আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU) কী? এর গঠনকাঠামো লিখ।

উত্তরঃ ভূমিকা : দ্বিনী। এশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তারা উপনিবে থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নেয়। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে এবং ১৯৬০ এর দশা একযোগে ১৩টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনোত্তর আফ্রিকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষো বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তারা ঐক্য হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনু করে। এ অনুভব থেকেই ১৯৬৩ সালের ২৫ মে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU) 1
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU) : OAU হচ্ছে Organization of African Unity যা স্বাধীনতা উত্তর আফ্রিব জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। এক সময় আফ্রিকা মহাদেশকে বলা হতো অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশটিকেই ১৮৮০ এর দশকে ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ দখল করে নিয়ে সেখানে তার ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠী নিগ্রো আফ্রিকার অন্ধকার দূর করতে আলোর বার্তা নি এসেছে এ অজুহাতে মহাদেশটি দখল করে সেখানে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ অত্যাচার, নির্যাতন ও শো প্রক্রিয়া চালু করে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বেশি দিন চালাতে পারে নি। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব প্রেক্ষাপট পরিবর্তন আফ্রিকানদের আন্দোলনের চাপে পড়ে ১৯৬০ এর দশকে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকানদের স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হ অবশ্য আফ্রিকা ত্যাগ করার পূর্বে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকার ঐতিহ্য ভেঙে দিয়ে মহাদেশটির অর্থনৈতিক কাঠা ধ্বংস করে দেয়। ফলে এর প্রভাব পড়ে স্বাধীনতা উত্তর আফ্রিকার উপর এবং আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠে এবং রাজনৈতিক তথা জাতীয় সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা উ আফ্রিকান কতিপয় রাষ্ট্রনায়ক আফ্রিকান জাতীয় ঐক্য গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় এবং এ প্রচেষ্টা সফল হয়। অবশে আফ্রিকানদের মধ্যে ঐক্যের দৃঢ়ভিত্তি রচনা করে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজি সাংস্কৃতিক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতার সহজ করতেই ১৯৬৩ সালের ২২-২৫ মে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান মহাদেশের কতিপয় দো এক সম্মেলনে গঠিত হয় OAU বা আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা এবং এর সদস্য ছিল ৩২। দীর্ঘ পথ চলার পর ২০০২ সালো জুলাই OAU পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় AU বা African Union এবং বর্তমান সদস্য ৫৩। সংস্থার সদর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় এবং বর্তমান সভাপতি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকে এমবেকি ।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার - কাঠামো বা অবকাঠামো : নিম্নে ১৯৬৩ সালে গঠিত আফ্রিকান ঐক্য গঠন কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা দুটি ভাগে বিভক্ত। যথা :
১. শর্ত বা ধারা এবং ২. শাখা ।
১. শর্ত বা ধারা : ১৯৬৩ সালের ২৫ মে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সনদ রচিত হয়। এ সনদের ধারা বা শর্তসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
প্রথম ধারা বা শর্ত :
ক. আফ্রিকান জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।
গ. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষা ও অর্জন করা।
আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও দৃঢ়তা স্থাপন করা ।
ঘ. আফ্রিকা হতে সকল ধরনের উপনিবেশবাদের বিলুপ্তি করা।
ঙ. জাতিসংঘের সাথে সংহতি রেখে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় উন্নয়ন ঘটানো।
দ্বিতীয় ধারা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার মধ্যে সকল আফ্রিকান রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও মাগাদাস্কারসহ তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
তৃতীয় ধারা :
ক. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌম নীতিমালা প্রণয়ন ।
খ. অন্য রাষ্ট্রের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ নয়।
গ. ভূখণ্ডগত ঐক্যের প্রতিশ্রুতি রক্ষা।
ঘ. অভ্যন্তরীণ বিবাদের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করা।
ঙ. রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা।
চ. আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর ভূখণ্ডগত স্বাধীনতার জন্য অগ্রসর হওয়া ও
ছ. আন্তর্জাতিক জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সমর্থন করা।
চতুর্থ ধারা : প্রত্যেক স্বাধীন ও সার্বভৌম আফ্রিকান রাষ্ট্র এ সংগঠনের সদস্য হতে পারবে।
পঞ্চম ধারা : প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র মানবাধিকারের দায়িত্ব পালন করবে।
