ইসলামের দৃষ্টিতে স¤পদের পরিচয় দিন এবং স¤পদের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণী বিভাগ আলোচনা করুন।

ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পদ ও সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা
সম্পদ বণ্টন অর্থনীতির এক গুরুত্বপ‚র্ণ বিষয়। সম্পদের সুষম বণ্টন ছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।
পাশ্চাত্য অর্থনীতিবিদ উক্তির
মাধ্যমে এ সময়ের প্রচলিত দুই অর্থনৈতিক মতবাদ ধনতন্ত্রও সমাজতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ এ দুই
মতবাদই সম্পদ বন্টনে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। উৎপাদন, আয় বা উত্তরাধিকার সূত্রে মানুষের ব্যক্তিগত মালিকানায়
বিপুল অর্থ-সম্পদ একীভ‚ত হতে দেয়া মানব সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এরই সুযোগে দুনিয়ায় পুঁজিবাদের সৃষ্টি হয়
এবং তা বিরাট মানবতাকে জীবনযাত্রা নির্বাহের বুনিয়াদী ও অপরিহার্য প্রয়োজন থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত করে।
তাই ধন-সম্পদের উৎপাদন ও তার পরিমাণ যত বেশীই হোক না কেন তার বণ্টন ব্যবস্থা যদি বিশুদ্ধ ও মানবতার
জন্য কল্যাণকর পদ্ধতিতে না হয় তবে তা নির্বিশেষে দেশ ও দেশবাসীর জন্য ক্ষতিকর ও বৈষম্যের কারণ হয়ে
দাঁড়ায়। এ জন্য ইসলাম ধন-সম্পদ একীভ‚ত ও কুক্ষিগত না করার নির্দেশ প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ বলেন ঃ
ك᠐ ىْ ᢻ َᘌ᜻ َ᠑ ونَ دُ ول᠐ ةً بَ يْ نَ ٱلأَ غْ نِ ᘭ َቯءِ مِ نᜓ᠑ مْ .
“যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই যেন ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।” (সূরা আল-হাশর : ৭)
এজন্য প্রয়োজন সম্পদের যথাযথ বণ্টন।
আমরা এ ইউনিটে ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পদ ও সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব। স¤পদের পরিচয়
সাধারণ অর্থে ধন-স¤পত্তি ও টাকা পয়সাকে স¤পদ বলা হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে যেসব দ্রব্য সামগ্রীর উপযোগ
আছে, যোগান অপ্রচুর, বাহ্যিকতা ও বিনিময় মূল্য আছে তাকেই স¤পদ বলা হয়। অর্থাৎ সব রকম অর্থনৈতিক
দ্রব্যকে অর্থশাস্ত্রেস¤পদ বলে। বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় প্রকার দ্রব্যকে স¤পদরূপে গণ্য করা হয়। যেমনচশমা, ঘড়ি ছাতা, আসবাবপত্র, খাদ্যদ্রব্য প্রভৃতি বস্তুগত স¤পদ। আবার উপযোগ, সীমিত যোগান ও হস্তান্তর
মূল্য থাকায় ব্যবসায়ের সুনাম অবস্তুগত স¤পদ। তাছাড়া ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় মানবিক গুণাবলীও স¤পদ
হিসেবে বিবেচিত। ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস, সৎকাজ, নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষা,
মানবতার কল্যাণ সাধান, জ্ঞানদান, জ্ঞানঅর্জন প্রভৃতির কোন হস্তান্তর যোগ্যমূল্য না থাকা সত্বেও ইসলামি
দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো উত্তম স¤পদ হিসেবে বিবেচিত। কেননা, অর্থ কড়ির ন্যায় এগুলোও মানুষকে উন্নত ও
মর্যাদা স¤পন্ন করে তোলে। তাই এগুলো অবস্থাগত স¤পদ। এসকল মহামূল্যবান স¤পদের দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ
এবং রাষ্ট্র প্রভ‚ত কল্যাণ লাভ করে থাকে। এ সকল স¤পদের মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বস্তুকেই শুধু স¤পদ বললে সঠিক হবে না। অবস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক স¤পদ মানুষের
সামাজিক চাহিদার আলোকে মানবিক কল্যাণ ও তৃপ্তি দিতে পারে। কিন্তু যেসব বস্তু প্রকৃতির অবাধ দান ও সহজ
লভ্য, যেমন-আলো-বাতাস ইত্যাদি সেগুলোকে স¤পদ বলা যায় না। কেননা, এসব দ্রব্যের উপযোগ থাকলেও
যোগানের সীমাবদ্ধতা ও বিনিময় মূল্য নেই। বস্তুগত ও অবস্তুগত স¤পদ সৃষ্টি করা মানুষের অর্থনৈতিক ও নৈতিক
কার্যকলাপের প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
স¤পদের বৈশিষ্ট্য
