সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু তুলে ধর।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসের শাখা হিসেবে সাংস্কৃতিক ইতিহাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সংস্কৃতি বলতে সাধারণত বিনোদনমূলক কার্যক্রমকে বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন— গানবাজনা, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা প্রভৃতিকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বলে অভিহিত করা যায়। একজন মানুষ বা একটি জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, ধর্মীয় তথা সামগ্রিক আচরণিক কর্মের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতি নামক অভিব্যক্তির প্রতিফলন ঘটে থাকে। উপরিউক্ত সাংস্কৃতিক কর্মের বিভিন্ন দিকের ওপর ভিত্তি করে যে ইতিহাস রচিত হয় তাকে সাংস্কৃতিক ইতিহাস বলে অভিহিত করা হয়।
সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু : সংস্কৃতি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা— বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, উৎপাদন কৌশল প্রভৃতি যা ধরা ও ছোঁয়া যায় তা হচ্ছে বস্তুগত সংস্কৃতি। আর আচারব্যবহার, চিন্তাচেতনা, জ্ঞান ও বিশ্বাস প্রভৃতি যা ধরা ও ছোঁয়া যায় না তা হলো অবস্তুগত সংস্কৃতি। সংস্কৃতির এ দুই দিক মিলে সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু গঠিত হয় । নিচে সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. মানুষের জীবনযাত্রা : সমাজস্থ মানুষের জীবনযাত্রাই সংস্কৃতি। কেননা, মানুষ তার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যেসব আচার আচরণ, প্রথা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ লাভ করে তাই মানুষের সংস্কৃতি রূপে পরিগণিত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবন খাবারদাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, কাজ বৃত্তি সবকিছুরই সংস্কৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের সামাজিক জীবন আদিম মানবগোষ্ঠীর থেকে ভিন্ন ধরনের। যার একমাত্র কারণ আমাদের সংস্কৃতি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত পরিশুদ্ধ করে।
২. সামাজিক জীবন : বিশেষ উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে মানুষ একত্রিত হয়ে সমাজে বসবাস করতে শুরু করে সংঘবদ্ধ মানুষ নিয়ে বিকশিত হয় মানবসমাজ। মানবসমাজের প্রতিটি কার্যক্রমই মানুষের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সামাজিক জীবন প্রণালি । মানব সংস্কৃতি বিকাশের প্রায় প্রতিটি ধাপই মানুষের সামাজিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত। তাই সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে মানুষের সামাজিক জীবনকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে ।
৩. ভাষা : সমাজে অনেক মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে গিয়ে একে অন্যের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের বাহন হিসেবে ভাষা প্রচলন করেছে। মানুষের ব্যবহার্য এ ভাষা সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সাংস্কৃতিক ইতিহাস আলোচনার ক্ষেত্রে ভাষার নানা দিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয় ।
৪. শিক্ষা : শিক্ষা মানুষের মনকে প্রসারিত করে। জ্ঞানের আলোয় বিকশিত হতে সাহায্য করে। শিক্ষা সমাজের কূপমণ্ডূকতা, অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ইত্যাদি থেকে আমাদের মুক্ত করে। সামাজিক মূল্যবোধ আরও জাগ্রত করতে সাহায্য করে। যুগে যুগে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সমাজস্থ মানুষের শিক্ষার ফলেই সংস্কৃতির এ ইতিবাচক পরিবর্তন সামাজিক প্রগতির ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে ।
প্রাচীনযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষার যত বেশি বিকাশ ঘটেছে সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে তত বেশি। এতে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। যুগে যুগে শিক্ষার এরূপ অগ্রগতি তাই সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু ।
৫. সাহিত্য : সংস্কৃতির আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে সাহিত্য অন্যতম। সাহিত্যের মধ্যে সংস্কৃতি একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। সাহিত্যিকদের রচনা যেমন— রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মানিক বন্দ্যোপধায়, শরৎচন্দ্র প্রমুখ সমাজের বাস্তব জীবনধারাকে তুলে এনে সমাজের বিকাশ ধারাকে অগ্রগামী করে। সাহিত্যিকদের দেশের সংস্কৃতির অন্যতম দিকপাল হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এজন্য সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে সাহিত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। -- ৬. চিত্র ও শিল্পকলা : সুন্দর ও সৃষ্টির পূজারি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করার জন্য অবসর সময়ে তৈরি করতে শুরু করেছে নানা মূর্তি, আর বৈচিত্র্যময় চিত্রকর্ম। চিত্র শিল্পকলার বিকাশ মানুষের সংস্কৃতির অগ্রগতিতে একটি মাইলফলক। সুন্দরের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ থেকে চিত্র ও শিল্পকলার যাত্রা শুরু হয়। স্পেনের আলতামিরা গুহা চিত্রের মতো প্রাচীন থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত পৃথিবীর যত দেশে যত চিত্র ও শিল্পকলার সৃষ্টি হয়েছে তার সবগুলোই সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে বিষেচ্য।
৭. পোশাক : সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তুর মধ্যে পোশাক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পোশাক কোনো জাতির সংস্কৃতিরও অন্যতম পরিমাপক। পোশাকের মাধ্যমে আমরা আমাদের রুচিশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারি। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরিধানের মাধ্যমেই আমরা আমাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করি। যেমন বাঙ্গালি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো শাড়ি। শাড়ি নারীর সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করে তোলে। আর তাই বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীরা এ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে।
৮. চিত্তবিনোদন : মানুষ চিত্তবিনোদনের অন্যতম পূজারি বলে মানুষ একা বাস করতে পারে না। যথার্থ চিত্তবিনোদন শিশুসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের উপযুক্ত বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আর চিত্র বিনোদনের লক্ষে নির্মিত নাটক, চলচ্চিত্র, যাত্রা, পালাগান, মঞ্চনাটক প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরই অংশ। সংস্কৃতির শেকড় গ্রোথিত নেই এমন যেকোনো বিনোদন অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আর তাই সাংস্কৃতিক ইতিহাসে চিত্তবিনোদন গুরুত্বের সাথে স্থান পায়। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংস্কৃতি মানুষের চিন্তাচেতনার সহজাত বহিঃপ্রকাশ । মানুষের কর্ম, চিন্তাচেতনা প্রভৃতির মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রকাশিত হয়। আজকের মানুষের জীবনব্যবস্থা সময়ের প্রেক্ষিতে অতীত হলেই তা ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে সংযুক্ত হয়। যাকে সাংস্কৃতিক ইতিহাস বলে । প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষ যেসব সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে তার সবই সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু। সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]