শাখা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা কয়েকটি শাখা নিয়ে গঠিত। নিম্নে এ শাখাগুলো দেয়া হলো :
১. সংসদ (Assembly) : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হচ্ছে Assembly বা সংসদ। এ সংস্থা গঠিত হয়েছে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের একটি ভোটের সমন্বয়ে এবং এর অধিবেশন বসে বছরে একবার। এ সংস্থায় দুই-তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
২. মহাসচিব (Secretary general) : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থায় সবার উপরে রয়েছে Secretary General. তিনি Assembly কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং তাকে সহায়তা করার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে।
৩. সালিশ কেন্দ্র (Commission of mediation) : Commission of mediation হচ্ছে একটি সালিশ কেন্দ্র বা বিচারালয়। আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে এ শাখাটি গঠিত হয়। এ সংস্থা একজন সভাপতি ও দু'জন সহসভাপতি নিয়ে গঠিত। তবে এটা পরিচালনার জন্য বিশেষ কিছু সংস্থা রয়েছে।
৪. মন্ত্রিপরিষদ (Council of ministers) : এটা মূলত মন্ত্রিপরিষদ। এ পরিষদ গঠিত হয় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সমন্বয়ে। এ সংস্থা Assembly এর কাছে দায়বদ্ধ এবং Assembly এর মাধ্যমে এর কাজ বাস্তবায়িত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতার পর আফ্রিকান দেশসমূহ শাসনক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে নি। ফলে আফ্রিকান দেশসমূহের মধ্যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ হতাশাগ্রহস্ত হয় এবং সংশয় প্রকাশ করে স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে। তাই তারা আফ্রিকার ঐক্যরক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। এ ব্যাপারে প্রথম এগিয়ে আসে ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন। এ সংস্থার প্রচেষ্টায়ই ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় আফ্রিকা ঐক্য সংস্থা বা OAU। এ সংস্থা গঠিত হয় কতকগুলো শর্ত বা ধারা এবং কয়েকটি শাখার সমন্বয়ে।

আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU) এর সফলতা আলোচনা কর।


অথবা, আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা তার উদ্দেশ্য কতটা বাস্তবায়িত করতে পেরেছিল?
উত্তর ভূমিকা : স্বাধীনতা পরবর্তী আফ্রিকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায় এবং এ অস্থিরতা আফ্রিকার সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। এ অস্থিরতা আফ্রিকার স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। কারণ আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। ফলে রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ অবস্থার জন্য আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ দায়ী। তাই আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং তারা বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ অনুভব থেকেই গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা OAU। এ সংস্থা গঠনের মূল লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দূর করে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই তারা সাফল্য লাভ করতে পেরেছেন।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সফলতা : ১৯৬৩ সালে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয় এবং ২০০২ সালে এসে তা আফ্রিকান ইউনিয়নে (AU) তে পরিণত হয়। এ সংস্থাটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায়সঃ আফ্রিকার সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটানো। কিন্তু দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় আফ্রিকা ঐক্য সংস্থা কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে তা নিম্নে আলোচিত হলো :
১. অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। তাই আফ্রিকান ঐক্য সংস্থাটি প্রথমেই এদিকে দৃষ্টি দেন। সংস্থাটি আফ্রিকান দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার নিরসনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত ও সামরিক বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা তীব্র আকার ধারণ করলে বিষয়টি আফ্রিকান ঐক্য সংস্থায় উত্থাপিত হয়। বিরোধ নিরসনে ১১টি দলের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সাফল্য না আসলে পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৮১ সালে সংস্থাটি সেখানে 'Inter African Peace Keeping Force' পাঠায়। এবার সফলতা অর্জিত হয় এবং বহু নরনারীর প্রাণরক্ষা হয়।
২. সীমান্ত বিরোধ নিরসন : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সফলতা হচ্ছে সীমান্ত বিরোধ নিরসন। স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয় যা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত নামে পরিচিত। এ সংঘাত নিরসনের জন্য সংস্থাটি ১৯৬৪ সালে একটি কমিশন গঠন করে যার নাম দেয়া হয়, 'Commission of Mediation, Concilliation and Arbitration.' এ কমিশন বেশ কয়েকটি দেশের সীমান্ত বিরোধ নিরসন করে। যেমন- কেনিয়া, ঘানা, মরক্কো, আপারডোন্ট, ইথিওপিয়া, আলজেরিয়া প্রভৃতি।
