সামাজিক ইতিহাস অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের শাখাসমূহের মধ্যে সামাজিক ইতিহাস অন্যতম। সাধারণত সামাজিক পরিমণ্ডলের মধ্যেই সকল প্রকার ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। একজন সমাজবিজ্ঞানীকে সামাজিক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে তাকে সমাজের উৎপত্তি, উদ্দেশ্য, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস, সামাজিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আচার আচরণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব তথ্য তুলে ধরে একজন সমাজবিজ্ঞানী বর্তমান ও ভবিষ্যতে চলার সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হন ।
• সামাজিক ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে সামাজিক ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. সমাজের শাখা প্রশাখা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ : সামাজিক ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা সমাজের বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস, যেমন— সমাজের বর্ণ বৈষম্যের ইতিহাস, নারী সমাজের ইতিহাস, সামাজিক শিক্ষার ইতিহাস, সামাজিক পরিবর্তনের ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারি । এতে বর্তমানের পাশাপাশি আমরা অতীত সমাজব্যবস্থা সম্পর্কেও অনুমান করতে পারি ।
২. সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা লাভ : মানবসমাজ গড়ে ওঠে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে। মানুষ নিজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। পরিবার, গোত্র, সম্প্রদায় এবং এরকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের সমাজ গড়ে ওঠে। এছাড়া সমাজের মানুষের ধর্মীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মসজিদ, মক্তব, বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। সামাজিক ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে এ সমস্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠানে মানুষের ভূমিকার কথা জানা যায় ।
৩. সমাজের তৃণমূল নম্পর্কে জানতে : প্রত্যেকটি সমাজে ক্রিয়াশীল কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিট রয়েছে। পরিবার সমাজের এরূপ সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ইউনিট। সামাজিক ইতিহাসে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের সব ব্যক্তির বিভিন্ন দিক স্থান লাভ করে থাকে। সমাজের এতিম, মিসকিন, দাস দাসী থেকে শুরু করে রাজা বাদশা পর্যন্ত সব শ্রেণির লোকের জীবনের সার্বিক দিকের প্রতিফলন ঘটে সামাজিক ইতিহাসে। তাই সমাজের তৃণমূল সম্পর্কে ধারণার জন্য সামাজিক ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত প্রয়োজন ।
৪. নারী সমাজের অবদান সম্পর্কে জানতে : নারীরা সমাজ গঠন ছাড়াও পারিবারিক শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু নারীর পারিবারিক কাজের আর্থিক মূল্য না থাকায় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয় না। জাতি গঠন, সমাজ গঠন, সামাজিক বিকাশ, পরিবার গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীরা তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। নারী জাতির এরূপ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান সম্পর্কে জানতে একমাত্র সহায়ক শাস্ত্র হলো সামাজিক ইতিহাস শাস্ত্র ।
৫. সামাজিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে : সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার বলা হয় শিক্ষাকে। তাই সমাাজিক ইতিহাসে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। শিক্ষার বিবরণ ছাড়া সামাজিক ইতিহাস সার্থকতা লাভ করতে পারে না । পৃথিবীর সব সমাজের সামাজিক শিক্ষা আত্মোপলব্ধি ও সমাজের সঠিক পথের পাথেয় হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষার সুমহান উদ্দেশ্য, ব্যক্তিজীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষার ক্রমবিকাশ ইত্যাদি হলো সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক । প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থার সঠিক তথ্য আমরা সামাজিক ইতিহাস পাঠে জানতে পারি। এভাবে সামাজিক ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে অতীতের বৈষম্যপূর্ণ ও অস্থিতিশীল সমাজ সম্পর্কে অবহিত করে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেয় ।
৬. সামাজিক পরিবর্তনকে বুঝতে সাহায্য করে : মানবসমাজ সদা পরিবর্তনশীল। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে হাজার হাজার বছর ধরে নানারূপ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কালের সমাজব্যবস্থা, সামাজিক রীতিনীতি, আইনকানুন এবং বর্তমান কালের সমাজব্যবস্থা সামাজিক রীতিনীতি ও আইনকানুনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। আবার বর্তমান যুগের সমাজের নিয়মকানুন ও প্রয়োজনমতো কালের গতি প্রবাহে ভবিষ্যতে স্বাভাবিকভাবেই বদলে যাবে। মানুষের চিন্তা, ধ্যানধারণা, চাহিদা ও প্রয়োজন যুগের সাথে সদা পরিবর্তনশীল । এসব পরিবর্তন সম্পর্কে সমাজের সব বাসিন্দার জানা একান্ত প্রয়োজন। সামাজিক ইতিহাস পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করে ভবিষ্যৎ সমাজ কাঠামো সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে থাকে ।
৭. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ইতিহাস জানতে : সংঘবন্ধ মানবগোষ্ঠী কতিপয় উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলে। সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করতে পারে। যেমন— বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মুসলমানদের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। আবার এ ধর্মসমূহের মধ্যে আন্তঃবিভাজন, যেমন— বর্ণপ্রথা, শ্রেণিভেদ প্রভৃতি রয়েছে। ফলে সামাজিক ইতিহাস অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। সামাজিক ইতিহাসের সম্প্রদায়গত এসব বৈচিত্র্যময় দ্বিক সম্পর্কে জানার জন্য সামাজিক ইতিহাস পাঠ প্রয়োজনীয় ।
৮. সামাজিক দৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে : মানুষ সমাজে বসবাস করতে গিয়ে এ পর্যন্ত বস্তুগত ও অবস্তুগত যা কিছু অর্জন করেছে তাই মানুষের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি সমাজের মতোই সদা পরিবর্তনশীল। সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের ধারা সম্পর্কে মানুষকে অবগত হতে হয়। ফলে মানুষ সমাজের সাংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, মূল্যবোধের অবক্ষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। আর এ বিষয়ে সামাজিক ইতিহাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক ইতিহাসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অতীত সমাজব্যবস্থার সব রীতিনীতি, আইনকানুন, প্রথা, আচার-ব্যবহার, অভ্যাস, চালচলন, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় তথা মানবসমাজের যে চিত্র ফুটে ওঠে তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে পাঠকের সম্মুখে উপস্থাপন করা। পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতি, উপজাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের অতীত সামাজিক জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করার জন্য সমাজিক ইতিহাস পঠনপাঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]