অর্থনীতিতে কোন দ্রব্যকে স¤পদ হিসেবে বিবেচিত হতে হলে সাধারণত তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। যথা১. উপযোগ, ২. অপ্রাচুর্যতা, ৩. হস্তান্তর যোগ্যতা এবং ৪. বাহ্যিকতা। এ বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নেআলোচনা করা হলঃ
১. উপযোগঃ উপযোগ স¤পদের প্রধান গুণ। মানুষের কোন অভাব মোচনের ক্ষমতাকে উপযোগ বলা হয়। কোন
দ্রব্য স¤পদরূপে বিবেচিত হতে হলে অবশ্যই তার উপযোগ থাকতে হবে। অর্থাৎ মানুষের কোন না কোন অভাব
পূরণের কাজে তাকে লাগতে হবে। উপযোগহীন দ্রব্য সামগ্রী দাম দ্বারা ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ্য নয় এবং সে জন্য তা
স¤পদ হতে পারে না।
২. অপ্রাচুর্যতাঃ কেবল উপযোগ থাকলেই কোন দ্রব্যকে স¤পদ বলা যায় না। স¤পদ হতে হলে দ্রব্যের যোগান
সীমাবদ্ধ অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় যোগান অপ্রচুর হতে হবে। দ্রব্য অপ্রচুর বা দু®প্রাপ্য না হলে তা লাভের জন্য
পরিশ্রম বা অর্থমূল্য লাগে না। সুতরাং তা স¤পদ হতে না। নদীর পানি, বাতাস প্রভৃতির যোগান অপ্রচুর নয় বলে
সেসব স¤পদ নয়। কিন্তু ধান, পাট, কলম-খাতা, পোশাক এবং শহরের পানীয় জল প্রভৃতির যোগান সীমাবদ্ধ
হওয়ায় সেগুলো স¤পদ।
৩. হস্তান্তর যোগ্যতাঃ স¤পদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল দ্রব্যের হস্তান্তর যোগ্যতা। ক্রয়-বিক্রয় বা বিনিময়ের
মাধ্যমে দ্রব্য হস্তান্তর করা না গেলে তার কোন বিনিময় মূল্য থাকে না এবং তা স¤পদ হিসেবে বিবেচ্য নয়।
একখন্ড জমি হস্তান্তরযোগ্য না হলেও তার মালিকানা পরিবর্তন করা যায় বলে তা স¤পদ।
৪. বাহ্যিকতাঃ দ্রব্যের বাহ্যিকতা স¤পদের আর একটি বৈশিষ্ট্য। কারণ দ্রব্য বাহ্যিক হলে হস্তান্তর যোগ্য হয়।
যেমন-আসবাবপত্র, কাপড়, বইপত্র, ঘড়ি প্রভৃতি অসংখ্য বাহ্যিক বস্তু হস্তান্তরযোগ্য হওয়ায় তা স¤পদ।
পক্ষান্তরে মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ, যেমন-প্রতিভা, দক্ষতা ইত্যাদি হস্তান্তর যোগ্য না হওয়ায় তা অর্থনীতিবিদদের
মতে স¤পদ নয়।
যেসব দ্রব্যে উল্লিখিত চারটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অর্থনীতিতে সেগুলোকে স¤পদ বলা হয়। এ চারটি বৈশিষ্ট্যের যে
কোন একটি না থাকলে তা স¤পদ বলে গণ্য হবে না। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে স¤পদের এ চারটি বৈশিষ্ট্য
থাকলেই তাকে স¤পদ বলা যাবে না। কেননা, শরীআতে কোন দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম বা ভক্ষণ ও পান
করা হারাম সাব্যস্থহলে উপরোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য থাকলেও তা স¤পদরূপে গণ্য হবে না। যেমন-মাদক দ্রব্য
স¤পদ নয়, শুকর স¤পদ নয়। আবার স¤পদের উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোন পণ্য বা বস্তুর মধ্যে একাধিক
বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না থাকলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে স¤পদ হিসেবে গণ্য হবে। যেমন- সূর্যকিরণ, নদীর পানি, নদী
থেকে উত্তোলিত বালি ইত্যাদি স¤পদ। কেননা, এগুলোর দ্বারা মানুষ তার বস্তুগত চাহিদা পূরণ করে থাকে।
সাধারণত অর্থনীতিবিদগণ যেমন- কবির প্রতিভা, মেধা ইত্যাদিকে স¤পদ হিসেবে গণ্য করেন না এ কারণে যে,
এগুলোর উপযোগ থাকা সত্তে¡এগুলো হস্তান্তর যোগ্য নয়। এসকল মানবিক গুণ উপযোগ থাকায় এবং প্রয়োজনের
তুলনায় অপর্যাপ্ত হওয়ায় এগুলো বাহ্যিকভাবে হস্তান্তর যোগ্য না হলেও এর দ্বারা মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে
সক্ষম। তাই, ইসলামি দৃষ্টিতে এগুলো স¤পদ। বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতিবিদরা মানব স¤পদ উন্নয়ন এবং মানব
উন্নয়নের কথা বলছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে তারা এ সকল অবস্তুগত জিনিসকে পরোক্ষভাবে স¤পদ হিসেবে
স্বীকার করে থাকেন। বস্থগত স¤পদের দ্বারা যেমন মানুষের ব্যক্তিগত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন মেটানো হয়;
তেমনিভাবে অবস্তুগত মানবিক গুণাবলী দ্বারা ও ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রভ‚ত কল্যাণ সাধিত হয়।
স¤পদের প্রকারভেদ
স¤পদকে সাধারণত চারটি প্রধান ভাগে ভাগ বরা যায়। যথা-১. ব্যক্তিগত স¤পদ, ২. সমষ্টিগত স¤পদ, ৩.
