেদনা, চেতনা এবং অধিকার আদায়ের দৃঢ়তর ঐক্য। ফলে একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, এই সকল বিদ্রোহের পথ বেয়েই পরবর্তীতে এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারা প্রবাহিত হয়েছে। এই নিরিখে বাংলার কৃষক বিদ্রোহগুলোকে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের গণতান্ত্রিক চেতনা ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রাথমিক উপকরণ ও গৌরবময় প্রেরণার উৎস বলা যেতে পারে। কোম্পানি-শাসনাধীন বাংলার অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দী কৃষক বিদ্রোহগুলোর অনবদ্য গুরুত্ব এখানেই নিহিত ।
কোন শাসনামলে বাংলার কৃষকের নিজস্ব ধ্যানধারণা, উৎপাদন ভা
প্রতিষ্ঠানে প্রথম হস্তক্ষেপ করা হয়?
উত্তর : ব্রিটিশ শাসনামলে ।
কোম্পানি শাসনের সময়কাল কত ছিল?
উত্তর : ১৭৫৭-১৮৫৭ খ্রি.।
কোম্পানি শাসনামলে কৃষক বিদ্রোহের কারণ কী ছিল?
উত্তর : কোম্পনি সরকারের অত্যাধিক মুনাফানীতি ও আর্থিক নিয়মনীতির কঠোর অনুশীলন ।
৪. বাংলার কৃষক বিদ্রোহের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যসমূহ কীভাবে নির্ধারিত করা হয় ?
উত্তর : কৃষকদের চেতনা ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে ।
৫. কৃষক বিদ্রোহে কীসের বহিপ্রকাশ ঘটে?
উত্তর : বাংলার সংঘবদ্ধ কৃষকের সচেতন প্রতিরোধ শক্তির ।
ইংরেজ শাসনামলে বাংলার প্রথম কৃষক বিদ্রোহ কোনটি?
উত্তর : ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]