৩. অনুপনিবেশকরণে ভূমিকা : অনুপনিবেশকরণ হচ্ছে উপনিবেশবাদের অবসান এবং কোন দেশের স্বাধীনতা অর্জন। আফ্রিকার ঐক্য সংস্থা গঠনের পরও অনেক দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল। সংস্থাটি এসব দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে গঠিত হয় "Committee for the Liberation Movement of Africa" এ কমিটিকে জাতিসংঘ বৈধতা প্রদান করে। ফলে কমিটি পুরোদমে তার কার্যক্রম শুরু করে এবং কমিটির প্রচেষ্টায় অনেক দেশের অনৌপনিবেশিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার একান্ত প্রচেষ্টার ফলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২২৫৫ নং রেজুলেশনে তার সকল বিশেষিত সরকারকে আফ্রিকার স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সাহায্য প্রদানের অনুরোধ করে।
৪. বর্ণবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ড : আফ্রিকায় বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে বর্ণবাদ সমস্যা। এ বর্ণবাদ দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার আফ্রিকানদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা এ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠাতে সাহায্য করে। OAU দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপর অস্ত্র ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে ১৯৯৪ সালে আফ্রিকার বর্ণবাদ সরকারের পতন ঘটে। অবশ্য এর পিছনে অন্যান্য বিশ্বও ভূমিকা রাখে ।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে : যদিও আফ্রিকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক অবনতি এবং এ অর্থনৈতিক অবনতি ঠেকাতে OAU কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে নি। তথাপিও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কতিপয় সাফল্য অর্জন করে। ১৯৬৩ সালে সুদানের রাজধানী খাতুনে ২২টি দেশের সমন্বয়ে গড়ে উঠে 'African Development Bank বা ADB । ADB তার কার্যক্রম শুরু করে ১৯৬৪ সাল থেকে। এছাড়া OAU ১৯৬৫ সালে গঠন করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ। এ দুটি সংস্থা আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


সামাজিক উন্নয়ন : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা আফ্রিকার সামাজিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ব্যাপক ভূমিকা।
• সংস্থাটি আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠন করে The Conference of African Woman এবং The Pan African Youth Movement. এ সংগঠন দুটি আফ্রিকার সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
৭ সাংস্কৃতিক উন্নয়ন : যে কোন দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের উপর। কারণ সংস্কৃতি
কোন দেশের প্রাণ। ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংস করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রবেশ করানো। হয়েছিল। আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পর আফ্রিকার ইতিহাস, ঐতিহ্য তথা সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয় Department of Scientific and Cultural Affairs. এ সংগঠনটি আফ্রিকার সাংস্কৃতিক
চয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
নির্বাচন তদারকি : স্বাধীনতার পর অনেক আফ্রিকান রাষ্ট্রে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সামরিক শাসনের
অবসানের পর এসব দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের তদারকির ভূমিকা পালন করে আফ্রিকান ঐক্য। গ্রহ। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন (১৯৯৪), ইথিওপিয়ার নির্বাচন (১৯৯৫), আলজেরিয়া নির্বাচন, জাম্বিয়া।
নির্বাচন প্রভৃতি ।
৯. শান্তিরক্ষা : আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই OAU গঠিত হয়েছিল। আফ্রিকার শাস্তি রক্ষার জন্য OAU আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। OAU এর চেষ্টায়ই মরক্কো ও আলজেরিয়া, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ও কেনিয়ার মধ্যকার সীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটে এবং শাস্তি রক্ষা হয়
১০. মানবাধিকার রক্ষা : মানবাধিকার রক্ষার জন্য আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে সংস্থাটি নাইরোবী শীর্ষ সম্মেলনে "African charter on human and peoples right" প্রণয়ন করে। এছাড়া OAU একটি কমিশন গঠন করে আফ্রিকার শরণার্থী সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু কমিশনকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা OAU এবং ২০০২ সালে তা AUতে পরিণত হয়। এ দীর্ঘপথ অতিক্রম করে চলছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। আফ্রিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তথাপিও সংস্থাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু সংস্থার সফলতার পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে এগিয়ে চলছে সংস্থাটি এবং ভবিষ্যতে আফ্রিকার উন্নয়নে কাজ করে যাবে। অবশ্যই সফলতাও বয়ে নিয়ে আসবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]