জাতীয় স¤পদ এবং ৪. আন্তর্জাতিক স¤পদ। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলঃ
১. ব্যক্তিগত স¤পদঃ কোন ব্যক্তির নিজ মালিকানাধীন সকল স¤পদকে ব্যক্তিগত স¤পদ বলা হয়। যেমন-নিজস্ব
জমি, ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচছদ, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম প্রভৃতিকে ব্যক্তির ব্যক্তিগত
স¤পদ বলা হয়। এছাড়া অধ্যাপক মার্শালের অভিমত অনুযায়ী মানুষের কর্মদক্ষতা এবং বিভিন্ন গুণাগুণ ব্যক্তিগত
স¤পদের পর্যায়ভুক্ত। কেননা- এসব অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ হস্তান্তরযোগ্য না হলেও মানুষের জীবিকা অর্জনে তা
সহায়তা করে।
২. সমষ্টিগত স¤পদঃ সরকার বা জনসাধারণের সমষ্টিগত মালিকানাধীন স¤পদকে সমষ্টিগত স¤পদ বলা হয়।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য রাস্থা-ঘাট, পার্ক, চিড়িয়াখানা, পোস্টঅফিস, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ,
ইয়াতীমখানা, হাসপাতাল, বাঁধ ইত্যাদি সমষ্টিগত স¤পদের অন্তর্ভুক্ত। সমষ্টিগত স¤পদের উপর সমাজের সকলের
সমান অধিকার ও কর্তব্য থাকে।
৩. জাতীয় স¤পদঃ রাষ্ট্রের সকল প্রকার ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত স¤পদকে একত্রে জাতীয় স¤পদ বলা হয়।
জাতি সামগ্রিকভাবে এ স¤পদের মালিক। জাতীয় স¤পদ হিসেবের সময় দেশের অভ্যন্তরে বিদেশী মালিকানাধীন
স¤পদ বিয়োগ এবং বিদেশে দেশী মালিকানাধীন স¤পদ যোগ করা হয়।
৪. আন্তর্জাতিক স¤পদঃ যে সকল স¤পদ কোন বিশেষ দেশ বা জাতির মালিকানাধীন নয়, বরং সব দেশই ভোগ
করতে পারে তাকে আন্তর্জাতিক স¤পদ বলে। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগর, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নদী, রাষ্ট্রসংঘ প্রভৃতি
আন্তর্জাতিক স¤পদের উদাহরণ।
আলোচ্য পাঠে স¤পদের সাধারণ ধারণা দেওয়া হল। ইসলামি অর্থনীতিতে স¤পদের ধারণা সাধারণ অর্থনীতিতে
স¤পদের ধারণার সাথে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বস্তু বা পণ্যের চারটি গুণ
থাকলেই তাকে স¤পদ বলা হয় না। স¤পদ হতে হলে ইসলামি শরীআতে তার উপাদান, উৎপাদন সবকিছু বৈধ
হতে হবে। সাধারণ অর্থনীতির তুলনায় ইসলামি অর্থনীতিতে স¤পদের ব্যাপকতা কম।
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
১. স¤পদের বৈশিষ্ট্য ক’টি?
ক. ৩টি খ. ৫টি
গ. ৪টি ঘ. ৪টি।
২. স¤পদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
ক. ৫ ভাগে খ. ৩ ভাগে
গ. ৪ ভাগে ঘ. ৬ ভাগে।
৩. ব্যক্তিগত স¤পদ কোনটি?
ক. রাস্তা-ঘাট খ. মসজিদ
গ. পোস্ট অফিস ঘ. ঘর-বাড়ি।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. স¤পদ বলতে কী বুঝায় লিখুন।
২. স¤পদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।
৩. স¤পদের প্রকারভেদ লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামের দৃষ্টিতে স¤পদের পরিচয় দিন এবং স¤পদের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণী বিভাগ আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত