ইতিহাসের পরিচয় উল্লেখপূর্বক বৈজ্ঞানিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দাও ৷

উত্তর ভূমিকা : মানুষের অতীত কর্মের প্রামাণ্য ও তথ্যভিত্তিক লিখিত বিবরণ হলো ইতিহাস। এক্ষেত্রে মানুষ কর্তৃক সম্পাদিত, অনুসৃত, নির্মিত, আবিষ্কৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অতীতের সব কর্মের বিবরণই জ্ঞানী ব্যক্তিদের নানাবিধ আবিষ্কারের বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা পৃথিবী বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং এর প্রভাবে পরিবর্তিত মানবজীবন সম্পর্কে জানতে পারি । যার ফলে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে বিজ্ঞানের ইতিহাস সমৃদ্ধ হচ্ছে ।
ইতিহাসের সংজ্ঞা : ইতিহাস কী তা এক কথায় বলা কঠিন। কারণ অনেক পণ্ডিতই ইতিহাস বিষয়ে নিজেদের মতো করে মত দিয়েছেন। তাই সহজেই একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় পৌছা যায় না। তবে পণ্ডিতগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতসমূহ বিশ্লেষণ করে ইতিহাসের একটি সাধারণ সংজ্ঞা তৈরি করা সম্ভব। অতীতে যা কিছু ঘটেছে সাধারণভাবে তাকেই ইতিহাস বলা হয় ৷ কিন্তু অতীতের সব কিছুকেই ঢালাওভাবে ইতিহাস বলা যায় না। শুধুমাত্র অতীতের যে সমস্ত ঘটনা প্রবাহ মানুষের দ্বারা নির্মিত, ও সংঘটিত বলে জানা যায় তার সত্যনিষ্ঠ লিখিত বিবরণকেই ইতিহাস বলা যায় ।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস বিষয়ে সংজ্ঞা প্রধান করেছেন ।
হেরোডোটাস (Herodotus) বলেন, “ইতিহাস হলো যা সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা।” আরনল্ড টয়েনবি (Arnold Toynbee) বলেন, “সমাজজীবনই প্রকৃত ইতিহাস।’প্রকৃতপক্ষে, মানবসমাজের সার্বিক ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।”
ই. এইচ. কার (E.H. Carr) বলেন, “ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ ।
বৈজ্ঞানিক ইতিহাস : নিম্নে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. বৈজ্ঞানিক ইতিহাস পরিচিতি : আধুনিক যুগে আমরা বিজ্ঞান বলতে যা বুঝি তার ইতিহাস প্রায় চারশ বা পাঁচশ বছরের অধিক নয় বলে ধরে নেওয়া যায়। রেনেসাঁসের পর থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। তবে প্রাচীন মিসর, ব্যাবিলন, চীন, প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতায়, ক্যালডীয় সভ্যতায়, গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় অনেক আগেই বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিল। তবে গ্রিকরা প্রকৃতপক্ষে, সঠিক বিজ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের প্রবর্তন করেছিল। থালেস হতে গ্যালেন পর্যন্ত প্রায় আটশত বছর নানা উত্থান পতনের মধ্যদিয়ে এ বিজ্ঞান চর্চার গতি অব্যাহত ছিল । পিথাগোরাস, এরিস্টটল, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড, হিপার্কাস, টলেমি, গ্যালেন, ইবনে সিনা, ইবনে হাইয়ান প্রমুখ বিজ্ঞানীর হাতে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ভূগোল, চিকিৎসাবিদ্যা, জীববিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের অসাধারণ উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক ঘটনা প্রবাহ, বিজ্ঞান শাস্ত্রের অনুসারী, সবাইকে জ্ঞান সরবরাহ করে থাকে একমাত্র বৈজ্ঞানিক ইতিহাস ।
২. বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের প্রকৃতি : বৈজ্ঞানিক ইতিহাস প্রত্যয়টি ব্যবহার করলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইতিহাস আবার কোন ধরনের ইতিহাস? আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, একজন শাসকের, একজন সংস্কারকের, একজন ধর্মপ্রচারকের কর্ম যদি ইতিহাস হতে পারে তাহলে একজন কল্যাণকর আবিষ্কারকের কর্ম কেন ইতিহাস হিসেবে বিবেচিত হবে না।
তাছাড়া সভ্যতার ইতিহাসে আমরা প্রায়শই বলে থাকি জ্ঞানবিজ্ঞানে প্রাচীন মিসরীয়দের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে প্রাচীন গ্রিসে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্র্যাটস, জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিপাকার্স ও এনাক্সোগোরাস এবং পদার্থবিজ্ঞানী আর্কিমিডিস প্রমুখের আবিষ্কার সম্পর্কে পড়ে থাকি। মূলত এগুলোই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইতিহাসের বিষয়বস্তু ।
৩. বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের গুরুত্ব : বিজ্ঞান নিয়ে মানুষের ভাবনাচিন্তা সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রাচীন গ্রিকরা, রোমানরা, মিসরীয়রা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে এগিয়ে যায়। তেমনি মধ্যযুগে আরবীয়দের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে যথেষ্ট এগিয়ে যেতে দেখা যায় ।
যুগে যুগে এরূপ মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কর্ম অতীত হয়ে গেলেই তা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিচ্ছে । বর্তমান কালের কোনো তরুণ বৈজ্ঞানিক কোনো বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে চাইলে তাকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে ।
জন এল. বেয়ার্ড টেলিভিশন, জর্জ স্টিফেনসন রেলওয়ে ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। তার সাথে মার্কিন বৈজ্ঞানিক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেলের বিদ্যুৎ, ভিনটন জি কার্ফের ইন্টারনেট প্রভৃতি আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ পরিবর্তনসমূহ বুঝতে গেলে আমাদেরকে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস পাঠ করতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিজ্ঞান মানব সভ্যতার উন্নতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যুগে যুগে বিশ্বের নানা প্রান্তের অনেক মেধাবী মানুষের সমাবেশ ঘটেছে বিজ্ঞানের ছায়াতলে। তাদের আবিষ্কার কয়েক যুগ বা কয়েক দশক পরেই বিবর্তিত হয়ে আরও উন্নত হয়। ফলে কেউ আর মনে রাখেনি পুরানো আবিষ্কারকে। বৈজ্ঞানিক ইতিহাস এক্ষেত্রে পুরানো সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যে নিয়ে আসছে। ফলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইতিহাসের বদৌলতে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটি গভীর যোগসূত্রের সমন্বয়ে ইতিহাস এগিয়ে যাচ্ছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]