উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের শাখাসমূহের মধ্যে রাজনৈতিক ইতিহাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে সর্বোচ্চ মতাদর্শের দ্বারা রাষ্ট্র নামক সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনাসহ এর জনগণকে সংঘটিত ও সুবিন্যস্ত করা হয় তাকে রাজনীতি এবং এ রাজনীতির অতীত ঘটনাসমূহ যখন ইতিহাসে আলোচিত হয় তখন তাকে রাজনৈতিক ইতিহাস বলে অভিহিত করা হয় । রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে মানুষের সব কর্ম রাজনৈতিক কর্মের অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক ইতিহাসে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কার্যাবলি ইত্যাদি আলোচিত হয়। সময়ের পরিক্রমার সাথে সাথে রাজনৈতিক ইতিহাস জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
● রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রকৃতি : রাজনৈতিক ইতিহাস সাধারণত অতীত রাজনৈতিক ঘটনাবলির ইতিহাস। নিম্নে, রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হলো :
১. রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তির ইতিহাস : রাজনৈতিক ইতিহাস মূলত রাষ্ট্রের বা কোনো অঞ্চলের রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিগণের ইতিহাস। রাজনৈতিক ব্যক্তিগণের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাজাবাদশা, সম্রাট সুলতান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীকে। তাছাড়া রাজনৈতিক পরিচিতি গ্রহণ করেন এরূপ যেকোনো ব্যক্তিই রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হন। একমাত্র রাজনৈতিক ইতিহাসই এরূপ রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিগণের অতীত কর্ম আমাদের সামনে তুলে ধরে ।
২. রাজনৈতিক প্রশাসকের ইতিহাস : রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসকদের বিবরণ আমাদের সামনে তুলে ধরে। এর মধ্যে আছে গভর্নর, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অঞ্চলের প্রশাসক প্রমুখ। তাছাড়াও কোনো অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে সর্বময় দায়িত্বের অধিকারী ব্যক্তিই রাজনৈতিক প্রশাসক হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে প্রশাসক হিসেবে তার কর্মসমূহ, তার দ্বারা সংঘটিত যেকোনো সংস্কার প্রভৃতি রাজনৈতিক ইতিহাসের আওতাভুক্ত। রাজনৈতিক ইতিহাস এসবের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম ।
৩. বিশ্ব ইতিহাসরূপে রাজনৈতিক ইতিহাস : বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম একটি রূপ হলো রাজনৈতিক ইতিহাস। বিশ্ব ইতিহাসে মূলত আন্তঃরাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি আইন, আন্তর্জাতিক সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়া তুলে ধরা হয়। পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইতিহাস তথা বিশ্ব ইতিহাস আরও অনেক বেশি রাজনীতি ঘনিষ্ঠ হয়েছে । যাকে আমরা এক কথায় আন্তর্জাতিক নীতি বলতে পারি।
৪. জাতীয় ইতিহাসরূপে রাজনৈতিক ইতিহাস : জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম একটি রূপ হলো রাজনৈতিক ইতিহাস। কোনো দেশের রাজা, রাজতন্ত্র, তাদের উত্থান, যুদ্ধ, পতন প্রভৃতি যেমন ঐ দেশের জাতীয় ইতিহাস তেমনি রাজনৈতিক ইতিহাস ও তাদের এসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন— ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম দিক। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বীরত্বগাথা, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া আমাদের জাতীয় ইতিহাস হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত।
৫. রাজনৈতিক চরিত্রের নির্ধারক : রাজনৈতিক ইতিহাস রাষ্ট্রের সব ঘটনা ও বিষয়সমূহের রাজনৈতিক চরিত্রের নির্ধারক। রাজনৈতিক চরিত্রের ব্যাখ্যা হিসেবে রাজনৈতিক ইতিহাস রাজার সিংহাসনারোহণ, রাজার নিহত হওয়া তথা রাজবংশের পতনের পাশাপাশি সর্বপ্রকার বিদ্রোহ, বিপ্লব, অভ্যুত্থান, যুদ্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাসের আওতাভুক্ত করে। এছাড়া গণতান্ত্রিক কর্মের বিকাশ, সাংবিধানিক অগ্রগতি, জাতীয়তাবাদী চেতনা ও আন্দোলন, বিভিন্ন নির্বাচনি কর্মকাণ্ড, আইন পরিষদ, সাম্রাজ্য কাল, উপনিবেশবাদ, দলগত রাজনীতি, সামরিক স্থাপনা, নানাবিধ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও পররাষ্ট্র সম্পর্কিত নীতির রাজনৈতিক চরিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে। এভাবে রাজনৈতিক ইতিহাস রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রের পরিচিতি আমাদের সামনে উপস্থাপন করে ।
৬. গণমানুষের বিচ্ছিন্নতা : রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি সমস্যা হলো তা বারবারই বিজয়ী রাজা আর তাদের অনুগত যুদ্ধবাজ সৈন্যদের কাহিনীর মাঝে আবর্তিত হয়। এটি ইতিহাসকে একটি ছকে বেঁধে দিতে চেষ্টা করে। এখানে গণমানুষের অবস্থান স্পষ্ট করে দেখানো হয় না। জনগণের জন্য প্রশাসন পরিচালনার প্রয়োজনে রাজাদের সৃষ্টি হলেও রাজনৈতিক ইতিহাসে বিষয়টি অনুরূপভাবে বিবেচনা করা হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি পাল বংশের, সেন বংশের রাজাদের কথা। আমরা তৎকালীন জনগণের রাজবংশের ইতিহাসের বাইরে জনগণের সাধারণ জীবনের ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি কিন্তু জানতে পারি না। তা মূলত রাজনৈতিক ইতিহাসের গণবিচ্ছিন্নতার জন্যই হয়েছে ।
৭. জাতীয়তাবাদী চেতনা : কোনো দেশ বা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক ক্ষমতার পালাবদল আর রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ইতিহাস রচনার সারমর্ম তুলে ধরে রাজনৈতিক ইতিহাস। এর ফলে রাজনৈতিক ইতিহাস জনগণের কিংবা রাজরাজাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত করে। তাদের শাসনতান্ত্রিক সামর্থ্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে । রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উত্থান অনেকাংশে স্পষ্ট হয় ।
৮. অতিরঞ্জন : রাজনৈতিক ইতিহাস কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তবতা বর্জিত কল্পনাশ্রয়ী অতিরঞ্জিত বক্তব্য প্রদান করে। এ ধরনের ইতিহাস সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিগণের সভাসদ, অনুগত ব্যক্তিবর্গ প্রভৃতির মাধ্যমে লিখিত হয়। এতে করে রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক ইতিহাসে ভূষিত হয়ে পড়ে। যা রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী মহলের বিকৃত মানসিকতার লক্ষণ প্রকাশ করে। এ ধরনের কর্মপরিহার করলে রাজনৈতিক ইতিহাস হয়ে ওঠে স্পষ্ট, সাবলীল, জনগণের জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির পক্ষে সহায়ক।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাসের যেসব শাখা গড়ে উঠেছে তার মধ্যে রাজনৈতিক ইতিহাস সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অধিক পঠিত। রাজনৈতিক ইতিহাস মূলত রাষ্ট্রের বা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তির অতীত ঘটনাবলির ইতিহাস হলেও তা জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা দানে অনেকাংশেই সহায়ক। রাজনৈতিক প্রশাসকের মতাদর্শের ওপর ইতিহাসের অন্যান্য শাখা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই বলা যায়, দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক ইতিহাস পাঠ সময়ের দাবি।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত